সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির ওয়েবসাইটে সিঙ্গাপুরে জঙ্গি হামলার অভিযোগে ৮ বাংলাদেশি আটকের একটি সংবাদের স্ক্রিনশট পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অনুসারীরা সারা বিশ্বে তাদের সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে তাদের প্রভাব বিশ্বে ভয়াবহ হবে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ বাংলাদেশি আটকের ঘটনাটি সাম্প্রতিক কোনো সময়ের নয় বরং ২০১৬ সালের বিবিসির এই সংবাদকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত পোস্টগুলোতে থাকা বিবিসির স্ক্রিনশটের সূত্রে গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত সংবাদটি খুঁজে বের করে রিউমর স্ক্যানার৷ ২০১৬ সালের ০৩ মে Singapore arrests eight Bangladeshis accused of terror plot শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি থেকে জানা যায়, সে বছরের এপ্রিলে দেশে ফিরে গিয়ে গুপ্তহত্যাসহ সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে সিঙ্গাপুরে আট বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব ব্যক্তি একটি গোপন দলের সদস্য। গত মার্চে সিঙ্গাপুরে রহমান মিজানুর নামের এক বাংলাদেশি একটি গোপন সংগঠন গড়ে তোলেন। নাম দেন ইসলামিক স্টেট ইন বাংলাদেশ (আইএসবি)। আটক হওয়া ব্যক্তিরা এই সংগঠনের সদস্য।
Comparison: Rumor Scanner
বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর সে সময়ের এক প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যাচ্ছে।
অর্থাৎ, সাম্প্রতিক পোস্টগুলোতে যে সংবাদের স্ক্রিনশট দিয়ে বর্তমান সরকারের সমালোচনা করা হচ্ছে সে সংবাদটি মূলত ২০১৬ সালের ঘটনার। সে সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল।
সুতরাং, ২০১৬ সালে সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে সিঙ্গাপুরে ৮ বাংলাদেশি আটকের ঘটনাকে সাম্প্রতিক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও এক্সের (সাবেক টুইটার) কর্ণধার ইলন মাস্ক। এরই প্রেক্ষিতে মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম বার্তা২৪, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল২৪, জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠের ডিজাইন সম্বলিত মোট ৩ টি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। এসব ফটোকার্ডের শিরোনামে দাবি করা হয়, প্রধান উপদেষ্টাকে ফোনে ফাক ইউ বলেছে ইলন মাস্ক।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে বার্তা২৪, চ্যানেল২৪ কিংবা জনকণ্ঠ কোনো ফটোকার্ড কিংবা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, উক্ত গণমাধ্যমগুলোর ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডগুলোতে উল্লেখিত দাবিগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।
ফটোকার্ড যাচাই- ১ (বার্তা২৪)
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “প্রধান উপদেষ্টাকে ফোনে ফাক ইউ বললেন ইলন মাস্ক” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে বার্তা২৪ এর লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তী অনুসন্ধানে বার্তা২৪ এর লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে “প্রধান উপদেষ্টাকে ফোনে ফাক ইউ বললেন ইলন মাস্ক” শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, এখন টিভির ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, ১৪ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইলন মাস্কের ফোনালাপ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির সাথে এই ফটোকার্ডটির ডিজাইন ও ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
এছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডের বিষয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বার্তা২৪ এর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে আলোচিত ফটোকার্ডটি বার্তা২৪ প্রকাশ করেনি বলে নিশ্চিত করা হয়।
অর্থাৎ, বার্তা২৪ এর এই ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
ফটোকার্ড যাচাই- ২ (চ্যানেল২৪)
‘প্রধান উপদেষ্টাকে ফোনে ‘ফাক ইউ’ বললেন ইলন মাস্ক’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে চ্যানেল২৪ এর লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে চ্যানেল২৪ এর ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে “বাংলাদেশের স্টারলিংক আনার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইলন মাস্কের আলোচনা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির সাথে এই ফটোকার্ডটির ডিজাইন ও ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
এছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডের বিষয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বার্তা২৪ এর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে আলোচিত ফটোকার্ডটি বার্তা২৪ প্রকাশ করেনি বলে নিশ্চিত করা হয়।
ফটোকার্ড যাচাই- ৩ (জনকণ্ঠ)
‘ইলন মাস্কের মুখে “ফাক ইউ” শুনে বিব্রত প্রধান উপদেষ্টা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে জনকণ্ঠের লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে জনকণ্ঠে অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে জনকণ্ঠে প্রচলিত ফটোকার্ডের ছবি, টেক্সট ফন্ট ও ডিজাইনের ভিন্নতা রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
