নিজেদের চাকরি জাতীয়করণসহ কয়েকটি দাবিতে আনসার সদস্যরা কয়েক দিন ধরে ঢাকায় বিক্ষোভ করছিলেন। গতকাল রোববার তাঁরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সচিবালয় ঘেরাও করে রাখেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানান। এমতাবস্থায় সচিবালয়ের ভেতরে সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টাসহ অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আটকা পড়েন এরই প্রেক্ষিতে সচিবালয়ে আটকে পড়া দুই উপদেষ্টার ডাকে তাদের উদ্ধার করতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা রাজু ভাস্কর্য থেকে সচিবালয়ে জড়ো হন। শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের সামনে আসলে আন্দোলনরত আনসার সদস্যের সাথে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। দফায় দফায় হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এরই প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি ইয়াসমিন সুলতানা পোলেনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক গুজব প্রচার হতে দেখা যায় যেখানে বিভিন্ন আঙ্গিকে আনসার সদস্য নিহত হওয়ার দাবি প্রচার করা হয়।
নিচে এসব গুজবের সত্যতা যাচাই করে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
শিক্ষার্থী-আনসার সংঘর্ষে আনসার সদস্য নিহতের গুজব: ১
দাবি: সংঘর্ষ নিহত এক আনসার সদস্য।
উক্ত দাবিতে যুক্তরাজ্য শাখার মহিলা যুবলীগের সভাপতি ইয়াসমিন সুলতানা পোলেনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত আরো কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্ট:
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি গত ২৫ আগস্ট অন্তত দুপুর থেকে বন্যার পানিতে নিহত আনসার সদস্যের মৃতদেহের ছবি হিসেবে প্রচারিত হয়ে আসছে। পোস্টগুলোতে বলা হয় ফেনীতে এ আনসার সদস্য গত ২৪ তারিখ নিহত হন। তার ছবি সম্বলিত কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, ছবিতে থাকা ব্যক্তির নাম: মোঃ ওয়াহিদুর রহমান, ঠিকানা: ফেনী সদর, এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাওয়ার ১ এ কর্মরত ছিলেন। বন্যার্তদের সহযোগিতা করতে তিনি ফেনী গিয়েছিলেন।
অপরদিকে ২৫ আগস্ট দিবাগত রাতে শিক্ষার্থী-আনসার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। অর্থাৎ, শিক্ষার্থী-আনসার সংঘর্ষ ঘটার পূর্ব থেকেই এ ছবিটি প্রচারিত হচ্ছে। সংঘর্ষের আগে থেকে ইন্টারনেটে প্রচারিত হওয়া এই ছবিটি পরবর্তীতে প্রচার করে সচিবালয়ের সামনে আনসার সদস্যকে মেরে ফেলার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
তাছাড়া, বিশ্বস্ত সূত্রে উক্ত আনসার-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেলেও কারোর নিহত হওয়ার সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, আলোচিত ছবির ব্যক্তি ২৫ আগস্ট তারিখে সংঘটিত হওয়া আনসার-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
শিক্ষার্থী-আনসার সংঘর্ষে আনসার সদস্য নিহতের গুজব – ২
দাবি: আফজাল হোসেন নামের এক আনসার সদস্যকে গতকাল সচিবালয়ের সামনে বিএনপি-জামায়াত আক্রমণ করে মেরে ফেলে।
উক্ত দাবিতে যুক্তরাজ্য শাখার মহিলা যুবলীগের সভাপতি ইয়াসমিন সুলতানা পোলেনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত আরো কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্ট: গত ২৫ আগস্টে সংঘটিত হওয়া সংঘর্ষে কোনো আনসার সদস্য নিহতের ঘটনা ঘটেনি। প্রচারিত পোস্টে আফজাল হোসেন নাম ও উক্ত ব্যক্তির আইডি কার্ডের ছবির সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২২ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার ইউএনও এর বাসভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আনসার সদস্য আফজাল হোসেন (২২) নিজের শট গানের গুলিতে নিহত হয়েছেন। গত ২২ এপ্রিল সোমবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক ) হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক সন্ধ্যা ৭টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
অর্থাৎ, সংযুক্ত আইডি কার্ডের আনসার সদস্য গত ২৫ আগস্টে সংঘটিত হওয়া আনসার-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে নিহত হননি, বরং উক্ত সংঘর্ষের প্রায় চার মাস পূর্বেই নিজের বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
তথ্যসূত্র: ১
শিক্ষার্থী-আনসার সংঘর্ষে আনসার সদস্য নিহতের গুজব – ৩
দাবি: মোট ২৭ জন আনসার সদস্য আনসার-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন
উক্ত দাবিতে যুক্তরাজ্য শাখার মহিলা যুবলীগের সভাপতি ইয়াসমিন সুলতানা পোলেনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
পরবর্তী সময়ে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত আরেকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্ট: ইয়াসমিন সুলতানা পোলেন তার দাবিকৃত পোস্টে সূত্র হিসেবে বিশ্বস্ত সূত্র দাবি করলেও কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রের উল্লেখ করেননি। কোনোরকম তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই দাবিটি প্রচার করা হয়।
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে এ বিষয়ে গত ২৬ আগস্ট তারিখে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোতে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উক্ত সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় কয়েকজন আনসার সদস্য আহত হন। সংঘর্ষে কারোর নিহত হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
এ বিষয়ে দেশীয় অন্য আরেকটি গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়ার বরাতে গত ২৬ আগস্ট তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থী ও আনসারদের সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এদের মধ্যে চার থেকে পাঁচজন আনসার সদস্য বাকিরা সবাই শিক্ষার্থী।
উক্ত প্রতিবেদনেও কারোর নিহতের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি৷ এছাড়াও, অধিকতর অনুসন্ধানেও বিশ্বস্ত সূত্রে উক্ত সংঘর্ষে কারোর নিহত হওয়ার সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, গত ২৫ আগস্টে আনসার-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে আনসার সদস্য নিহত হয়েছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত দাবিগুলো মিথ্যা।