গত ১৬ জুলাই এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’’ কর্মসূচিকে ঘিরে গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত ২০ জুলাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘সর্বাত্মক’ হরতাল ডেকেছে যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চার অঙ্গসংগঠন- যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগ। আসন্ন ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই হরতাল ডাকার কথা বলেছে সংগঠনগুলো। এরই প্রেক্ষিতে ‘21/07/2025 যমুনার সামনে আওয়ামীলীগের আজকের মিছিল’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গত ২১ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে আওয়ামী লীগের মিছিলের নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত মে মাসে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচির একটি পুরোনো ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কওমি ভিশন নামক ফেসবুক পেজে গত ০৯ মে ‘বিক্ষুদ্ধ ছাত্রজনতা এগিয়ে যাচ্ছে’ ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
উল্লিখিত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে মূলধারার গণমাধ্যম ঢাকা ট্রিবিউনের ফেসবুক পেজে গত ০৮ মে প্রকাশিত একটি পোস্টে একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির ক্যাপশনে এটি প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে হাসনাত আব্দুল্লাহর ডাকে অবস্থান কর্মসূচির চিত্র বলে উল্লেখ করা হয়।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে জানা যায়, গত ০৮ মে রাত ১০ টার পর থেকে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র-জনতা। এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে এনসিপি, ইসলামী ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইনকিলাব মঞ্চ, আপ বাংলাদেশ, অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন, জুলাই ঐক্যসহ বিভিন্ন সংগঠন।
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি আওয়ামী লীগের কোনো মিছিলের নয়।
সুতরাং, গত ২১ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে আওয়ামী লীগের মিছিলের ভিডিও দাবিতে যমুনার সামনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচির পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, “নাহিদকে তার প্রাপ্য হিসেবটা বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে” শিরোনামে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে মারধর করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে ।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে সাদা পোশাক পরিহিত মারধরের শিকার হওয়া ব্যক্তি নাহিদ ইসলাম নন। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন দুই সময়ের ফুটেজ একত্রিত করে শুধুমাত্র সাদা পোশাকের ওপর ভিত্তি করে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে মারধর করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি থেকে প্রাপ্ত ইমেজ রিভার্স সার্চের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক জাগো নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২১ মার্চ “বরিশালে নাহিদের সামনেই এনসিপির দুই গ্রুপের হাতাহাতি” শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ফুটেজের সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও’র প্রথম অংশের মিল রয়েছে।
জাগো নিউজের মূল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওর ২৮ সেকেন্ড সময়ে নাহিদ ইসলামকে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে দেখা যায়। পাশাপাশি, মারধরের কাহিনী শুরু হলে সেসময়ে নাহিদ ইসলামকে দৃশ্যপটে অনুপস্থিত দেখা যায়।
এছাড়া, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ১২ সেকেন্ড সময়ের ভিডিওটির ০৯ সেকেন্ড সময়ের পরে মারধরের দৃশ্য শুরু হলে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহারে তা ঢেকে দেয়া হয়। ফলে মারধরের ঐ দৃশ্য অস্পষ্ট অবস্থায় দেখা যায়।
এছাড়া, ‘BHS News’ নামক একটি ফেসবুক পেজে গত ২০ মার্চে “বরিশালে নাহিদ ইসলামের সামনেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক পার্টির কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে মারধরের শিকার হওয়া ব্যক্তির চেহারা স্পষ্ট দেখা যায়।
Screenshot: Rumor Scanner
বরিশালে সেদিন আসলে কি ঘটেছিলো সে বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২০ মার্চ বিকেলে বরিশাল ক্লাবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক নাহিদ ইসলামের সামনেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। মতবিনিময় সভার বক্তব্য শেষে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে পদবঞ্চিতরা বিক্ষোভ করলে অপর গ্রুপের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মাইকে বার বার তাদেরকে নিবৃত হওয়ার জন্য ঘোষণা দিতে থাকলেও হাতাহাতি চলতে থাকে এবং সেখানে নাহিদ ইসলামের পথরোধ করে এক গ্রুপ বিক্ষোভ করতে শুরু করে।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিশ্লেষণে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে যে, বরিশালে মারধরের শিকার ঐ ব্যক্তি নাহিদ ইসলাম নন।
সুতরাং, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে বরিশালে মারধর করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
গত ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম ওরফে সাগর নিহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘Sumaiya Nasrin Sumu’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের দুটি পোস্টের স্ক্রিনশট কোলাজ প্রচার করে সামাজিক মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, এই নারী নিহত পাইলটের স্ত্রী। কোলাজটিতে দেখা যায়, ওই ফেসবুক প্রোফাইল থেকে গত বছরের ৩০ জুলাই ‘তোমার স্বজন হারানোর বেদনা আমরা চুদি না’ ক্যাপশনে একটি পোস্ট করা হয়েছিল।
