সম্প্রতি, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে যৌথবাহিনীর পোশাকে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা মানুষকে গ্রেফতারের নামে অত্যাচার করছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী একই দাবিতে ফেসবুকে পোস্ট করলেও পরবর্তীতে সরিয়ে নেন।

ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ এর কোনো অভিযানের নয় বরং, ২০১০ সালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলার দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, উক্ত হামলার ঘটনার সাথে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি থেকে কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘DAILYBNPALO’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি “মির্জা আব্বাস বাসায় হামলা” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যার একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটির বর্ণনায় দাবি করা হয়, ‘বিএনপির উপর অত্যাচার, নির্যাতন করতে র্যাবের পোশাক ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। তিনি বলেন, ২৭ জুনের হরতালে র্যাবের পোশাকধারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরাই মির্জা আব্বাসের বাসায় হামলা চালায়।’
পরবর্তীতে, ভিডিওটির বর্ণনায় উল্লেখিত তারিখের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’ এর ওয়েবসাইটে ২০১০ সালের ২৭ জুন ‘মির্জা আব্বাসের বাড়িতে হামলা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গ্রেপ্তারের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাসের শাজাহানপুরের বাসায় ঢুকে মারধর ও ভাংচুর করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
রোববার (২০১০ সালের ২৭ জুন) বিএনপির হরতাল চলাকালে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১টার দিকে মির্জা আব্বাস গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে শাজাহানপুরে মিছিল বের হয়। মিছিলটি সোয়া ১২টার দিকে মির্জা আব্বাসের বাসার কাছে পৌঁছলে র্যাব ও পুলিশ পেছন থেকে তাদের ধাওয়া দিয়ে লাঠিপেটা শুরু করে। তখন মিছিলের অনেকে মির্জা আব্বাসের বাড়ির গলিতে ঢুকে পড়ে। অনেকে আশ্রয় নেয় বাড়ির ভেতরে।
ঘটনার কিছু সময় পর আফরোজা আব্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মির্জা আব্বাসের মুক্তির দাবিতে শাজাহানপুরে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছিলাম। এসব রাস্তায় মিছিল নিষিদ্ধ না হলেও র্যাব-পুলিশ আমাদের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে র্যাব আমার বাড়িতে ঢুকে বেশ কয়েকটি কক্ষে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।”
হামলায় র্যাবের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেন দাবি করে তিনি বলেন, “বাসার প্রতিটি কক্ষে ভাংচুর করা হয়েছে। আমার শাশুড়ীর ওপরও হামলা চালিয়েছে ওরা। বাড়ি থেকে মোবাইল ফোন ও ফাইলপত্র লুটপাট করা হয়েছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার (২০১০ সালের ২৬ জুন) মতিঝিলে একটি গাড়ি পোড়ানোর মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গণমাধ্যমটির একই বছরের ২ জুলাই প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২৭ জুন হরতাল কর্মসূচি পালনকালে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের বাড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ‘অতিরিক্ত শক্তি’ প্রয়োগ করা হয়েছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।’
সুতরাং, ২০১০ সালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলার দৃশ্যকে সম্প্রতি ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে যৌথবাহিনীর পোশাকে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা মানুষকে গ্রেফতারের নামে অত্যাচার করছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- DAILYBNPALO: “মির্জা আব্বাস বাসায় হামলা”
- বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: মির্জা আব্বাসের বাড়িতে হামলা
- বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: ‘আব্বাসের বাড়িতে অভিযানে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে র্যাব’