অর্থাৎ, জনকণ্ঠ এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।
পাশাপাশি, আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্য অন্য কোনো গণমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ডঃ ইউনূস ও ইলন মাস্ককে জড়িয়ে বার্তা২৪, চ্যানেল২৪ কিংবা জনকণ্ঠের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো ভুয়া ও বানোয়াট।
সম্প্রতি, দিনমজুর স্বামীর চিকিৎসার জন্য ৪ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন আয়েশা। সুদ-আসল মিলিয়ে ৮ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। আরো ২ হাজার টাকা চেয়ে আয়েশাকে শাড়ির আঁচলে গাছে বেঁধে বর্বর নি’র্যা’তন করে সুদখোর শওকত ওসমান। ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার উপজেলার বরইতলীতে।- শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বরইতলীতে সুদের টাকা না পেয়ে নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, ২০২১ সালে উক্ত ঘটনাটি ঘটেছিল।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Nurul Hoque Nur’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২১ সালের ১৮ মার্চ প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে থাকা ছবিগুলোর সাথে আলোচিত ছবিগুলোর মিল রয়েছে।
Video Comparison By Rumor Scanner
উক্ত পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, দিনমজুর স্বামীর জন্য চার হাজার টাকা ঋণ নেয় আয়েশা নামক একটি গৃহবধূ। পরবর্তীতে তা সুদেআসলে আট হাজার টাকা পরিশোধ করলেও দুই হাজার টাকা চেয়ে গৃহবধূ আয়েশাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করে শওকত ওসমান নামের এক ব্যক্তি। ঘটনাটি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বরইতলীর।
পরবর্তীতে মূল ধারার গণমাধ্যম চ্যানেল আই এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ১৮ মার্চ “সুদের টাকা আদায়ে গৃহবধূ নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল, ৬ জনের নামে মামলা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়ায় সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গৃহবধূকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের মোরাপাড়ার হাপানিয়াকাটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী পরবর্তীতে ছয় জনকে আসামী করে থানায় মামলা করেছিলেন।
অর্থাৎ, ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
সুতরাং, ২০২১ সালে সুদের টাকা না পেয়ে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বরইতলীতে নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “বই উপহার পাবার খুশিতে হার্ট অ্যাটাক করলেন তরুন।”- শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “বই উপহার পাবার খুশিতে হার্ট অ্যাটাক করলেন তরুন।” শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভি কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যমুনা টিভির ডিজাইনের আদলে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে এতে যমুনা টিভির নাম ও লোগো উল্লেখ করা হয়েছে। ফটোকার্ডটিতে প্রকাশের তারিখ হিসেবে ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত সংবাদ ও ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেল এবং ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Comparison: Rumor Scanner
তাছাড়া, যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলোর সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ফন্ট ডিজাইনেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে যমুনা টিভির লোগোর পাশে বিচিত্র – বই ঘর, ফ্রি বই উপহার এবং ফ্রি বই উপহার ২.০ লেখা দেখতে পাওয়া যায়, যা যমুনা টিভির ফটোকার্ডগুলোতে থাকেনা।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত ফটোকার্ডটিতে থাকা ‘বই উপহার পাবার খুশিতে হার্ট অ্যাটাক করলেন তরুন’ শীর্ষক দাবির সপক্ষে অন্য কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, বই উপহার পাবার খুশিতে হার্ট অ্যাটাক করলেন তরুন শীর্ষক দাবিতে শিরোনামে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।
সম্প্রতি, মাদারীপুরে আওয়ামী লীগের ১৯ নেতাকর্মীর বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনার জন্য বিএনপি, জামায়াত-শিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও হিযবুত তাহরীকে দায়ী করে বিভিন্ন পোস্ট ছড়ানো হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদারীপুরে আওয়ামী লীগের ১৯ নেতাকর্মীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের আলোচিত দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, শরীয়তপুরের ডোমসার ইউনিয়নে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনাজনিত অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Robiul Islam NaVan’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গতকাল (১৫ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত একটি পোস্টে একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের ক্যাপশন অনুযায়ী, ভিডিওটি শরীয়তপুরের বেপারী কান্দি গ্রামে রান্নাঘর থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার।
Comparison: Rumor Scanner.
