সেনা সদস্য ড. ইউনূসের ছবি মাড়াচ্ছেন দাবিতে একাধিক ভুয়া ছবি প্রচার 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও সেনাবাহিনীর এক সদস্যকে ঘিরে অন্তত চারটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে দুটি ছবিতে সেনাসদস্যের বুটের নিচে ড. ইউনূসের ছবি দেখা যায়, আর বাকি দুটি ছবিতে তার ছবি পায়ের পাশে রাখা অবস্থায় রয়েছে। ছবিগুলো বাস্তব ঘটনার দাবি করে ইন্টারনেটে প্রচারিত হচ্ছে।

প্রথম ছবিসহ ফেসবুকে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

একই ছবিসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত দাবি দেখুন: ইন্সটাগ্রাম, এক্স, থ্রেডস, ইউটিউব। 
দ্বিতীয় ছবিসহ ফেসবুকে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে

একই ছবিসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত দাবি দেখুন: এক্স

তৃতীয় ছবিসহ ফেসবুকে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

একই ছবিসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত দাবি দেখুন: ইউটিউব, এক্স, ইন্সটাগ্রাম

চতুর্থ ছবিসহ ফেসবুকে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে

একই ছবিসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত দাবি দেখুন: এক্স, থ্রেডস, ইন্সটাগ্রাম

ফ্যাক্টচেক

আলোচিত চারটি ছবির কোনোটিই আসল নয়। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে ড. ইউনূসের ভিন্ন ছবিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদনা করে যুক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে, তৃতীয় ও চতুর্থ ছবি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

প্রথম ছবি যাচাই

প্রথম ছবিতে একজন সেনাসদস্যের বুটের নিচে ড. ইউনূসের ছবি দেখা যায়। এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘সৈনিক সাব্বির’ নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইলে গত ১৪ আগস্ট প্রকাশিত মূল ছবি পাওয়া যায়। মূল ছবির সঙ্গে আলোচিত ছবির অন্যান্য বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল থাকলেও ওই ছবিতে সেনাসদস্যের বুটের নিচে ড. ইউনূসের ছবি নেই। অর্থাৎ, ফেসবুকে পাওয়া এই মূল ছবিটি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner. 

দ্বিতীয় ছবি যাচাই

দ্বিতীয় ছবিতে একজন সেনাসদস্যের হাতে চায়ের কাপ এবং পায়ের কাছে একটি স্মার্টফোনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবি দেখা যায়। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ‘Bangladesh army lover’s’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে মূল ছবি পাওয়া যায়। মূল ছবিতে সেনাসদস্যের হাতে চায়ের কাপ থাকলেও পায়ের কাছে কোনো স্মার্টফোন ছিল না। ফলে স্মার্টফোনে ড. ইউনূসের ছবি থাকার প্রশ্নই ওঠে না। অর্থাৎ, এই ছবিতে সম্পাদনা করে ড. ইউনূসের ছবি সংযোজন করা হয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner. 

তৃতীয় ছবি যাচাই

তৃতীয় ছবিতে দেখা যায়, আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বসে থাকা এক সেনাসদস্যের আগ্নেয়াস্ত্রের নলের নিচে ড. ইউনূসের ছবি রয়েছে। ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে এতে একাধিক এআই-জনিত অসংগতি শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। ছবিতে থাকা ড. ইউনূসের মুখাবয়ব তার প্রকৃত চেহারার সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না, এতে বিকৃতি ও অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। পুরো ছবির টেক্সচার বা রঙের গঠন কার্টুনধর্মী এবং এতে একটি হলুদাভ আভা দেখা যায়, যা সাধারণত এআই দিয়ে তৈরি ছবির বৈশিষ্ট্য। অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি দিয়ে তৈরি ছবিতে এমন হলুদ ফিল্টার বা আভা দেখা যায়। এমনকি এই হলুদাভ আভা দূর করার জন্য অনলাইনে বিশেষ টুল রয়েছে।

আরও অনুসন্ধানে ‘Bangladesh army lover’s’ নামের ফেসবুক গ্রুপে একটি ছবি পাওয়া যায়, যেখানে একজন সেনাসদস্য আগ্নেয়াস্ত্রের নল মেঝেতে রেখে বসে থাকতে দেখা যায়। এই ছবিটির সঙ্গে আলোচিত ছবির বেশ কিছু উপাদানে মিল পাওয়া গেছে।

Comparison: Rumor Scanner. 

সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূল ছবিটিকে ভিত্তি করে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক ও মিটার’-এ ছবিটি বিশ্লেষণ করা হয়। প্ল্যাটফর্মটির ‘GLFF (2024)’ মডেল অনুসারে, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশেরও বেশি।

Screenshot: Deepfake-o-meter. 

চতুর্থ ছবি যাচাই

চতুর্থ ছবিতে একজন সেনাসদস্যকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবি মাড়াতে দেখা যায়। ছবিটি পর্যবেক্ষণেও একাধিক এআই-জনিত অসংগতি শনাক্ত করা হয়েছে। ছবিটির টেক্সচার কার্টুনচিত্রের মতো মসৃণ ও অস্বাভাবিকভাবে নিখুঁত, যা এআই দিয়ে তৈরি ছবির সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে ছবিটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইটে সাইটইঞ্জিনে বিশ্লেষণ করা হয়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৮ শতাংশ।

Screenshot: Sightengine. 

সুতরাং, সেনাসদস্য ড. ইউনূসের ছবি মাড়াচ্ছেন দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো ভুয়া।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img