সম্প্রতি, কোন আইনে পাসপোর্ট ছাড়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লী পৌঁছাতে পারলো?, ভারতীয় পার্লামেন্টে নরেন্দ্র মোদিকে এমন প্রশ্ন করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ভিডিওতে শেখ হাসিনা পাসপোর্ট ছাড়া দিল্লী কীভাবে পৌঁছালো সংক্রান্ত প্রশ্ন ভারতীয় পার্লামেন্টে নরেন্দ্র মোদিকে করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। বরং দিল্লির আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিংহের ভিন্ন বিষয়ে দেওয়া বক্তব্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, তার এই বক্তব্যের সময় নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, নির্মলা সীতারমণ ও রাজনাথ সিং এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি
অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ভিডিওতে সাংসদ সঞ্জয় সিংহ সীমান্তে নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেন। ট্রাম্প বা ওবামার সরকার নয় বরং ভারতে এক মহামানবের সরকার চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি সেই মহামানব নরেন্দ্র মোদীকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে প্রশ্ন করতে চাই, সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্ব কাদের? অমিত শাহের দফতরের।”
এছাড়াও, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি প্রশ্ন তোলেন, কোনো বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ত্রিপুরা, অসম, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ইউপির সীমান্ত পেরিয়ে কিভাবে দিল্লি চলে আসে।
তবে, ভিডিওতে শেখ হাসিনা সংক্রান্ত কোনো কথা তাকে বলতে দেখা যায়নি।
ভিডিওতে জেপি নাড্ডার ‘অনুপ্রবেশকারী’ সংক্রান্ত এক বক্তব্যের জবাবে দিল্লির আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিং সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি প্রশ্ন তোলেন, কোনও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ত্রিপুরা, অসম, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ইউপির সীমান্ত পেরিয়ে কিভাবে দিল্লি চলে আসে।
তবে, তার বক্তব্যে শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য আসেনি। তাছাড়া, আলোচিত ভিডিওতে থাকা রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বা প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং কাউকেই দেখতে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, তাদেরকে আলোচিত ভিডিওটিতে সম্পাদনার মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে।
তবে, ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারী অনুপ্রবেশকারীদের ইস্যুতে শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ তুলে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিং।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশি গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত ০৮ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। তবে, সাংসদ সঞ্জয় সিংহের যে ভিডিও দিয়ে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে, সেই ভিডিওতে তিনি যখন সংসদে বক্তব্য রাখেন তখন শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়নি।
সুতরাং, ভারতীয় পার্লামেন্টে শেখ হাসিনার পাসপোর্ট ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদিকে প্রশ্নের সম্মুখীন করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর ।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার ১৫ সদস্যের সেক্রেটারিয়েট ঘোষণা করা হয়েছে। গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের ফেসবুক পেজে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি এস এম ফরহাদ স্বাক্ষরিত নবগঠিত সেক্রেটারিয়েট তালিকা প্রকাশ করা হয়। উক্ত তালিকায় তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের নাম ঘোষণা করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দাবি প্রচার করা হয় যে, “জহুরল হক হল ছাত্রলীগের পোস্টেড নেতা এখন ঢাবি শিবিরের পোস্টেড নেতা! আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, প্রচার উপ সম্পাদক, জহুরল হক হল ছাত্রলীগ। এখন ঢাবি শাখা শিবিরের তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে আসীন হয়েছে।”
উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ছবি দাবিতে কয়েকটি ছবি সংযুক্ত করা হয় এবং ঢাবি শিবির শাখা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের জহুরুল হক হল কমিটির পুরোনো একটি তালিকার ছবি সংযুক্ত করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং বর্তমানে শিবির নেতা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ভিন্ন মানুষের, ঢাবি শিবিরের তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের নয়। প্রকৃতপক্ষে ভিন্ন এক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ছবি ব্যবহার করে তাকে বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দাবি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ছবি দাবিতে কয়েকটি ছবি সংযুক্ত করা হয় এবং ঢাবি শিবির শাখা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের জহুরুল হক হল কমিটির ২০২২ সালের একটি তালিকার ছবি সংযুক্ত করা হয়।
