- নয় মাসে শনাক্ত হওয়া ভুয়া তথ্যের ২১ শতাংশ ক্ষেত্রেই জড়ানো হয়েছে নারীদের।
- এই সময়ে ২৭৬ জন নারীকে জড়িয়ে ৫৬৭টি অপতথ্য শনাক্ত।
- ২৫ জন নারী রাজনীতিবিদকে জড়িয়ে ছড়ানো হয়েছে ২৩৭টি অপতথ্য।
- দুই নারী উপদেষ্টাকে জড়িয়েও ছড়িয়েছে অপতথ্য।
- বিনোদন জগতের ২৯ জন নারী তারকাকে জড়িয়ে ৬৮টি অপতথ্য শনাক্ত।
- সমন্বয়কের ভুয়া পরিচয় দিয়ে ক্রমাগত ভিন্ন নারীর ভুয়া ভিডিও-ছবি প্রচার।
- নারীকে জড়িয়ে ধর্ষণ সংক্রান্ত ৪৪টি ঘটনায় অপতথ্য।
- ১৩টি ঘটনায় বাংলাদেশের এবং ০৩টি ঘটনার প্রচারে ভারতের গণমাধ্যম।
- সাম্প্রদায়িক অপতথ্যের ৩৭ শতাংশ ঘটনাতে নারীকে জড়ানো হয়েছে। ভারতীয় অ্যাকাউন্ট থেকে সবচেয়ে বেশি অপপ্রচার।
বাংলাদেশে নারীদের ঘিরে অপতথ্য ছড়ানো এখন একটি উদ্বেগজনক সামাজিক ও ডিজিটাল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপটে নারীদের ছবি, পরিচয় কিংবা বক্তব্য বিকৃত করে উপস্থাপন করার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেক সময় নারীদের নামে ভুয়া কনটেন্ট তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যার উদ্দেশ্য কখনও চরিত্রহনন, কখনও হেয় প্রতিপন্ন করা, কখনওবা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করা। এসব অপতথ্য শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতিই করে না, বরং নারীর সামাজিক অবস্থান, নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের বিস্তার যত বাড়ছে, নারীদের ঘিরে ডিজিটাল সহিংসতার এই রূপ ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই প্রেক্ষাপটে অপতথ্যের উৎস, ধরন ও প্রভাব বিশ্লেষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে যত গুজব শনাক্ত হয়েছে তার অন্তত ২১ শতাংশ নারীদের ঘিরে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ২৭৬ জন নারীকে জড়িয়ে ৫৬৭টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এসব অপতথ্যের শিকার হয়েছেন রাজনীতি, বিনোদন, জাতীয়সহ বিভিন্ন অঙ্গনের পরিচিত ব্যক্তিরা। এমনকি সাধারণ অনেক নারীও নিয়মিত এমন অপতথ্যের শিকার হচ্ছেন।
রাজনীতির মাঠে নারীদের ঘিরে অপতথ্যের কালো থাবা
বাংলাদেশে জাতীয় ও রাজনৈতিক পরিসরে নারীদের ঘিরে বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি বর্তমানে একটি দৃশ্যমান বাস্তবতা। সামাজিক মাধ্যমে নারীদের নাম বা ছবি ব্যবহার করে ভুয়া বক্তব্য, সম্পাদিত ভিডিও বা এআই কনটেন্ট ছড়ানো হয়, যা তাদের সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি করে। অনেক সময় গণমাধ্যমের নামেও এসব তথ্য প্রচার করে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর অপচেষ্টা চলে। ফলে নারীদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়, এবং গণপরিসরে তাদের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত নয় মাসে দেশের অন্তত সাতটি রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠনের ২৫ জন নারী নেতাকর্মীকে জড়িয়ে অন্তত ২৩৭টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট নারীদের জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি ১৮৮টি অপতথ্যের প্রচার দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি গুজব ছড়ানো হয়েছে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে৷ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয়ে থাকা এই নারীকে জড়িয়েই ১৪৮টি অপতথ্য প্রচার হয়েছে। অপতথ্যগুলোর ধরণ বুঝতে এগুলোকে রিউমর স্ক্যানার দুইটি আলাদা ভাগে ভাগ করেছে৷ শেখ হাসিনার পক্ষে যায় এমন অপতথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায় এমন অপতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এসব অপতথ্যের প্রায় ৮৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই শেখ হাসিনাকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব অপতথ্যের