Home Blog Page 359

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংঘর্ষকে ভারতে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা দাবিতে প্রচার

0

সম্প্রতি, ভারতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক নারীর কান্নার ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়, বরিশালের গৌরনদীতে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মুসলিমরা একজন হিন্দুর ওপর হামলা করেছে। পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মনির মিয়া নামের একজন মুসলিম ব্যক্তি ও তার দলবল ওই হিন্দু ব্যক্তিকে নির্যাতন করেছে এবং বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

রাজনৈতিক সংঘর্ষকে

উক্ত দাবিতে এক্সে ভাইরাল কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বরিশালের গৌরনদীতে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেনি বরং উক্ত উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত রাজনৈতিক হামলার ঘটনাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে সাম্প্রদায়িক হামলা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওতে কান্নারত এক নারীকে উক্ত হামলার বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায়। এ সময় তিনি বলেন, “ওরে হারিছের লোক ধরছে (হামলা করেছে)। এই উপজেলা নির্বাচন নিয়া সব ঝামেলা। ওরে বাঁচতে দেবে না। ওরে মারতে পারলে সব ক্লিয়ার”

অনুসন্ধানের মাধ্যমে কান্নারত এই নারীর পরিচয় শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি গৌরনদীর মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহত সৈকত গুহ’র স্ত্রী বিপাশা গুহ।

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে গত ০২ মে ‘গৌরনদীতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইউপি চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে  মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈকত গুহকে কুপিয়ে জখম করেছেন প্রতিপক্ষের লোকজন। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডে এই সংঘর্ষে আরও চারজন আহত হয়েছেন। সে সময় গুরুতর আহত দুজনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গৌরনদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মনির হোসেন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহসহ ১০-১৫ জন সমর্থক নিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের এক কর্মীর জানাজায় যাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছানোর পর কিছু সমর্থকের সঙ্গে দাঁড়িয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করছিলেন। এ সময় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হারিছুর রহমানের সমর্থক দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার সেখানে উপস্থিত হন। দেলোয়ার উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। সেখানে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

মনির হোসেন আরও বলেন, একপর্যায়ে যুবলীগ নেতা দেলোয়ারের সমর্থকেরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে মাহিলাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ, সমর্থক পলাশ হোসেন (২৭) ও মামুন খানকে (৩২) কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের সমর্থক ও বাটাজোর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কালু তালুকদার। পাল্টা অভিযোগ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পরিকল্পিতভাবে মাহিলাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ দেলোয়ার হোসেনকে লক্ষ্য করে পিস্তল দিয়ে গুলি করেন। এতে দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর ছেলে ইমতিয়াজ মাহমুদ আহত হন।

তবে সেখানে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি কিংবা স্থানীয় লোকজন গুলির কোনো শব্দ পাননি বলে জানিয়েছেন গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাজাহারুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মনির হোসেন মিয়া ও মাহিলাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ সমর্থকদের নিয়ে একটি জানাজায় যাওয়ার পথে বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডে ছবি তোলা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সৈকত গুহসহ তিনজন আহত হন। গুরুতর আহত সৈকত গুহ ও দেলোয়ার হোসেনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এছাড়াও মূলধারার গণমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে গত ০৩ মে ‘গৌরনদীতে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ইউপি চেয়ারম্যানসহ আহত ৪’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনে স্থানীয়দের বরাতে জানানো হয়, গৌরনদী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনির হোসেন মিয়ার পক্ষে কাজ করছেন মাহিলারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু। এতে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ও গৌরনদী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও হারিসুর রহমান পিকলুর ওপর ক্ষুব্ধ হন। 

গত ০২ মে রাতে পিকলু বাটাজোর বাজারে মনির হোসেন মিয়ার পক্ষে গণসংযোগে গেলে বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রব হাওলাদারের ভাই দিলু হাওলাদার, রাসেল ও তাদের অনুসারীরা পিকলু ও তার সমর্থকদের কুপিয়ে আহত করে।

উক্ত প্রতিবেদনে আহত সৈকত গুহ’র স্ত্রী বিপাশা গুহ’র বক্তব্য পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিসুর রহমান নিজেও হামলায় অংশ নেন। আহতদের যেন বরিশাল না নেওয়া যায়, সেজন্য অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়।’

অর্থাৎ, আলোচিত পোস্টগুলোতে সৈকত গুহ’র ওপর মনির মিয়া হামলা করেছেন বলে দাবি করা হলেও সৈকত গুহ’র স্ত্রী বিপাশা গুহ’র বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিসুর রহমানের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে। তাছাড়া সৈকত গুহ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মনির মিয়ার পক্ষের এবং হামলার শিকার হওয়ার সময়ে তারা একসাথে ছিলেন। এর সাথে সাম্প্রদায়িক কোনো ইস্যু সম্পর্কিত নয়। এটি সম্পূর্ণ একটি রাজনৈতিক ঘটনা।

মূলত, গত ০২ মে বরিশালের গৌরনদীতে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ইউপি চেয়ারম্যান সৈকতে গুহ সহ অম্তত ৪ জন আহত হন। গৌরনদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক পৌর মেয়র হারিছুর রহমান, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মিয়া রয়েছেন। গত ০২ মে গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের এক নেতা মৃত্যুবরণ করেন। তার জানাজার নামাজে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডে যান চেয়ারম্যান প্রার্থী ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মিয়া ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পিকলু। সেখানে হারিছুর রহমানের সমর্থকরাও এলে দুইপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে দুই পক্ষের তিন-চারজন আহত হন। আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের এ রাজনৈতিক সংঘর্ষে গুরুতর জখম হওয়া সৈকত গুহ’র  স্ত্রী বিপাশা গুহর হাসাপাতালে বিলাপ করার একটি ভিডিও যুক্ত করে এ ঘটনাকে এক্সের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে সংখ্যালঘু হিন্দু নির্যাতন হিসেবে প্রচার করা হয়েছে৷ তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে মনির মিয়া এবং তার দলবল সৈকত গুহকে নির্যাতন করেছে দাবি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে সৈকত গুহ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মনির মিয়ার পক্ষে কাজ করছেন এবং হামলার শিকার হওয়ার সময়ও তারা একসাথে ছিলেন।