এছাড়া সম্প্রতি ওই অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া আরেকটি পোস্টে দেখা যায়, ব্যবহারকারী নারী তার স্বামী ‘Ashfaqur Rumon’-এর মৃত্যুর কথা জানাচ্ছেন। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত দাবিতে বলা হচ্ছে, গত বছরের পোস্টটি তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে দিয়েছিলেন।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে ।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সুমাইয়া নাসরিন সুমু নামের এই নারী নিহত বিমানবাহিনীর পাইলট তৌকির ইসলাম সাগরের স্ত্রী নন। বরং, তৌকিরের স্ত্রীর নাম আকশা আহম্মেদ নিঝুম। তারা দুইজন সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে পাইলট তৌকিরের মৃত্যুর খবর নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। ২১ জুলাই ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তৌকিরের স্ত্রীর নাম আকশা আহম্মেদ নিঝুম এবং তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
অন্যদিকে, প্রচারিত স্ক্রিনশটে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীর নাম সুমাইয়া নাসরিন সুমু এবং তার স্বামীর নাম আশফাকুর রুমন।
বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় রিউমর স্ক্যানার ‘Sumaiya Nasrin Sumu’ নামের ফেসবুক প্রোফাইলটি খুঁজে বের করে। প্রোফাইলের ‘About’ সেকশনে দেখা যায়, তিনি Sun Communications Limited-এ চাকরি করেন। তবে প্রোফাইলটি বর্তমানে লক থাকায় আলোচিত পোস্টগুলো যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
তবে, স্ক্রিনশটে ব্যবহৃত পোস্টে উল্লিখিত আশফাকুর রুমনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। ওই অ্যাকাউন্টে ২৩ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্টে লেখা হয়: আমি সুমাইয়া নাসরিন সুমু, আশফাকুর রুমনের স্ত্রী। তিনি এখন আমাদের মাঝে নেই। তাই আমি আপনাদের সবার কাছে শুধু একটি অনুরোধ করছি, দয়া করে তাকে আপনাদের প্রার্থনায় রাখবেন। আমি জানি না, তার অ্যাকাউন্ট আর কতদিন সক্রিয় রাখব। তাই একসময় যখন অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেব, তখন তাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে স্মরণ করবেন।
আশফাকুর রুমনের প্রোফাইল অনুযায়ী, তিনি KITE নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পড়াশোনা করেছেন। তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন এবং তার স্থায়ী ঠিকানা ছিল কিশোরগঞ্জ।
তবে, বাসসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাজশাহীর উপশহরে পরিবারের বর্তমান নিবাস হলেও নিহত পাইলট তৌকির ইসলামের আদি বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামে। তিনি রাজশাহী গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন।
এছাড়া, ‘Mukta Barai’ নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইলে ২২ জুলাই প্রকাশিত এক পোস্টে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের একটি শোকবার্তা পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, আশফাকুর রুমন ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাবেক নেতা এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৯৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি ২১ জুলাই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
অর্থাৎ, নিহত পাইলট তৌকির ইসলামের সঙ্গে সুমাইয়া নাসরিন সুমুর কোনো সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, সুমাইয়া নাসরিন সুমু নামের এক ভিন্ন নারীকে উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত বিমানবাহিনীর পাইলট তৌকির ইসলামের স্ত্রী দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা
সম্প্রতি, “টিনের চালে কাওয়া তারেক জিয়া শায়া” স্লোগানে মুখরিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত মিছিলের ভিডিওটি রংপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির। উক্ত মিছিলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে আলোচিত দাবি সম্বলিত স্লোগান দেওয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে, এনসিপির রংপুর পথযাত্রা কর্মসূচিতে এনসিপি নেতৃবৃন্দের মিছিলের স্লোগান সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওর উপরে ডানপাশে থাকা লোগোর সূত্র ধরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘SoddoSongbad – সদ্য সংবাদ’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৫ সালের ১ জুলাই “আগের রুপে নাহিদ-হাসনাত-সারজিস!” প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটিতে এনসিপি নেতাদের “সাইদ, ওয়াসিম, মুদ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ। আবু সাইদ মুদ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ। দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেবো রক্ত..” স্লোগান দিতে শোনা গেলেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়নি।
পরবর্তীতে, এনসিপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গত ১ জুলাই প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। আলোচিত ভিডিওতে থাকা এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর পোষাকের সাথে উক্ত ভিডিওর পোষাকের মিল রয়েছে। উভয় ভিডিওতে নাহিদের হাতে ফুল রয়েছে। এছাড়া ভিডিওটি দুইটি ধারণের স্থানেও একই বলে আমাদের অনুসন্ধানে পরিলক্ষিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১লা জুলাই রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরু হয়। অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি রংপুরে এনসিপির জুলাই পদযাত্রার মিছিলের এবং প্রচারিত মিছিলের ভিডিওর অডিও অংশটি সম্পাদিত।
সম্প্রতি শিক্ষার্থীরা দেয়ালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রাফিতি অঙ্কন করেছে দাবিতে কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে ।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনার গ্রাফিতি অঙ্কন করছে শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ভুয়া ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
ছবিগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনাকে নিয়ে এমন কোনো গ্রাফিতি অঙ্কন করা হলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো।
প্রচারিত ছবিগুলোর পারিপার্শ্বিক অবস্থাতে খানিকটা অস্বাভাবিকতা রয়েছে যা সাধারণত এআই দিয়ে তৈরি ছবিতে পরিলক্ষিত হয়। একটি ছবিতে এক শিক্ষার্থীর আঙুলের গড়নে অসঙ্গতি রয়েছে।
Image Marked by Rumor Scanner
পরবর্তীতে ছবিগুলোর সূত্র অনুসন্ধানে আলোচিত ছবিগুলো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে উপরে ডানপাশে একটি লোগো লক্ষ্য করে রিউমর স্ক্যানার টিম। লোগোতে ‘Joy Bangla Army’ শীর্ষক লিখা দেখতে পাওয়া যায়।
Screenshot: Rumor Scanner
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে ফেসবুকে ‘Joy Bangla Army’ নামক পেজটি খুঁজে পাওয়া যায় এবং গত ১৫ জুলাইয়ে “সময় একদিন আসবে, পুরো বাংলাদেশ জুড়ে শুধু আমাদের আপার ছবি গ্রাফিতি আকাঁ হবে” শিরোনামে প্রকাশিত পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে সংযুক্ত ছবিগুলোর সাথে আলোচিত দাবিতে থাকা ছবিগুলোর হুবহু মিল রয়েছে।
উক্ত পেজটি পর্যবেক্ষণ করে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরিকৃত একাধিক (১, ২, ৩) কন্টেন্টের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম Cantilux এ ছবিগুলো পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৬ শতাংশ।
Screenshot: Rumor Scanner
সুতরাং, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি ছবিকে শিক্ষার্থীদের শেখ হাসিনার গ্রাফিতি অঙ্কনের আসল ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আগুনের লেলিহান শিখার মধ্যে থেকে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন প্রতিষ্ঠানটির বাংলা বিভাগের শিক্ষিকা মেহেরীন চৌধুরী। পরে তাকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এই প্রেক্ষাপটে, শিক্ষিকা মেহেরীন চৌধুরীর ‘শেষ বক্তব্য’ দাবিতে অন্তত দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
প্রথম ভিডিওতে মেহেরীন চৌধুরীর মতো দেখতে এক ব্যক্তিকে মাইক্রোফোন হাতে বলতে শোনা যায়, “আমি মেহরিন চৌধুরী আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যদি আপনাদের সন্তানদের কিছু হয় তবে আপনাদের আমার ওপর দিয়ে যেতে হবে। আপনার সন্তানদের রক্ষার দায়িত্বও আমাদের। বিপদে-আপদে তাদের পাশে সবসময় থাকব।”
দ্বিতীয় ভিডিওতেও মেহেরীন চৌধুরীর মতো এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “আমি মাহরিন, মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিপদে-আপদে তাদের সাথে সবসময় থাকবো। তারা আমাদের সন্তান। তাদের শুধু লেখাপড়া না, তাদের রক্ষার দায়িত্বও কিন্তু আমাদের। অঙ্গীকার করছি, তাদের খেয়াল রাখব।”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওগুলো মাইলস্টোন স্কুলের নিহত শিক্ষিকা মেহেরীন চৌধুরীর শেষ বক্তব্যের নয়। বরং, এসব ভিডিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
প্রথম ভিডিও যাচাই
আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে একাধিক এআই-জনিত অসংগতি লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। কথিত মেহেরীন চৌধুরীর মুখভঙ্গি অপ্রাকৃতিক ও অস্বাভাবিক মনে হয়। কথা বলার সময় ঠোঁট ও চোয়ালের নড়াচড়ায় অস্বাভাবিকতা দেখায়। চোখের পলক ফেলা অপ্রাকৃতিক, যেখানে একটি ফ্রেমে এক চোখ বন্ধ থাকলেও অন্য চোখ খোলা থেকে যায়। এছাড়া, আঙ্গুলের গঠনও অস্বাভাবিক, একটি ফ্রেমে আঙ্গুল অসম্পূর্ণ দেখায়। আঙ্গুলে পরা আংটির ডিজাইন ভিডিওর মধ্যে একাধিকবার পরিবর্তিত হয়। তাছাড়া, মুখের টেক্সচারও অস্বাভাবিকভাবে মসৃণ এবং বয়সের স্বাভাবিক কোনো ছাপ নেই, তবে একটি ফ্রেমে চোয়ালে বয়সের ছাপ স্পষ্ট হয়। হাতের আঙুলের ক্ষেত্রেও কিছু ফ্রেমে একদম মসৃণ থাকে, আবার কিছু ফ্রেমে বয়সের ছাপ লক্ষ করা যায়।
Video analysis: Rumor Scanner
বিষয়টি নিয়ে আরও অনুসন্ধানে ‘Rashed Khan’ নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইলে ২২ জুলাই মেহেরীন চৌধুরীর বক্তব্য দেওয়ার একটি ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিওতেও তাকে মাইক্রোফোন হাতে বক্তব্য দিতে দেখা যায়, আর পেছনের ব্যক্তির অবস্থানও আলোচিত ভিডিওর সঙ্গে মিলে যায়। তবে দুটি ভিডিওর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্যও দেখা যায়। যেমন- মেহেরীন চৌধুরীর পোশাকের নকশা এক হলেও রঙ ভিন্ন, আলোচিত ভিডিওটি তুলনামূলকভাবে আরও স্পষ্ট এবং কণ্ঠস্বরেও পার্থক্য রয়েছে। এছাড়া, রাশেদ খানের ভিডিওতে তাকে আলোচিত ভিডিওর মতো বক্তব্য দিতে শোনা যায়নি। এসব বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া যায়, মূল ভিডিওটি ব্যবহার করেই এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ভিডিও যাচাই
এই ভিডিওতেও পূর্বেরটির মতো একাধিক এআই-জনিত অসংগতি ধরা পড়ে। বক্তব্যের শুরুতেই কথিত মেহেরীন চৌধুরী নিজের নাম ভুলভাবে ‘মাহরিন’ বলে উল্লেখ করেন। ত্বক অস্বাভাবিকভাবে মসৃণ ও চেহারায় বয়সের কোনো স্বাভাবিক ছাপ নেই। একটি ফ্রেমে দেখা যায়, এক চোখ বন্ধ থাকলেও অন্য চোখ খোলা রয়েছে। এছাড়া, কণ্ঠস্বরেও প্রকৃত মেহেরীন চৌধুরীর সঙ্গে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
Video analysis: Rumor Scanner
আরও অনুসন্ধানে, ২১ জুলাই ‘ALL IN ONE (Jaldhaka)’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে ‘Firoz Jaldhaka’ নামের প্রোফাইল থেকে মেহেরীন চৌধুরীর একটি ছবি পাওয়া যায়। একই ছবি মূলধারার দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের একটি ভিডিও প্রতিবেদনে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহৃত মুখচ্ছবিটির সঙ্গে এই ছবির হুবহু মিল রয়েছে। বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া যায়, এই ছবিটি ব্যবহার করেই এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner.
বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে উভয় ভিডিওই ডিপফেক শনাক্তকারী ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ টুলের ‘AVSRDD (2025)’ মডেলের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। মডেলটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।
এসব বিষয় ছাড়াও, গণমাধ্যম বা কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে মেহেরীন চৌধুরীর এমন কোনো বক্তব্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি দুটি ভিডিওকে উত্তরার মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শিক্ষিকা মেহেরীন চৌধুরীর শেষ বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘ইউনুসের পদত্যাগের দাবীতে, ঢাকার সমস্ত কলেজের ছাত্ররা রাজপথে নেমে গেছে’ শীর্ষক একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। পোস্টটিতে তারিখ হিসেবে গতকাল (২৩ জুলাই) উল্লেখ রয়েছে।
একই দাবিতে সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেত্রী অপু উকিলকেও একটি পোস্ট শেয়ার করতে দেখা যায়।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে ।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গতকালের (২৩ জুলাই) নয়। এর সাথে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিরও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, গত বছরের ১২ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে সারাদেশে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের চট্টগ্রাম নগরীর ২ নং গেটে করা বিক্ষোভ মিছিল করে। এটি সেই কর্মসচির দৃশ্য এটি।
অনুসন্ধানে ‘Md. Monirul Islam’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত বছরের ১২ জুলাই প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে থাকা ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
উক্ত পোস্টের ক্যাপশনে দাবি করা হয়, প্রচারিত ভিডিওটি গত বছরের ১২ জুলাই কোটা বৈষম্য নিরসনের একদফা দাবিসহ ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজ সমূহের শিক্ষার্থীদের নগরীর ২নং গেইটে করা বিক্ষোভ মিছিলের।
উল্লিখিত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় গণমাধ্যম যায়যায়দিন এর ওয়েবসাইটে গত বছরের ১২ জুলাই “শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত বছরের ১২ জুলাই বিকেলে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও চবি অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থী। চট্টগ্রামের ষোলশহর স্টেশনে একত্রিত হয়ে এ বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করেছিল প্রায় ৫ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের নগরীর ২ নম্বর গেইট হয়ে প্রবর্তক মোড় পেরিয়ে চক বাজার মোড় হয়ে নগরীর ষোলশহরের এসে শেষ করেছিলেন।
একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টও।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি গতকালের (২৩ জুলাই) নয় এবং এর সাথে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিও কোনো সম্পর্ক নেই।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গতকাল (২৩ জুলাই) ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন করার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, গত বছরের ১২ জুলাই চট্টগ্রামে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিওকে গতকাল (২৩ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে ঢাকায় কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘জামাত শিবির ও তাদের বি- টিম এনসিপি জঙ্গী সন্ত্রাসীরা!! কি ভাবে কলেজ থেকে ছাত্রলীগের কর্মিকে হত্যা করার জন্য ধরে নিয়ে যাচ্ছে দেখুন!!’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি জামায়াত-শিবির কিংবা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কর্তৃক ছাত্রলীগের কর্মীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কোনো ঘটনার নয়। বরং, এটি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীদের টেনেহিঁচড়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টার ভিডিও।
এই বিষয়ে ভিডিওটিতে থাকা ‘প্রসঙ্গ’ নামক লোগোর সূত্র ধরে রাজশাহীর স্থানীয় নিউজ অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘Proshongonews24.com’ এর ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির প্রথম অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে।
Comparison : Rumor Scanner
ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌনমিছিল শেষে শিক্ষার্থীদের আটকের সময় ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে; পরে রাবি শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে সেখান থেকে কাউকে আটক না করে ছেড়ে দেয় পুলিশ’।
