সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জহিরুল ইসলাম খান পান্না (জেড আই খান পান্না) মৃত্যুবরণ করেছেন শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জেড আই খান পান্নার মৃত্যুর তথ্যটি সঠিক নয় বরং তিনি সুস্থ আছেন এবং আজ (১৮ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টেও উপস্থিত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার।
এ বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জেড আই খান পান্নার মৃত্যুর দাবি সংক্রান্ত কোনো সংবাদ গণমাধ্যম এবং সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে পাওয়া যায়নি৷ পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানতে সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, এটি গুজব ছিল।
জেড আই খান পান্না এন্ড এসোসিয়েটের এসোসিয়েট মেম্বার আসাদুজ্জামান বাবু এক ফেসবুক পোস্টে জানান, জেড আই খান পান্না শারীরিক ভাবে সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।
এদিকে ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের জেড আই খান পান্নার অফিস থেকে নাজমুস সাকিব টুস্টি নামে এক ব্যক্তির লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, জনাব পান্না তার চেয়ার সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবেই বসে আছেন। ভিডিও পোস্টকারীও একই তথ্য জানান এই ভিডিওতে।
Screenshot: Facebook
সুতরাং, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না মৃত্যুবরণ করেছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, নীলফামারীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা এক আওয়ামী লীগ নেতার খামার পুড়িয়ে দিয়েছে বলে একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবির স্বপক্ষে একটি ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে একটি পোড়া ঘরে আগুনে দগ্ধ কিছু গবাদিপশু দেখা যাচ্ছে। একই ছবি ব্যবহার করে এক্সে দাবি করা হয়েছে, হিন্দু বাড়ির গোয়ালঘর দেখে ধর্মীয় প্রতিহিংসার জেরে ড. ইউনূসের সমর্থকরা আগুন লাগিয়েছে উক্ত স্থানে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নীলফামারীতে আওয়ামী লীগ নেতার খামারে আগুন দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি হিন্দুও নয় বরং, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে এক মুসলিম ব্যক্তির গোয়াল ঘরে দুর্ঘটনাবশত আগুন লাগার ঘটনাকে আওয়ামী লীগ নেতার খামারে আগুন দেওয়ার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে গত বছরের (২০২৪) ৯ ডিসেম্বর গণমাধ্যম ‘দি জনতা নিউজ’ এর ওয়েবসাইটে “ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে গোয়াল ঘরে আগুন লেগে গরু-ছাগল পুড়ে ছাই” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার। উক্ত প্রতিবেদনে পাওয়া ছবির সাথে আলোচিত পোস্ট গুলোতে ব্যবহৃত ছবির মিল রয়েছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগরের বালুয়াটি গ্রামে মো. বেদন মিয়ার গোয়াল ঘর আগুন পোড়ার পরের দৃশ্য এটি। প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, সবার ধারণা অনুযায়ী বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সুত্রপাত ঘটে, অর্থাৎ পরিকল্পিত ভাবে আগুন দেওয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
Comparison: Rumor Scanner
এছাড়াও প্রতিবেদনে কোথাও মো. বেদন মিয়ার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া, ভুক্তভোগীর নাম মো: বেদন মিয়া। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় তিনি মুসলিম, অর্থাৎ ধর্মীয় প্রতিহিংসা থেকে আগুন লাগানোর দাবিটিও সত্য নয়।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে স্বাধীন সূর্যোদয়, জাগ্রত বাংলা সহ আরো কয়েকটি স্থানীয় গণমাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে নিশ্চিত করা হয় আগুন পরিকল্পিত ভাবে লাগানো হয়নি এবং ভুক্তভোগীর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার ব্যাপারেও কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