সুতরাং, বরিশালের গৌরনদীতে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংগঠিত রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক হামলা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে মোট ৪ লক্ষ ৫২ হাজার লোক নিবে ইতালি

সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লটারিতে বিনামূল্যে বাংলাদেশ থেকে ৪ লক্ষ ৫২ হাজার লোক নেবে ইতালি শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি প্রচারিত হচ্ছে। 

ইতালি

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত  এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইতালিতে লটারিতে বিনামূল্যে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ ৫২ হাজার লোক নেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং, ২০২৩ সালে ইতালি সরকার কোভিড মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে তিন বছরে (২০২৩-২০২৫) ধাপে ধাপে ৪ লাখ ৫২ হাজার শ্রমিক নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। সেখানে ইউরোপীয় দেশ ব্যতীত বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ মিলে মোট ৪ লাখ ৫২ হাজার শ্রমিক নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। তবে সেই পরিকল্পনায় এসব বিদেশি শ্রমিককে লটারিতে বিনামূল্যে নেওয়া হবে এরকম কিছু বলা হয় নি। 

ফেসবুকে আলোচিত দাবির পোস্টগুলোর কমেন্ট থেকে একটি লিংক পাওয়া যায়। যেখানে উল্লেখ করা হয় অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে বিনামূল্যে বাংলাদেশ থেকে ৪ লক্ষ ৫২ হাজার লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। লিংকে ক্লিক করলে কোনো নির্দিষ্ট আবেদন ফর্ম পাওয়া যায় না, তবে কিছু চাকরীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়, যা বাংলাদেশ সরকারের  অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশিত নয়।  

আলোচিত বিষয়ে ইতালির অফিসিয়াল গেজেটে প্রকাশিত ডিক্রি – Entry Flows Italy তে বলা হয়েছে, বিদেশী নাগরিকদের মৌসুমী (কৃষি এবং হোটেল পর্যটন খাত), অ-মৌসুমি কর্মসংস্থান এবং স্ব-কর্মসংস্থানের (নির্মাণ, পর্যটন এবং আতিথেয়তা, যান্ত্রিক, টেলিযোগাযোগ, খাদ্য, জাহাজ নির্মাণ, বাস যাত্রী পরিবহন, মাছ ধরা, হেয়ারড্রেসার, ইলেকট্রিশিয়ান ইত্যাদি খাত) জন্য তিন বছরে  ৪ লাখ ৫২ হাজার এন্ট্রি অনুমোদন করা হয়।

অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম বিডিনিউজ ২৪ এর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোভিড মহামারীর ধকল কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন দেশ থেকে তিন বছরে সাড়ে চার লাখ শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইতালি সরকার। এক আদেশে বলা হয়েছে, ইউরোপের নাগরিক নয়-এমন ৪ লাখ ৫২ হাজার শ্রমিক ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ইতালিতে নেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে ইতালিতে প্রবেশের অনুমতি পাবে এক লাখ ৩৬ হাজার জন। ২০২৪ সালে পাবেন এক লাখ ৫১ হাজার এবং ২০২৫ সালে এক লাখ ৬৫ হাজার শ্রমিক। 

কালবেলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইতালিতে আবেদন গ্রহণ শুরুর দিনকে ‘ক্লিক ডে’ বলা হয়। সুতরাং ২০২৩ সালের ক্লিক ডে ছিলো- ২, ৪ এবং ৮ ডিসেম্বর। এছাড়া সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে ২০২৪ সালে ১ লাখ ৫১ হাজার শ্রমিকের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০২৪ সালের ক্লিক ডে- ৫,৭ এবং ১২ ফেব্রুয়ারী।

প্রতিবেদনে ইতালির সরকারি গেজেটকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, কোনো শ্রমিক সরাসরি আবেদন করতে পারবেন না। শ্রমিকের পক্ষে নিয়োগদাতা অনলাইনে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে আবেদন করবেন।

এ বিষয়ে সময় সংবাদের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৭ সালের মধ্যে ১০টি খাতে বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতালি সরকার। ইতালিতে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক আসতে পারবে কৃষি ও পর্যটন খাতের কাজের জন্য। এছাড়া ভবন নির্মাণ, জাহাজ নির্মাণ, পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য বড় ট্রাকের চালক পদে এবং পর্যটন হোটেল, মেকানিক, টেলিকমিউনিকেশন ও খাদ্য-দ্রব্যাদি উৎপাদন খাতেও শ্রমিক আসতে পারবে।

মূলত, ইতালি সরকার ২০২৭ সালের মধ্যে ১০টি খাতে বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যারা ইউরোপের নাগরিক নন। গত বছর দেশটি কোটা ভেদে তিন বছরে (২০২৩-২০২৫) বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধাপে ধাপে সর্বমোট ৪ লাখ ৫২ হাজার শ্রমিক নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানায়। ইতালি সব মিলিয়ে ৪ লক্ষ ৫২ হাজার লোক নেওয়ার কথা বললেও উক্ত তথ্যটিকে বিকৃত করে বাংলাদেশ থেকে ৪ লক্ষ ৫২ হাজার লোক নিবে দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। আলোচিত দাবির পোস্টগুলোতে বিনামূল্যে লোক নেওয়ার কথা বলা হলেও ইতালির সরকারের পক্ষ থেকে লটারিতে বিনামূল্যে লোক নেওয়ার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এছাড়া পোস্টগুলোতে ইতালির যাওয়ার জন্য একটি আবেদনের জন্য লিংক প্রদান করা হলেও লিংকটি এ বিষয়ে কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি। বরং ইতালি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি এ বিষয়ে শ্রমিকদের সরাসরি আবেদনের সুযোগ নেই। শ্রমিকের পক্ষে নিয়োগদাতাকে অনলাইনে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হবে।

সুতরাং, লটারিতে বিনামূল্যে বাংলাদেশ থেকে ৪ লক্ষ ৫২ হাজার লোক নেবে ইতালি শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

