সম্প্রতি, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশিদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা বন্ধ করলো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ মোট ১৭টি দেশ’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম যমুনা টেলিভিশন এর লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশিদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা বন্ধ করলো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ মোট ১৭টি দেশ’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম যমুনা টিভি কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে যমুনা টিভির লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ২৭ আগস্ট, ২০২৪ তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে যমুনা টিভির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সেদিন প্রচারিত সংবাদ ও ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও যমুনা টিভি’র ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির স্বপক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, যমুনা টিভির পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলোর সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্টের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।
Comparison: Rumor Scanner
সুতরাং, “চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশিদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা বন্ধ করলো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ মোট ১৭টি দেশ” শীর্ষক দাবিতে যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত কয়েক হাজার আনসার সদস্য গত ২৫ আগস্ট সচিবালয় ঘেরাও করে। এরই প্রেক্ষিতে, “সর্বশেষ আপডেটঃ ২৭৭ আনসার সদস্যের মৃত্যু আহত ৫ শতাধিক, নিখোঁজ সহস্রাধিক” শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে জাতীয় দৈনিক কালবেলার লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
পাশাপাশি, “সচিবালয়ে শিক্ষার্থীদের হামলায় আনসার নিহত ৮০ আহত ৫০০” শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে জাতীয় দৈনিক কালবেলার লোগো সম্বলিত আরও একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সচিবালয়ে আনসার সদস্য মৃত্যুর দাবিতে কালবেলা কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং, কালবেলার ফটোকার্ড ডিজাইন নকল করে ভুয়া এসব দাবি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে ফটোকার্ডগুলোতে এগুলো প্রকাশের তারিখ ২৫ আগস্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে অনুসন্ধানে ২৫ আগস্ট তারিখে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। কালবেলার ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলেও এমন কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে কালবেলা কর্তৃক প্রকাশিত ফটোকার্ডের পার্থক্যও রয়েছে। পাশাপাশি, আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্য অন্য কোনো গণমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ আপডেটঃ ২৭৭ আনসার সদস্যের মৃত্যু আহত ৫ শতাধিক, নিখোঁজ সহস্রাধিক” শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে কালবেলার লোগো সম্বলিত ফটোকার্ডে প্রকাশিত ছবিটি পূর্বেও সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থী-আনসার সংঘর্ষে আনসার সদস্য নিহতের দাবিতে প্রচার করা হলে সে সময় তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
Comparison: Rumor Scanner
সুতরাং, “সর্বশেষ আপডেটঃ ২৭৭ আনসার সদস্যের মৃত্যু আহত ৫ শতাধিক, নিখোঁজ সহস্রাধিক” এবং “সচিবালয়ে শিক্ষার্থীদের হামলায় আনসার নিহত ৮০ আহত ৫০০” শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে দৈনিক কালবেলার নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ০৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ০৮ আগস্ট দেশে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। পরবর্তীতে, বিভিন্ন অভিযোগে রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে ভোলা-০৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরন্নবী চৌধুরী শাওনকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। এই দাবিতে ‘‘ভোলা-০৩ এমপি নুরন্নবী চৌধুরী শাওন বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার’’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম যমুনা টেলিভিশন এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভোলা-০৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরন্নবী চৌধুরী শাওনকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে যমুনা টিভি বা অন্য কোনো গণমাধ্যম কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে যমুনা টিভির লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে যমুনা টিভি‘র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও যমুনা টিভি’র ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে যমুনা টিভির পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডের গ্রাফিক্যাল ডিজাইনের মিল থাকলেও আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে যমুনা টিভির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ফন্টের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
Comparison: Rumor Scanner
এছাড়াও, যমুনা টিভির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে আজ (০২ সেপ্টেম্বর) আলোচিত ফটোকার্ডের বিষয়ে একটি পোস্ট পাওয়া যায়। আলোচিত ফটোকার্ডটি ভুয়া উল্লেখ করে গণমাধ্যমটি জানায়, ‘যমুনা টিভি এমন কোনো সংবাদ প্রচার করেনি; গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না’।
সুতরাং, ‘ভোলা-০৩ এমপি নুরন্নবী চৌধুরী শাওন বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার’ শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।
বেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তিসহ আরও কয়েকটি দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের ডাক দিয়েছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর ছাত্র শাখা ইনসাফ স্টুডেন্ট ফেডারেশন (আইএসএফ)। পাকিস্তানের গণমাধ্যমের মতে, শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অনেকটাই প্রভাবিত হয়েছে পাকিস্তানি শিক্ষার্থীরা। এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানে বাংলাদেশি পতাকা উড়ছে এবং ‘তুমি কে আমি কে? বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্লোগান দেওয়া হচ্ছে দাবিতে পাঁচটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এই ভিডিও ক্লিপগুলো দেশীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রথম ভিডিওসহ ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
দ্বিতীয় ভিডিওসহ ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
তৃতীয় ভিডিওসহ ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
চতুর্থ ভিডিওসহ ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
পঞ্চম ভিডিওসহ ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিকৃত পাঁচটি ভিডিওর মধ্যে প্রথম ভিডিওটি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের দ্বারা আয়োজিত একটি সমাবেশের, যেখানে তারা কোটা আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয় ভিডিওটি ২০২২ সালের পুরোনো একটি ভিডিও, যা সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এবং এই ভিডিওতে ‘তুমি কে আমি কে? বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ স্লোগানটি নেই। তৃতীয় ভিডিওটি পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর একটি অবস্থান কর্মসূচির, যেখানে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বাংলাদেশিদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম ভিডিও দুটি পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল পিটিআইয়ের সমাবেশের, তবে এই ভিডিওগুলোর অডিও বিকৃত; এতে প্রথম ভিডিওতে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্লোগানের অডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে এডিট করে যুক্ত করা হয়েছে।
প্রথম ভিডিও যাচাই
প্রথম ভিডিওটিতে একটি সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে ‘তুমি কে আমি কে? বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটি পাকিস্তানের।
Screenshot: YouTube.
অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই একই ভিডিও গত ৪ আগস্ট বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিটে ‘Mohammad Sahine’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার করা হয়েছিল। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “তুমি কে আমি কে? বাংলাদেশ বাংলাদেশ। Melbourne, Australia।”
একই দিন ‘Jaedi Sajib’ নামের আরেকটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিওতেও একই ঘটনার ভিন্ন কোণ থেকে ধারণকৃত দৃশ্য দেখা যায়। ওই পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি মূলত অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিদের কোটা আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের ভিডিও।
অর্থাৎ, এটি অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভিডিও, যা পাকিস্তানের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ভিডিও যাচাই
দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, একদল মানুষ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পতাকা হাতে ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দিচ্ছে।
Screenshot: Facebook.
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ভিডিওটি ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি ‘Sajjad Reviews’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়েছিল। জানা যায়, ভিডিওটি পাকিস্তানের ‘Alhamra Arts Council’ এর প্রশাসনিক ভবনের সামনে ধারণকৃত।
যদিও ভিডিওটির সঠিক প্রেক্ষাপট জানা সম্ভব হয়নি, তবে এটি নিশ্চিত যে ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়। কারণ এটি অন্তত দুই বছর ধরে ইন্টারনেটে রয়েছে। এছাড়া, ভিডিওতে ‘তুমি কে আমি কে? বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ স্লোগানও শোনা যায়নি বরং ‘নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার’ স্লোগানই শোনা যাচ্ছে।
অর্থাৎ, পুরনো এবং ভিন্ন প্রেক্ষাপটের ভিডিওকে সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানে ‘তুমি কে আমি কে? বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ স্লোগান দেওয়া হচ্ছে বলে প্রচার করা হয়েছে।
তৃতীয় ভিডিও যাচাই তৃতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, একদল মানুষ বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার’ , ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার’ এবং ‘বাঙালিও কে সাথে রিস্তা কেয়া? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (বাঙালিদের সাথে আমাদের সম্পর্ক কী? এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস) ’ ইত্যাদি। এছাড়াও, ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে বাংলা ভাষার গান গাইতেও দেখা যায়।
Screenshot: Facebook.
এই ভিডিওটি বিশদ অনুসন্ধানে, ‘JI Youth District West’ নামের একটি পাকিস্তানি ফেসবুক পেজে ৬ আগস্ট দিবাগত রাত ২টা ৮ মিনিটে প্রকাশিত একই স্থানে ধারণকৃত ভিন্ন একটি ভিডিও পাওয়া যায়। পোস্টের ক্যাপশন অনুযায়ী, এটি করাচি গভর্নর হাউসের অবস্থান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশের ভিডিও।
একই ঘটনার আরও একটি ভিডিও পাওয়া যায় ‘Jamaat-e-Islami Karachi East’ নামের ফেসবুক পেজে।
উক্ত ভিডিওগুলোর সাথে দাবিকৃত ভিডিওর তুলনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় তিনটি ভিডিওই একই ঘটনার।
Video Comparison: Rumor Scanner.