সুতরাং, নীলফামারীতে হিন্দু এবং আওয়ামী লীগ নেতার খামারে জামায়াতে ইসলামির নেতাকর্মীরা আগুন দিয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি “ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে টাঙ্গাইলের ফার্মেসি মালিকদের নিষেধ করা হইছিল দোকান না খুলতে। ফার্মেসি মালিকরা নিষেধ অমান্য করে কনডম বিক্রি করায় মোল্লারা তাদের উপরে হামলা করে। কয়েকটা ফার্মেসি ভাংচুর করে। আজ সন্ধ্যার পর ফার্মেসির মালিকরা এই ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল বাহির করছিল। ফার্মেসির মালিকরা আসলে জানে না যে ফকিত ভালোবাসা হয় মাদ্রাসায়। যেখানে বড় হুজুররা কচি কচি বাচ্চাদের লুঙ্গি তুলে তাদের থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপে।” শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে দোকান বন্ধের নিষেধ অমান্য করে কনডম বিক্রির কারণে টাঙ্গাইলে ফার্মেসিতে হামলার ঘটনার প্রতিবাদের নয়, বরং এটি প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি না করায় ফার্মেসিতে হামলার প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ কর্মসূচির ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরু আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘Sheikh Saadi’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত দুইটি ভিডিও সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের দ্বিতীয় ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘মধুপুর সোহাগ ফার্মেসিতে অতর্কিত ভাবে সন্ত্রাসিবাহিনী হামলা চালায়। হামলার প্রতিবাদে, মধুপুর শিল্প ও বণিক সমিতি, প্রতিবাদ রেলি করেন এবং সন্ত্রাসিদের গ্রেফতারের দাবি জানান। সন্ত্রাসিদের ঠিকানা মধুপুরে হবেনা, সন্ত্রাসিদের আস্তানা ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও, সন্ত্রাসিদের কালো হাত ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও। একটা একটা সন্ত্রাস ধরো সকাল বিকাল ধোলাই করো।’
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে মূলধারার গণমাধ্যম আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে ২০২৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ‘মধুপুরে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি না করায় ফার্মেসিতে হামলা, প্রতিবাদে ধর্মঘট’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়৷
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি না করায় দোকানে (ফার্মেসি) হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) রাত পৌনে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হামলার প্রতিবাদে ঘটনার পর থেকে মধুপুরের সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন ব্যবসায়ীরা।
মধুপুর কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ খান জানান, সন্ধ্যার দিকে কয়েক যুবক ময়মনসিংহ রোডের সোহাগ ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ কিনতে আসেন। দোকানমালিকের ছেলে সোহাগ মিয়া তাঁদের কাছে ওষুধ বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানালে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটির হয়।
এছাড়া, এ বিষয়ে দেশের মূলধারার একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন (১,২) থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
সুতরাং, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি না করায় ফার্মেসিতে হামলার প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ কর্মসূচির দৃশ্যকে ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে দোকান বন্ধের নিষেধ অমান্য করে কনডম বিক্রির কারণে টাঙ্গাইলে ফার্মেসিতে হামলার প্রতিবাদের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের পাসপোর্ট বাতিল করলো আমেরিকা।’ শীর্ষক দাবিতে একটি ডিজিটাল ব্যানার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হতে দেখা যায়।
এছাড়া, ‘ড. ইউনুসের পাসপোর্ট বাতিল করলো আমেরিকা। শীঘ্রই দেশে ফিরছেন “বঙ্গবন্ধুকন্যা” দেশরত্ন শেখ হাসিনা’- শীর্ষক বক্তব্যটি সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির দাবিতেও একটি ভিডিও পোস্ট হতে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট বাতিলের দাবিটি মিথ্যা এবং গোলাম মাওলা রনিও এসংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করেনি বরং, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। গোলাম মাওলা রনির ভিন্ন প্রেক্ষিতে দেওয়া একটি বক্তব্যে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ডিজিটাল ব্যানারের বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে দেখা যায় যায়, ডিজিটাল ব্যানারটিতে ‘The Daily Ekattor’ শীর্ষক একটি লোগো রয়েছে। সেই সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ‘The Daily Ekattor’ নামক একটি ফেসবুক পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পেজ থেকে গতকাল (১৬ ফেব্রুয়ারি) আলোচিত ডিজিটাল ব্যানারটি পোস্ট হতে দেখা যায়।