নোবিপ্রবিতে ভর্তি পরীক্ষায় ছাত্রলীগের সেবামূলক কার্যক্রমে চাপাতি দাবিতে ভিন্ন সংগঠনের ছবি প্রচার 

0

গত ০৩ মে গুচ্ছ ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের শরবত ও স্যালাইন প্রদান ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে। সেই ক্যাম্পেইনে স্যালাইনের প্যাকেট কাটার জন্য ‘চাপাতি’ রাখা হয়েছে দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

নোবিপ্রবি

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শরবত ও স্যালাইন প্রদান ক্যাম্পেইনে স্যালাইনের প্যাকেট কাটার জন্য ‘চাপাতি’ রাখার দাবিটি সঠিক নয় বরং ভিন্ন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ক্যাম্পেইনের ছবিকে ছাত্রলীগের ক্যাম্পেইনের ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানে নোবিপ্রবি ছাত্রদল নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান শুভর একটি মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook 

মন্তব্যে শুভ বলেন, প্রথমত, এইটা ছাত্রলীগের শরবত কিংবা স্যালাইন বিতরণের স্টল না। দ্বিতীয়ত, এইটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি রেজিস্টার্ড মানবিক সংগঠনের স্টল। তৃতীয়ত, এই সংগঠনের কাজের ব্যাপারে আগে খোজ খবর নিবেন। ওরা দারুণ সব কাজ করে। আর স্যালাইন কাটার জন্য যে দা ইউজ করেছে সেটা হয়ত আশপাশের কোন দোকানের কিচেনের।

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে নোবিপ্রবির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন NSTU Society for Disabilities এর ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল (০৪ মে) প্রকাশিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত পোস্টটিতে প্রচারিত ছবিটি উক্ত সংগঠনের ক্যাম্পেইনের ছবি বলে উল্লেখ করা হয়। 

এছাড়া, একই পেজে গত ০৩ মে ২৫ টি ছবিযুক্ত করা একটি পোস্ট খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়। 

উক্ত পোস্টে থাকা একটি ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির হুবহু মিল পাওয়া যায়। 

Comparison: Rumor Scanner

পোস্টটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, গত ০৩ মে গুচ্ছ ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় পানি, স্যালাইন ও শরবত বিতরণ কর্মসূচির কিছু ছবি এগুলো। 

অর্থাৎ, ছবিটি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শরবত ও স্যালাইন প্রদান ক্যাম্পেইনের নয় বরং অলাভজনক সংস্থা NSTU Society for Disabilities নামক একটি সংগঠনের ক্যাম্পেইনের। 

পাশাপাশি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে গুচ্ছ ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষার দিন শরবত ও স্যালাইন প্রদান ক্যাম্পেইনের কিছু ছবি পাওয়া যায়। এসব ছবিতে তৈরিকৃত শরবত এবং পানির বোতল সরবরাহ করতে দেখা গেলেও চাপাতি সদৃশ কোনো বস্তুর দেখা মেলেনি। ছবিগুলো দেখুন এখানে, এখানে

মূলত, সম্প্রতি ‘চাপাতি’ সহ একটি ছবি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শরবত ও স্যালাইন প্রদান ক্যাম্পেইনের ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা ছাত্রলীগের কোনো ক্যাম্পেইনের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ছবিটি NSTU Society for Disabilities নামক একটি অলাভজনক সংগঠন কর্তৃক পানি, স্যালাইন ও শরবত বিতরণ কর্মসূচির, যা গত ০৩ মে গুচ্ছ ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষার দিন আয়োজন করা হয়েছিল। 

সুতরাং, ‘চাপাতি’ সহ একটি ছবি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শরবত ও স্যালাইন প্রদান ক্যাম্পেইনের ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

  • NSTU Branch BCL Secretary Comment 
  • NSTU Society for Disabilities- Post (1, 2)
  • NSTU Branch BCL- Post (1, 2)
  • Rumor Scanner’s Own Analysis 

অতি গরমে ঠান্ডা পানি পান করলে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা নেই

সম্প্রতি “অতি গরমে ঠান্ডা পানি পান পরিহার করুন। খুব ঠান্ডা পানি পান করলে রক্তনালী সংকোচিত হয়ে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে” শীর্ষক দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক প্রচার করা হচ্ছে।

স্ট্রোক

উক্ত দাবিতে ২০২৩ সালে গণমাধ্যমের কিছু সংবাদ দেখুন বাংলানিউজ২৪, বাংলানিউজ২৪ (ইংরেজি), নিউজ২৪। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ) , এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, তীব্র গরমে ঠান্ডা পানি পান করলে স্ট্রোক হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়৷ তবে, অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করলে গলায় ব্যথা, পেট ব্যথা, মাথা ব্যথার মতো অস্বস্তি হতে পারে৷ তাছাড়া, হৃৎপিণ্ডের রোগে আক্রান্ত মানুষদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তবে, সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ গরমকালে ঠান্ডা পানি পান করলে স্ট্রোক হওয়ার পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

অনুসন্ধানের শুরুতে এ বিষয়ে সিঙ্গাপুরের কাইজেন মেডিক্যাল এর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘গরম আবহাওয়ায় অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি খেলে স্ট্রোক হওয়ার পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তবে, অত্যন্ত ঠান্ডা পানি খেলে গলার শিরা, ধমনীতে সাময়িক সংকোচন ঘটাতে পারে যার ফলে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব হতে পারে। এটি হৃদপিন্ডের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এজন্য গরম আবহাওয়ায় হাইড্রেটেড থাকতে এবং সম্ভাব্য অস্বস্তি এড়াতে সহনীয় তাপমাত্রায় পানি পান করতে উৎসাহিত করা হয়। এছাড়া গরমকালে ঠান্ডা পানি খেলে স্ট্রোক হওয়ার পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। প্রকৃতপক্ষে ঠান্ডা পানির বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। যেমন: প্রদাহ কমানো, সংবহনের উন্নতি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতিসাধন।’

