অজ্ঞাত নারীর লাশের পাশে শিশু উদ্ধারের পুরোনো ঘটনা সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, একটি কাঁচা সড়কের পাশে অজ্ঞাত এক নারী ও শিশুর পড়ে থাকা ছবি সমাজিক মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, শিশুটির মাকে কে বা কারা মেরে ফেলেছে। বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল ভর্তি। এখনো পরিবারের সন্ধান মেলেনি।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রাচরিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের কোনো ঘটনার নয় বরং, ২০২৪ সালের মে মাসে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলা একটি কাঁচা সড়কের পাশ থেকে এক অজ্ঞাত নারীর মৃতদেহের পাশে অজ্ঞাত অবস্থায় এক শিশুকে উদ্ধারের ঘটনাকে সাম্প্রতিক ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে যমুনা টেলিভিশন এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৩০ মে ‘জ্ঞান ফেরেনি মৃত নারীর পাশে উদ্ধার হওয়া সেই শিশুটির | Netrokona Child | Jamuna TV’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। সংবাদে দেখানো ফুটেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও প্রতিবেদনটির বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, ‘এখনও জ্ঞান ফিরেনি নেত্রকোনায় মৃত নারীর পাশে আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া শিশুটির। ময়মনসিংহ মেডিকেলে চিকিৎসাধিন সে। পরিবারের সন্ধান না পাওয়ায় শিশুটিকে নিয়ে বিপাকে পরেছেন সংশ্লিষ্টরা। পুলিশের ধারনা, মাকে  হত্যার পর শিশুটিকেও মেরে ফেলার চেষ্টা চালানো হয়। পরিচয় খুজে পাওয়া গেলে, এই ঘটনার রহস্য জানা যাবে বলে মনে করছে পুলিশ।’

পরবর্তীতে প্রাসিঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আরটিভি এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৩০ মে এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নারীর মৃতদেহের পাশে অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিল দেড় বছর বয়সি অজ্ঞাত এক শিশু। এ ঘটনায় স্থানীয়ারা শিশুটিকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। তবে এখনো শিশুটির জ্ঞান ফিরেনি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

বুধবার (২৭ মে, ২০২৪) দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই শিশুটিকে ভর্তি করা হয় বলে জানা গেছে। 

এর আগে, নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার বিশকাকোনী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ধলা যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি কাঁচা সড়কের পাশ থেকে ৩০ বছর বয়সি এক অজ্ঞাত নারীর মৃতদেহ দেখতে পায় এলাকাবাসী। এ সময় ওই নারীর মৃতদেহের পাশে অজ্ঞাত অবস্থায় এই শিশুটিকেও পায় স্থানীয়রা। পরে থানা পুলিশের পরামর্শে স্থানীয়রা এক ইউপি সদস্য শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।’

অর্থাৎ, ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।

পরবর্তীতে, শিশুটির পরিবারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল কিনা জানতে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে যুগান্তর এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে ২০২৪ সালের ৮ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অবশেষে ৯ দিন পর পরিচয় মিলল মায়ের মরদেহের পাশে পাওয়া শিশুরটির। নেত্রকোনার পূর্বধলায় মায়ের মরদেহের পাশ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় শিশুটির। শিশুটির নাম আলিফ মিয়া (২)।

আলিফ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল মনসুরের ছেলে। তার নিহত মায়ের নাম আনোয়ারা বেগম। আনোয়ারা বেগম আবুল মনসুরের দ্বিতীয় স্ত্রী।

শুক্রবার (৭ জুন, ২০২৪) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স জাকিয়া সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (৬ জুন, ২০২৪) আলিফের খবর পেয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন তার স্বজনরা। এ সময় শিশু আলিফ তার বড় বোন হাসি আক্তারের কোলে পরম মমতায় দীর্ঘ সময় কাটায়। আলিফ এখনো পুরোপুরি সুস্থ নয়। কোনো কথা বলছে না। তবে সে আশঙ্কামুক্ত।

আলিফের বোন হাসি আক্তার ও তার স্বজনরা জানান, আলিফের বাবা আবুল মনসুর পেশায় একজন মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী। তার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ায় তিনি আলিফের মা আনোয়ারাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। গত ২৮ মে আনোয়ারা তার সন্তান আলিফকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তাগাছা বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। পরদিন নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার কাছিয়াকান্দা গ্রামের মেঠোপথে পাওয়া যায় আনোয়ারার মরদেহ।’

এছাড়া, সময় টিভিবার্তা২৪.কম এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও প্রায় একই তথ্য জানা যায়।

সুতরাং, ২০২৪ সালের মে মাসে নেত্রকোনায় একটি কাঁচা সড়কের পাশ থেকে এক অজ্ঞাত নারীর মৃতদেহ ও এক শিশুকে উদ্ধার করার ঘটনাটি সাম্প্রতিক দাবি করে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img