সম্প্রতি ‘১৪’ই ফেব্রুয়ারিতে পার্কের ভিতরে পুলিশের অভিযান!!১০৭ জন প্রেমিক যুগল আটক,অভিবাকের উপস্থিতিতে জরিমানা।’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।

ভিডিওটি একই দাবিতে ইউটিউবের বিভিন্ন চ্যানেল হতে প্রচারিত হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন; এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৪ ফেব্রুয়ারিতে পার্কের ভিতরে পুলিশের অভিযানের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০১৩ সালের ১২ জুন বগুড়ার ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে বগুড়া জেলা প্রশাসনের পরিচালিত একটি অভিযান।
ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে। বিশ্লেষণে ভিডিওটির ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে পার্কটিতে অভিযান পরিচালনাকারী ব্যক্তিটির একটি বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।

বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বগুড়ার বিভিন্ন পার্কে অশ্লীল কার্যক্রম চলছে। তখনই প্রশাসনের উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে আমরা বিভিন্ন পার্কে অশ্লীল কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য তৎপর হই। তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় আমরা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেই এই অশ্লীল কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য৷ তারই একটি অংশ হিসেবে এই ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে আমরা অভিযান চালাই। দীর্ঘসময় অভিযান চালানোর পরে আমরা ৭২ জোড়া কপোত-কপোতীকে আটক করি।’
পরবর্তীতে এই প্রতিবেদনের সূত্রে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে Ajker Khabor নামের একটি অনলাইন পোর্টালে ২০১৩ সালের ১২ জুন ‘১৪৪ জন ‘প্রেমিক-প্রেমিকা’ আটক‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বগুড়ার ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক থেকে অভিযান চালিয়ে ১৪৪ জন তরুন-তরুনীকে আটক করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। আদালতের ভাষ্যমতে, এরা সবাই প্রেমিক-প্রেমিকা। পরে অবশ্য সতর্ক করে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুল হাসান রুমির নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত এ অভিযান পরিচালনা করেন। ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কটি বগুড়া শহরে শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম এলাকায় অবস্থিত।
পাশাপাশি হামরা বোগড়ার ছোল নামের একটি ফেসবুক পেইজে ‘বগুড়ায় ৭২ জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা আটক (পর্বঃ২)‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

এই পোস্টটি থেকে জানা যায়, বগুড়ায় ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে অশালীন মেলামেশার অপরাধে ৭২ জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকাকে আটকের পর আর্থিক জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুল হাসান রুমির নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালত মঙ্গলবার দুপুরে শহরের স্টেডিয়াম এলাকায় অবস্থিত ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে বিশেষ অভিযান চালান। এসময় পার্কের ভেতরে অশালীন কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ৭২ জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকাকে আটক করেন। পরে তাদের মৌখিক ভৎর্সনার পাশাপাশি প্রত্যেকের ৫০ টাকা থেকে ২’শ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করেন। এছাড়া পার্কের তিন কর্মকর্তা-কর্মচারির ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেন আদালত। শহরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে যুবক-যুবতীর অবাধ মেলামেশা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই অভিযান চালায় ভ্রাম্যমান আদালত।
এই পোস্টটিতে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে ১৪’ই ফেব্রুয়ারিতে পার্কের ভিতরে পুলিশের অভিযান শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

এছাড়া মূলধারার কোনো গণমাধ্যম সূত্রে ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে বগুড়ার ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে পুলিশের অভিযানে ১০৭ জন প্রেমিক যুগল আটকের ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, ২০১৩ সালের ১২ জুন ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে পুলিশের অভিযানের একটি প্রতিবেদনকে ১৪’ই ফেব্রুয়ারিতে পার্কের ভিতরে পুলিশের অভিযান দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
তবে এবারই প্রথম নয় রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, উক্ত ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিওটি ২০১৩ সাল পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে প্রচার করা হয়। যেমন ২০১৪ সালে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে, ২০১৫ সালে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে, ২০১৬ সালে প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে, ২০২২ সালে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে।

মূলত, ২০১৩ সালের ১২ জুন বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম এলাকায় অবস্থিত ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুল হাসান রুমির নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে পার্কটি থেকে ১৪৪ জন প্রেমিক যুগলকে আটক করা হয়। এই ঘটনার ধারণকৃত একটি ভিডিওকে পরবর্তীতে প্রায় প্রতিবছরই ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এই ভিডিওটিকে সম্প্রতি ‘১৪’ই ফেব্রুয়ারিতে পার্কের ভিতরে পুলিশের অভিযান!!১০৭ জন প্রেমিক যুগল আটক,অভিবাকের উপস্থিতিতে জরিমানা।’ শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে কোনো গণমাধ্যম সূত্রে ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে বগুড়ার ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে পুলিশের অভিযানে ১০৭ জন প্রেমিক যুগল আটকের ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ২০১৩ সালের ১২ জুন বগুড়ার ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে পুলিশের একটি অভিযানের ভিডিওকে ‘১৪’ই ফেব্রুয়ারিতে পার্কের ভিতরে পুলিশের অভিযান দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Ajker Khabor: ১৪৪ জন ‘প্রেমিক-প্রেমিকা’ আটক
- হামরা বোগড়ার ছোল: বগুড়ায় ৭২ জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা আটক (পর্বঃ২)