অধিকাংশই (২৯ শতাংশ) পুরোনো ভিডিও কেন্দ্রিক, যেগুলোকে চলতি বছরের ঘটনা দাবিতে প্রচার করতে দেখা গেছে। শেখ হাসিনাকে ০৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এরই প্রেক্ষিতে তাকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে বা তিনি দেশে ফিরেছেন দাবিতে বিভিন্ন সময়ের পুরোনো ভিডিও রীতিমতো ক্যাম্পেইন আকারে চালানো হয়েছে। এর ফলে তার নামের পাশে অপতথ্যের সংখ্যাও বেড়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়াও তার পরিবারের আরও তিন নারী সদস্যকে (মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক) জড়িয়েও আরো ২১টি অপতথ্যের প্রচার ছিল এই নয় মাসে। এছাড়া, দলটির নেত্রী দীপু মনি (১), মমতাজ বেগম (৪), সেলিনা হায়াৎ আইভী (৩) এবং জান্নাত আরা হেনরীকে (১) জড়িয়ে প্রচার হওয়া অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ কোনো নাম উল্লেখ ব্যতিত শুধু দলটির নারী নেতাকর্মী পরিচয়ে আরো অন্তত ১০টি অপতথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে দেশের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে একাধিক নারী সদস্য আছেন। জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সুবাদে গত বছর থেকেই এই নারীরা কমবেশি আলোচনায় ছিলেন। রাজনীতিতে নাম লেখানোর পর তাদের জড়িয়ে নিয়মিতই অপতথ্যের প্রচার লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ এই দল ও তার অঙ্গসংগঠনের সাত নারী নেত্রীকে জড়িয়ে নয় মাসে অন্তত ৩২টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারাকে জড়িয়েই প্রচার হয়েছে ১৯টি অপতথ্য। এসব অপতথ্যের আটটিতে আপত্তিকর এবং যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ দৃশ্যের প্রচার ছিল। এছাড়া, নুসরাত তাবাসসুমকে জড়িয়ে ছয়টি, সামান্তা শারমিনকে জড়িয়ে তিনটি এবং হুমায়রা নুর, তাজনূভা জাবীন, অর্পিতা শ্যামা দেব ও শ্যামলী সুলতানা জেদনীকে জড়িয়ে একটি করে অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। কোনো নাম উল্লেখ ব্যতিত শুধু এনসিপির নারী নেতাকর্মী পরিচয়ে আরো অন্তত দুইটি অপতথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও তার অঙ্গসংগঠনের অন্তত আট জন নারী নেতাকর্মীকে জড়িয়ে গেল নয় মাসে অন্তত ২৩টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানাকে জড়িয়ে প্রচার হয়েছে এমন অপতথ্য শনাক্তের পরিমাণ ০৯টি। এই অপতথ্যগুলোর ক্ষেত্রে ভুয়া মন্তব্য, এআই দিয়ে তৈরি ভুয়া ছবি যেমন ছিল, তেমনি ছিল পুরোনো ভিডিওর ব্যবহার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টাও। রুমিন ফারহানা ছাড়াও বেগম খালেদা জিয়া (৮), জাইমা রহমান (১), ডা. জোবাইদা রহমান (১), নিপুন রায় চৌধুরী (১) এবং মানসুরা আলমকে (১) জড়িয়ে চলতি বছর অপতথ্যের প্রচার দেখা গেছে। এছাড়া, কোনো নাম উল্লেখ ব্যতিত শুধু বিএনপির নারী নেতাকর্মী পরিচয়ে আরো অন্তত দুইটি অপতথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে।
এছাড়া অন্যান্য দলের মধ্যে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেত্রী লাকী আক্তারকে জড়িয়ে দুইটি, ইনকিলাব মঞ্চের ফাতিমা তাসনিম জুমাকে জড়িয়ে দুইটি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেত্রী সোহাগী সামিয়াকে জড়িয়ে একটি এবং গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কথিত মহিলা সম্পাদিকা তন্নির পরিচয় দিয়ে একটি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন রিউমর স্ক্যানারকে বলছেন, “সম্মুখসারীর নারী রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে আমি যেটা দেখেছি যে দুর্নীতি বিষয়ক গুজব বা ভুয়া তথ্য হলে সেটা বিশ্বাসযোগ্য হয় অনেকের কাছে। তবে শ্লীলতাহানির মতো ঘটনার ক্ষেত্রে অনেকেই হয়ত বিশ্বাস করে না যে তারা এটা করে থাকতে পারে বা এটা হয়ে থাকতে পারে।” সামান্তা মনে করেন, যারা জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে কাজ করেন তাদের জন্য এগুলো খুবই সমস্যা হয়। কারণ গুজবগুলো ঐ পর্যায়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশ্বাস করে ফেলে। সেক্ষেত্রে তার সামাজিক বা পারিবারিক প্রভাব ভয়ানক পরিমাণে হয়।
