এইচএসসির অধিকাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছেন দাবিতে মাউশিকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “এইচএসএসি ২৪ এর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরা ফেল করেছে জানিয়েছেন – মাউশি” শীর্ষক দাবি প্রচার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে নিউজ বার্তা নামের একটি ফেসবুক পেজের ফটোকার্ড ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।

এইচএসসির

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এইচএসসি ‘২৪ ব্যাচের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরা ফেল করেছে শীর্ষক কোনো তথ্য মাউশি এখন পর্যন্ত জানায়নি, বরং মাউশির এমন তথ্য জানানোর নিয়মই নেই।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি মূলত “News Barta 24 – নিউজ বার্তা ২৪” নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ছড়িয়েছে। পেজটিতে সংক্রান্ত ফটোকার্ডটি গত ২৭ আগস্ট সম্ভাব্য সর্বপ্রথমবার পোস্ট করা হয়েছে। ফেসবুক পেজটির ফলোয়ার সংখ্যা মাত্র তেরো এবং লাইক সংখ্যা মাত্র পাঁচ। পেজটি গত ০৩ আগস্ট চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ, পেজটি কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র নয়৷ 

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সংবাদটির বিস্তারিত জানতে পেজটিতে দেওয়া তাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে বলা হয়। তাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করলে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সংবাদ শিরোনাম ও সংবাদ দেখতে পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, তাদের ওয়েবসাইটটির ডোমেইন পর্যবেক্ষণ করলে গতানুগতিক সংবাদমাধ্যমের মতো টপ লেভেল ডোমেইনের বদলে ব্লগস্পট লেখা দেখতে পাওয়া যায়৷ অর্থাৎ, তারা ব্লগস্পটের সাবডোমেইন হিসেবে পরিচালনা করছে।

পরবর্তীতে, এ বিষয়ে তাদের প্রকাশিত সংবাদটি পড়লে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রে সংবাদ উপস্থাপনের পরিবর্তে মূলত শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রবন্ধ দেখতে পাওয়া যায়। সংবাদ শিরোনামের সাথে মূল লেখার বেশ বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। কেবল শুরুর দিকে তথ্যপ্রমাণ ছাড়া একবার উল্লেখ পাওয়া যায়, খাতা কেটে শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষকরা জবাব দিয়েছেন, অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ফেল করেছে। 

তাছাড়া, সংবাদ প্রতিবেদন দাবিতে প্রকাশিত লেখাটিতে প্রবন্ধ আকারে যে লেখা প্রকাশ করা হয়েছে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেখা যায় সেই লেখাটিও সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং প্রথম আলোতে ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে প্রায় ৭২ বছরের পুরোনো, যা ‘আমাদের শিক্ষা সমস্যা: ছাত্ররা পরীক্ষায় ফেল করে কেন?’ শিরোনামে শিক্ষাবিদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী লিখেছিলেন এবং ১৯৫২ সালে সংবাদ-এ ছাপা হয়েছিল।

অনুসন্ধানে এইচএসসি ২০২৪ ব্যাচের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ফেল করার বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট দেশিয় সংবাদমাধ্যম দৈনিক শিক্ষা’য় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাতিল হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাগুলোর ফল তৈরিতে পরীক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সুবিধার কথা ভাবা হচ্ছে। ফল নিয়ে নানারকম প্রস্তাবনা আসছে। এগুলো যাচাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশার। সোমবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তার সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান তিনি।”

এর আগে ২৬ আগস্ট দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল অটোপাসের ভিত্তিতে প্রকাশ করা হবে না। অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোতে প্রাপ্ত নম্বর এবং যে পরীক্ষাগুলো বাতিল হয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে এ সার্বিক ফল প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষা প্রশাসন। তাই অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় কোন শিক্ষার্থী ফেল করলে ওই শিক্ষার্থী সার্বিক ফলাফলে ফেলই করবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। যদিও এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের প্রস্তাবনা এখনো প্রস্তুত হয়নি। সোমবার (২৬ আগস্ট) ওই প্রস্তাবনা প্রস্তুতের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।”

অর্থাৎ, কোথাও অধিকাংশ শিক্ষার্থী ফেল করার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার যোগাযোগ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সাধারণ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক মো: তানভীর হাসানের সাথে৷ তিনি জানান, তিনি এ বিষয়ে (আলোচিত দাবি) কিছু জানেন না। মাউশি পরীক্ষার্থী নিয়ে কাজ করে না৷ পরীক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা বোর্ড কাজ করে। 

তবে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের কোনো শিক্ষা বোর্ড সূত্রেই এমন তথ্য প্রচারের প্রমাণ মেলেনি।

সুতরাং, মাউশি জানিয়েছে এইচএসসি ২৪ ব্যাচের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরা ফেল করেছেন শীর্ষক দাবিটি ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img