সম্প্রতি, একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, দুই বাসের বেপরোয়া ওভারটেকিংয়ের কারণে উক্ত দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। ভিডিওটিতে ওই মোটরসাইকেলটিকে আরোহীসহ দুই বাসের মাঝে চাপা পড়তে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার আলোচিত ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। পর্যালোচনায় ভিডিওটিতে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম সময় টেলিভিশনের একটি লোগো দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে সময় টিভির ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল এবং ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করেও এমন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কোনো সংবাদ বা ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও সময় টিভির প্রতিবেদনে ব্যবহৃত সময় টিভির লোগোর অ্যানিমেশনের সাথে আলোচিত ভিডিওর লোগোর অ্যানিমেশনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আলোচিত ভিডিওর ‘সময়’ লেখা লোগোটির অক্ষরগুলো উল্লম্বিকভাবে ঘুরতে দেখা যায়।
অপরদিকে সময় টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদনের লোগোর অক্ষরগুলো অনুভূমিকভাবে ঘুরতে দেখা যায়। এছাড়াও সময়টিভির লোগোতে ‘সময়’ লেখার নিচে পৃথিবীর মানটিত্র রয়েছে।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওর কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানে KN Dream Drive নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২৬ জুন আলোচিত ভিডিওটির একটি বর্ধিত সংস্করণ প্রচারিত হতে দেখা যায়।
উক্ত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে এতে বেশকিছু এআই সংক্রান্ত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওটিতে একটি সিএনজিকে অস্বাভাবিকভাবে উল্টো হয়ে চলতে দেখা যায়। এছাড়াও বাইককে চাপা দেওয়া দুটি বাসের একটি বাসের দুই দিকেই ফ্রন্ট ভিউ দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, উভয় দিকেই বাসের সামনের অংশ রয়েছে।
এছাড়াও ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘MINIMAX | Hailuo Ai’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Hailuo Ai’ মিনিম্যাক্স নামের একটি চাইনিজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠানের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৬ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৬ সেকেন্ড।
বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম Cantilux এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৭৭ শতাংশ।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার আসল ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
আজ (৩০ জুলাই) দুপুর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পোস্টে পুলিশের সাথে একজন বৃদ্ধের কয়েকটি ছবি প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “এই বৃদ্ধ লোক কে দেখে কি কোনো ভাবে মনে হয় তিনি জুলাই আগস্টে ছাত্রদের সাথে ঝামেলা করেছে,তার বয়স ১২০ বছর,অথচ তাকে গ্রেফতার করা হলো”।
অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার কারণে প্রায় ১২০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিতে প্রদর্শিত প্রায় ১২০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধকে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার কারণে পুলিশ গ্রেফতার করেনি বরং, ২০০৩ সালের এক হত্যা মামলায় আলোচিত বৃদ্ধ ইদ্রিস শেখ কারাগারে আছেন। এই মামলায় বৃদ্ধ ইদ্রিস শেখের রায়ও হয়েছে ২০১৫ সালে।
অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র ইউটিউব চ্যানেলে আজ (৩০ জুলাই) “লাঠি হাতে আদালতে শতবর্ষী ইদ্রিস শেখ, প্রিজন ভ্যানে বাবাকে দেখেই কেঁদে ফেললেন ছেলে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর মিল পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ছবিগুলো মূলত উক্ত ঘটনার ভিডিওটি থেকেই নেওয়া হয়েছে।
ভিডিওটিতে বলা হয়, প্রচারিত দৃশ্য গত ২৯ জুলাইয়ের। প্রদর্শিত বৃদ্ধের নাম ইদ্রিস শেখ। বৃদ্ধ ও বৃদ্ধের ছেলের দাবি অনুসারে ইদ্রিস শেখের বয়স ১২০ বছর। এছাড়াও, ভিডিওটিতে ইদ্রিসের আত্মীয়কে বলতে শোনা যায়, ২০০৩ সালের একটি হত্যা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইদ্রিস শেখ কারাগারে আছেন।
পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে ‘প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে “আসামি শতবর্ষী ইদ্রিস শেখের আদালতে হাজিরা ও প্রিজন ভ্যানে যাত্রা” শীর্ষক শিরোনামে আজ (৩০ জুলাই) এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘ইদ্রিস শেখ হাজতখানার ভেতরে ঢুকে যান। তখন হাজতখানার সামনেই অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁর ছেলে বাবুল শেখ। বাবুল তখন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমারই বয়স এখন ৭০ বছর। আমরা পাঁচ ভাই–বোন ছিলাম। আমার আরও তিন ভাই মারা গেছে। আমার বাবার বয়সী কোনো লোক এলাকায় বেঁচে নেই। বহু বছর আগে একটি খুনের মামলায় আমার বাবাকে জড়ানো হয়েছিল। সেই মামলার ঘানি টেনে চলেছেন উনি।’
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, মামলার নথিপত্রের তথ্যমতে, ইদ্রিস শেখদের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর থানার শেখেরটেক এলাকায়। ২২ বছর আগে সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় জনৈক শামসুল হক হাওলাদার ও সিরাজুল হক মোল্লার পরিবারের মধ্যে বিরোধ ছিল। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন শামসুল হক হাওলাদার। পূর্ববিরোধ ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০০৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি শেখেরটেক এলাকায় শামসুল হক হাওলাদার ও সিরাজুল হক মোল্লার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। শামসুল হক হাওলাদারের লোকজন ৩০ থেকে ৩৫ জনকে গুলি করে। ঘটনাস্থলেই সৈয়দ আলী ও সুলেমান মোল্লা নামে দুজন নিহত হন। গুরুতর জখম হন আরও ৩০ জন। এই ঘটনায় সৈয়দ আলী ও সুলেমান মোল্লার পরিবার রাজৈর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
এই মামলাটি তদন্ত করে সে বছরের আগস্ট মাসে শামসুল হক হাওলাদারসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। সেই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের ১০ নভেম্বর মাদারীপুরের আদালত অভিযোগ গঠন করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ২০১০ সালে মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেজেট হওয়ার পর ২০১০ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল-১ আদালতে বদলি হয়। প্রায় পাঁচ বছর সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তি–তর্ক শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর রায় দেন বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন। রায়ে এ মামলায় চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় একজনকে। আর ইদ্রিস শেখসহ নয়জনকে দেওয়া হয় ১০ বছর করে কারাদণ্ড। ইদ্রিস শেখের বিরুদ্ধে গুরুতর জখম করার অভিযোগ আনা হয়। রায়ের বিবরণ অনুযায়ী, রায়ের দিন ইদ্রিস শেখ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।”
অর্থাৎ, ২০০৩ সালের এক হত্যা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আটক আছেন। তাছাড়া, তার কারাবাসের রায়ও জুলাই আন্দোলনের আগেই হয়েছে।
সুতরাং, ২০০৩ সালের এক হত্যা মামলায় ইদ্রিস শেখ নামের এক বৃদ্ধের কারাগারে আটক থাকার ঘটনাকে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন নিহত হন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে দাবি প্রচার করা হয়েছে যে “গোপালগঞ্জ গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ”।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনার বিষয়ে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এখন অবধি কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইসিআরএফ) নামের একটি সংস্থার পক্ষ থেকে গোপালগঞ্জের ঘটনাকে গণহত্যা উল্লেখ করে জাতিসংঘের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। গোপালগঞ্জের ঘটনায় জাতিসংঘ গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে এরূপ তথ্য জাতিসংঘ বা জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট কারোর পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো। এছাড়া, জাতিসংঘের মূল ওয়েবসাইট ও
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) এর ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেও আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে অনুসন্ধানে ভারতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ফার্স্ট পোস্ট’ এর ওয়েবসাইটে “Bangladesh: Gopalganj violence reaches UN with ‘genocide’ allegations, Army’s role questioned” শীর্ষক শিরোনামে গত ১৭ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “১৬ জুলাই বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ জেলা গোপালগঞ্জে শুরু হওয়া সংঘর্ষ এখন জাতিসংঘ পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা অভিযোগের ভিত্তিতে “গণহত্যা” হিসেবে বর্ণিত হচ্ছে। জাতিসংঘের নৈতিকতা দপ্তরে লেখা এক চিঠিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ গবেষণা ফাউন্ডেশন (ICRF) নামক একটি স্বাধীন বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতা, ঐতিহ্য ধ্বংস এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো তুলে ধরেছে।