উক্ত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে একই ঘটনার বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, সারা দেশে ছাত্র হত্যার অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে গত বছরের ১ আগস্ট লাল কাপড় মুখে বেঁধে মৌন মিছিল করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক নেটওয়ার্ক। শিক্ষকদের এই মৌন মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। মৌন মিছিল শেষে শিক্ষার্থীদেরকে জোর করে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালান সিভিল ড্রেসে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটির সাথে জামায়াত-শিবির কিংবা এনসিপি কর্তৃক কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রলীগের কর্মীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার দাবির কোনো সম্পর্ক নাই।
সুতরাং, ২০২৪ সালের ১আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীদের টেনেহিঁচড়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টার দৃশ্যকে সম্প্রতি জামায়াত-শিবির ও এনসিপি কর্তৃক কলেজ থেকে ছাত্রলীগের কর্মীকে হত্যা করার জন্য ধরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
গত ২১ জুলাই দুপুরে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। বিমান বিধ্বস্তের পরের ভয়াবহতা যখন সামনে আসা শুরু হয়, পুরো দেশ তখন উদ্বিগ্ন এবং শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
ঠিক এমন সময় Anonymous Main Page নামের একটি ফেসবুক পেজের ঘটনার একদিন আগের একটি পোস্ট সেদিন সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দেয়।
পেজটি গত ২০ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্টে ভবিষ্যৎ একটি স্কুল বিল্ডিং ধসে শিশু মৃত্যুর বিষয়ে একটি অস্পষ্ট সতর্কবার্তা দেয়, যেখানে বলা হয় যে ভবন ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটবে এবং এতে বহু শিশুর প্রাণহানি ঘটবে। অনেকেই ওই পোস্টকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে মেলাতে শুরু করেন, ফলে পোস্টটি দ্রুতই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের মধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়ে। তৈরি হয় নানান জল্পনা-কল্পনা এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।
পেজটি আরও একটি পোস্ট করে, যেখানে তারা দাবি করে যে মাইলস্টোনের ঘটনাই তাদের পূর্ববর্তী সতর্কবার্তার ইঙ্গিত ছিল এবং তারা “আগেই বলেছিলাম, কেউ শোনেনি” ধরনের মন্তব্য করে এর কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করে।
ওই পোস্টের স্ক্রিনশট ব্যবহার করে কেউ কেউ দুর্ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হিসেবে উপস্থাপন করতে থাকেন এবং দাবি করেন, পেজটি বিমান বিধ্বস্তের আগাম সতর্কতা দিয়েছিল। পাশাপাশি, অনেকে ‘Anonymous Main Page’ নামের পেজটিকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আসল Anonymous হ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ হিসেবে নিয়ে প্রচার করে। আবার কেউ কেউ তাদের Anonymous Global South নামের একটি ভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে গুলিয়ে প্রচার করে, যারা আগে বাংলাদেশ বিমানের একটি কেলেঙ্কারি ফাঁস করেছিল, যা সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের পোস্টের মাধ্যমে আলোচনায় আসে।
পরবর্তীতে, কিছু গণমাধ্যমেও উক্ত পেজের পোস্ট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
তবে আলোচিত পোস্টটি কি মাইলস্টোন বিমান দুর্ঘটনা ইঙ্গিত করে?
‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’-এর আলোচিত পোস্টটিতে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সেখানে বলা হয়েছে একটি স্কুল ভবন ধসে পড়বে এবং অনেক শিশু নিহত হবে, যা ঘটবে ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতির (poor maintenance on the building) কারণে। কিন্তু মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি ছিল একেবারেই ভিন্ন প্রেক্ষাপটের। সেখানে কোনো ভবন ধসে পড়েনি বা অব্যবস্থাপনার কারণে ভবন দুর্ঘটনা ঘটেনি। বরং ভবনে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং সেই আগুনে পুড়ে শিশুরা আহত ও নিহত হয়।
আলোচিত পোস্টে বিমান বিধ্বস্ত বা আগুনজনিত কারণে প্রাণহানির কোনো ইঙ্গিত নেই। বরং এতে ব্যবহৃত ভাষা, যেমন “A school building will collapse” ও “This will be as a result of poor maintenance on the building” — স্পষ্টভাবে ভবন ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে ধসের পূর্বাভাসের দিকেই ইঙ্গিত করে। ফলে এটি মাইলস্টোনের ঘটনার সঙ্গে মেলানো ভুল ব্যাখ্যা এবং বিভ্রান্তিকর।
পোস্টটিতে কোথায় বা কবে এই ঘটনা ঘটবে এ সম্পর্কিত কোনো নির্দিষ্ট তথ্য নেই। এটি একেবারেই একটি অস্পষ্ট সতর্কবার্তা বা উড়ো ভবিষ্যদ্বাণী, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমনভাবে লেখা হয়েছে যেন যেকোনো সময়, যেকোনো দেশে অনুরূপ কোনো ঘটনা ঘটলে সেটিকে এই পোস্টের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা যায় এবং পরবর্তীতে কৃতিত্ব নেয়া যায়।
