গত ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম ওরফে সাগর নিহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘Sumaiya Nasrin Sumu’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের দুটি পোস্টের স্ক্রিনশট কোলাজ প্রচার করে সামাজিক মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, এই নারী নিহত পাইলটের স্ত্রী। কোলাজটিতে দেখা যায়, ওই ফেসবুক প্রোফাইল থেকে গত বছরের ৩০ জুলাই ‘তোমার স্বজন হারানোর বেদনা আমরা চুদি না’ ক্যাপশনে একটি পোস্ট করা হয়েছিল।
এছাড়া সম্প্রতি ওই অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া আরেকটি পোস্টে দেখা যায়, ব্যবহারকারী নারী তার স্বামী ‘Ashfaqur Rumon’-এর মৃত্যুর কথা জানাচ্ছেন। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত দাবিতে বলা হচ্ছে, গত বছরের পোস্টটি তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে দিয়েছিলেন।

এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সুমাইয়া নাসরিন সুমু নামের এই নারী নিহত বিমানবাহিনীর পাইলট তৌকির ইসলাম সাগরের স্ত্রী নন। বরং, তৌকিরের স্ত্রীর নাম আকশা আহম্মেদ নিঝুম। তারা দুইজন সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে পাইলট তৌকিরের মৃত্যুর খবর নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। ২১ জুলাই ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তৌকিরের স্ত্রীর নাম আকশা আহম্মেদ নিঝুম এবং তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
অন্যদিকে, প্রচারিত স্ক্রিনশটে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীর নাম সুমাইয়া নাসরিন সুমু এবং তার স্বামীর নাম আশফাকুর রুমন।
বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় রিউমর স্ক্যানার ‘Sumaiya Nasrin Sumu’ নামের ফেসবুক প্রোফাইলটি খুঁজে বের করে। প্রোফাইলের ‘About’ সেকশনে দেখা যায়, তিনি Sun Communications Limited-এ চাকরি করেন। তবে প্রোফাইলটি বর্তমানে লক থাকায় আলোচিত পোস্টগুলো যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

তবে, স্ক্রিনশটে ব্যবহৃত পোস্টে উল্লিখিত আশফাকুর রুমনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। ওই অ্যাকাউন্টে ২৩ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্টে লেখা হয়: আমি সুমাইয়া নাসরিন সুমু, আশফাকুর রুমনের স্ত্রী। তিনি এখন আমাদের মাঝে নেই। তাই আমি আপনাদের সবার কাছে শুধু একটি অনুরোধ করছি, দয়া করে তাকে আপনাদের প্রার্থনায় রাখবেন। আমি জানি না, তার অ্যাকাউন্ট আর কতদিন সক্রিয় রাখব। তাই একসময় যখন অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেব, তখন তাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে স্মরণ করবেন।

আশফাকুর রুমনের প্রোফাইল অনুযায়ী, তিনি KITE নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পড়াশোনা করেছেন। তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন এবং তার স্থায়ী ঠিকানা ছিল কিশোরগঞ্জ।
তবে, বাসসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাজশাহীর উপশহরে পরিবারের বর্তমান নিবাস হলেও নিহত পাইলট তৌকির ইসলামের আদি বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামে। তিনি রাজশাহী গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন।
এছাড়া, ‘Mukta Barai’ নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইলে ২২ জুলাই প্রকাশিত এক পোস্টে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের একটি শোকবার্তা পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, আশফাকুর রুমন ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাবেক নেতা এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৯৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি ২১ জুলাই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
অর্থাৎ, নিহত পাইলট তৌকির ইসলামের সঙ্গে সুমাইয়া নাসরিন সুমুর কোনো সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, সুমাইয়া নাসরিন সুমু নামের এক ভিন্ন নারীকে উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত বিমানবাহিনীর পাইলট তৌকির ইসলামের স্ত্রী দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s analysis
- Sumaiya Nasrin Sumu: Facebook Profile
- Ashfaqur Rumon: Facebook Profile
- Ashfaqur Rumon: Facebook Profile
- Dhaka Post: বিয়ের এক বছরের মাথায় বিমান দুর্ঘটনায় চলে গেলেন পাইলট তৌকির
- BSS: বৈমানিক তৌকিরের মৃত্যুতে কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামে শোকের ছায়া