পরবর্তী অনুসন্ধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক হিসেবে ঘোষিত আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করলে তার একাধিক ছবি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর তুলনা করলে পার্থক্য দেখা যায়। এ থেকে বুঝা যায় যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক হিসেবে ঘোষিত আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এবং আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে থাকা ছবির ব্যক্তিটি ভিন্ন।
Comparison: Rumor Scanner
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক হিসেবে ঘোষিত আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও একটি বিস্তারিত পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টটিতে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, প্রচারিত ছবিতে থাকা ব্যক্তি এবং তিনি ভিন্ন। তার বিস্তারিত পরিচয় : নাম: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ডিপার্টমেন্ট: শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, সেশন: ২০১৯-২০, হল: সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, জেলা: লক্ষ্মীপুর।
এবং আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে সংযুক্ত ব্যাক্তির পরিচয়: নাম: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ডিপার্টমেন্ট: ইসলামিক স্টাডিজ, সেশন: ২০১৭-১৮, হল: জহুরুল হক হল, জেলা: চট্টগ্রাম।
ঢাবি শিবির শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক হিসেবে ঘোষিত আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের সেশনের তথ্যের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ প্রতিদিনের ওয়েবসাইটে গত ২২ জানুয়ারিতে “ঢাবি ছাত্রশিবিরের ১৫ সদস্যের সেক্রেটারিয়েট কমিটি ঘোষণা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং তিনি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক হিসেবে ঘোষিত আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন দাবিতে ভিন্ন ব্যক্তির ছবি প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভাইরাল ফেসবুক পোস্টগুলোতে হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বাড়ি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বাড়ির নয় বরং এটি তুরস্কের সানলিউরফা প্রদেশের হাররান অঞ্চলে অবস্থিত একটি বাড়ির ছবি। উক্ত বাড়িটির সাথে হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার।
এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানে Adil Hafiza-এর টুইট ও Turktoyu ওয়েবসাইটে Harran বাড়ির ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া যায় ছবিগুলো তুরস্কের হাররান অঞ্চলের ঐতিহাসিক কিছু বাড়ির ছবি।
হাররানের বাড়িগুলো নিয়ে করা গবেষণা এবং তুরস্কের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, হাররানের বাড়িগুলোর সাথে প্রায় ২৫০০ হাজার বছরেরও পুরোনো ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও তুরস্কের মূলধারার গণমাধ্যম Daily Sabah এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে যেসব গম্বুজবিশিষ্ট বাড়ি দেখা যায় সেগুলো সর্বোচ্চ ২৫০ বছর পুরোনো বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এত অল্প সময়কাল পূর্বে তুরস্কে তৈরিকৃত এই বাড়িগুলোকে প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে আরবের মক্কা নগরীতে বসবাসকারী হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বাড়ি দাবিতে প্রচারিত হলে তা স্পষ্টতই মিথ্যাচার। তাছাড়া, হযরত ফাতেমা (রাঃ) জীবিত থাকাকালীন অবস্থাতেও তুরস্কে তার কোনো বাড়ি ছিল কিনা সে ব্যাপারে ঐতিহাসিক প্রমাণও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, তুরস্কের একটি বাড়ির ছবিকে হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর বাড়ির ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালেও একই দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রিউমর স্ক্যানার এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এমনকি গত বছরও দাবিটি প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, “ওশ স্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, মস্কো, রাশিয়ার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. গুপ্তপ্রসাদ রেড্ডি (বি ভি) বলেছেন, ক্যান্সার কোনো মরণব্যাধি নয়, কিন্তু মানুষ এই রোগে মারা যায় শুধুমাত্র উদাসীনতার কারণে। তার মতে, মাত্র দুটি উপায় অনুসরণ করলেই উধাও হবে ক্যান্সার।” শীর্ষক শিরোনামে একজন ব্যক্তির ছবি সম্বলিত একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চিনি-মুক্ত খাদ্য, লেবু মিশ্রিত গরম পানি এবং নারিকেল তেল খেয়ে