ফলে, কোনো বাস্তব ঘটনা ঘটার পর তারা সহজেই দাবি করতে পারে, “দেখুন, আমরা তো আগেই সতর্ক করেছিলাম।” এর মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে বিশ্বাসযোগ্য এবং ভবিষ্যৎদ্রষ্টা হিসেবে তুলে ধরতে চায়, যাতে মানুষের আস্থা অর্জন করা যায়। এই আস্থা পরবর্তীতে তারা মূলত ব্যবহার করে তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্যে— বিভিন্ন খেলাধুলার ম্যাচ রেজাল্ট তারা জানে কিংবা ম্যাচ ফিক্সড জুয়ায় বিশ্বাস করিয়ে লোকজনকে জুয়ার ফাঁদে ফেলতে।
সারাবিশ্বকে বিবেচনায় নিয়ে যখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটনার সতর্কতা দেয়া হয়, তখন সামনের কিছুদিনের মধ্যে বিশ্বের কোথাও না কোথাও অনুরূপ কোন দুর্ঘটনা ঘটাও অস্বাভাবিক নয়। যেহেতু ভাবন ধস ঘটনা ঘটে, সেহেতু এরূপ ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকেই। উদাহরণস্বরূপ, মাইলস্টোন দুর্ঘটনার দিনেই ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে একটি প্রাইমারি স্কুলের দেয়াল ধসে একজন শিক্ষার্থী নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এমন ঘটনা প্রায়ই কোথাও না কোথাও ঘটে, তাই কেউ যদি এমন ‘ওপেন এন্ডেড’ প্রেডিকশন দিয়ে বলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অমুক দুর্ঘটনা ঘটবে, তবে সেটি গুরুত্ব পাওয়ার মত কিছু নয়
এদিকে কেউ কেউ Anonymous Main Page নামের ফেসবুক পেজটিকে সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানের কেলেঙ্কারি উন্মোচনকারী Anonymous Global South-এর সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করছেন। তবে এ দুই পেজের মধ্যে কোনো সম্পর্কের কোনো প্রমাণ মেলেনি এবং তারা এক নয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে Anonymous Global South-এর একটি বক্তব্য জানতে চেয়েছিল রিউমর স্ক্যানার। জুলকারনাইন সায়ের আমাদের জানান, তিনি বিষয়টি নিয়ে Anonymous Global South-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং তারা জানিয়েছেন, পেজটি সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। তবে তারা বলেছে, এটা সম্ভবত একটি স্ক্যাম সাইট, যেটি মানুষকে ঠকানোর উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে।
মজার ব্যাপার হলো, Anonymous Main Page গতকাল তাদের অন্যান্য পেজে সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের-এর প্রকাশিত Anonymous Global South-এর ৮ জুলাইয়ের ভিডিও বার্তাটি ডাউনলোড করে লাইভ সম্প্রচার করেছে এবং ভিডিও পোস্ট করেছে। পুরোনো ভিডিও লাইভ করার বিষয় থেকে বোঝা যায়, তারা নিজেকে ওই বার্তা প্রস্তুতকারী হিসেবে উপস্থাপন করে কৃতিত্ব নিতে চেয়েছে কিংবা নিজেদের মিথ্যা ভাবে Anonymous Global South হিসেবে তুলে ধরেছে।
Screenshot: The fraudulent Anonymous network streaming live and reposting an old video on July 22, which was originally published on July 8 by Zulkarnain Saer on behalf of Anonymous Global South.
এদিকে প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, Anonymous Main Page মূলত নাইজেরিয়ানদের দ্বারা পরিচালিত একটি প্ল্যাটফর্ম, এবং এর অধিকাংশ পোস্টই নাইজেরিয়া এবং আফ্রিকা কেন্দ্রিক।
ফেসবুক পেজটির পেজ ট্রান্সপারেন্সি থেকে দেখা যায় এটি নাইজেরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিচালিত হচ্ছে এবং আরেকজন এডমিনের অবস্থান গোপন রাখা ছিল।
Probfly IT নামের একটি বাংলাদেশি সাইবার দল Anonymous Main Page-এর এডমিন তালিকা প্রকাশের দাবি করেছে। একটি পোস্টে তারা ওই পেজটির তিনজন এডমিন এবং একজন এডিটরের ফেসবুক প্রোফাইলের লিংক প্রকাশ করে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অন্তত দুটি প্রোফাইলের মালিকই নাইজেরিয়ান। যদিও বর্তমানে ওই অ্যাকাউন্টগুলো এবং পেজটি ফেসবুকে পাওয়া যাচ্ছে না। এডমিন তালিকা প্রকাশের কিছু সময় পরই পেজটি এবং সংশ্লিষ্ট আইডিগুলো মুছে ফেলা হয়েছে কিংবা বাংলাদেশি সাইবার টিমগুলো রিপোর্ট করে সেগুলো সরিয়ে ফেলেছে।
পেজটি সক্রিয় থাকাকালে তাদের কনটেন্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়, এটি মূলত অনলাইন ফুটবল জুয়াড়িদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হতো। নিজেদের ‘ফিক্সড ম্যাচ’-এর তথ্যদাতা এবং ভবিষ্যদ্বক্তা হিসেবে উপস্থাপন করে তারা লোকজনের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করত। বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে তারা আগাম ফলাফল জানার দাবি, নানা ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ এবং ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচার করত। এসব কৌশলে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জুয়ার ফাঁদে ফেলে আর্থিক প্রতারণা করা হতো।