অপতথ্য প্রচারে নারীকে টার্গেট করা প্রসঙ্গে সামান্তার অভিমত, “আমার কাছে মনে হয় যে আমাদেরকে আক্রমণ করলে বা আমরাই যদি এটার এত শিকার হয় তাহলে বাকি নারীরা এই পথে আসার আশা ভরসা পাবে না। এটা একটা কৌশলের জায়গা থেকে এটা হচ্ছে।”
তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলছিলেন, “গুজবগুলো টার্গেট করেই ছড়াচ্ছে। নারী রাজনীতিবিদ যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত এবং রাজনীতির ময়দানে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাদের এই সক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার জন্য এই কাজটা করা হয়।”
ফ্যাক্টচেকারদের এই ধরণের কাজগুলো প্রান্তিক পর্যায়েও ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। গুজব মোকাবিলাসহ পারিপার্শ্বিক নানা বিষয়ে গ্রাম পর্যায়ে এনসিপিসহ সকল রাজনৈতিক দলেরই সচেতনতার কাজ করা উচিত বলে মনে করেন তরুণ এই নারী রাজনীতিবিদ৷
রাজনীতির ময়দানের বাইরে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুইজন নারী উপদেষ্টাকে জড়িয়ে গত নয় মাসে দশটি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে জড়িয়ে নয়টি (এর মধ্যে দুইটি আপত্তিকর এবং একটি এআই কনটেন্ট) এবং ফরিদা আখতারকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদকে জড়িয়েও অন্তত একটি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে।
ভুয়া এআই কনটেন্টের বড় শিকার বিনোদন জগতের নারীরা
বাংলাদেশে ডিজিটাল মাধ্যমে ছড়ানো ভুয়া তথ্য বা অপতথ্যের অন্যতম বড় শিকার হয়ে উঠছেন বিনোদন জগতের নারীরা। অভিনেত্রী, মডেল, উপস্থাপক ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের নাম-পরিচয় ও ছবি ব্যবহার করে ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা তথ্য- যার মধ্যে রয়েছে ভুয়া ভিডিও, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কনটেন্ট কিংবা মৃত্যুর গুজব। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে বিনোদন জগতের ২৯ জন নারী তারকাকে জড়িয়ে অন্তত ৬৮টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে ৫০টি কনটেন্টের ক্ষেত্রে এআই বা ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে৷ ভুয়া এসব কনটেন্টের ক্ষেত্রে ৩৬টি ঘটনাতেই ব্যবহার হয়েছে ভারতীয় নারীর ফুটেজ, যেগুলোকে বাংলাদেশের বিনোদন তারকার ছবি বা ভিডিও দাবি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷
বিনোদন জগতে গেল নয় মাসে সবচেয়ে বেশি অপতথ্যের শিকার হয়েছেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান৷ তাকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া ১১টি ভুয়া কনটেন্টের ১০টিই ছিল এআই কেন্দ্রিক। সাদিয়া রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, তিনি নিজেও বিষয়টি নিয়ে অবগত। রিউমর স্ক্যানারের সাথে আলাপকালে তিনি বলছিলেন, যারা এই কাজটা করছে তারা ভয়াবহ ক্রাইমই করছে।
ভুয়া কনটেন্টগুলোর বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা প্রসঙ্গে সাদিয়া আয়মান মনে করেন এককভাবে সমাধানের পথে না গিয়ে এই সমস্যায় যারা পড়ছেন তারা সকলে একজোট হয়ে এই বিষয়টির সমাধানের পথ বের করা উচিত।