ক্যান্সার নিরাময়ের দাবির বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। ওশ স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি রাশিয়ায় নয়, কিরগিজস্তানে অবস্থিত এবং ডা. গুপ্তপ্রসাদ রেড্ডি (বি ভি) নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। পোস্টে ব্যবহৃত ব্যক্তির ছবিরও কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস মেলেনি, এবং ডা. গুপ্তপ্রসাদের নামে কোনো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চিনি-মুক্ত খাদ্য, লেবু মিশ্রিত গরম পানি এবং নারকেল তেল খেয়ে ক্যান্সার নিরাময়ের দাবির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে জানিয়েছে, চিনি বাদ দিলে ক্যান্সার ঝুঁকি কমে এমন কোনো প্রমাণ নেই। ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ রিসার্চ ও Snopes এর তথ্যমতে, লেবু ক্যান্সার নিরাময়ে কার্যকর নয়। নারকেল তেল নিয়ে কিছু গবেষণায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানোর সম্ভাবনা পাওয়া গেলেও ক্যান্সার নিরাময়ের প্রমাণ মেলেনি।
সুতরাং, ডা. গুপ্তপ্রসাদের বরাতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত চিনি-মুক্ত খাদ্য, গরম লেবু পানি এবং নারকেল তেল খেয়ে ক্যান্সার নিরাময়ের দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমান নেই, এটি একটি গুজব।
পূর্বেও একই দাবিতে একই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রিউমর স্ক্যানার এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
গত বছরের ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। সম্প্রতি ‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে শপথ করেছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে৷
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে শপথ গ্রহণ দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয় বরং, পৃথক দুটি ভিডিও ও অডিওকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একত্রিত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে৷
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Shakil Ahmed নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর প্রকাশিত পোস্টে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির আংশিক মিল রয়েছে৷
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও ও আলোচিত ভিডিওটি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিও দুটির বিষয়বস্তু ও পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে মিল রয়েছে৷ ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া ২০২৪ সালের ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাঁথিয়া উপজেলা শাখার বিএনপির অবৈধ কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশের চিত্র৷ উক্ত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিবর্গ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা সম্বলিত সাইনবোর্ড ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতার সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে৷ অর্থাৎ, এই দুটি ভিডিও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাঁথিয়া উপজেলা শাখার বিএনপির অবৈধ কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশের৷
অতঃপর, ভিডিওগুলোতে থাকা অডিও পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, ২০২৪ সালের ভিডিওর অডিও থেকে আলোচিত ভিডিওটির অডিও ভিন্ন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটির অডিওতে থাকা তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Shuvo Mondal নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ০৯ জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতেও হুবহু একই অডিওটি শোনা যায়। অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটিতে সংযুক্ত অডিওটি ভিন্ন কোনো এক উৎস থেকে নিয়ে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রতিস্থাপন করে সংযুক্ত করা হয়েছে।
উপরিউক্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির ফুটেজটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, এটি ২০২৪ সালের একটি ভিডিও থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং অডিওটি ভিন্ন কোনো একটি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে
সুতরাং, সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে শপথ গ্রহণ করার দৃশ্য দাবিতে ২০২৪ সালের একটি সমাবেশের ভিডিওতে ভিন্ন একটি উৎসের অডিও দিয়ে প্রতিস্থাপন করে তৈরি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পাদিত৷
সম্প্রতি, টেসলা এবং স্পেসএক্স-এর সিইও ইলন মাস্ক রোবট নাপিত দিয়ে চুল কাটাচ্ছেন দাবিতে দৈনিক জনকণ্ঠ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যায়, অত্যাধুনিক এক রোবট ইলন মাস্কের চুল কাটছে। যেটিকে প্রতিবেদনের শেষে গণমাধ্যমটি ‘প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে মাস্কের নতুন পদক্ষেপ’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