… চিঠিতে ICRF দাবি করেছে, এনসিপি নেতারা হাজার হাজার সমর্থক নিয়ে গোপালগঞ্জে প্রবেশ করে, এবং তাদের সমাবেশের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবরস্থানকে অবমাননা ও ধ্বংস করা।… ICRF গোপালগঞ্জ সংকট নিয়ে একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটি জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন, যেমন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় জবাবদিহি করা হয়।..” (অনূদিত)
জাতিসংঘে আইসিআরএফের চিঠি দেওয়ার বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ১৮’ এর ওয়েবসাইটেও প্রতিবেদন প্রকাশ হতে দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, ‘ফার্স্টপোস্ট’ এর প্রতিবেদনে চিঠিটির একাংশের ছবিও সংযুক্ত করা হয় যেখানে ‘আইসিআরএফ’ এর লোগোরও সংযুক্তি পাওয়া যায়। পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইসিআরএফ) নামে কোনো স্বনামধন্য সংস্থা পাওয়া যায়নি। তবে, অনুসন্ধানে এই নাম এবং লোগো সম্বলিত একটি ফেসবুক পেজ পাওয়া যায়। ফেসবুক পেজটিতে সংস্থাটির একটি ওয়েবসাইটেরও সংযুক্তি পাওয়া যায় কিন্তু ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, পেজটি মূলত যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া থেকে পরিচালিত হয়। পেজটিতে চলতি বছরে কেবলমাত্র দুইটি পোস্ট করা হয়েছে যার মধ্যে একটি পোস্টে আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের লাইভ ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে।
অধিকতর অনুসন্ধান করলে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নিঝুম মজুমদারের লিংকড-ইনের প্রোফাইলে দেখা যায়, নিঝুম মজুমদার আইনগত বিশ্লেষক (Legal Analyst) হিসেবে ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ এ প্রায় ১১ বছর ধরে কর্মরত আছেন।
উল্লেখ্য, মূলধারার গণমাধ্যম ‘দ্য ডেইলি স্টার’ এর ওয়েবসাইটে গত ২৫ জুলাইয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গুলিতে পাঁচ নাগরিক নিহত, বহু সংখ্যক আহত এবং পরবর্তীতে গণআটক-গ্রেপ্তার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটির চার সদস্যের প্রতিনিধি দল দুই দিনব্যাপী প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধান শেষে বলছে, গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। এছাড়া, রাজনৈতিক সমাবেশে হামলার ঘটনা নাগরিকের সভা-সমাবেশের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে।
এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম ‘সমকাল’ এ গত ২৬ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সূত্রে জানা যায়, গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, প্রাণহানি এবং গণগ্রেপ্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ১১ জন পর্যবেক্ষণকারী নাগরিক। ২২ জুলাই গোপালগঞ্জ সফর শেষে শনিবার (২৬ জুলাই) এক বিবৃতিতে তারা সুষ্ঠু তদন্ত, মানবাধিকার রক্ষা এবং সংবিধান অনুযায়ী সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। পর্যবেক্ষণকারী এই নাগরিকেরা হলেন- আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, সাংবাদিক তাসনিম খলিল, শিল্পী বীথি ঘোষ, লেখক ফিরোজ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, মোশাহিদা সুলতানা এবং রুশাদ ফরিদী, আইনজীবী সারা হোসেন ও মানজুর আল মতিন এবং অধিকার কর্মী নাফিউল আলম সুপ্ত।
তবে, কোথাও গোপালগঞ্জে গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ শীর্ষক তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, গোপালগঞ্জের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ অভিযোগ করে চিঠি পাঠানো হলেও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ‘গণহত্যা’ জানিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
সুতরাং, গোপালগঞ্জে গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, “দিনমজুরের হুঁশিয়ারি — জনগণের মন জিততে এখনো সময় আছে!” #BanglaStreetVoice #দিনমজুরেরকথা #PoliticalRealism #GrassrootsTruth #VoiceOfPeople #বাংলারপ্রতিধ্বনি #AwamiLeague #NirapottaChai” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটিতে একজন ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “আওয়ামী লীগ হয়তো একদিন এমনভাবে ফিরে আসতেছে তখন আপনাদের কেয়ামত পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। এখনো সময় আছে ভাই জনগণের মন জয় করার চেষ্টা করেন।”