এই পোস্টের সূত্র ধরে ‘শরীয়তপুর টাইমস’ নামের স্থানীয় এক গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে একই ঘটনার ভিন্ন একটি ভিডিও পাওয়া যায়।
এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম জাগোনিউজ২৪-এর ওয়েবসাইটে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের কোয়ারপুর দপ্তরিকান্দি এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১০টি বসতঘরসহ ১৭টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। স্থানীয়দের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও কিছুই রক্ষা করা যায়নি। প্রাথমিক তদন্তে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাফিস এলাহী রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ঘটনার সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না। কেউ পরিকল্পিত হামলার অভিযোগ করেননি, এবং বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান খান জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্যটি গুজব। তিনি এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাননি।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের এক সদস্য মো. শাহিন জানান, ঘটনার সময় আমরা বাড়িতে ছিলাম না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা ছড়ানো হচ্ছে, তা সত্য নয়।
তাছাড়া, বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে মাদারীপুরে এ ধরনের অগ্নিসংযোগের কোনো তথ্য মেলেনি।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি মাদারীপুরের নয়, বরং শরীয়তপুরের একটি দুর্ঘটনাজনিত অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য।
সুতরাং, মাদারীপুরে আওয়ামী লীগের ১৯ নেতাকর্মীর বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে যৌথবাহিনীর পোশাকে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা মানুষকে গ্রেফতারের নামে অত্যাচার করছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী একই দাবিতে ফেসবুকে পোস্ট করলেও পরবর্তীতে সরিয়ে নেন।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ এর কোনো অভিযানের নয় বরং, ২০১০ সালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলার দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, উক্ত হামলার ঘটনার সাথে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি থেকে কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘DAILYBNPALO’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি “মির্জা আব্বাস বাসায় হামলা” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যার একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির বর্ণনায় দাবি করা হয়, ‘বিএনপির উপর অত্যাচার, নির্যাতন করতে র্যাবের পোশাক ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। তিনি বলেন, ২৭ জুনের হরতালে র্যাবের পোশাকধারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরাই মির্জা আব্বাসের বাসায় হামলা চালায়।’
পরবর্তীতে, ভিডিওটির বর্ণনায় উল্লেখিত তারিখের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’ এর ওয়েবসাইটে ২০১০ সালের ২৭ জুন ‘মির্জা আব্বাসের বাড়িতে হামলা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গ্রেপ্তারের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাসের শাজাহানপুরের বাসায় ঢুকে মারধর ও ভাংচুর করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
রোববার (২০১০ সালের ২৭ জুন) বিএনপির হরতাল চলাকালে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১টার দিকে মির্জা আব্বাস গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে শাজাহানপুরে মিছিল বের হয়। মিছিলটি সোয়া ১২টার দিকে মির্জা আব্বাসের বাসার কাছে পৌঁছলে র্যাব ও পুলিশ পেছন থেকে তাদের ধাওয়া দিয়ে লাঠিপেটা শুরু করে। তখন মিছিলের অনেকে মির্জা আব্বাসের বাড়ির গলিতে ঢুকে পড়ে। অনেকে আশ্রয় নেয় বাড়ির ভেতরে।
ঘটনার কিছু সময় পর আফরোজা আব্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মির্জা আব্বাসের মুক্তির দাবিতে শাজাহানপুরে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছিলাম। এসব রাস্তায় মিছিল নিষিদ্ধ না হলেও র্যাব-পুলিশ আমাদের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে র্যাব আমার বাড়িতে ঢুকে বেশ কয়েকটি কক্ষে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।”