তাদের পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করার সময় দেখা যায় যে, এই পেজে বিভিন্ন ব্যক্তিদের (অধিকাংশ আফ্রিকান, বিশেষভাবে নাইজেরিয়ান) লক্ষ্য করে নিয়মিত এক্সপোজিশনমূলক পোস্ট করে থাকে। যেমন, একটি পোস্টে একজন ব্যক্তির ফেসবুক প্রোফাইলের স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে বলে, “এই ব্যক্তির কিডনি তিন দিনের মধ্যে অকেজো হয়ে যাবে।” আরেকটিতে, একজন ভারতীয় ব্যক্তির প্রোফাইল স্ক্রিনশট যুক্ত করে তাকে ভয়াবহ প্রতারক হিসেবে উল্লেখ করে বলে, “এই লোকটির মৃত্যু হবে সড়ক দুর্ঘটনায় শিরচ্ছেদ হয়ে।” ( বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে এরূপ পোস্ট করার কারণ আমরা পরবর্তীতে নাইজেরিয়া ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম হিউম্যান অ্যাঙ্গেলের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে জেনেছি। এই চক্রের বিরোধিতাকারীদের তারা এভাবে পোস্ট করে হেনস্থা করে, তাদের পেজে এরকম অনেক পোস্ট দেখা গেছে)
আরেক পোস্টে পেজটি গুলি করে নাইজেরিয়ার এক ব্যক্তিকে হত্যার ভিডিও শেয়ার করে দাবি করে “আমরা তাকে বলেছিলাম ঘরে থাকতে, সে শোনেনি, তাই সে মারা গেছে।” তারা এমনভাবে উপস্থাপন করে যেন ওই মৃত্যুর পূর্বাভাস তারা আগেই দিয়েছিল। তবে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে তারা আগে কোনো সতর্কবার্তা পোস্ট দিয়েছিল কিনা তা খুঁজে দেখার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, তারা ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার ভিডিওকে তার মৃত্যু সম্পর্কে নিজেরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল বলে প্রচার করেছে, যাতে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা ও ‘ভবিষ্যৎ জানার ক্ষমতা’ প্রতিষ্ঠা করা যায়। এটি মূলত তাদের একটি কৌশল, যা মানুষকে প্রভাবিত ও বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা যখন Anonymous Main Page-এর পোস্ট ব্যাপকভাবে শেয়ার করে ভাইরাল করে এবং পেজটির ফলোয়ার যখন দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে, তখন লক্ষ্য করা যায় পেজটি বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে স্পষ্ট ও ভীতিকর অনুমানমূলক পোস্ট দিতে শুরু করে। তারা পোস্ট করে, “কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের মার্কেটে বোমা ব্লাস্ট হবে,” এবং আরও নির্দিষ্ট করে “গাউসিয়া মার্কেটে বোম্ব ব্লাস্ট হবে”— এমন শিরোনামে পোস্ট দেয়। এসব পোস্ট জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং সেগুলিও শেয়ার হতে থাকে।
এই সুযোগে তারা তাদের অন্যান্য পেজে ফলোয়ার বাড়ানোর লক্ষ্যে ঐসব পেজ প্রমোট করতে শুরু করে এবং ফলো করতে বলে। এতে ধারণা করা যায়, বাংলাদেশের বিপুল অনলাইন রিচ এবং জনগণের প্রতিক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে তারা বাংলাদেশকে টার্গেট করে পোস্ট তৈরি করছে, যাতে আরও লাইক, শেয়ার ও ফলোয়ার পাওয়া যায়। পেজটি মূলত এ পর্যায়ে সচেতনভাবে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের মনোযোগ ও উদ্বেগকে পুঁজি করে আলোচনায় আসা ও সোশ্যাল মিডিয়া প্রমোটের কৌশল হিসেবে ভুয়া বা আতঙ্কমূলক অনুমান দিতে শুরু করে।
এই পর্যায়ে এই পেজটি সম্পর্কে কোন প্রতিবেদন আছে কিনা তা প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি ওয়ার্ডের মাধ্যমে গুগলে অনুসন্ধান করা হলে, এই আনোনিমাস নেটওয়ার্ক নিয়ে নাইজেরিয়ার গণমাধ্যম হিউম্যান অ্যাঙ্গেল এর ২০২৪ সালের একটি বিস্তর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। “The Facebook Network Using Prophecies And Disinformation To Swindle Nigerians” শিরোনামে ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে নাইজেরিয়া ভিত্তিক প্রতারণামূলক ফেসবুক নেটওয়ার্ক “আনোনিমাস” এর কার্যক্রম ও প্রতারণার কৌশলসমূহ তুলে ধরে।
প্রতিবেদনটির সাবহেডে লেখা হয়— “আনোনিমাস চায় আপনি স্পোর্টস বেটিং টিকেটে শত শত ডলার খরচ করুন—যেগুলোতে বিশাল জয়ের নিশ্চয়তা আছে। আপনি (বাজি ধরতে) দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারেন, সেটাও তারা জানে। তাই আপনাকে প্রলুব্ধ করাতে আনোনিমাস প্রস্তুত করেছে ছলচাতুরি এবং প্রলোভনের নানান কৌশল।”
হিউম্যান অ্যাঙ্গেলের অনুসন্ধানে বলেছে, নাইজেরিয়ায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র ফেসবুকে ‘Anonymous’ নামে পরিচিত আন্তর্জাতিক হ্যাকার ও হ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপের পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস আদায়ের ফাঁদ তৈরি করেছে। এই ভুয়া নেটওয়ার্ক আসল Anonymous-এর মতো হ্যাকার মাস্ক, “We are Anonymous. We are Legion” স্লোগান ও বিদেশি ব্যক্তিদের ছবি/ভিডিও ব্যবহার করে নিজেদের আসল হিসেবে তুলে ধরে। ছদ্মবেশী এ চক্রটি তাদের বিভিন্ন ফেসবুক পেজে নিয়মিতভাবে ভবিষ্যদ্বাণী, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, ভুয়া হ্যাকিং এর ভিডিও প্রকাশসহ বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে। এসব কনটেন্টের মাধ্যমে তারা অনুসারীদের কৌতূহল ও বিশ্বাস অর্জন করে। পরে সেই বিশ্বাস ব্যবহার করে উচ্চ মূল্যের ‘ফিক্সড’ ফুটবল ম্যাচের টিকিট বিক্রি করে, যেখানে নিশ্চিত জয়ের প্রতিশ্রুতি কিংবা প্রলোভন থাকে।