Screenshot: Facebook
উক্ত পোস্টটিতে কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়া পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন ঘেঁটে দেখা যায়, পেজটি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি খোলা হয়েছে।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে গোলাম মাওলা রনির বক্তব্যটির বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে গোলাম মাওলা রনির নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি “ট্রাম্পের কথায় খুশিতে নাচছে আ.লীগ! ক্ষমতা ফিরে পাবার স্বপ্নে ভারত আমেরিকা কাঁপাচ্ছে!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে রনির বক্তব্যের সাথে আলোচিত ভিডিওতে রনির দেওয়া বক্তব্যের মিল রয়েছে।
Video Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটির ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া ১৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের মূল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবির সপক্ষে গোলাম মাওলা রনিকে কোনো বক্তব্য দিতে শোনা যায়নি।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট বাতিলের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারি দপ্তর, আদালত এবং প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানোর নির্দেশ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারি দপ্তর, আদালত এবং প্রতিষ্ঠানে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানোর নির্দেশ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প শীর্ষক দাবিটি সত্য নয় বরং, ২০১৯ সালে হাইকোর্টের দেওয়া একটি নির্দেশের প্রেক্ষিতে সেসময়ে একাত্তর টেলিভিশনে প্রচার করা সংবাদ প্রতিবেদনের ফুটেজ সম্পাদনা করে এবং তার সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বক্তব্যের সম্পাদিত ক্লিপ ও তার কয়েকটি বক্তব্যের খণ্ডাংশ সংযুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে শুরুতেই একাত্তর টিভির একটি সংবাদ ফুটেজ দেখানো হয়। সংবাদ ফুটেজটিতে উপস্থাপিকাকে বলতে শোনা যায়, আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের সব আদালতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানোর নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে, এই ফুটেজে ‘যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প’ কথার সাথে আগের কথার অসামঞ্জস্যতা আছে বলে প্রতীয়মান হয়। এছাড়া ভিডিওটিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ক্লিপে মুহাম্মদ ইউনূসের নাম বলতে শোনা যায়, তবে সেই ক্লিপটিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখের অঙ্গভঙ্গির সাথে অডিওর অসামাঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়।
এছাড়া, ভিডিওটিতে একজন উপস্থাপক দাবি করেন, সম্প্রতি হোয়াইট হাউজের এক সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন আগামি দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারি দপ্তর, আদালত এবং প্রতিষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙাতে হবে। দাবি করা হয়, ট্রাম্প বলেন আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় নেই তাতে কি! বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের অধিকার নেই জাতির পিতাকে অবমাননা করার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নয়, পুরো বাংলাদেশের নেতা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেন যদি তার এই নির্দেশ বাস্তবায়িত না হয় তবে তিনি কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন। দাবি করা হয়, এই সময় তিনি বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্যে করে বলেন আমি স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি যদি বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রতিটি সরকারি দপ্তরে টাঙানো না হয় তাহলে আমি বাংলাদেশে বড় পরিবর্তন আনবো, প্রয়োজনে বর্তমান সরকারকে সরিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতায় বসাবো।
একাত্তর টিভির সংবাদ ফুটেজ যাচাই