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের ফিরে আসা ও জনগণের মন জয় করা সম্পর্কে এক ব্যক্তির বক্তব্যের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটি আসল নয়; বরং এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে কথা বলা ব্যক্তির পেছনে থাকা ব্যক্তিকে নড়াচড়া কিংবা চোখের পলক ফেলতে দেখা যায়নি এবং বক্তব্য দেয়া ব্যক্তির মুখ নড়লেও চোখের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি কনটেন্টে দেখা যায়।
এছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ হলো গুগলের একটি অত্যাধুনিক এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই টুল দিয়ে তৈরি ভিডিওতে সাধারণত ‘Veo’ জলছাপ থাকে। এই ভিডিওটিতেও ‘Veo’ জলছাপ রয়েছে এবং এর দৈর্ঘ্য ৮ সেকেন্ড।
Screenshot: Claimed Video
পরবর্তীতে, বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে ভিডিওটি এআই (AI) কন্টেন্ট ডিটেকশন টুল ‘Cantilux’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
Screenshot From Cantilux
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওকে আওয়ামী লীগের ফিরে আসা ও জনগণের মন জয় করা সম্পর্কে এক ব্যক্তির বক্তব্যের দৃশ্য দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।
সম্প্রতি ‘বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ঘোষণা। ইরানের এসেম্বলিতে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল হিউমার সম্মেলনে পেরুর প্রেসিডেন্ট এমারসন গ্যোটের বর্টির বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ঘোষণা করেছেন।’ ক্যাপশনে একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইরানের সংসদ ইসলামিক কনসালটেটিভ অ্যাসেম্বলিতে ‘গ্লোবাল হিউমার সম্মেলন’ নামে কোনো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি এবং কথিত পেরুর প্রেসিডেন্ট এমারসন গ্যোটের বর্টির কর্তৃক বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার নাম ঘোষণা করা হয়নি। এছাড়া, উক্ত অনুষ্ঠানে কথিত ঘোষণার ছবি দাবিতে মালির মন্ত্রী পরিষদের একাংশের সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের পুরোনো ছবি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।
ছবি যাচাই-১, ২
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির প্রধানমন্ত্রীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ২০১৯ সালের ২০ মে প্রকাশিত পোস্টে কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের সর্বশেষ দুটি ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রথম ও দ্বিতীয় ছবির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Comparison: Rumor Scanner
পোস্টটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এসব ছবি সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক সরকারি কর্ম সফরে মালির প্রধানমন্ত্রীর আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী মিসেস রিম ইব্রাহিম আল হাশিমির সাথে সাক্ষাতের সময়ের।
ছবি যাচাই– ৩
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মালির প্রধানমন্ত্রীর অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে ২০১৯ সালের ১৯ মে প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত তৃতীয় ছবিটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Comparison: Rumor Scanner
পোস্টটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ছবিটি আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদের আমন্ত্রণে মালির প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর ২০১৯ সালের ১৯ থেকে ২১ মে পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি কর্ম সফরের চিত্র।
উল্লেখ্য, ইরানের সংসদ ইসলামিক কনসালটেটিভ অ্যাসেম্বলিতে ‘গ্লোবাল হিউমার সম্মেলন’ নামে কোনো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। এছাড়া, পেরুর বর্তমান প্রেসিডেন্টের নাম দিনা বলুয়ার্তে, এমারসন গ্যোটের বর্টির নয়। তাই, ইরানের সংসদ ইসলামিক কনসালটেটিভ অ্যাসেম্বলিতে ‘গ্লোবাল হিউমার সম্মেলন’ নামক কথিত সম্মেলনে পেরুর প্রেসিডেন্টে এমারসন গ্যোটের বর্টির কর্তৃক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করার তথ্যটি বানোয়াট।