এছাড়া ‘Tufail Mehmood’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৬ আগস্ট রাতে প্রকাশিত একটি পোস্টে একই ঘটনার একটি ছবি পাওয়া যায়। এই ছবিতে দাবিকৃত ভিডিওতে বাংলা গান গাওয়া ব্যক্তিকে মাইক হাতে দেখা যায়। এই পোস্টের ক্যাপশনে থেকে জানা যায়, ছবিটি গভর্নর হাউসে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান কর্মসূচির।
এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যায় আরব নিউজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা বিদ্যুতের উচ্চমূল্যের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদে দীর্ঘদিন ধরে চলা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিল। প্রায় ৩,০০০ সমর্থক এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল। পাকিস্তানের সরকার বিদ্যুতের মূল্য হ্রাসের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত জানালে, দলটি তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান কর্মসূচির, যেখানে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়া হয়েছিল।
চতুর্থ ভিডিও যাচাই
চতুর্থ ভিডিওতে একটি বড় সমাবেশে মঞ্চ থেকে ‘তুমি কে? আমি কে? বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ স্লোগান দিতে শোনা যায়।
Screenshot: Facebook.
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Rao Faheem’ নামের একটি এক্স (পূর্বে টুইটার) অ্যাকাউন্টে গত ৫ আগস্ট প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে সংযুক্ত একাধিক ভিডিওর দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল পাওয়া যায়। জানা যায়, এটি সোয়াবি জলসা (Swabi jalsa) নামক একটি সমাবেশের।
Video Comparison: Rumor Scanner.
এই সূত্রে পাওয়া পাকিস্তানের ডন পত্রিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কারাবাসের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সোয়াবি অঞ্চলে একটি বড় সমাবেশের আয়োজন করে। পিটিআই নেতারা ইমরান খানের মুক্তির দাবি জানিয়ে সরকার ও বিচার বিভাগকে সমালোচনা করেন
‘PTI Khyber Pakhtunkhwa’ নামের একটি ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এই জলসার ৪ ঘণ্টাব্যাপী একটি লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়, তবে সেখানে ‘তুমি কে আমি কে? বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ স্লোগানটি শোনা যায়নি। ভিডিওতে থাকা স্লোগানটি উল্লিখিত প্রথম ভিডিওর অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্লোগানের সাথে সম্পূর্ণভাবে মিলে যায়।
অর্থাৎ, অন্য একটি ভিডিওর অডিও ডিজিটাল পদ্ধতিতে এডিট করে পাকিস্তানের পিটিআই সমাবেশের ভিডিওতে জুড়ে দিয়ে পাকিস্তানে ‘তুমি কে? আমি কে? বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ স্লোগান দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে।
পঞ্চম ভিডিও যাচাই পঞ্চম ভিডিওতেও একটি বৃহৎ সমাবেশের মঞ্চ থেকে ‘তুমি কে আমি কে? বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ স্লোগান দিতে শোনা যায়।
Screenshot: Facebook.
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, ‘Zartaj Gul Wazir’ নামের একটি পাকিস্তান ভিত্তিক ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এই ভিডিওটিও পিটিআইয়ের জলসার এবং এটিতেও অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্লোগানের অডিও এডিট করে যোগ করা হয়েছে।
সুতরাং, পাকিস্তানে ‘তুমি কে আমি কে? বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ বলে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নৃত্যরত কয়েকজন মেয়ের অদূরে চারজন ছেলের আধশোয়া অবস্থার একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, তন্মধ্যে একজন ছেলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম।
উল্লিখিত পাঁচটি ভিডিও পোস্ট প্রায় ৫৫ লাখ বারের মতো চালু করা হয়েছে এবং প্রায় ২৩ হাজার বার প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়েকজন নৃত্যরত মেয়েদের পাশে দেখা যাওয়া উক্ত ছেলে সমন্বয়ক সারজিস আলম নন, বরং ভিন্ন একজন ব্যক্তি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে উক্ত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত একজন মেয়ের পরিচয় পাওয়া যায়, যার নাম সানজিদা সারা। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করলে কয়েকজন ছেলে-মেয়েদের সাথে তার একাধিক ছবিসহ একটি ফেসবুক পোস্ট ল পাওয়া যায় যেখানে তিনি নিজেও এই বিষয়ে নিশ্চিত করেন যে সারজিস আলম মর্মে প্রচারিত ছেলে আদতে সমন্বয়ক সারজিস আলম নন, বরং তারই একজন বন্ধু।