চক্রটি নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের জন্য সফলতার গল্পও সাজায়, যেখানে তারা ব্যবহার করে ভুয়া রিভিউ, স্ক্রিনশট এবং ফেসবুক পোস্টে আর্টিফিশিয়াল কমেন্ট। তাদের মাধ্যমে বেটিং করে মোটা অঙ্কের টাকা জয়ের দাবি করে শেয়ার করা হয় স্ক্রিনশট ও রিভিউ, যা মূলত তাদের নিজেদেরই ছদ্মবেশী অ্যাকাউন্ট থেকে তৈরি। এই চক্রের মূল নাইজেরিয়ানরা হলেও তারা নিজেদের নাইজেরিয়ার বাইরের হিসেবে তুলে ধরে। নাইজেরিয়াকে নিজেদের সাবেক দেশ হিসেবে উল্লেখ করে। এই চক্রের সাথে পশ্চিমা কেউ কেউও যুক্ত আছে। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করার জন্য বিদেশীদেরও রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা যায়।
“স্কুল ভবন ধসে শিশুর মৃত্যু হবে”—এমন অস্পষ্ট সতর্কবার্তামূলক পোস্টটিও ছিল তাদের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক প্রতারণার একটি কৌশল। পরবর্তীতে কাকতালীয়ভাবে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটলে, প্রতারক চক্র তাদের ‘ওপেন এন্ডেড’ অস্পষ্ট সতর্কবার্তার সঙ্গে এই ঘটনাটি জুড়ে প্রচার চালায়, বাংলাদেশীরাও ব্যাপকভাবে সেটা ভাইরাল করে।
যেহেতু তাদের মূল কৌশল হলো নিজেদের ভবিষ্যৎদ্রষ্টা হিসেবে উপস্থাপন করে বিশ্বাস অর্জন করা, যাতে ফিক্সড ম্যাচ জুয়ার ফাঁদে লোকজনকে ফেলা যায়। এজন্য তারা মাইলস্টোন বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাকে “আগেই বলেছিলাম” দাবি করে ভবিষ্যদ্বাণীর ক্রেডিট নিতে চায়।
কিন্তু, না তাদের পোস্টে বাংলাদেশের মাইলস্টোন বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার কোনো ইঙ্গিত আছে, না তারা কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস।
বাস্তবতা হলো, এটি নাইজেরিয়ার একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের পরিকল্পিত ছলচাতুরি। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে অস্পষ্ট, সময়-স্থানহীন সতর্কবার্তা বা ভবিষ্যদ্বাণী ছড়িয়ে দেয়, যাতে পরে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে সেটিকে মিলে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
মাইলস্টোনের ঘটনাটি তাদের প্রতারণার এই কৌশলের শিকার হয়েছে। তারা দুর্ঘটনাটিকে নিজেদের আস্থা গড়ার উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে এবং অনেকেই না বুঝেই তাদের প্রতারণামূলক কৌশলকে মাইলস্টোন দুর্ঘটনার ‘সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী’ বলে প্রচার করে। ফলে এক বেদনাদায়ক ঘটনার আবেগকে ঘিরে সৃষ্টি হয় ব্যাপক বিভ্রান্তি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্যতম ট্র্যাজিক দুর্ঘটনাটি ব্যবহৃত হয় ভিনদেশি প্রতারক চক্রের প্রতারণামূলক কৌশলের উদাহরণ হিসেবে।
সম্প্রতি ‘Muhammad Yunus New Banglsdesh. In Bhaluka, Mymensingh, Bangladesh, an unusual incident took place where four brothers from the same family married the one Girl.’ ক্যাপশনে ‘বাংলাদেশের ময়মনসিংহে একই পরিবারের চার ভাই একজন নারীকে বিয়ে করেছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও একাধিক ভারতীয় এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার করা হয়েছে৷
ভিডিওটিতে আলোচিত চার পুরুষ ও এক নারীকে তাদের কারণ ও মতামত বর্ণনা করতে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের ময়মনসিংহে একই পরিবারের চার ভাই একজন নারীকে বিয়ে করেছে শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সত্য কোনো ঘটনার নয় বরং, একটি স্ক্রিপ্টেড বা অভিনীত ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটির শিরোনামে ‘Short film 2025’ উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, Disha 24 নামক এই ইউটিউব চ্যানেলটির বিবরণীতে গিয়ে দেখা যায়, চ্যানেলটিতে বাংলা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও বাংলা নাটক প্রদর্শন করা হয়ে থাকে।
পরবর্তীতে, Village life3 নামক ফেসবুক পেজে গত ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত পোস্টে ‘চার ভাইয়ের এক বউ, অতঃপর’ ক্যাপশনে একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ফেসবুক পেজটি (Village life3) পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পেজটিকে ‘Reel creator’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এটি থেকে নিয়মিত বিনোদনমূলক কনটেন্ট প্রচার করা হয়।
উল্লেখ্য, পেজটিতে (Village life3) এমন দুটি পৃথক ভিডিও খুঁজে পাওয়া গেছে যেখানে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা দুইজন পুরুষ উক্ত নারীকে যথাক্রমে তার শ্যালিকা ও তার ছোট বোন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।
অর্থাৎ, পেজটি পর্যবেক্ষণ করে এটা নিশ্চিত যে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড।
সুতরাং, বাংলাদেশের ময়মনসিংহে একই পরিবারের চার ভাই একজন নারীকে বিয়ে করেছে দাবিতে স্ক্রিপ্টেড ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।