ফেসবুকে প্রচারিত জনকণ্ঠ-এর ফটোকার্ড দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রোবট নাপিত দ্বারা ইলন মাস্কের চুল কাটার প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয় বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরিকৃত ভিডিওটিকে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সাধারণত ইলন মাস্ক প্রতিটি বিষয়েই তার ব্যক্তিগত এক্স অ্যাকাউন্টে আপডেট দিয়ে থাকেন। তবে দাবিটির বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার এক্স অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে এমন কোনো ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে aismartzone ইউজারনেমের একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর সাদৃশ্য রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, এই ক্লিপটি কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজারি বা সিজিআই। যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
পাশাপাশি উক্ত ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এতে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে এআই প্রযুক্তির সহায়তায় নির্মিত একাধিক ভিডিও রয়েছে। এছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি নানা ধরনের ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওকে ইলন মাস্কের রোবট নাপিত দিয়ে চুল কাটানোর দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উক্ত দাবিতে প্রচারিত ইউটিউব ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সম্প্রতি রংপুরে লাঠিসোটা হাতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিলের নয় বরং ইন্টারনেট থেকে কয়েকটি ভিন্ন ঘটনার পুরাতন ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
বিষয়টি অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম DBC News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর প্রকাশিত ‘রংপুরে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ ও ঝাড়ু মিছিল’’ শিরোনামে একটি ভিডিওখুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে থাকা সংবাদ উপস্থাপিকার সংবাদ পাঠের অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন যুব সংহতির মিছিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তিমূলক স্লোগান দেওয়ার প্রতিবাদে ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর (শুক্রবার) ঝাড়ু মিছিল করে রংপুরের আওয়ামী লীগ, মহানগর যু্বলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনগুলো।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, এটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটের পুরোনো ভিডিও।
আলোচিত ভিডিওর বিস্তারিত অংশে মিছিলের ফুটেজের বিষয়ে অনুসন্ধানে ২০২৪ সালের ০২ নভেম্বর Channel i এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ‘রংপুরে জাতীয় পার্টির লাঠি মিছিল ও সমাবেশ’’ শিরোনামে একটি ভিডিওপাওয়া যায়। যেখানে মিছিলের দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটির সাদৃশ্য রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
গত ২ নভেম্বর, ২০২৪ সালে রংপুরের সেন্ট্রাল রোডস্থ জাতীয় পার্টির কার্যালয় থেকে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে ভিপি নুরের গণ অধিকার পরিষদসহ ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে একটি লাঠি মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ এবং গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ কয়েকজন ছাত্রের নোংরা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানানো হয়।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এটির প্রেক্ষাপট আলোচিত দাবি থেকে ভিন্ন৷
সুতরাং, রংপুরে লাঠিসোটা হাতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার বিভিন্ন ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিস্ফোরক এক ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় বসেই বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে এমন এক মন্তব্য করেছেন যা শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠতে বাধ্য হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম ভাষণে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মতো একজন সফল প্রধানমন্ত্রী আর আসবে না। তার অসাধারণ নেতৃত্বেই বাংলাদেশ উন্নয়নের শিখরে পৌঁছেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো বলেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ গত ৫০ বছরে যে সাফল্য অর্জন করেছে তা অনন্য। তার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ। এখানেই থেমে যাননি ট্রাম্প। তিনি আরে বলেন আমি অতি শীঘ্রই বাংলাদেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনবো এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাকে আবারও ক্ষমতায় বসানোর ব্যবস্থা করবো। [….]”