ফুটেজটির কিছু কী-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট ‘সব আদালতে বঙ্গবন্ধুর ছবি টানানোর নির্দেশ হাইকোর্টের | News | Ekattor TV’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির শুরুর অংশের সাথে আলোচিত ফুটেজটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটিতে উপস্থাপিকাকে বলতে দেখা যায়, আগামী দু’মাসের মধ্যে দেশের সব আদালতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এখানে আলোচিত ভিডিওটিতে ‘হাইকোর্ট’ এর জায়গায় ‘যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প’ অডিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ভিডিও যাচাই ০১
ফুটেজটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘Firstpost’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর ‘US Election 2024: Donald Trump Urges Voters to “Stay in Line” | Trump vs Harris’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওরর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিও ক্লিপটির মিল পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটিতে ট্রাম্প সেসময় রিপাবলিকানদের ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে থাকার আহ্বান জানান।
আলোচিত ফুটেজ টিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে বলতে দেখা গেলেও এই ভিডিওটিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে কোনো কিছু বলতে দেখা যায়নি।
অর্থাৎ, এই ভিডিওর সাথেও আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারি দপ্তর, আদালত এবং প্রতিষ্ঠানে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানোর নির্দেশ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘১৪ই ফেব্রুয়ারি, আজকের এই দৃশ্য দেখে মনে হলো অতি শীঘ্রই বাংলাদেশে ইসলামীক রাষ্ট্র হিসাবে কায়েম হবেই হবেই, ইনশাল্লাহ’ শীর্ষক একটি ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজন ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন তরুণ-তরুণীকে সতর্ক করছেন এবং জরিমানা করছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে পার্কের ভেতরে পুলিশের অভিযান সংক্রান্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। এটি ২০১৩ সালের ১২ জুন বগুড়ার ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে বগুড়া জেলা প্রশাসনের পরিচালিত একটি অভিযানের ভিডিও।
তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুল হাসান রুমির নেতৃত্বে ২০১৩ সালে পরিচালিত এক অভিযানে পার্ক থেকে ১৪৪ জন প্রেমিক-প্রেমিকাকে আটক করা হয়। সেই ঘটনার ভিডিও পরবর্তী বছরগুলোতে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়েও ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের প্রেক্ষিতে ভিডিওটি নতুন করে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়া, ২০২৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে বগুড়ার ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে পুলিশের কোনো অভিযান বা প্রেমিক যুগল আটকের কোনো তথ্য মূলধারার গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিতে একই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রিউমর স্ক্যানার সেসময় এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সম্প্রতি, একটি কাঁচা সড়কের পাশে অজ্ঞাত এক নারী ও শিশুর পড়ে থাকা ছবি সমাজিক মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, শিশুটির মাকে কে বা কারা মেরে ফেলেছে। বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল ভর্তি। এখনো পরিবারের সন্ধান মেলেনি।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রাচরিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের কোনো ঘটনার নয় বরং, ২০২৪ সালের মে মাসে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলা একটি কাঁচা সড়কের পাশ থেকে এক অজ্ঞাত নারীর মৃতদেহের পাশে অজ্ঞাত অবস্থায় এক শিশুকে উদ্ধারের ঘটনাকে সাম্প্রতিক ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিও প্রতিবেদনটির বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, ‘এখনও জ্ঞান ফিরেনি নেত্রকোনায় মৃত নারীর পাশে আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া শিশুটির। ময়মনসিংহ মেডিকেলে চিকিৎসাধিন সে। পরিবারের সন্ধান না পাওয়ায় শিশুটিকে নিয়ে বিপাকে পরেছেন সংশ্লিষ্টরা। পুলিশের ধারনা, মাকে হত্যার পর শিশুটিকেও মেরে ফেলার চেষ্টা চালানো হয়। পরিচয় খুজে পাওয়া গেলে, এই ঘটনার রহস্য জানা যাবে বলে মনে করছে পুলিশ।’