উল্লেখ্য, Tamanna Akhter Yesman নামে পরিচালিত এই ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ভুয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমিরর ছবি ব্যবহার করে এই ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে রাজনৈতিক প্রভাব তৈরির চেষ্টা নিয়ে গত ১৯ জুন বিস্তারিত ফ্যাক্টস্টোরি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ইরানের সংসদে অনুষ্ঠিত কথিত সম্মেলনে পেরুর কথিত প্রেসিডেন্ট এমারসন গ্যোটের বর্টির শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করার ছবি দাবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রী রিম আল হাশিমির সাথে মালির প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পুরোনো ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত মিছিলের ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং ২০২২ সালে নয়াপল্টন এলাকায় ছাত্রলীগের মিছিল-শোডাউনের দৃশ্যকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘প্রতিদিন খবর24’ নামক ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর ‘লাঠি হাতে ছাত্রলীগের মহড়া নয়াপল্টনে’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর ১ মিনিট ৪১ সেকেন্ড থেকে শেষ পর্যন্ত আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও, দেশিয় সংবাদমাধ্যম আমার সংবাদ এর ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর ‘পুলিশ-বিএনপি সংঘ’র্ষ!ছাত্রলীগের মিছিল-শোডাউন।নয়াপল্টন এলাকা রণ’ক্ষে’ত্রে পরিনত। সরাসরি…’ ক্যাপশনের একটি সরাসরি সম্প্রচরিত ভিডিও পাওয়া যায়।
রিউমর স্ক্যানারে বিশ্লেষণ দেখা যায়, ‘প্রতিদিন খবর24’ এর ফেসবুক পেজে পাওয়া ভিডিওর সাথে আমার সংবাদ এর ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিডিওর ঘটনার মিল রয়েছে।
সে সময়ের ঢাকা টাইমসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের আশেপাশে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্পসহ বিভিন্ন ধরনের লাঠি হাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মহড়া দিতে দেখা গেছে। বুধবার (২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টার পর ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মীকে মহড়া দিতে দেখা যায়। পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের একপর্যায়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা লাঠি হাতে স্লোগান দিতে থাকে। ছাত্রলীগ কর্মীরা বিএনপিকে রাজপথে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। নয়াপল্টন থেকে বিএনপি কীভাবে সরকার পতনের দাবি তোলে তা তারা দেখে নেবে বলেও জানায় সাংবাদিকদের। এ সময় তাদেরকে বিএনপির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়।’
সুতরাং, ২০২২ সালের নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের আশেপাশে লাঠি হাতে ছাত্রলীগের মহড়ার দৃশ্যকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, “যে খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখনো প্রচার করে নাই। গতকাল ইউনূসের তিনজন উপদেষ্টা পদত্যাগ করেছেন। যারা পদত্যাগ করেছেন তারা হলেন – (১) শিক্ষা উপদেষ্টা – সি আর আবরার (২) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা – অধ্যাপক ডা: বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার (৩) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা – ফারুক-ই-আজম”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষা উপদেষ্টা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার পদত্যাগ করার দাবিটি সঠিক নয়৷ প্রকৃতপক্ষে কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম ‘বাংলা ট্রিবিউন’ এর ওয়েবসাইটে আজ (৩০ জুলাই) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য শিক্ষক, বাবা ও মা অনেক পরিশ্রম করে থাকেন, তাই শিক্ষক, বাবা ও মাকে ফুল কিনে দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে ২০২২ ও ২০২৩ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।” অর্থাৎ, গতকালও (২৯ জুলাই) শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে ড. সি আর আবরার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে আলোচিত দাবিটি এর প্রায় ৩ দিন আগে গত ২৬ জুলাই প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়াও, অনুসন্ধানে সরকারি গণমাধ্যম ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’র ওয়েবসাইটে গত ২৮ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। সোমবার (২৮ জুলাই) ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দনকরণ প্রকল্পে’র আওতায় ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।” অর্থাৎ, আলোচিত দাবিটি প্রচারের প্রায় ২ দিন পর গত ২৮ জুলাইও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার বিষয়ে অনুসন্ধানে সরকারি গণমাধ্যম ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’র ওয়েবসাইটে গত ২৬ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক বলেছেন, জুলাই যোদ্ধারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। বাংলাদেশ আজীবন তাদেরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। এ দেশের সরকার ও জনগণ তাদের ত্যাগের মর্যাদাকে সমুন্নত রেখে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে বলে আমার বিশ্বাস। আজ শনিবার (২৬ জুলাই) চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে ‘ওয়ারিয়র্স অব জুলাই, চট্টগ্রাম’ আয়োজিত জুলাই বর্ষপূর্তি উদযাপন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এইসব কথা বলেন।” অর্থাৎ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা গত ২৫ জুলাইয়ে পদত্যাগ করেছেন বলা হলেও এর পরেরদিন গত ২৬ জুলাইয়েও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে ফারুক-ই-আজমকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও মূলধারার গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কিছু পোস্টে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের ছবিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের ছবি দাবি করা হয়েছে। এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের ছবিকে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের ছবি দাবি করা হয়েছে।
সুতরাং, শিক্ষা উপদেষ্টা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
গতবছরের ১৪ জুলাই দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে একজন গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ‘মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এত ক্ষোভ কেন? তার মানে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা মেধাবী না। যত রাজাকারের বাচ্চারা, নাতি-পুতিরা হলো মেধাবী।’ শীর্ষক মন্তব্য করে ফেলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেসময় তার মন্তব্যটি ব্যাপক সমালোচিত হয়। সেদিন রাতেই দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার-স্বৈরাচার’ শীর্ষক স্লোগান দিতে শুরু করেন। যেটি পরবর্তীতে আন্দোলনের অন্যতম একটি স্লোগানে পরিণত হয়। সম্প্রতি, উক্ত স্লোগানের মত কিছুটা ভিন্ন আরেকটি স্লোগানের ভিডিও ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীদের ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, চাঁদাবাজ চাঁদাবাজ’ শীর্ষক স্লোগান দিতে শোনা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, চাঁদাবাজ চাঁদাবাজ’ শীর্ষক স্লোগান দেওয়ার ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্দোলনের ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। এতে ভিডিওটিতে কিছু এআই সংক্রান্ত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওতে দেখতে পাওয়া আন্দোলনকারীরা যখন হাত উঁচু করে স্লোগান দেয় তখন তাদের হাতে ডিস্টরশন লক্ষ্য করা যায়। পাশাপশি ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে ভিডিওটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করা হলে, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।
Screenshot: Cantilux
এছাড়াও ভিডিওটি পর্যালোচনায় এতে দেখতে পাওয়া বিল্ডিংগুলোর একটিতে DHAKA লেখা বিলবোর্ড দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো সূত্রে ঢাকা বা ঢাকার বাইরে এতবড় আন্দোলন সংগঠিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, চাঁদাবাজ চাঁদাবাজ’ শীর্ষক স্লোগান দেওয়ার বিষয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, চাঁদাবাজ চাঁদাবাজ’ শীর্ষক স্লোগানে দেশে সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া আন্দোলনের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি বাংলাদেশি অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানের ছবি দাবিতে ‘জাতির ক্রাশ প্রিয় ভাইরাল অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান’ ক্যাপশনে একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানের নয়। প্রকৃতপক্ষে, একজন ভারতীয় অভিনেত্রীর ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানের ফেসবুক পেজ ও ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট যাচাই করে আলোচিত ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে, telugu shoutouts নামক ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ০২ জুলাই প্রকাশিত পোস্টে একটি কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিগুলোর সাথে প্রচারিত ছবিগুলোর আংশিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিগুলোর সাথে এসব ছবিতে থাকা ব্যক্তির পোশাক, অঙ্গভঙ্গি ও পারিপার্শ্বিক সবকিছুর মিল রয়েছে কিন্তু ছবিগুলোতে থাকা নারীদের চেহারা ভিন্ন।