আলোচিত বিষয়ে ইন্ডিয়া টিভি’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ফরিদাবাদের এশিয়ান হাসপাতালের প্রধান খাদ্যনির্বাচন বিশেষজ্ঞ ডক্টর কোমাল মালিকের বরাতে জানানো হয়, ‘গরমকালে ঠান্ডা পানি খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এমন দাবির পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক অকাট্য প্রমাণ নেই। তবে, অনেক সময় অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করার ফলে গলায় যন্ত্রণা হয় এবং সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে। তবে, এখন পর্যন্ত কোনো গবেষণা শরীরের জন্য ঠান্ডা পানি পান করাকে ক্ষতিকর বলে প্রমাণ করে নি। গরমকালে ঠান্ডা পানি এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দুটোই শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে।’

এ বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান ইব্রাহিম খলিলের সাথে যোগাযোগ করা হলে রিউমর স্ক্যানারকে তিনি জানান, “এমন কোনো রিসার্চ বা ডকুমেন্ট নেই যে যা দেখে এমন দাবি করার সুযোগ আছে। সুতরাং, আমরা এটা বলতে পারি না যে এটা করলে স্ট্রোক হতে পারে।”

একই বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অফ শেফিল্ডের পিএইচডি গবেষক ডা. মারুফুর রহমান অপুকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত একটি ভিডিও দেখিয়ে সত্যতা জানতে চাওয়া হলে তিনিও একই কথা জানান। তিনি জানান, “ভিডিওটা দেখলাম। ভুল তথ্য। তীব্র গরমে ঠান্ডা পানি খেলে স্ট্রোক হবার ঝুঁকির সম্ভাবনার পক্ষে কোন প্রমান নেই এবং সেটা হবার পক্ষে কোন প্লজিবল এক্সপ্লানেশনও দাড়া করানো সম্ভব না।”

গরমকালে ঠান্ডা পানি পান করলে স্ট্রোক হতে পারে, মর্মে প্রচারিত দাবিটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠানও এই বিষয়ে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ভারতীয় ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান The Quint এর প্রতিবেদনে ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের ইন্টার্নাল মেডিসিনের সিনিয়র কনসাল্টেন্ট ডক্টর সুরঞ্জিত চ্যাটার্জিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, গরম আবহাওয়ায় বাইরে থেকে আসার পর ঠান্ডা পানি পান করা বেশ প্রলুব্ধকর কিন্তু সমীচীন নয়। তবে, এটি বিপজ্জনকও নয়। তিনি বলেন, “আদর্শত ৪২, ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উচ্চ তাপমাত্রায় ঠান্ডা পানি পান করা আপনার উচিত নয় যেহেতু আপনার শরীর ঠান্ডার সাথে অভিযোজিত হবে না – কিন্তু এটি বিপজ্জনক নয়, কোনো রক্তনালী ফাটবে না।”

ফিলিপাইনের ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান Vera Files এর ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে ফিলিপাইন নিউরোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিউরোলজিস্ট জোসে প্যাসিয়ানো রেয়াসের সাথে ইমেইল সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে৷ সেখানে রেয়াস জানান, “ঠান্ডার সংস্পর্শে আসলে রক্তনালী বিস্ফোরিত হয় না।” রেয়াস বলেন, ঠান্ডা পানি পান করা বা ঠান্ডা পানিতে গোসল করা “স্বাস্থ্যবান মানুষদের জন্য সাধারণত কোনো সমস্যা নয়”। তিনি আরো বলেন, শরীরকে ঠান্ডা করা, অত্যধিক গরম রোধ করা এবং প্রদাহ কমানোসহ এটির কিছু উপকারিতা আছে।

তবে, রেয়াস সতর্ক করেছেন, ঠান্ডা পানি পান করা বা এতে গোসল করা হৃৎপিন্ডের রোগীদের জন্য ভালো নাও ঠেকতে পারে। 

মার্কিন ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Snopes এর ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তীব্র গরমে ঠান্ডা পানি পান করলে শরীরে শক দেখা দিতে পারে তবে এটি অত্যন্ত বিরল। মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞদের মতে, এমনটা হওয়ার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় কারণ হতে পারে ডিহাইড্রেশন, তাপ অবসাদ, নিম্ন ব্লাড সুগারের মতো অবস্থা বা অজানা অন্য কোনো অন্তর্নিহিত মেডিক্যাল অবস্থা। 

ভারতীয় প্রতিষ্ঠান থিপ মিডিয়ার ফ্যাক্টচেকিং বিভাগকে দেয়া বিবৃতিতে, মণিপাল হাসপাতাল মাইসোরের দুর্ঘটনা ও জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও পরামর্শদাতা ডাঃ প্রদীপ রাজান্না এ বিষয়ে বলেন, “এটি সম্ভব নয়। গরম পরিবেশ থেকে এসে ঠান্ডা পানি পানের সাথে স্ট্রোকের কোনো সম্পর্ক নেই।”

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম Onmanorama কর্তৃক প্রকাশিত ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদনে কোট্টিয়ামের হলি ক্রস স্পেশালটি হসপিটালের একজন মেডিসিন এক্সপার্ট ডক্টর অথুরা দাস তার বিবৃতিতে পরিষ্কার করে বলেন, সূর্যের সংস্পর্শ থেকে এসে ঠান্ডা পানি পান করার ফলে হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট স্ট্রোক ঘটবে না। আলাদা আবহাওয়া অবস্থা ও তাপমাত্রায় খাপ খাইয়ে নিতে শরীরের সহজাত সক্ষমতা আছে। তবে, অতিরিক্ত ঠান্ডা জাতীয় কিছু পান করার পূর্বে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া উত্তম। যখন গরম আবহাওয়ায় আপনি ঠান্ডা পানি পান করবেন, পাকস্থলীর রক্তনালী তৎক্ষনাৎ সংকোচিত হতে পারে, ফলশ্রুতিতে পেট ব্যথা বা মাথা ব্যথা হতে পারে, কিন্তু এটি স্ট্রোকের সাথে সম্পর্কিত নয়।

