বরগুনায় শিশু ধর্ষণের মামলাকারী বাবার লাশ উদ্ধারের দৃশ্য দাবিতে ভারতের ভিডিও প্রচার 

গত ০৪ মার্চ বরগুনা সদরের বাড়ি থেকে বিকেলে প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল সপ্তম শ্রেণির এক কিশোরী (১৪)। পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে সিজিত রায় নামের এক বখাটের নেতৃত্বে কয়েকজন মুখে কাপড় গুঁজে কিশোরীকে অপহরণ করে। এরপর তাকে ধর্ষণ করা হয়। পরের দিন ৫ মার্চ সকালে ওই কিশোরীকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পার্কে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা (৩৭) ওই দিন রাতেই বরগুনা সদর থানায় সিজিত রায়সহ দুজনের নামে ধর্ষণের মামলা করেন। কিশোরীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে এবং ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে শাসাতে থাকে আসামিপক্ষ। এরপর ১১ মার্চ কর্মস্থলে গিয়ে নিখোঁজ হন কিশোরীর বাবা। ওই দিন রাত সোয়া ১২টার দিকে মুঠোফোনের রিংটোনের সূত্র ধরে বাড়ির পাশের ঝোপ থেকে কিশোরীর বাবার লাশ পাওয়া যায়। 

এরই প্রেক্ষিতে, ‘বরগুনার ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ের ধর্ষণে বাদী হয়ে মামলা করা মেয়ের বাবা সেই মন্টু চন্দ্র দাস এর মৃতদেহ পাওয়া গেলো জঙ্গলের ভেতর বসা অবস্থায়। ওই শিশু এখনও চিকিৎসাধীন।’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বরগুনায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় মামলার বাদী বাবাকে হত্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং, জঙ্গলে লাশ পাওয়ার এই ঘটনাটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের। তবে উক্ত ভিডিওটি ভারতের হলেও বরগুনায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় মামলার বাদী (বাবা) লাশ পাওয়ার দাবিটি সত্য।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে তাতে ‘শিরোনামে ত্রিপুরা’ শীর্ষক লোগো লক্ষ্য করা যায়৷ উক্ত সূত্র ধরে ত্রিপুরা রাজ্যের ফেসবুক ভিত্তিক নাগরিক সাংবাদিকতার প্লাটফর্ম ‘শিরোনামে ত্রিপুরা’-এর ফেসবুক পেজে গত ১১ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া গেছে।

Video Comparison By Rumor Scanner 

ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, মলয়নগর বাইপাস এলাকার জঙ্গলে বসা অবস্থায় এক ব্যবসায়ীর নিথর দেহ পাওয়া গেছে৷ ভিডিওতে নিহত ব্যক্তির বোনের বক্তব্যে নিহত ব্যক্তির নাম রনবীর দেব (৫২) জানা যায়।

উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে গত ১১ মার্চ ত্রিপুরার স্থানীয় গণমাধ্যম Tripura News 8 এর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ভিডিও এবং জাগরণত্রিপুরা.com নামক ওয়েবসাইটে ‘জঙ্গল থেকে ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার, চাঞ্চল্য’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়৷

সুতরাং, ভারতের ত্রিপুরায় এক ব্যবসায়ী লাশ জঙ্গলে পাওয়ার ঘটনাকে বাংলাদেশে বরগুনায় শিশু ধর্ষণের মামলা করায় বাবাকে হত্যার ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img