হামলায় র্যাবের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেন দাবি করে তিনি বলেন, “বাসার প্রতিটি কক্ষে ভাংচুর করা হয়েছে। আমার শাশুড়ীর ওপরও হামলা চালিয়েছে ওরা। বাড়ি থেকে মোবাইল ফোন ও ফাইলপত্র লুটপাট করা হয়েছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার (২০১০ সালের ২৬ জুন) মতিঝিলে একটি গাড়ি পোড়ানোর মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গণমাধ্যমটির একই বছরের ২ জুলাই প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২৭ জুন হরতাল কর্মসূচি পালনকালে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের বাড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ‘অতিরিক্ত শক্তি’ প্রয়োগ করা হয়েছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।’
সুতরাং, ২০১০ সালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলার দৃশ্যকে সম্প্রতি ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে যৌথবাহিনীর পোশাকে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা মানুষকে গ্রেফতারের নামে অত্যাচার করছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে কয়েকজন ব্যক্তির ছবি অন্তর্বর্তীকালীন সরকাররের আমলের অর্থাৎ সাম্প্রতিক ঘটনার দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকাররের আমলের অর্থাৎ সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয় বরং, ২০১৮ সালের পুরোনো ভিন্ন ঘটনার ছবিগুলো আলোচিত দাবি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ছবিগুলো রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘A K M Wahiduzzaman’ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এক পোস্টের মাধ্যমে প্রচারিত কিছু ছবির সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Collage: Rumor Scanner
পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, ‘ছবিগুলো অনেক দিন যাবত সেভ করে রেখেছি। আমার বন্ধু আর এই পৃথিবীতে নেই। সহৃদয় কেউ কি হেল্প করতে পারবেন? এই ছবি থেকে অস্ত্রধারী লোকগুলোকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করুন প্লিজ। সেই সাথে এদের পোস্টিং এখন কোথায়, সেটাও উল্লেখ করুন। যদি প্রকাশ্যে জানাতে ভয় পান, তাহলে ইনবক্সে জানাতে পারেন।’
পোস্টের মন্তব্যের ঘর পর্বেক্ষণ করে দেখা যায়, ‘jitu’ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, ‘স্যার ২০১৮ সালে এই ঘটনাটার আমি স্বচক্ষে দেখা এবং সাক্ষী ছিলাম ঐদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি না হতো আমিও গ্রেফতার হইতাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার (ম্যাডামের) মুক্তির দাবিতে আমরা জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করছিলাম হঠাৎ করে আতঙ্কিত পুলিশ এসে যাকে তাকে এরেস্ট করা শুরু করে দিয়েছে । আর তৎকালীন এরেস্ট মানে পাশবিক নির্যাতন রিমান্ডের নামে। মহান আল্লাহ পাক বাবু ভাইকে জান্নাতবাসী করুক। এদেরকে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Shafiqur Rahman Mithu’ নামের এক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৮ সালের ৬ মার্চ একটি পোস্টের ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, পোস্টটির এডিট হিস্টোরি থেকে দেখা যায় একই বছরের ৮ মার্চ পোস্টটি একবার সম্পাদনা করা হয়। সম্পাদনা করে নতুন করে ৭টি ছবি সংযুক্ত করা হয়। এই ৭টি ছবির ৬টির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Screenshot: Rumor Scanner
এছাড়াও, ‘DitioAlo দ্বিতীয়আলো’ নামের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে ২০১৮ সালের ৭ মার্চ আপলোডকৃত একটি ছবি পাওয়া যায়, যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত একটি ছবির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Screenshot: DitioAlo দ্বিতীয়আলো
অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত যে ছবিগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকাররের আমলের বা সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয়।
আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য গুগলে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে প্রথম আলো এর ওয়েবসাটে ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর আপডেটকৃত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের একটি ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত একটি ছবির সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Prothom Alo
সুতরাং, ২০১৮ সালের অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের ছবি সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মহড়ার বা সংঘর্ষের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘র্যাবের অভিযানে পতিতা সর্দারসহ চার পতিতা গ্রেফতার।’ শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার জাতীয় দৈনিক নয়া দিগন্ত এর লোগো সম্বলিত একটি প্রতিবেদনের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। উক্ত প্রতিবেদনের ফিচারে ব্যবহৃত গ্রেফতারকৃতদের ছবিতে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ রয়েছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত ছবি ও নয়া দিগন্তের প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বরং, ২০২১ সালে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ভিন্ন এক ব্যক্তির ছবিতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের মুখমণ্ডল বসিয়ে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