তাছাড়া, তার উক্ত পোস্টে ব্যবহৃত ছবিতে থাকা ছেলে-মেয়েদের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ছেলে-মেয়েদের তুলনা করলে নিশ্চিত হওয়া যায়, এরাই প্রচারিত সেই ভিডিওটিতে ছিল। ছবিগুলোর মধ্যে সাদা শার্ট পরা অর্থাৎ সারজিস আলম দাবিতে প্রচারিত ছেলেকেও দেখা যায়।
Comparison : Rumor Scanner
সানজিদা সারা এর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করলেও তাদের একসাথে আরো একাধিক ছবি ও ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায় যার মধ্যে সারজিস আলম দাবিতে প্রচারিত ছেলের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়।
Comparison : Rumor Scanner
অতঃপর, সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে সারজিস আলম দাবিতে প্রচারিত ছেলের মুখমণ্ডলের তুলনা করলে তাতেও বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Comparison : Rumor Scanner
সুতরাং, নৃত্যরত অবস্থায় মেয়েদের সাথে দেখা যাওয়া ছেলেটি সমন্বয়ক সারজিস আলম শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করেছে শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি কর্তৃক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করার ভিডিও নয় বরং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে করা প্রতিবাদ সভার পুরোনো ভিডিও উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে Supreme Court Bar Association Khobor নামের ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৪ আগস্ট ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আওয়ামী আইনজীবীদের প্রতিবাদ সভা ও মিছিল সমাবেশ’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে প্রচারিত ভিডিওটির বেশ কিছু অংশের মিল রয়েছে। অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি অন্তরবর্তীকালীন সরকার গঠনেরও আগের সময়কার।
Screenshot collage: Rumor Scanner
পরবর্তীতে, মূলধারার গণমাধ্যম ভোরের কাগজ এর ওয়েবসাইটে গত ০৪ আগস্ট ‘এক দফার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন আইনজীবীরা’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায়, গত ০৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবির প্রতিবাদে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা প্রতিবাদ সভা করেন। মূলত ঐ প্রতিবাদ সভার ভিডিও-ই বর্তমানে ভিন্ন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়াও, একই দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির সমর্থনেও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের একাংশ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
সুতরাং, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে করা প্রতিবাদ সভার ভিডিওকে সম্প্রতি আইনজীবী সমিতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
অন্তত গত ২৯ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার হচ্ছে যাতে পুলিশের পোশাক পরা কিছু ব্যক্তিকে নিথর কিছু দেহ ভ্যান গাড়িতে তুলতে দেখা যাচ্ছে। ঘটনাটি কোন স্থানের এবং কত তারিখের তা রিউমর স্ক্যানারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন গণমাধ্যম কর্মীসহ অনেকেই। আমরা তাই ভিডিওটির বিষয়ে পরদিন ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় অনুসন্ধান শুরু করি।
Screenshot collage: Rumor Scanner
ওপেন সোর্সে ভিডিওটির সবচেয়ে পুরোনো আপলোড পাওয়া যায় ২৯ আগস্ট সন্ধ্যার কিছু পরে। দেড় মিনিটের এই ভিডিওটি কে ধারণ করেছেন তা সেদিন ভিডিওটি প্রকাশকারী একাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারীর সাথে কথা বলেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রত্যেকেই আমাদের জানাচ্ছিলেন, তাদেরকে মেসেঞ্জারে ভিডিওটি দেওয়া হয়েছে। সেই সূত্রে ভিডিওটি প্রকাশ করেছেন তারা। ভিডিও ধারণকারীকে পাওয়া গেলে সহজেই মূল ভিডিও ফাইল সংগ্রহ করে মেটাডাটা বা ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে ভিডিও ধারণের তারিখসহ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জানা সম্ভব ছিল। এই পথে সমাধান না আসায় ভিডিওটি বিশ্লেষণের পথে আগায় রিউমর স্ক্যানার। এ সংক্রান্ত ভাইরাল বেশ কিছু পোস্টের কমেন্টে কেউ কেউ দাবি করেন, স্থানটি যাত্রাবাড়ী, কেউ দাবি করেন এটি সাভার বা আশুলিয়ার হতে পারে৷ এই স্থানগুলোর বিষয়ে মন্তব্য আসার যৌক্তিক কারণও ছিল। কারণ এসব স্থানে জুলাই এবং আগস্টের বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় সংঘর্ষের খবর এসেছে গণমাধ্যমে। প্রাথমিকভাবে এসব এলাকার থানা এবং সংঘর্ষস্থলগুলো গুগল ম্যাপের মাধ্যমে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেও আলোচিত ভিডিওটির সাথে মিল পাওয়া যায়নি৷ ভিডিওতে একটি অস্পষ্ট পোস্টারের ছবিও দেখা যাচ্ছিল।
