বুধবার, অক্টোবর 9, 2024

শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে মোট ৪ লক্ষ ৫২ হাজার লোক নিবে ইতালি

সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লটারিতে বিনামূল্যে বাংলাদেশ থেকে ৪ লক্ষ ৫২ হাজার লোক নেবে ইতালি শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি প্রচারিত হচ্ছে। 

ইতালি

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত  এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইতালিতে লটারিতে বিনামূল্যে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ ৫২ হাজার লোক নেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং, ২০২৩ সালে ইতালি সরকার কোভিড মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে তিন বছরে (২০২৩-২০২৫) ধাপে ধাপে ৪ লাখ ৫২ হাজার শ্রমিক নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। সেখানে ইউরোপীয় দেশ ব্যতীত বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ মিলে মোট ৪ লাখ ৫২ হাজার শ্রমিক নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। তবে সেই পরিকল্পনায় এসব বিদেশি শ্রমিককে লটারিতে বিনামূল্যে নেওয়া হবে এরকম কিছু বলা হয় নি। 

ফেসবুকে আলোচিত দাবির পোস্টগুলোর কমেন্ট থেকে একটি লিংক পাওয়া যায়। যেখানে উল্লেখ করা হয় অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে বিনামূল্যে বাংলাদেশ থেকে ৪ লক্ষ ৫২ হাজার লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। লিংকে ক্লিক করলে কোনো নির্দিষ্ট আবেদন ফর্ম পাওয়া যায় না, তবে কিছু চাকরীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়, যা বাংলাদেশ সরকারের  অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশিত নয়।  

আলোচিত বিষয়ে ইতালির অফিসিয়াল গেজেটে প্রকাশিত ডিক্রি – Entry Flows Italy তে বলা হয়েছে, বিদেশী নাগরিকদের মৌসুমী (কৃষি এবং হোটেল পর্যটন খাত), অ-মৌসুমি কর্মসংস্থান এবং স্ব-কর্মসংস্থানের (নির্মাণ, পর্যটন এবং আতিথেয়তা, যান্ত্রিক, টেলিযোগাযোগ, খাদ্য, জাহাজ নির্মাণ, বাস যাত্রী পরিবহন, মাছ ধরা, হেয়ারড্রেসার, ইলেকট্রিশিয়ান ইত্যাদি খাত) জন্য তিন বছরে  ৪ লাখ ৫২ হাজার এন্ট্রি অনুমোদন করা হয়।

অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম বিডিনিউজ ২৪ এর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোভিড মহামারীর ধকল কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন দেশ থেকে তিন বছরে সাড়ে চার লাখ শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইতালি সরকার। এক আদেশে বলা হয়েছে, ইউরোপের নাগরিক নয়-এমন ৪ লাখ ৫২ হাজার শ্রমিক ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ইতালিতে নেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে ইতালিতে প্রবেশের অনুমতি পাবে এক লাখ ৩৬ হাজার জন। ২০২৪ সালে পাবেন এক লাখ ৫১ হাজার এবং ২০২৫ সালে এক লাখ ৬৫ হাজার শ্রমিক। 

কালবেলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইতালিতে আবেদন গ্রহণ শুরুর দিনকে ‘ক্লিক ডে’ বলা হয়। সুতরাং ২০২৩ সালের ক্লিক ডে ছিলো- ২, ৪ এবং ৮ ডিসেম্বর। এছাড়া সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে ২০২৪ সালে ১ লাখ ৫১ হাজার শ্রমিকের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০২৪ সালের ক্লিক ডে- ৫,৭ এবং ১২ ফেব্রুয়ারী।

প্রতিবেদনে ইতালির সরকারি গেজেটকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, কোনো শ্রমিক সরাসরি আবেদন করতে পারবেন না। শ্রমিকের পক্ষে নিয়োগদাতা অনলাইনে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে আবেদন করবেন।

এ বিষয়ে সময় সংবাদের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৭ সালের মধ্যে ১০টি খাতে বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতালি সরকার। ইতালিতে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক আসতে পারবে কৃষি ও পর্যটন খাতের কাজের জন্য। এছাড়া ভবন নির্মাণ, জাহাজ নির্মাণ, পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য বড় ট্রাকের চালক পদে এবং পর্যটন হোটেল, মেকানিক, টেলিকমিউনিকেশন ও খাদ্য-দ্রব্যাদি উৎপাদন খাতেও শ্রমিক আসতে পারবে।

মূলত, ইতালি সরকার ২০২৭ সালের মধ্যে ১০টি খাতে বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যারা ইউরোপের নাগরিক নন। গত বছর দেশটি কোটা ভেদে তিন বছরে (২০২৩-২০২৫) বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধাপে ধাপে সর্বমোট ৪ লাখ ৫২ হাজার শ্রমিক নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানায়। ইতালি সব মিলিয়ে ৪ লক্ষ ৫২ হাজার লোক নেওয়ার কথা বললেও উক্ত তথ্যটিকে বিকৃত করে বাংলাদেশ থেকে ৪ লক্ষ ৫২ হাজার লোক নিবে দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। আলোচিত দাবির পোস্টগুলোতে বিনামূল্যে লোক নেওয়ার কথা বলা হলেও ইতালির সরকারের পক্ষ থেকে লটারিতে বিনামূল্যে লোক নেওয়ার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এছাড়া পোস্টগুলোতে ইতালির যাওয়ার জন্য একটি আবেদনের জন্য লিংক প্রদান করা হলেও লিংকটি এ বিষয়ে কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি। বরং ইতালি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি এ বিষয়ে শ্রমিকদের সরাসরি আবেদনের সুযোগ নেই। শ্রমিকের পক্ষে নিয়োগদাতাকে অনলাইনে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হবে।

সুতরাং, লটারিতে বিনামূল্যে বাংলাদেশ থেকে ৪ লক্ষ ৫২ হাজার লোক নেবে ইতালি শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img