পোস্টটির ক্যাপশনে থাকা ‘@inayasulthanaofficial’ সূচক মেনশনের সূত্র ধরে ভারতীয় অভিনেত্রী দৌলত সুলতানার Doulath Sulthana নামক ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ২৮ জুন প্রকাশিত কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিগুলোর সাথে আলোচিত ছবিগুলোর আংশিক মিল রয়েছে।
Comparison by Rumor Scanner
ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রতীয়মান হয়, দৌলত সুলতানার এসব ছবিতে তার মুখমণ্ডলের স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সাদিয়া আয়মানের মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো সম্পাদিত।
সম্প্রতি, ‘ভারতে সূর্য দেবতার অপমান হচ্ছে মনে করে সরকারি সোলার ভেঙে ফেলছে সাধারণ মানুষ’ – এই দাবিতে একটি ভিডিও ও একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতে সূর্য দেবতার অপমান হচ্ছে মনে করে সাধারণ মানুষের সরকারি সোলার প্ল্যান্ট ভেঙে ফেলার দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের মহারাষ্ট্রের চালিসগাঁওয়ে অবস্থিত একটি ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেতন না পাওয়ার কারণে সেই প্ল্যান্টের কর্মরত শ্রমিকরা ভাঙচুর করেছিল। উক্ত ঘটনার ভিডিও দিয়ে সম্প্রতি আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সেই সময়ের ঘটনার ভিডিও থেকে ফ্রেম নিয়ে এআই প্রযুক্তি দিয়ে মডিফাই করা হয়েছে।
ভিডিওটি থেকে জানা যায়, শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ না করায় ভারতের মহারাস্ট্রের চালিসগাঁওয়ে অবস্থিত ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সৌর প্যানেল ভাঙচুর করা হয়েছিল।
Comparison : Rumor Scanner
সেই সময় তাদের ওয়েবসাইটেও একই তথ্যে ভিডিওটি প্রচার করা হয়। তাছাড়া, ‘Horizon 4 electronics’ নামের ইউটিউব চ্যানেলেও মহারাষ্ট্রের ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মজুরি পরিশোধ না করার কারণে ভাঙচুর করা হয়েছে দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করতে দেখা যায়।
‘Go News 24×7 India’ এর ইউটিউব চ্যানেলে এই বিষয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সংবাদটি থেকে জানা যায়, ভারতের মহারাষ্ট্রের চালিসগাঁওয়ে অবস্থিত ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বেতন না পাওয়ার কারণে সেই প্ল্যান্টে কর্মরত শ্রমিকরাই ভাঙচুর করেছে।
অর্থাৎ, ভারতের মহারাষ্ট্রের চালিসগাঁওয়ে অবস্থিত ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বেতন না পাওয়ার কারণে সেই প্ল্যান্টে কর্মরত শ্রমিকরাই ভাঙচুর করেছিল।
তবে, ভাঙচুর করা লোকটির পোশাক, পায়ের জুতা এবং হাতে থাকা হাতুড়ির মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আমাদের পর্যবেক্ষণে আলোচিত ছবিটি ভিডিও থেকে ফ্রেম নিয়ে এইআই দিয়ে মডিফাই করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
Comparison : Rumor Scanner
বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ছবিটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট সাইটইঞ্জিনে পরীক্ষা করা হয়। ওয়েবসাইটটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৬ শতাংশ।
Screenshot From Sightengine
গুজবটি সম্পর্কে
এই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান অল্ট নিউজ (Alt News), SM HoaxSlayer এবং ভারতের সংবাদ মাধ্যম ‘ThePrint’ -এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালেও ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হয়েছিল যে, বিজেপি সাংসদ অশোক সাক্সেনা বলেছেন, সৌরশক্তি ব্যবহার করলে সূর্যদেব রুষ্ট হন, আর এ কারণেই বিজেপি সমর্থকরা সৌর প্যানেল ধ্বংস করছে। তবে, প্রতিবেদনগুলো জানায়, অশোক সাক্সেনা নামে কোনো বিজেপির কোনো সাংসদ নেই এবং উল্লিখিত দাবিটিও সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া থাকায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মহারাষ্ট্রের চালিসগাঁওয়ে অবস্থিত একটি ১০০ মেগাওয়াট সৌর প্ল্যান্টে এই ভাঙচুর হয়েছিল
সুতরাং, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের মহারাষ্ট্রের চালিসগাঁওয়ে অবস্থিত একটি ১০০ মেগাওয়াট সৌর প্ল্যান্টে বেতন না পাওয়ার কারণে সেই প্ল্যান্টে কর্মরত শ্রমিক কর্তৃক ভাঙচুরের ঘটনাকে সম্প্রতি ভারতে সূর্য দেবতার অপমান হচ্ছে মনে করে সাধারণ মানুষ সরকারি সোলার প্ল্যান্ট ভেঙে ফেলছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।