Screenshot: Facebook
এটির বিষয়ে সন্দেহভাজন এলাকাগুলোর রাজনৈতিক পোস্টারগুলো ওপেন সোর্সে বিভিন্ন কিওয়ার্ডে অনুসন্ধান করেও আলোচিত পোস্টারটির সাথে মিল পাওয়া যায়নি। সেদিন রাত ৯ টার পর রিউমর স্ক্যানারের অফিশিয়াল ফেসবুক গ্রুপে এ বিষয়ে একটি পোস্টের মাধ্যমে ভিডিওটির বিষয়ে কোনো সুনিশ্চিত বা সম্ভাব্য কোনো তথ্য জানা থাকলে আমাদের জানানোর আহ্বান জানানো হয়। রিউমর স্ক্যানারের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেশ কয়েকজন জানান, সাভারের বাইপাইলের আশুলিয়া থানার পাশের দৃশ্য এটি৷ তাদের দাবি, ঘটনাটি ০৫ আগস্টের, শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ পরবর্তী সময়ের। একই সময়ে সাভারের স্থানীয় সাংবাদিক সাকিব আসলামও জানান যে ঘটনাটি আশুলিয়ার।
এই তথ্যের সূত্রে আশুলিয়া এলাকার রাজনৈতিক পোস্টারগুলোর বিষয়ে ফের অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানার। এক পর্যায়ে পোস্টারটির ব্যক্তির ছবির সাথে স্থানীয় এক ব্যক্তির পোস্টারের মিল পাওয়া যায়। ফেসবুক থেকে পাওয়া এসব পোস্টারে উক্ত ব্যক্তির পরিচয় দেওয়া হয়েছে, আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী আবুল হোসেন ভূঁইয়া।
Image : Facebook
কাছাকাছি সময়ে সাংবাদিক সাকিব আসলামও আশুলিয়া এলাকা থেকে ধারণ করা আলোচিত পোস্টারের আরেকটি ছবি তার এক পোস্টে যুক্ত করেন। যদিও তিনি তা পরে সরিয়ে নেন। তবে রিউমর স্ক্যানার ছবিটি সংরক্ষণ করে সেদিন রাত ১০ টা ৪৭ মিনিটে।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
তবে বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আরো ঘণ্টাখানেক সময় নেওয়া হয়৷ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে স্থানটির সুনির্দিষ্ট ঠিকানার বিষয়ে আরো তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হয়। স্থানীয় এক ব্যক্তি পোস্টার লাগানো দেয়ালটি তার বাসার বাউন্ডারি দেওয়াল দাবি করে রিউমর স্ক্যানারকে গুগল ম্যাপে স্থানটি চিহ্নিত করে দেন। তবে ম্যাপের ওই অংশটি সর্বশেষ ২০২১ সালে হালনাগাদ হওয়ায় স্থানটির বর্তমান অবস্থার সাথে পুরোপুরি মিল পাওয়া যায়নি। উক্ত ব্যক্তি আমাদের জানান, যে দেয়ালে পোস্টারটি দেখা যাচ্ছে, দেয়ালটিতে আগে প্লাস্টার করা ছিল না। পরে করা হয়েছে।
Screenshot comparison: Rumor Scanner
সার্বিক বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরে সেদিন (৩১ আগস্ট) রাত ১২ টা ২ মিনিটে রিউমর স্ক্যানারের অফিশিয়াল ফেসবুক গ্রুপে পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়। একইসাথে গণমাধ্যম কর্মী যারা বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন তাদেরকেও প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণসহ বিষয়টি অবহিত করা হয়।
এ নিয়ে চ্যানেল২৪ প্রথম সংবাদ প্রকাশ করে ৩১ আগস্ট সকাল সাড়ে আটটার পর। গণমাধ্যমটি জানায়, “সম্প্রতি ভ্যানে নিথর দেহের স্তূপের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে নিহত কয়েকজন ব্যক্তির। যাদের নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি। তবে ভিডিওটি ভাইরাল হবার পর ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। পরে ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার জানায়, ভ্যানে নিথর দেহের স্তূপের ঘটনাটি আশুলিয়া থানা সংলগ্ন এলাকার। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাতে প্রতিষ্ঠানটি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।”
চ্যানেল২৪ লিখেছে, “রিউমর স্ক্যানার জানায়, নিথর দেহের স্তূপের বহুল আলোচিত ভিডিওটি আশুলিয়া থানা সংলগ্ন এলাকার ঘটনা। ৫ আগস্ট বিকেলে এই ঘটনা ঘটে। এছাড়া ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকেন এমন দুইজন দাবি করেন, ভিডিওর দেয়ালে যার পোস্টার দেখা যায় তিনি আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী আবুল হোসেন ভূঁইয়া।”
৩১ আগস্ট স্থানীয় একাধিক সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত বিষয় জানিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন৷ বাংলানিউজ২৪ জানায়, ভিডিওটি আশুলিয়া থানার সামনের ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ধারণ করা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আশুলিয়া প্রেসক্লাবের পেছনের সড়ক দিয়ে থানা রোড অতিক্রম করে এসবি অফিসের দিকে যাওয়ার সময় ডান পাশের দেয়ালটি হুবহু ভিডিওর সাথে মিলে যায়। ওখানে এখনও সেই পোস্টারটি দেয়ালে রয়েছে। মহাসড়ক থেকে থানার দিকে অগ্রসর হয়ে এসবি অফিসের দিকে চৌরাস্তায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Screenshot: Banglanews24
এনটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে নির্বিচার গুলিতে গণহত্যার পর ভ্যানে তোলা কয়েকটি মরদেহের স্তূপের পাশে পুলিশকে হাঁটাহাঁটি করতেও দেখা গেছে। তাদের একজনকে ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে আত্মগোপনে চলে গেছেন তিনিসহ ভিডিওচিত্রে থাকা পুলিশের সদস্যরা। আরাফাতের গ্ৰামের বাড়ি বরিশালে। প্রায় দুই বছর আগে তিনি ঢাকা জেলার গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেন।
মানবজমিনের সরেজমিন প্রতিবেদনে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা উঠে এসেছে। ৫ আগস্টের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী মানবজমিনের কাছে দাবি করেন, গত ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরপর বাইপাইল এলাকার বিজয় মিছিল বের হয়। মিছিল শেষে বিকেলে উত্তেজিত জনতা আশুলিয়া থানা ঘেরাও করেন। এতে পুলিশ সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। থানার আশপাশে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে থানা ভবনে ঢুকে পড়েন। ঢুকেই তারা থানার গেইট বন্ধ করে দেন। তখন বিকেল সাড়ে ৪টার বাজে। মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে আন্দোলনকারীরা চারদিক থেকে থানা ঘিরে ফেলেন। তারা থানা ভবনে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। কেউ কেউ গেইট ভাঙতে এগিয়ে যান। অবস্থা বেগতিক দেখে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এ এফ এম সায়েদ আহমেদ পুলিশ সদস্যদের অস্ত্র রেডি করতে বলেন। গুলি লোড করতে বলেন। এই কথা শুনে উপস্থিতরা আরও চড়াও হন। আশপাশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় থানা ভবন থেকে বেরিয়ে এসে ৩০ থেকে ৩৫ জন পুলিশ সদস্য থানার গেইটে অবস্থান নেন। বিকেল ৪টা বেজে ৪০ মিনিট। ওসি সায়েদ আহমেদ গেইটে এসে উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন। তখন আন্দোলনকারীরা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ওসি পুলিশ সদস্যদের অস্ত্র হাতে নিয়ে রেডি হতে বলেন। তখন ঘটনাস্থলে থাকা জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রজনতা পুলিশকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। তখন ওসি সায়েদ আহমেদ আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা হেরেছি। আপনারা জিতেছেন। আমাদের মাফ করে দেন। সবাই বাড়ি ফিরে যান। একপর্যায়ে এসআই মালেক, ডিবির ওসি তদন্ত আরাফাত, এসআই আফজালুল, এসআই জলিল ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়েন। গুলিতে থানার গলিতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। মুহুর্মুহু গুলিতে লোকজন দৌড়ে পালিয়ে যান।
সেদিন পরবর্তীতে সেনাবাহিনী এসব পুলিশ সদস্যদের নিরস্ত্র করে আটক করে সেনানিবাসে নিয়ে যায় বলেও দাবি গণমাধ্যমটির।
এদিকে এই ঘটনা তদন্তে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ।
সম্প্রতি, ময়মনসিংহ শহরের প্রান্ত স্পেশালাইজড হাসপাতালে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে দাবিতে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হচ্ছে, হাসপাতালটিতে রিসিপশনিস্ট, বিল কাউন্টার এবং হেল্প ডেস্ক পদে নিয়োগ দিচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রিসিপশনিস্ট, বিল কাউন্টার এবং হেল্প ডেস্ক পদে নিয়োগের জন্য সম্প্রতি প্রান্ত স্পেশালাইজড হাসপাতাল এমন কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়নি বরং উক্ত হাসপাতালের নাম ব্যবহার করে প্রচারিত এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটিকে হাসপাতালটির পক্ষ থেকে ভুয়া বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রান্ত স্পেশালাইজড হাসপাতালের নাম সম্বলিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের কোনো তারিখ উল্লেখ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে প্রান্ত স্পেশালাইজড হাসপাতালের ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে সংস্থাটির পক্ষ থেকে প্রকাশিত এমন কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে উক্ত বিজ্ঞপ্তিটির বিষয়ে হাসপাতালটির ফেসবুক পেজে গত ২৮ আগস্ট প্রকাশিত একটি সতর্কীকরণ পোস্ট(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