বাংলাদেশে নারীরা বিশেষ করে রাজনীতি এবং বিনোদন জগতের পরিচিত নারীরা জুলাই আন্দোলন পরবর্তী সময়ে আলাদাভাবে গুজবের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে সাদিয়া আয়মান বলেন, “জুলাই আন্দোলনের পক্ষে আমি কথা বলেছি। আমি কোনো রাজনীতির জায়গা থেকে করিনি। রাজনীতির ব্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমি ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে পছন্দ করি বা অন্যায় হলে সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পছন্দ করি। এটা সত্য যে জুলাই আন্দোলনের পরে আমি বা আরো কয়েকজন আছে যারা এটার পক্ষে কথা বলেছে তারা সমস্যার মুখে পড়েছে। আমি বলবো না, যারা জুলাই আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল তারাই এটা করেছে। আমি জানি না আসলে কারা এটা করেছে। এআইয়ের যে ব্যাপারটা চলছে, এই ব্যাপারটাও আমার মনে হয় যে কোনো একটা পক্ষ বা বিপক্ষ তারা বুঝেশুনেই এটা করছে। আমি এখনও সোশাল মিডিয়ায় অনেক কমেন্টস পাই মেসেজ পাই, যেগুলো বুঝা যাচ্ছে যে জুলাই আন্দোলনের সরব ছিলাম দেখেই আমাকে এখন এরকম কথা শুনতে হচ্ছে। বাট ইটস ওকে। আমি জানি যে সত্য এক সময় সামনে আসবে। আমি আসলে কেমন বা আমি আসলে কী নিয়ে কথা বলেছি, কী পক্ষ বিপক্ষে কথা বলেছি। এগুলো তো মানুষ জানে। নতুন করে ক্লিয়ার করার কিছু নেই। এটা সত্য যে যারা এটার পক্ষে ছিল তাদের একটু হলেও সমস্যা একটু হলেও অবলিগেশন ফেস করতে হচ্ছে। আশা করি এটা ঠিক হয়ে যাবে। আমার কাছে মনে হয় এটা সাময়িক বিষয়। এতটুকুই।”
বিনোদন জগতে চলতি বছর একের অধিক অপতথ্যের শিকার হয়েছেন এমন তারকাদের মধ্যে আছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা, মেহের আফরোজ শাওন, আজমেরী হক বাঁধন, প্রার্থনা ফারদিন দীঘি, তানজিম সাইয়ারা তটিনী, বিদ্যা সিনহা সাহা মীম, তাসনিয়া ফারিণ, মাহিয়া মাহি, শবনম বুবলী, অপু বিশ্বাস, পরী মণি, নাজনীন নাহার নিহা, রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা, মেহজাবীন চৌধুরী ও শবনম ফারিয়া।
নারী এক্টিভিস্টদের জড়িয়ে ক্রমাগত অপপ্রচার
দেশে গত বছর জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময়ে আলোচিত এক নাম হয়ে ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতনের সময়টায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে এই সংগঠন। সংগঠনটিকে জড়িয়ে পরবর্তীতে নিয়মিতই ভুয়া তথ্যের প্রচার লক্ষ্য করা গেছে। এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারী এক্টিভিস্টদের মধ্যে অন্তত আটজনকে জড়িয়ে চলতি বছর ৩২টি অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে ফারজানা সিথিকে জড়িয়েই ছড়িয়েছে ১৫টি ভুয়া ভিডিও। এর মধ্যে একটি বাদে বাকিগুলো ছিল এআই এবং ডিপফেক পদ্ধতির ব্যবহারে তৈরি ভিডিও ফুটেজ। এছাড়া, প্লাটফর্মটির সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমাকে জড়িয়ে সাতটি অপতথ্য ছড়িয়েছে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জুলাই আন্দোলনকারী নাফসিন মেহনাজকে জড়িয়ে পাঁচটি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার, যার মধ্যে তিনটিতেই ছিল নাফসিনের আপত্তিকর দৃশ্যের দাবি। এর বাইরে সামিয়া মাসুদ মম, তিলোত্তমা ইতি, সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি, এথিনা তাবাসসুম মীম ও আনিকা তাসনিমকে জড়িয়ে একটি করে অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে।

এসবের বাইরে এ বছর ভুয়া নাম ব্যবহার করে সমন্বয়ক ও জুলাইযোদ্ধা পরিচয়ের মাধ্যমে ভিন্ন নারীর ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে অপপ্রচার দেখা গেছে হরহামেশাই। এমন ১৬টি ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে। এসব ঘটনা ছড়ানো ছবি-ভিডিওর সাতটিই ছিল ভারতের, তিনটি ছিল ভিন্ন আরো তিন দেশের। বাকিগুলো বাংলাদেশেরই, তবে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার৷ এদের কেউই সমন্বয়ক নয়, এমনকি সম্পৃক্ত নয় রাজনীতির সাথেও।
