ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ০৫ আগস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন। এরই প্রেক্ষিতে অন্তত ১৯ জানুয়ারি থেকে শেখ হাসিনার বক্তৃতার একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। প্রচারিত ভিডিওটিতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে জাতির পিতাকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছিল। তার নামটা মুছে ফেলেছিল। ইতিহাসে ছিল না। জয় বাংলা মুছে ফেলেছিল। ৭-ই মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু পারেনি, আবার তা ফিরে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা ফিরে এসেছে। আবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সঠিক ইতিহাস, মানুষ জানার সুযোগ পেয়েছে। তাই এই বাংলাদেশ খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না। আর এই জিয়া পরিবার মানে হচ্ছে খুনি পরিবার।” এছাড়াও আরো নানা কথা বলেন। প্রচারিত উক্ত ভিডিওটিতে নানা সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও উপস্থিতি দেখা যায়।
উক্ত ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “ইন্ডিয়া থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ”। কিছু পোস্টের ক্যাপশনে ভিডিওটি ১৯ জানুয়ারির দাবি করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে শেখ হাসিনার ভাষণের নয় বরং শেখ হাসিনার পুরোনো একটি বক্তৃতার ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে এতে নরেন্দ্র মোদির ভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও ব্যাকগ্রাউন্ড যুক্ত করে প্রচারিত ভিডিওটি তৈরি করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবির সঙ্গে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করেও, দাবিকৃত শেখ হাসিনার উক্ত ভাষণের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য, যেমন ভাষণটি কোথায় বা কী উপলক্ষে হয়েছে, সেসব কোনো তথ্য সংযুক্ত করতে দেখা যায়নি।
পরবর্তীতে ভাষণে বলা শেখ হাসিনার বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে মূলধারার গণমাধ্যম চ্যানেল আই নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে “জিয়া পরিবার মানেই খুনি পরিবার: শেখ হাসিনা” শিরোনামে ২০২৩ সালের ২১ আগস্টে প্রকাশিত শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যের ভিডিও পাওয়া যায়। উভয় ভিডিওতে শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। বক্তব্যটির স্থান হিসেবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ বলা হয়। এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরে ২০২৩ সালের ২২ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে ২০২৩ সালের ২১ আগস্টে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেছিলেন।

তবে, উক্ত ভিডিওটিতে বক্তৃতা দেওয়ার সময় শেখ হাসিনার পেছনের ব্যকগ্রাউন্ডের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত শেখ হাসিনার পেছনের ব্যকগ্রাউন্ডে পার্থক্য দেখা যায়, যা থেকে বুঝা যায় যে, শেখ হাসিনার পেছনের ব্যকগ্রাউন্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে পরিবর্তন করা হয়েছে। তাছাড়া, চ্যানেল আই নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিওটিতে কিংবা এ বিষয়ের কোনো সংবাদ প্রতিবেদনে উক্ত অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে নরেন্দ্র মোদির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৫ আগস্টে “LIVE: PM Modi attends Lakhpati Didi Sammelan in Jalgaon, Maharashtra” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির নানা সময়ে নরেন্দ্র মোদির উক্ত ফুটেজটির উপস্থিতি পাওয়া যায়৷ অর্থাৎ, উক্ত অনুষ্ঠানটির একটি ভিডিও থেকে নরেন্দ্র মোদির আলোচিত ফুটেজটি নেওয়া হয়েছে। তবে, উক্ত অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, ১ বছরেরও আগে শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যের ব্যকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করে, তাতে নরেন্দ্র মোদির ভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিতির ফুটেজ সংযুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও সাম্প্রতিক সময়ে নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিসহ কোনো অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার বক্তৃতা দেওয়ার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি গেলো বছরের ৫ আগস্টের পর প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার উপস্থিতির কোনো তথ্যও বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, শেখ হাসিনার পুরোনো বক্তৃতার দৃশ্য সম্পাদনা করে সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিসহ ভারত থেকে শেখ হাসিনার ভাষণের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Channel i News – জিয়া পরিবার মানেই খুনি পরিবার : শেখ হাসিনা
- Jugantor – দেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না : প্রধানমন্ত্রী
- Narendra Modi – LIVE: PM Modi attends Lakhpati Didi Sammelan in Jalgaon, Maharashtra
- Rumor Scanner’s analysis