মূলত, তীব্র গরমে ঠান্ডা পানি পান করলে গলায় ব্যথা, পেট ব্যথা, মাথা ব্যথার মতো অস্বস্তি হতে পারে। কেউ হয়তো শকে যেতে পারে, যদিও এটি অত্যান্ত বিরল। তবে সুস্থ কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে তীব্র গরমে ঠান্ডা পানি পান করা স্ট্রোক হওয়ার মতো বিপজ্জনক নয় মোটেও। আর, যদি কারোর অন্য কোনো রোগ থাকে যেমন হৃৎপিণ্ডের রোগ সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে। কোনো সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে রক্তনালী ফেটে স্ট্রোক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। 

সুতরাং, প্রচন্ড গরমে ঠান্ডা পানি পান করলে স্ট্রোক হতে পারে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। 

নোট: এই প্রতিবেদনটি লিখতে রিউমর স্ক্যানার টিমকে গবেষণায় সহায়তা করেছেন শাহ রিয়াজুর রহমান রাজ।

তথ্যসূত্র

ভিক্টর ব্যানার্জির ছবিকে রবীন্দ্রনাথের ছবি দাবি প্রথম আলোর

গত ০৩ মে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোয় ছাপা সংস্করণে পত্রিকাটির সাহিত্য সাময়িকী অন্য আলোতে “তিন রাষ্ট্রপর্বে রবীন্দ্রনাথ” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। 

প্রতিবেদনে ছাপা হওয়া একটি ছবিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি বলে দাবি করেছে পত্রিকাটি। 

ভিক্টর ব্যানার্জির

প্রথম আলোর প্রিন্ট সংস্করণে ছাপা হওয়া ছবিটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রথম আলোয় ছাপা হওয়া ছবিটি  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নয় বরং ইন্দো-আর্জেন্টিনীয় সিনেমা ‘থিংকিং অফ হিম’ এ রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা ভিক্টর ব্যানার্জির ছবিকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইটিভি ভারত এর ওয়েবসাইটে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবির ক্যাপশনে সেখানে স্পষ্ট করেই লেখা রয়েছে যে, ছবিটি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের নয় বরং রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে অভিনয় করা ভিক্টর ব্যানার্জির।

Comparison: Rumor Scanner

ইটিভি ভারতের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে ইন্দো-আর্জেন্টিনীয় ছবি ‘থিংকিং অফ হিম’ (Thinking of Him)। কবিগুরুর ভূমিকায় ছিলেন ভিক্টর ব্যানার্জি।

আর্জেন্টিনার লেখক ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সঙ্গে নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পর্কের অন্বেষণ এই ছবির মূল প্রতিপাদ্য । সিনেমার পরিচালক আর্জেন্টিনাবাসী পাবলো সিজার। 

ছবির-সহ প্রযোজক সুরজ কুমার বলছেন, “আমরা আনন্দিত যে ছবিটি অবশেষে ভারত জুড়ে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে। আমরা সত্যিই ভাগ্যবান যে পাবলোর মতো একজনকে নেতৃত্বে পেয়েছি। পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম ভূমিকায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়কে পেয়েছি।”

এই ছবি সম্পর্কে ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম এই সময় এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে  ভিক্টর ব্যানার্জির একটি সাক্ষাৎকার পাওয়া যায়। তিনি বলেন, “ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো কবিগুরুকে নিয়ে কী ভাবতেন তা নিয়েই এই ছবি। আপনি এবং আমি রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে যা ভাবি তা নিয়ে এই ছবিটি নয়, এই ভূমিকার জন্য এই ভূমিকার জন্য ভিক্টোরিয়া একজন মহিলা এবং বুদ্ধিজীবী হিসাবে রবীন্দ্রনাথের জন্য কী অনুভব করেন তা বোঝা আমার পক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”

মুলত, গত ০৩ মে প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িকী অন্য আলোর ছাপা সংস্করণে “তিন রাষ্ট্রপর্বে রবীন্দ্রনাথ” শিরোনামের প্রতিবেদনে যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, তা রবিঠাকুরের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ইন্দো-আর্জেন্টিনীয় সিনেমা ‘থিংকিং অফ হিম’ এ রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে অভিনীত অভিনেতা ভিক্টর ব্যানার্জির ছবি এটি। 

উল্লেখ্য, প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে রবীন্দ্রনাথের ভুল ছবি ব্যবহার নিয়ে পরবর্তীতে সংশোধনী দেওয়া হয়। তবে ছাপা সংস্করণে কোনো সংশোধনী দেওয়া হয়নি।

সুতরাং, প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে ভিক্টর ব্যানার্জির ছবিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের গুজব 

0

গত ২৮ এপ্রিল ‘News Update 24’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “ক্ষমতা শেষ!, পদত্যাগের ঘোষণা দিল প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। 

দাবি করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি প্রচারিত ভিডিওটি ৮ হাজার বারেরও অধিক দেখা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওতে ৪৪৮ টি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানোর পাশাপাশি ১৯ টি মন্তব্যও করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেননি বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়া চটকদার থাম্বনেইলে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণার দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি বরং ভিডিওতে উপস্থাপিকাকে নিজ মনগড়া কিছু কথা বলতে শোনা যায়।

পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গত ০১ মে “বিশ্ব শ্রমিক দিবস” উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। 

এছাড়া, গত ০২ মে থাইল্যান্ডে সফর নিয়ে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

পাশাপাশি, গতকাল (০৩ মে) শেখ হাসিনা রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চোখ পরীক্ষা করান। 

অর্থাৎ, গতকাল (০৩ মে) পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। তাই গত ২৮ এপ্রিল প্রচারিত দাবিটি যে মিথ্যা তা সহজেই অনুমেয়।

মূলত, গত ২৮ এপ্রিল “ক্ষমতা শেষ!, পদত্যাগের ঘোষণা দিল প্রধানমন্ত্রী” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের ঘোষণা দেননি বরং তাকে সম্প্রতি বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে গুলি করে হত্যার গুজব

গত ০৩ মে “Dhaka News 24” নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “জুম্মার পরেই সেনাপ্রধানকে গুলিকরে হত্যা, জীবন বাঁচাতে পরলো না আ-লীগের বড় নেতারাও” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