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টগুলো সম্মিলিতভাবে এক লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয়৷ প্রকৃতপক্ষে কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিন্ন, পুরোনো, সম্পাদিত ও অপ্রাসঙ্গিক নানা ছবি ও ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে একটি ভিডিও তৈরি করে তা আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে প্রচারিত তথ্যগুলোর দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ করতে দেখা যায়নি৷ এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রচারিত পুরো ভিডিওটিতে মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির লোগো দেখা গেলেও যমুনা টিভির ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ বা ইউটিউব চ্যানেলে এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশের প্রমাণ মেলেনি।
এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে অন্য কোনো বিষয়েও শেখ হাসিনাকে ট্রাম্পের চিঠি দেওয়ার বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। বরং, শেখ হাসিনার তরফ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন চিঠি দেওয়ার বিষয়ে জানা যায়৷
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শেখ হাসিনার নানা ফুটেজ ও ছবি সংযুক্ত করতে দেখা যায়৷ প্রচারিত ভিডিওটির শুরুর দিকে বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প চিঠি দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এসময় গণমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের লোগোসহ একটি ফুটেজও সংযুক্ত করা হয়৷ তবে, ফুটেজটিতে শেখ হাসিনাকে ট্রাম্পের চিঠি দেওয়ার বিষয়ে লেখার বদলে “ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শেখ হাসিনার চিঠি | ডনাল্ড ট্রাম্প ও তার স্ত্রীর রোগমুক্তি কামনা” লেখা দেখতে পাওয়া যায়৷
Comparison : Rumor Scanner
এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ০৪ অক্টোবরে “ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার স্ত্রীর রোগমুক্তি কামনা করে চিঠি দিয়েছেন শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির শুরুর দিকের দৃশ্যের সাথে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত উক্ত দৃশ্যের হুবহু সাদৃশ্য পাওয়া যায়, তবে অডিওতে “ট্রাম্প’কে” এর জায়গায় “কে” বাদ দিয়ে “ট্রাম্প” করে প্রচার করা হয়েছে। সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সেসময় ট্রাম্প ও তার স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হলে রোগমুক্তি কামনা করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিঠি দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, প্রায় ৪ বছর পুরোনো ভিন্ন ও অপ্রাসঙ্গিক একটি দৃশ্য আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম ভাষণে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শীর্ষক দাবিটির সময় ট্রাম্পের ভাষণ দেওয়ার একটি ফুটেজ প্রচার করা হয়৷ তবে, ফুটেজটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ আর্কাইভড’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ০১ ডিসেম্বরে প্রচারিত একটি ভিডিও এর ৪ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড পরবর্তী সময়ের দৃশ্যের সাথে হুবহু সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
তাছাড়া, একইদিনে ফক্স বিজনেস নামের একটি ফেসবুক পেজেও প্রচারিত একটি পোস্টে উক্ত দৃশ্যটি পাওয়া যায়৷ জানা যায়, দৃশ্যটি ওয়াশিংটন ডিসিতে ৯৫তম বার্ষিক জাতীয় ক্রিসমাস ট্রি লাইটিং এর দৃশ্যের।
এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একটি দৃশ্যে দেখা যায় ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে শেখ হাসিনা ও ট্রাম্পের একটি ছবি ধরে আছেন। তবে, রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে উক্ত ছবিটির সত্যতার সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে আসা নিয়ে স্কাই নিউজ অস্ট্রেলিয়ার ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি সংবাদের একটি দৃশ্যে ট্রাম্পকে একটি নথি সদৃশ বস্তু হাতে দেখা যায়৷
Comparison : Rumor Scanner
ছবি দুইটি তুলনা করলে নিশ্চিত হওয়া যায়, উক্ত স্থিরচিত্র ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
উপরোল্লিখিত কোনো দৃশ্য বা ছবিতেই শেখ হাসিনা বা আলোচিত দাবির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি৷ এছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটিতে আরো কয়েকটি শেখ হাসিনার সাথে ট্রাম্পের ছবি ও ফুটেজ সংযুক্ত করা হয়েছে তবে কোনোটিরই সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এদিকে, গত ২১ জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএনের ইউটিউব চ্যানেলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ভাষণ পাওয়া যায়। উক্ত ভাষণটি মনোযোগ দিয়ে শুনলে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে ক্ষমতায় বসানোর বিষয়ে কোনো কথা বলতে ট্রাম্পকে শোনা যায়নি৷ তিনি বরং যুক্তরাষ্ট্রের সমৃদ্ধি, সীমান্ত ও করসহ নানাক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন সেসব বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা, চিঠি দেওয়া বা শেখ হাসিনার গুণ উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্পকে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য যে, প্রচারিত ভিডিওটির একটি অংশে শেখ হাসিনাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়, যদিও শেখ হাসিনার বক্তব্যের শব্দ মিউট করে দেওয়া হয়৷ তবে, শেখ হাসিনার বক্তব্যের উক্ত দৃশ্যটির ব্যাকগ্রাউন্ডও সম্পাদিত। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম ইতোমধ্যে একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সুতরাং, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।