২০২১ সালের ২০ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জে র্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হওয়া এক ব্যক্তির (জাহাঙ্গীর আলম) ছবিকে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পাদনা করে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের মুখমণ্ডল বসানো হয়েছে। এই সম্পাদিত ছবির সাথে দৈনিক নয়া দিগন্তের লোগো যুক্ত করে একটি বানোয়াট প্রতিবেদন তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিম নয়া দিগন্তের ইপেপার ও ওয়েবসাইটে উক্ত দাবি সংক্রান্ত কোনো সংবাদ খুঁজে পায়নি। এছাড়া, প্রতিবেদনের শিরোনামে দাঁড়ি (।) চিহ্ন ব্যবহার এবং সাল-তারিখের অসঙ্গতি থেকে এটি জালিয়াতি বলে প্রমাণিত হয়।
২০২১ সালের স্থানীয় গণমাধ্যম ধুমকেতু নিউজ ও অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায়, সেসময় র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলম, যিনি পতিতা ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেফতারের কোনো তথ্য বা সংবাদ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিতে একই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রিউমর স্ক্যানার সেসময় এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সম্প্রতি, “৫ আগস্টের পর হাসিনাকে মোদির হাতে তুলে দিয়েছি মোদি যা ইচ্ছা তাই করুক ~ট্রাম্প”- শীর্ষক শিরোনামে জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টারের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডেইলি স্টার “৫ আগস্টের পর হাসিনাকে মোদির হাতে তুলে দিয়েছি মোদি যা ইচ্ছা তাই করুক ~ট্রাম্প”- শীর্ষক শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, ডেইলি স্টারের ডিজাইন নকল করে উক্ত ভুয়া ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে এতে দ্য ডেইলি স্টারের লোগো এবং পত্রিকাটির রাজনীতি বিভাগে এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, আলোচিত ফটোকার্ডের বিষয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: The Daily Star Facebook Page
উক্ত পোস্টে আলোচিত ফটোকার্ডটি ডেইলি স্টার প্রকাশ করেনি বলে নিশ্চিত করা হয়।
সুতরাং, “৫ আগস্টের পর হাসিনাকে মোদির হাতে তুলে দিয়েছি মোদি যা ইচ্ছা তাই করুক ~ট্রাম্প”- শীর্ষক শিরোনামে ডেইলি স্টারের নামে ইন্টারনেটে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।
সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অস্ট্রেলিয়া গোয়েন্দা ইন্টারন্যাশনাল আই এস আদালত থেকে বৈধ ঘোষণা করেছেন শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে৷
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনার অস্ট্রেলীয় আদালত থেকে বৈধতা পাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং, ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও এবং অস্ট্রেলীয় আদালতের নাম ব্যবহার করে ভুয়া দাবিটি প্রচার করা হয়েছে৷
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের টেলিভিশন চ্যানেল Sharjah TV এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর ‘Reem Al Hashimy receives Deputy Foreign Minister of Kazakhstan’ (আরবি থেকে অনূদিত) শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর বিষয়বস্তু ও পারিপার্শ্বিকতার মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, সে সময় কাজাখস্তানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুখতার তলিউবেরদির সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী রীম বিনতে ইব্রাহিম আল হাশিমি সাক্ষাৎ করেন। ওই বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির পন্থা নিয়ে আলোচনা হয়।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
তাছাড়া, অস্ট্রেলিয়ায় ‘গোয়েন্দা ইন্টারন্যাশনাল আই এস আদালত’ নামে কোনো আদালত নেই৷ সেখানে সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্ট এবং এটির অধীনে সুপ্রিমকোর্ট ও ফেডারেল কোর্ট রয়েছে৷
এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে অস্ট্রেলীয় কোনো আলাদত কতৃক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈধতা ঘোষণার কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি৷
সুতরাং, ভিন্ন প্রেক্ষাপটের পুরোনো ভিডিও ব্যবহার করে অস্ট্রেলীয় আদালত থেকে শেখ হাসিনার বৈধতা ঘোষণার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা৷