দাবি করা হচ্ছে, গতকাল (০৩ মে) জুম্মার নামাজের পর সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে গুলি করে হত্যার দাবিটি মিথ্যা বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়া চটকদার থাম্বনেইলে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উপস্থাপক কয়েকটি সংবাদ পাঠ করে শোনাচ্ছেন। তবে ভিডিওটিতে আলোচিত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেখানো হয়নি।

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওতে প্রদর্শিত সংবাদ গুলো পড়ে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

শুরুতে “কারামুক্ত মামুনুল হক” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ পাঠ করতে দেখা যায়। 

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে কালবেলা এর ওয়েবসাইটে উক্ত সংবাদটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

তবে, উক্ত প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

এছাড়া, উপস্থাপককে ‘বিএনপির নেতায় নেতায় মিল নেই, কর্মীরা হতাশ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ পাঠ করতে দেখা যায়। 

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে যুগান্তর এর ওয়েবসাইটে উক্ত প্রতিবেদনটি পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদনের সাথেও আলোচিত দাবির সাথে কোনো যোগসূত্র নেই৷ 

এরপর “সরকারকে যারা চাপে রাখতে চেয়েছিল তারা নিজেরাই চাপে আছে” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাঠ করতে দেখা যায়। 

কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেশ টিভি এর ওয়েবসাইটে ০৩ মে একই শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ০৩ মে সকালে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিরোধী দল বিএনপিকে সমালোচনা করা এসব কথা বলেন৷ 

অর্থাৎ, এই প্রতিবেদনের সাথেও আলোচিত দাবির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

তারপর “বদির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান প্রার্থীর জমায়েতে ফাঁকা গুলি ছোড়ার অভিযোগ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাঠ করতে দেখা যায়। 

কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেশ টিভি এর ওয়েবসাইটে ০৩ মে একই শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

এই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুর সাথেও আলোচিত দাবির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

পরিশেষে উপস্থাপককে “সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর ইন্তেকাল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাঠ করতে দেখা যায়। 

কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ০৩ মে দেশ টিভি এর ওয়েবসাইট উক্ত শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ০২ মে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ইন্তেকাল করেছেন। সেই প্রেক্ষিতে করা প্রতিবেদন এটি। যা আলোচিত দাবির সাথে কোনো মিল নেই। 

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটিতে উপস্থাপকের পাঠ করা পাঁচটি প্রতিবেদনের কোনোটির সাথেই আলোচিত দাবির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

মূলত, সম্প্রতি Dhaka News 24 নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “জুম্মার পরেই সেনাপ্রধানকে গুলিকরে হত্যা, জীবন বাঁচাতে পরলো না আ-লীগের বড় নেতারাও” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটিতে দাবি করা হয়েছে, গতকাল (০৩ মে) জুম্মার নামাজের পর সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে গুলি করে হত্যার দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন কয়েকটি সংবাদের সাথে চটকদার থাম্বনেইলে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে গুলি করে হত্যার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

মামুনুল হকের ভিডিও কলের স্ক্রিনশট দাবিতে প্রচারিত ছবিটি এডিটেড

0

গতকাল ৩ মে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় হওয়া ৪১ টি মামলার সবকটিতে জামিনে মুক্তির পর গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে তিনি কারামুক্তি পান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি, ৫০১ মামুনুল হক জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে! শহীদুলদের বৌয়েরা হেফাজত হতে থাকবেন শীর্ষক শিরোনামে দুইটি ছবি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত ফেসবুক পোস্টগুলোর প্রথম ছবিতে মামুনুল হকের ছবিসহ একটি ভিডিও কলের স্ক্রিনশটের ছবি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

মামুনুল

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিও কলের স্ক্রিনশটের ছবিটি বাস্তব নয় বরং একটি পর্ণ সাইট থেকে সংগৃহীত এক নারীর নগ্ন ভিডিওর স্থিরচিত্র সংগ্রহ করে সেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় মামুনুল হকের ছবি যুক্ত করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।

ছবিটির বিষয়ে সত্যতা জানার জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চ করে একটি পর্ণ ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত মূল ভিডিওটির সন্ধান পাওয়া যায়। (সঙ্গত কারণে লিংক সংযুক্ত করা হয়নি)।

ভিডিওতে যে নারীকে দেখা যাচ্ছিল তার চেহারার সাথে আলোচিত স্ক্রিনশটের নারীর পোশাক, চেহারা ও অঙ্গভঙ্গির হবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে উক্ত ভিডিওতে মামুনুল হকের ছবি অনুপস্থিত। 

Screenshot Collage: Rumor Scanner

অর্থাৎ, আলোচিত স্ক্রিনশটটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে জান্নাত আরা ঝর্ণা নামক এক মহিলাসহ মাওলানা মামুনুল হককে আটক করে একদল লোক। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে ঝর্ণাকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করেন মামুনুল। তবে একই বছরের ৩০ এপ্রিল জান্নাত আরা ঝর্ণা মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মূলত, সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের কারামুক্তিকে কেন্দ্র করে তার ছবিসহ একটি ভিডিও কলের স্ক্রিনশটের ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যনায়ার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিটি এডিটেড। প্রকৃতপক্ষে, একটি পর্ণ সাইট থেকে এক নারীর নগ্ন ভিডিওর স্থিরচিত্র সংগ্রহ করে সেখানে মামুনুল হকের ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, মাওলানা মামুনুল হকের ছবিসহ একটি ভিডিও কলের স্ক্রিনশটের ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা এডিটেড বা সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

  • Main Source: Hidden (adult purpose)
  • Rumor Scanner’s own analysis

মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে চাকরির ভুয়া বিজ্ঞপ্তি প্রচার

0

সম্প্রতি, “২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি” শীর্ষক দাবিতে একটি বিজ্ঞপ্তির ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। 