উক্ত পোস্টে প্রান্ত স্পেশালাইজড হাসপাতালের সহকারী ম্যানেজার আবুল কালাম জানান, “প্রান্ত ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার ও প্রান্ত স্পেশালাইজড হসপিটাল এর কর্তৃপক্ষ কোন ধরণের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনলাইন কিংবা জাতীয় বা লোকাল পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিনি। বিধায় আমরা এই ভূয়া সংবাদের প্রতিবাদ করছি। চাকরির আশায় কেউ কারোও সাথে কোন ধরণের টাকা-পয়সা লেনদেন না করার জন্যে অনুরোধ করছি। লেনদেন করিলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। আমাদের হট লাইন নাম্বারে যোগাযোগ করে আপনার মতামত কিংবা অভিযোগ করতে পারেন।”
গত ২৫ আগস্ট জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার দপ্তরের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। উক্ত সাক্ষাতে উপদেষ্টাদ্বয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় দোভাষীর সহযোগীতা নেন। এর একটি ভিডিও সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তারই প্রেক্ষিতে উপদেষ্টাদ্বয়ের ইংরেজি ভাষায় পারদর্শীতা না থাকার বিষয়টিকে নিয়ে সমালোচনা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ইংরেজি ভাষার দক্ষতা নিয়ে সমালোচনা করে সজীব ওয়াজেদ জয় কোনো ভিডিও প্রকাশ করেননি বরং, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অনুষ্ঠিত ছাত্র-জনতার লং মার্চকে কেন্দ্র করে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রচারিত এক ফেসবুক বার্তার ভিডিওকে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটির শুরুতে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘আমি সজীব ওয়াজেদ জয় বলছি। আপনারা জানেন এই’ শীর্ষক কথা বলতে শোনা যায়। পরবর্তীতে ভিডিওটির উপস্থাপিকা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভাইরাল হওয়ার ভিডিওটির প্রসঙ্গ টেনে বলেন উক্ত ভিডিওটির প্রেক্ষিতে সজীব ওয়াজেদ জয় একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করেছেন। যেখানে তিনি ‘এটা আমাদের পুরো দেশের জন্যে লজ্জাজনক। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন দেশকে এভাবে বিব্রত করে এটি নিয়ে আসলে বলার মত কিছু থাকে না। দেশবাসীকে আমি একটা কথা বলতে চাই, যারা সামান্য ইংরেজি বলতে পারে না তারা কিভাবে উপদেষ্টা হয়?’ শীর্ষক কথাগুলো বলেছেন। তবে ভিডিওটির কোথাও সজীব ওয়াজেদ জয়ের মুখে কথাগুলো বলতে দেখা যায়নি।
দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ৫ আগস্ট দুপুরে প্রচারিত একটি ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওর শুরুতে দেখানো সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফুটেজের সাথে উক্ত ভিডিওর শুরুর অংশের মিল রয়েছে। উভয় ভিডিওর শুরুতে তাকে ‘আমি সজীব ওয়াজেদ জয় বলছি। আপনারা জানেন এই’ শীর্ষক বাক্য উচ্চারণ করতে শোনা যায়। এছাড়াও দুটো ভিডিওতেই তার পোশাক, পরিবেশ এবং বসার ভঙ্গি একই।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটিতে তিনি আন্দোলনকারীদের দাবি দাওয়া এবং আন্দোলনের পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করেন। যেহেতু ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, সেহেতু এটিতে কোনো উপদেষ্টা প্রসঙ্গে কোনো আলোচনা নেই।
এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে জয় নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নিয়ে আলোচিত মন্তব্যটি করেছেন কিনা জানতে তার ফেসবুক পেজ, গণমাধ্যম পর্যালোচনা করেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দোভাষীর সহায়তায় আলোচনা করায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নিয়ে সমালোচনা করে সজীব ওয়াজেদ জয় ভিডিও বার্তা প্রচার করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “এইচএসএসি ২৪ এর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরা ফেল করেছে জানিয়েছেন – মাউশি” শীর্ষক দাবি প্রচার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে নিউজ বার্তা নামের একটি ফেসবুক পেজের ফটোকার্ড ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এইচএসসি ‘২৪ ব্যাচের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরা ফেল করেছে শীর্ষক কোনো তথ্য মাউশি এখন পর্যন্ত জানায়নি, বরং মাউশির এমন তথ্য জানানোর নিয়মই নেই।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি মূলত “News Barta 24 – নিউজ বার্তা ২৪” নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ছড়িয়েছে। পেজটিতে সংক্রান্ত ফটোকার্ডটি গত ২৭ আগস্ট সম্ভাব্য সর্বপ্রথমবার পোস্ট করা হয়েছে। ফেসবুক পেজটির ফলোয়ার সংখ্যা মাত্র তেরো এবং লাইক সংখ্যা মাত্র পাঁচ। পেজটি গত ০৩ আগস্ট চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ, পেজটি কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র নয়৷