পরবর্তীতে প্রাসিঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আরটিভি এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৩০ মে এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নারীর মৃতদেহের পাশে অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিল দেড় বছর বয়সি অজ্ঞাত এক শিশু। এ ঘটনায় স্থানীয়ারা শিশুটিকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। তবে এখনো শিশুটির জ্ঞান ফিরেনি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বুধবার (২৭ মে, ২০২৪) দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই শিশুটিকে ভর্তি করা হয় বলে জানা গেছে।
এর আগে, নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার বিশকাকোনী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ধলা যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি কাঁচা সড়কের পাশ থেকে ৩০ বছর বয়সি এক অজ্ঞাত নারীর মৃতদেহ দেখতে পায় এলাকাবাসী। এ সময় ওই নারীর মৃতদেহের পাশে অজ্ঞাত অবস্থায় এই শিশুটিকেও পায় স্থানীয়রা। পরে থানা পুলিশের পরামর্শে স্থানীয়রা এক ইউপি সদস্য শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।’
অর্থাৎ, ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
পরবর্তীতে, শিশুটির পরিবারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল কিনা জানতে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে যুগান্তর এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে ২০২৪ সালের ৮ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অবশেষে ৯ দিন পর পরিচয় মিলল মায়ের মরদেহের পাশে পাওয়া শিশুরটির। নেত্রকোনার পূর্বধলায় মায়ের মরদেহের পাশ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় শিশুটির। শিশুটির নাম আলিফ মিয়া (২)।
আলিফ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল মনসুরের ছেলে। তার নিহত মায়ের নাম আনোয়ারা বেগম। আনোয়ারা বেগম আবুল মনসুরের দ্বিতীয় স্ত্রী।
শুক্রবার (৭ জুন, ২০২৪) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স জাকিয়া সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (৬ জুন, ২০২৪) আলিফের খবর পেয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন তার স্বজনরা। এ সময় শিশু আলিফ তার বড় বোন হাসি আক্তারের কোলে পরম মমতায় দীর্ঘ সময় কাটায়। আলিফ এখনো পুরোপুরি সুস্থ নয়। কোনো কথা বলছে না। তবে সে আশঙ্কামুক্ত।
আলিফের বোন হাসি আক্তার ও তার স্বজনরা জানান, আলিফের বাবা আবুল মনসুর পেশায় একজন মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী। তার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ায় তিনি আলিফের মা আনোয়ারাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। গত ২৮ মে আনোয়ারা তার সন্তান আলিফকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তাগাছা বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। পরদিন নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার কাছিয়াকান্দা গ্রামের মেঠোপথে পাওয়া যায় আনোয়ারার মরদেহ।’
এছাড়া, সময় টিভি ও বার্তা২৪.কম এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও প্রায় একই তথ্য জানা যায়।
সুতরাং, ২০২৪ সালের মে মাসে নেত্রকোনায় একটি কাঁচা সড়কের পাশ থেকে এক অজ্ঞাত নারীর মৃতদেহ ও এক শিশুকে উদ্ধার করার ঘটনাটি সাম্প্রতিক দাবি করে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য “আমরা একটি সুস্থ জাতি দেখতে চাই: সেনাপ্রধান” শীর্ষক মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভির ফটোকার্ড সহ ভাঙচুর পরবর্তী সময়ের একাধিক স্থাপনার আরো দুইটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “যারা-ধানমন্ডি সহ কিছু ফেরাউনের অনুসারীর বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে আগুন লাগিয়েছে,তাদেরকে উদ্দেশ্য করে সেনাপ্রধান বলেছে আমরা একটি সুস্থ জাতি দেখতে চাই,ভালোকথা কিন্তু সেনাপ্রধান হয়তো ভুলে গেছে,মাফিয়া হাসিনায় ২০১৩ সালে যৌথবাহিনি দিয়ে, সাতক্ষিরা জেলা সহ বেশ কিছু যায়গায় জামাতেইসলামের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর, বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুরিয়ে দিয়েছিল,তখন সেনাপ্রধান সহ যারা সুশীল গিরি দেখাচ্ছে তখন, মানবতার সুশীল গিরি কেথায় ছিল..! এখন ধানমন্ডি ৩২ সহ বেশ কিছু বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে আগুন দিয়ে তাই অনেকের আবেগে উথলায় পরছে..!”
অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে যে “আমরা একটি সুস্থ জাতি দেখতে চাই” শীর্ষক মন্তব্যটি সেনাপ্রধান ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভাঙচুরের প্রতিক্রিয়ায় করেছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “আমরা একটি সুস্থ জাতি দেখতে চাই: সেনাপ্রধান” শীর্ষক মন্তব্যটি সেনাপ্রধান ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভাঙচুরের প্রসঙ্গে করেননি বরং, গত ৮ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথন-২০২৫ এর অনুষ্ঠানে খেলাধুলা প্রসঙ্গে আলোচিত মন্তব্যটি করেছেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে আরটিভির লোগো সম্বলিত উক্ত ফটোকার্ডের বিষয়ে অনুসন্ধান করলে আরটিভির ফেসবুক পেজে গত ৮ ফেব্রুয়ারি “একটি সুস্থ জাতি পেলে দেশের জন্য বড় কাজে দেবে….” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি পোস্টে উক্ত ফটোকার্ডটির সংযুক্তি পাওয়া যায়৷ উক্ত পোস্টটির মন্তব্য সেকশন পর্যবেক্ষণ করলে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির লিঙ্কের সংযুক্তিও পাওয়া যায়।
“আমরা একটি সুস্থ জাতি দেখতে চাই: সেনাপ্রধান” শীর্ষক শিরোনামে গত ৮ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত উক্ত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “আমরা একটি সুস্থ জাতি দেখতে চাই জানিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, একটি সুস্থ জাতি পেলে দেশের জন্য বড় কাজে দেবে। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথন-২০২৫ এর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এবার ১০ হাজার দৌড়বিদ এতে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ১০টি দেশের বেশ কয়েকজন বিদেশি ম্যারাথনার প্রতিনিধিত্ব করছেন। … মিলিটারি একাডেমিতে এখন ক্যাডেট নেই মন্তব্য করে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আগে যেমন সুস্থতা ছিল, এখন সে রকম পাই না। এর অন্যতম কারণ হলো, আজ-কাল তরুণরা শারীরিক কার্যকলাপে খুব বেশি সচেতন না। আগের মতো খেলার মাঠ নেই, দৌড়ঝাঁপও কমে গেছে। খেলা-ধুলায় সুযোগ-সুবিধাও কম গেছে। এ জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, ম্যারাথনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সংযুক্ত করবো।”
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আলোচিত মন্তব্যটি ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভাঙচুর প্রসঙ্গে নয় বরং খেলাধুলা প্রসঙ্গে করেছিলেন।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভাঙচুর প্রসঙ্গে সেনাপ্রধানের এরূপ কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করার সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, খেলাধুলা প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের “আমরা একটি সুস্থ জাতি দেখতে চাই: সেনাপ্রধান” শীর্ষক মন্তব্যটি সেনাপ্রধান ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভাঙচুর প্রসঙ্গে করেছেন শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি মূলধারার গণমাধ্যম একাত্তর টিভির আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ মন্তব্য করেছেন যে, “সাধারণ মানুষ এখন বলতেছে শেখ হাসিনাই ভালো ছিলো।”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাধারণ মানুষ এখন বলতেছে শেখ হাসিনাই’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি হাসনাত আবদুল্লাহ এবং উক্ত দাবিতে একাত্তর টিভিও কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে গণমাধ্যমটির ভিন্ন একটি ফটোকার্ডের শিরোনাম বদলে দিয়ে ভুয়া এই ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে এতে মূল ধারার গণমাধ্যম একাত্তর টিভির লোগো লক্ষ্য করা যায় এবং এটি প্রকাশের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে “ডুবে যাওয়া নৌকা বাংলাদেশে আর কখনোই ভাসবে না: হাসনাত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির সাথে এই ফটোকার্ডটির ডিজাইন ও ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির হুবহু মিল রয়েছে। তবে এই ফটোকার্ডে প্রচারিত শিরোনাম বদলে দিয়ে “সাধারণ মানুষ এখন বলতেছে শেখ হাসিনাই ভালো ছিলো : হাসানাত” বাক্য প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
অর্থাৎ, একাত্তর টিভির এই ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদিত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
একাত্তরের ফটোকার্ডে দেওয়া শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে অন্যান্য গণমাধ্যমও। যমুনা টিভির ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক থেকে বের হয়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমির সামনে সাংবাদিকদের হাসনাত বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট করেছি যে নৌকা ডুবে গিয়েছে সেটি বাংলাদেশে আর কখনোই ভাসবে না। ৫ আগস্ট ছাত্র নাগরিক সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ অপ্রাসঙ্গিক। সব রাজনৈতিক দল একই মত দিয়েছে যে পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়।