মানিকগঞ্জ

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ৬ টি পদে লোকবল নিয়োগের জন্য কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি বরং প্রতারণার উদ্দেশ্যে আলোচিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে একুশে সংবাদ এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল “মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে সরকারি চাকরির ভুয়া বিজ্ঞপ্তি, থানায় জিডি” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Source: একুশে সংবাদ

উক্ত প্রতিবেদনে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: মো: বাহাউদ্দিন এর বরাতে জানানো হয়, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখা যাচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভূয়া। এটি নিয়ে হাসপাতালের পক্ষ থেকে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। সাধারণ জনগণকে সচেতন করতে আমরাও ফেসবুকে এটি নিয়ে সচেতনতামূলক পোস্ট করে প্রচার করছি। সাধারণ জনগণকে এসব ভুয়া বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহবান করছি।” 

এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, ভুয়া বিজ্ঞপ্তিটির বিষয়ে গত ৩০ এপ্রিল মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো: সোহেল রানা বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি জিডি করেছেন বলেও জানা যায়।

পরবর্তীতে, মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে কর্মরত রাসেল রানা নামক এক ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আলোচিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় করা সাধারণ ডায়েরির কপি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

Source: Rasel Rana Facebook Account

উক্ত পোস্টের সাথে সংযুক্ত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির ছবি পাওয়া  যায়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আলোচিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া।

মূলত, সম্প্রতি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে দাবিতে একটি বিজ্ঞপ্তির ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল এসব পদে নিয়োগের জন্য কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি। এছাড়াও, ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটির বিষয়ে হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচার ও মানিকগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

সুতরাং, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে বিভিন্ন পদে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে দাবিতে  একটি বিজ্ঞপ্তির ছবি ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ ভুয়া ও প্রতারণামূলক।

তথ্যসূত্র

এটি ইরানের তৈরি কোনো অস্ত্র নয়

গত ১৯ এপ্রিল শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে “ইরান বাবারে বাবা এইটা কি… জিনিস বের করল মাটির নিচ থেকে | #ইরানের_ভয়ংকর_তৈরিঅস্ত্র” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ইরানের

উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন  প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি ৫ লক্ষ ৭৩ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে। প্রায় ৪৪ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটিতে উল্লিখিত বস্তুটি ইরানের কোনো অস্ত্র নয়, বরং সৌদি আরবের LPG গ্যাস সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত Mounded Bullet Tank এর দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে দেখানো বস্তুটির গায়ে ZAMIL STEEL ও GASCO এর স্টিকার দেখতে পাওয়া যায়৷ 

Collage: Rumor Scanner

ভিডিওটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে Zamil Industrial নামের ইউটিউব চ্যানেলে কাছাকাছি একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটির শিরোনামে Bullet Tank শব্দগুচ্ছ দেখতে পাওয়া যায়। এর সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ করলে Zamil Industrial নামের ফেসবুক পেজেও একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়৷ পর্যবেক্ষণ করলে সেই ভিডিওটিতেও একই বস্তু লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, সৌদি আরবের রিয়াদে অবস্থিত National Gas and Industrialization Company (GASCO) এর চূড়ান্ত জায়গায় Liquefied Petroleum Gas (LPG) এর সংরক্ষণের জন্য Mounded Bullet Tank এর লোডিং এবং ব্যাকফিলিং অপারেশনের প্রথম ধাপের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। 

Screenshot: Facebook

এতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে উক্ত Mounded Bullet Tank গুলো রিয়াদের GASCO কোম্পানির LPG গ্যাস সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হবে এবং এই কাজটি GASCO এর জন্য Zamil Industrial এর ZAMIL STEEL করেছে। উল্লেখ্য যে, Zamil Steel Holding এর মালিকানা Zamil Industrial Investment Co. এর অধীনে। 

অতঃপর GASCO এর সম্পর্কে অনুসন্ধান করলে জানা যায়, GASCO কোম্পানি পুরো সৌদি আরবে LPG (গ্যাস) বিক্রি, পরিবহন, বিতরণ ইত্যাদি কাজ করে থাকে। তাছাড়া তারা সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি, সরবরাহ ইত্যাদি কাজেও জড়িত। অধিকতর অনুসন্ধানে তাদের লিংকডইন পেজ থেকে জানা যায়, তাদের সদর দপ্তর সৌদি আরবের রিয়াদে অবস্থিত। 

এছাড়া, Zamil Steel সম্পর্কে অনুসন্ধান করে জানা যায়, তাদের কর্পোরেট সদর দপ্তর সৌদি আরবের দাম্মামে অবস্থিত এবং তাদের R&D কেন্দ্র সৌদি আরব ছাড়াও মিশর, ভারত ও ভিয়েতনামে আছে। অর্থাৎ, ইরানের সাথে তাদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন জাতীয় সম্পর্ক নেই৷ তবে, জামিল স্টিলের বিক্রি এবং মার্কেটিং অফিস পুরো বিশ্ব জুড়েই বিস্তৃত৷ 

অনুসন্ধানের পরবর্তী পর্যায়ে প্রচারিত ভিডিওটির মূল উৎসের অনুসন্ধান করলে আলোচিত ভিডিওটি পোস্টের প্রায় ছয় দিন পূর্বে অর্থাৎ ১৯ এপ্রিল তারিখে husnainkhan8559 ইউজারনেমের একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে হুবহু একই ফ্রেমের ভিডিও পোস্ট হতে দেখা যায়৷ তবে, husnainkhan8559 এর পোস্টকৃত ভিডিওটি ১ মিনিট ৫ সেকেন্ডের হলেও ইরানের অস্ত্র দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ২ মিনিট ৯ সেকেন্ডের। দুটি ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি husnainkhan8559 এর পোস্টকৃত ভিডিও থেকে প্রায় ১ মিনিট দীর্ঘ হলেও দুটোতেই দেখানো উপাদান একই। তাছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটি ধীরগতির বলে লক্ষ্য করা যায়৷ যা প্রমাণ করে যে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্লেব্যাক স্পিড কমানো হয়েছে যে কারণে প্রায় ১ মিনিট দীর্ঘ হওয়া সত্ত্বেও বাড়তি কোনো কিছু দেখাতে সক্ষম হয় নি। দুটি ভিডিওর মধ্যে ফ্রেমের তুলনা করলেও দুটি যে একই ভিডিও এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner

তবে, husnainkhan8559 এর পোস্টকৃত ভিডিওটির সাথে কোনো ক্যাপশন কিংবা লোকেশন পোস্ট করা হয় নি। তাই, ভিডিওটি কোন জায়গায় রেকর্ড করা তা কেবলমাত্র এই ভিডিওটি দেখে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে husnainkhan8559 এর অন্যান্য ভিডিও ও ছবি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটি পোস্ট করার পরবর্তী এবং পূর্ববর্তী সময়ে উক্ত ব্যবহারকারীর নিজেকে ক্যামেরাতে ধারণ করা অন্যান্য ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে পবিত্র কাবা শরীফ ও মসজিদে নববী লক্ষ্য করা যায়, যা নিশ্চিত করে যে উক্ত টিকটক ব্যবহারকারী সৌদি আরবেই থাকেন। 

Screenshot : Tiktok

কিন্তু, প্রচারিত ভিডিওটির স্থলে অর্থাৎ গ্যাস সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ট্যাঙ্ক পরিবহনের স্থলে তিনি কীভাবে পৌঁছালেন তা জানতে তার অন্যান্য ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণ অব্যাহত রাখে রিউমর স্ক্যানার টিম৷ গত ১৭ ফেব্রুয়ারী তারিখে Gasco এর স্টিকার সমৃদ্ধ একটি Mounded Bullet Tank এর সামনে তাকে শ্রমিকের পোশাক পরিহিত ১৯ জন শ্রমিক ও স্বাভাবিক পোশাক পরিহিত একজনসহ মোট ২০ জনের একটি ছবি পোস্ট করতে দেখা যায়৷ কিন্তু, সেই ছবিতে husnainkhan8559 ছিলেন কি না তা বুঝা সম্ভব হয় নি। 

Screenshot : Tiktok

তিনি হয়তো Gasco এর প্রজেক্টেই কাজ করেন বলেই প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া হয়৷ কিন্তু, এটি প্রমাণে আরো অকাট্য প্রমাণের জন্য অনুসন্ধান অব্যাহত রাখা হয়৷ অবশেষে, তার টিকটক অ্যাকাউন্টেই ১৭ ফেব্রুয়ারি, গত বছরের ৩০ নভেম্বর এবং ২ নভেম্বর তারিখে শ্রমিকের পোশাক পরিহিত অবস্থায় তার তিনটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়৷ তার পোশাকে তার কর্মস্থল কোম্পানির নাম লেখা থাকলেও সেলফি ভিডিও হওয়ার কারণে তা পড়া সম্ভব হচ্ছিলো না৷ তার সবচেয়ে পরিষ্কার ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে মিরর করলে দেখা যায় যে husnainkhan8559 এর কর্মক্ষেত্র কোম্পানির নাম FTE Logistics. 

Mirrored : Rumor scanner   

এ পর্যায়ে FTE Logistic, Zamil Industrial এবং Gasco এর মধ্যকার সম্পর্ক খুঁজে বের করতে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে এ বিষয়ে ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের একটি সংবাদ পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যায় যে, সৌদি আরবে রেকর্ড গড়া পরিমাণ পরিবহন কাজ করেছে FTE Logistics. একই রিপোর্টে এও পাওয়া যায়, রিয়াদে GASCO এর LPG সম্প্রসারণ প্রজেক্টে FTE Logistics কে Zamil Industrial চুক্তিবদ্ধ করে। Mounded Bullet Tank পরিবহন ও স্থাপনের বিষয়েও একই প্রতিবেদনে  উল্লেখ করা হয়েছে। 

অতঃপর, FTE Logistics সম্বন্ধে অনুসন্ধান করলে জানা যায় যে প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৮ সাল থেকেই পরিবহন শিল্পে আছে। তাছাড়া, তাদের ওয়েবসাইটের হোম পেজেও Mounded Bullet Tank এর ছবি দেখতে পাওয়া যায় যার উপর

Screenshot : FTE Logistics

অর্থাৎ, husnainkhan8559 এর কর্মরত কোম্পানিই এইসব Mounded Bullet Tank পরিবহনের কাজে নিয়োজিত এবং তিনি এর একজন শ্রমিক হিসেবে পরিবহন চলাকালীন সময় ভিডিও করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাছাড়া, এসব Tank যে LPG গ্যাসের সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এ বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া যায়।

মূলত, husnainkhan8559 নামের একজন টিকটক ব্যবহারকারী আলোচিত দাবির ভিডিওটি কোনো ক্যাপশন বা শিরোনাম ছাড়াই নিজের অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন৷ তিনি FTE Logistics কোম্পানির একজন কর্মী যারা পরিবহন শিল্পের কাজে নিয়োজিত। সৌদি আরবের LPG (গ্যাস) ও সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান GASCO রিয়াদে তাদের LPG সম্প্রসারণ প্রজেক্টে LPG গ্যাস সংরক্ষণে ব্যবহৃত Mounded Bullet Tank এর পরিবহন সংক্রান্ত কাজে ও প্রজেক্টে কনস্ট্রাকশান শিল্পের কোম্পানি Zamil Industrial এর সাথে কাজ করে, যারা এই প্রজেক্টে FTE Logistics কোম্পানিকে পরিবহনের কাজে চুক্তিবদ্ধ করে। আর, এই FTE Logistics এরই একজন কর্মী গ্যাসের ট্যাঙ্ক পরিবহনের সময় ভিডিও তুলে টিকটকে পোস্ট করেন যা ইরানের ভয়ংকর অস্ত্র দাবিতে প্রচার করা হয়৷ আদতে, সেটি গ্যাস সংরক্ষণে ব্যবহৃত হওয়া ট্যাঙ্ক, কোনো অস্ত্র নয়।

সুতরাং, সৌদি আরবে গ্যাস সংরক্ষণে ব্যবহৃত হওয়া ট্যাঙ্কের দৃশ্যকে ইরানের তৈরি ভয়ংকর অস্ত্র দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র