সম্প্রতি, শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মেয়ে মনিকা ইউনূসের গান দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভিডিওটিতে প্রায় ১০ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ৬ শতকেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মনিকা ইউনূস আলোচিত গানটি করেননি, বরং ভিন্ন একটি অডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় মনিকা ইউনূসের ভিন্ন গানের ভিডিওতে সংযুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে মনিকার গাওয়া গানের দাবিতে প্রচারিত অডিওর সাথে মনিকার ঠোঁট ও মুখভঙ্গির অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ১৩ জুন, ২০১৩ তারিখে ‘Skoll.org’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘Monica Yunus Performs at 2013 Skoll World Forum Awards Ceremony Honoring Her Father Muhammad Yunus‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ৭ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির ০১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে ড. ইউনূসের মেয়ে মনিকা ইউনূসকে গান গাইতে দেখা যায়। এছাড়াও, উক্ত ভিডিওতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। সেখানে মনিকার পোশাক, পারিপার্শ্বিক দৃশ্যসহ বাচনভঙ্গির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
অডিও যাচাই
পরবর্তীতে উক্ত গানের কিছু অংশ কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘CD PLUS Entertainment’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘Biday Den Nani Go | বিদায় দেন নানী গো | Mousumi | Ferdous | Jhuma Khandakar | Khairun Sundori’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি গানের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। আলোচিত ভিডিওর গানটির সাথে উক্ত গানের ভিডিওটির ১ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড অংশের ‘বিদায় দেন আব্বাগো’ অডিও অংশের মিল পাওয়া যায়।
Screenshot: YouTube
অর্থাৎ, মনিকা ইউনূস ‘বিদায় দেন আব্বাগো’’ শীর্ষক কোন গান গাননি।
সুতরাং, মনিকা ইউনূসের গান দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটির অডিওটি এডিটেড বা সম্পাদিত।
সম্প্রতি, ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে গাছে ঝুলে থাকা এক তরুণের লাশের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, এই লাশটি একজন যুবলীগ কর্মীর এবং তাকে হত্যা করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত লাশটি কোনো যুবলীগ কর্মীর নয় এবং লাশ উদ্ধারের ঘটনাটিও সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, ২০২৩ সালে ১২ নভেম্বর বিগত সরকারের আমলে শাফিন মিয়া নামের অনার্স পড়ুয়া এক তরুণের লাশের ভিডিও এটি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র দিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘মিঠাপুকুর, রংপুর আপডেট খবর’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর “মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের রূপসী দামুয়া এলাকায় শাফিন নামে এক অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীর ম*রদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ….।” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এই ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটির তরুণের পোশাক ও পারিপার্শ্বিক বিষয়বস্তুর মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
পোস্টটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, উক্ত লাশটি শাফিন মিয়া নামের এক তরুণের। তিনি সে সময়ে অনার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। তার বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায়। সে সময় তাকে হত্যা করে পুকুরপাড়ের একটি আম গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে দাবি করা হয়েছে।
এছাড়াও, Online A Rangpur.24 নামের অপর একটি ফেসবুক পেজেও সে বছরের একই দিনে ‘মিঠাপুকুড়ে শিক্ষার্থীসহ ২ জনের লাশ উদ্ধার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত উক্ত ঘটনায় ওই তরুণের ভিন্ন এঙ্গেলের অপর একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের ক্যাপশন থেকেও উক্ত তরুণের বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়।
Comparison by Rumor Scanner
পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর ‘মিঠাপুকুরে ছাত্রকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেবছর মিঠাপুকুরে সাফিন মিয়া নামে এক ছাত্রকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠে। উক্ত উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের রূপসী বেকীপাড়া গ্রাম থেকে সে সময় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সাফিন ওই গ্রামের সেকান্দার আলীর ছেলে।
পাশাপাশি সেসময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভি’র ওয়েবসাইটে গাছে ঝুলছিল রংপুর কারমাইকেল কলেজছাত্রের মরদেহ’’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আলোচিত তরুণ শাফিন মিয়া রংপুরের কারমাইকেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
অর্থাৎ, আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
সুতরাং, ২০২৩ সালে এক তরুণের লাশ উদ্ধারের ঘটনাকে সাম্প্রতিক যুবলীগ কর্মীকে হত্যার ঘটনা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।