এই প্রতিবেদনসহ অন্যান্য গণমাধ্যমের একই ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “সাধারণ মানুষ এখন বলতেছে শেখ হাসিনাই ভালো ছিলো : হাসানাত” শীর্ষক শিরোনামে একাত্তর টিভির নামে ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, “মোদি আমেরিকা হয়ে ঘুরে আসতেই বাংলাদেশে ২৫১ কোটি টাকা অনুদান বন্ধ মাস্কের।”
অর্থাৎ, দাবি করা হচ্ছে কেবলমাত্র বাংলাদেশে ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ২৫১ কোটি টাকার (ভারতীয় রুপি) অনুদান বন্ধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কৃতিত্ব দাবি করছে।
উল্লেখ্য যে, দুইদিনের যুক্তরাষ্ট্র সফরে গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) আমেরিকায় গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
উক্ত দাবিতে ভারতীয় এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র কেবলমাত্র বাংলাদেশে অনুদান বন্ধ করেনি বরং, ভারত, নেপাল, কম্বোডিয়া, সার্বিয়াসহ আরো বিভিন্ন দেশে নানা প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে “বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে গত ১৬ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানা প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্প ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ’-এ ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে এই অর্থায়ন বাতিলের কথা জানায় ডিওজিই। তাতে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের দেওয়া অর্থ নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলোয় (প্রকল্প) খরচ হতে যাচ্ছিল, যেগুলোর সব কটি বাতিল করা হয়েছে।’ এরপর ধারাবাহিকভাবে ওই প্রকল্পগুলো, প্রকল্প বাস্তবায়নের দেশ ও অঞ্চল এবং অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ (এসপিএল) প্রকল্পে অর্থায়ন করে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি ও যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি)।
এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক দলগুলো ও ভোটারদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা এবং রাজনৈতিক সহিংসতা কমানোর লক্ষ্যে কাজ করা হয়। এক্সে ডিওজিইর পোস্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপালেও বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো-সংক্রান্ত প্রকল্পে ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে। আর নেপালের একাধিক প্রকল্পে বাতিল করা হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ ছাড়া এ তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে মোজাম্বিক, কম্বোডিয়া, সার্বিয়া, লাইবেরিয়া, মালি ও মিসর। এশিয়া মহাদেশ ও আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলকেন্দ্রিক দুটি প্রকল্পেও অর্থ দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।”
এরই প্রেক্ষিতে পরবর্তী অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) এর এক্স অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করলে গত ১৬ ফেব্রুয়ারিতে এ বিষয়ে প্রচারিত পোস্টটি পাওয়া যায়৷ পোস্টটিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের দেওয়া অর্থ নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলোয় খরচ হচ্ছিল, যেগুলোর সব কটি বাতিল করা হয়েছে। এরপর নানা দেশের নাম, বাতিলকৃত নানা অনুদানের পরিমাণ ও প্রকল্প বা ক্ষেত্রের উল্লেখ করা হয়।
Screenshot : X
অনুদান বাতিলের এই তালিকায় আছে মোজাম্বিক, কম্বোডিয়া, সার্বিয়া, ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, লাইবেরিয়া, মালি, মিশরসহ বিভিন্ন দেশ। এসব দেশে নানা প্রকল্পে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ অনুদান আগে দেওয়া হতো যা বন্ধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে দেওয়া অনুদানের পরিমাণ ছিল ২৯ মিলিয়ন ডলার। ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো-সংক্রান্ত প্রকল্পে ২১ মিলিয়ন ডলার, নেপালের একাধিক প্রকল্পে ৩৯ মিলিয়ন ডলারসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পরিমাণ অনুদান বন্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ, নিশ্চিতভাবে দেখা যাচ্ছে কেবল বাংলাদেশ নয় বরং ভারত, নেপালসহ আরো নানা দেশে নানা পরিমাণ অনুদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সুতরাং, কেবলমাত্র বাংলাদেশকে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান বন্ধ করার বিষয়ে প্রচারিত সংবাদটি বিভ্রান্তিকর।