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সংবাদটির বিস্তারিত জানতে পেজটিতে দেওয়া তাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে বলা হয়। তাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করলে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সংবাদ শিরোনাম ও সংবাদ দেখতে পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, তাদের ওয়েবসাইটটির ডোমেইন পর্যবেক্ষণ করলে গতানুগতিক সংবাদমাধ্যমের মতো টপ লেভেল ডোমেইনের বদলে ব্লগস্পট লেখা দেখতে পাওয়া যায়৷ অর্থাৎ, তারা ব্লগস্পটের সাবডোমেইন হিসেবে পরিচালনা করছে।
পরবর্তীতে, এ বিষয়ে তাদের প্রকাশিত সংবাদটি পড়লে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রে সংবাদ উপস্থাপনের পরিবর্তে মূলত শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রবন্ধ দেখতে পাওয়া যায়। সংবাদ শিরোনামের সাথে মূল লেখার বেশ বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। কেবল শুরুর দিকে তথ্যপ্রমাণ ছাড়া একবার উল্লেখ পাওয়া যায়, খাতা কেটে শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষকরা জবাব দিয়েছেন, অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ফেল করেছে।
তাছাড়া, সংবাদ প্রতিবেদন দাবিতে প্রকাশিত লেখাটিতে প্রবন্ধ আকারে যে লেখা প্রকাশ করা হয়েছে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেখা যায় সেই লেখাটিও সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং প্রথম আলোতে ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে প্রায় ৭২ বছরের পুরোনো, যা ‘আমাদের শিক্ষা সমস্যা: ছাত্ররা পরীক্ষায় ফেল করে কেন?’ শিরোনামে শিক্ষাবিদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী লিখেছিলেন এবং ১৯৫২ সালে সংবাদ-এ ছাপা হয়েছিল।
অনুসন্ধানে এইচএসসি ২০২৪ ব্যাচের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ফেল করার বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট দেশিয় সংবাদমাধ্যম দৈনিক শিক্ষা’য় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাতিল হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাগুলোর ফল তৈরিতে পরীক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সুবিধার কথা ভাবা হচ্ছে। ফল নিয়ে নানারকম প্রস্তাবনা আসছে। এগুলো যাচাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশার। সোমবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তার সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান তিনি।”
এর আগে ২৬ আগস্ট দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল অটোপাসের ভিত্তিতে প্রকাশ করা হবে না। অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোতে প্রাপ্ত নম্বর এবং যে পরীক্ষাগুলো বাতিল হয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে এ সার্বিক ফল প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষা প্রশাসন। তাই অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় কোন শিক্ষার্থী ফেল করলে ওই শিক্ষার্থী সার্বিক ফলাফলে ফেলই করবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। যদিও এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের প্রস্তাবনা এখনো প্রস্তুত হয়নি। সোমবার (২৬ আগস্ট) ওই প্রস্তাবনা প্রস্তুতের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।”
অর্থাৎ, কোথাও অধিকাংশ শিক্ষার্থী ফেল করার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার যোগাযোগ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সাধারণ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক মো: তানভীর হাসানের সাথে৷ তিনি জানান, তিনি এ বিষয়ে (আলোচিত দাবি) কিছু জানেন না। মাউশি পরীক্ষার্থী নিয়ে কাজ করে না৷ পরীক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা বোর্ড কাজ করে।
তবে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের কোনো শিক্ষা বোর্ড সূত্রেই এমন তথ্য প্রচারের প্রমাণ মেলেনি।
সুতরাং, মাউশি জানিয়েছে এইচএসসি ২৪ ব্যাচের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরা ফেল করেছেন শীর্ষক দাবিটি ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।