নারীরা কীভাবে সমন্বিত রাজনৈতিক অপপ্রচারের বলি হন তারও উদাহরণ দেখা গেছে এ বছরই। গত এপ্রিলে একদিনেই রুবাইয়া ইয়াসমিন নাম দিয়ে এক নারীকে কেন্দ্র করে তাকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে অন্তত পাঁচটি কনটেন্ট ভাইরাল হয়। এসব কনটেন্টের অন্তত একটি ছিল আপত্তিকর। এই নারীকে সে সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেত্রী হিসেবেও প্রচার করে দেশে বর্তমানে সক্রিয় থাকা অন্য প্রায় সকল দলের কর্মী-সমর্থকরা। এমন সমন্বিত অপতথ্যের প্রচার বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরলই বলতে হয়। রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে জানতে পারে, এই নারীর নাম রুবাইয়া ইয়াসমিন নয় এবং এই নামে কোনো সমন্বয়কও নেই। যুথী নামের এই নারী কোনো রাজনীতির সাথেও সম্পৃক্ত নন।
ধর্ষণের অপতথ্যে নারী
বাংলাদেশে চলতি বছর নারীদের জড়িয়ে ছড়ানো ভুয়া তথ্যগুলোর মধ্যে অন্তত ৪৪টি ঘটনায় ধর্ষণের বিষয় জড়িত ছিল। এসব অপতথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৪৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষণের কোনো আলামতই ছিল না। তবু ধর্ষণের ঘটনা হিসেবে দাবিগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ফেব্রুয়ারিতে দুইটি দাবি নজরে এসেছে রিউমর স্ক্যানারের, যার একটিতে দাবি করা হচ্ছিল যে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ববর্তী ৬৫ ঘন্টায় বাংলাদেশে ৭২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় মূল ধারার অন্তত দুইটি গণমাধ্যমকেও (জনকণ্ঠ, মানবকণ্ঠ) একই দাবি প্রচার করতে দেখা যায়। এমনকি কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও দাবিটি প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের সে সময়ের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত সময়সীমায় অন্তত আটটি ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল, যা আলোচিত দাবি থেকে প্রায় আট গুণ কম। অন্য যে দাবিটি ছড়ায়, তাতে একটি অনলাইন গণমাধ্যমের ফটোকার্ড সম্পাদনা করে প্রচার করা হয় যে, ৭৩ ঘন্টায় ১০০ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই দাবিরও কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি।

দেশে প্রচার হওয়া ধর্ষণ সংক্রান্ত অপতথ্যের প্রায় ২০ শতাংশ ঘটনা অনুসন্ধানের পর জানা যায় যে এমন ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেইনি। বরং ভারতসহ অন্যান্য দেশের ঘটনাকে বাংলাদেশের বলে দাবি করা হচ্ছিল। এছাড়া, প্রায় ১৪ শতাংশ অপতথ্যে ধর্ষণের পুরোনো সংবাদ, ভিডিও, ছবিকে চলতি বছরের বলে দাবি করা হয়েছে।
দেশ ও দেশের গন্ডি পেরিয়ে ওপারের গণমাধ্যমেরও আছে দায়
গেল নয় মাসে নারীদের জড়িয়ে অপতথ্যের প্রচারের তালিকায় এসেছে বাংলাদেশ ও ভারতের একাধিক মূল ধারার গণমাধ্যমের নাম। ১৩টি ঘটনায় দেশের গণমাধ্যমগুলোয় নারীকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্যের প্রচার লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার। এসব ঘটনার প্রায় ৫৪ শতাংশই রাজনৈতিক। ডাকসু এবং জাকসু নির্বাচন ইস্যুতে নারীদের জড়িয়ে যেমন ভুয়া তথ্যের প্রচার ছিল তেমনি রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের নারী নেত্রীদের (শেখ হাসিনা, তাসনিম জারা, সামান্তা শারমিন) জড়িয়েও ভুয়া তথ্য প্রচার করেছে গণমাধ্যমগুলো।
বাংলাদেশের নারীদের জড়িয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্তত একটি করে অপতথ্য প্রচার করেছে ভারতের মূল ধারার তিনটি সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টিভি, এশিয়ানেট নিউজ ও টিভি নাইন বাংলা। এসব অপতথ্যের কোনোটিতে মুসলিম নারীকে হিন্দু এবং মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক হিজাব পরিধারের জন্য স্লোগান তোলা সংক্রান্ত দাবির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কোনোটিতে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা দিতে এসে ভারতীয় ডাক্তারের হয়রানির শিকারের ভুয়া দাবির মাধ্যমে জাতিগত দ্বন্দ্ব তৈরির অপচেষ্টা ছিল।
সাম্প্রদায়িক অপতথ্যে দুই দেশ থেকেই জড়ানো হচ্ছে নারীদের
চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ১৪২টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে প্রায় ৩৭ শতাংশ (৫২টি) ঘটনায় নারীদের জড়ানো হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অপতথ্যগুলো সাধারণত বাংলাদেশ এবং ভারত এই দুই দেশ থেকেই ছড়ানো হয়। রিউমর স্ক্যানারের পর্যালোচনায় দেখা যায়, নারীদের জড়িয়ে ছড়ানো সাম্প্রদায়িক অপতথ্যগুলোর প্রায় ৬৯ শতাংশই (৩৬টি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পরিচয়ধারী অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রচার করা হয়েছে।

নারীদের জড়িয়ে এসব সাম্প্রদায়িক অপতথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ৩১ শতাংশ ঘটনাতেই মুসলিম নারীকে হিন্দু হিসেবে উপস্থাপন করে অপপ্রচার চালানো হয়েছে এবং ৮১ শতাংশ ক্ষেত্রেই এই কাজটি করেছে ভারতীয় পরিচয়ধারী এক্স এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্টগুলো। সাম্প্রদায়িক অপতথ্যগুলোয় এমন কিছু ঘটনাও সামনে এসেছে যেগুলো বাংলাদেশেই ঘটেনি, অথচ দাবি করা হচ্ছিল এগুলো এদেশেরই ঘটনা। প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে ভারতের ভিডিওকে বাংলাদেশের বলে দাবি করা হচ্ছিল যেখানে নারীকেও জড়ানো হয়েছে। ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর বিষয়কে সাম্প্রদায়িক আবহে প্রচারের একাধিক নজির পাওয়া গেছে।
সাধারণ নারীরাও যখন অপতথ্যের লক্ষ্যবস্তু
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের মেয়ের ছবি দাবিতে গত ফেব্রুয়ারিতে দুই দফায় আপত্তিকর দৃশ্য দাবির দুইটি ভুয়া কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সরকার সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি না হয়েও সরকারে থাকা ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য বা কথিত সদস্যদের নামে এমন প্রচারণা আরো একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদর সাথে দুই দফায় দুই ভিন্ন নারীর এআই ছবি এবং বিয়ের একটি ভুয়া ছবি প্রচার করা হয়েছে।
শুধু সরকারে নয়, রাজনীতির ময়দানেও এমন উদাহরণ অহরহ। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ প্রায় সব দলের ক্ষেত্রেই এমন অপতথ্যের প্রচার দেখা গেছে। যেমন, শপিংমলে হাসনাত আবদুল্লাহর সাথে এক নারীর অন্তরঙ্গ মুহুর্তের দৃশ্য, বরিশালে বিএনপি নেতা নারীসহ আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়েছেন, ঢাকা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীরের মেয়ের লন্ডনের বিলাসী জীবনযাপনের দৃশ্য, শেখ মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মোমবাতি হাতে ধানমন্ডি ৩২ এ শতবর্ষী জননী এমন সব দাবির প্রতিটিতেই ভারতের ঘটনাকে বাংলাদেশের দাবিতে প্রচারের নজির পাওয়া গেছে।
জুলাই আন্দোলনের শেষদিকে এসে গত বছরের (২০২৪) ০৪ আগস্টে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলায় ১৫ পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দাবি করা হয় নিহতদের তালিকায় একজন সন্তানসম্ভবা নারী পুলিশ সদস্যও ছিলেন। এই দাবির একজন নারী পুলিশের ছবিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের যাচাইয়ে দেখা যায়, সেদিন নিহতদের তালিকায় কোনো নারী পুলিশ সদস্যই ছিলেন না। আর যে নারীর ছবি প্রচার করা হচ্ছিল তিনি এনায়েতপুরে নয়, সে সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন। এই দাবিটি এ বছর ফের তিন দফায় প্রচার হয়েছে।
সম্প্রতি প্রথম সারির একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ পাঠিকা সারাহ মেহজাবিনের নাম-ছবি দিয়ে ফেসবুক ও এক্সে একাধিক ভুয়া আইডি-পেজের সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানারের ইনভেস্টিগেশন ইউনিট। এসব অ্যাকাউন্টে সারাহর ছবি ব্যবহার করে নিয়মিত বিতর্কিত ও ভুয়া দাবি প্রচার করা হচ্ছিল। এর পেছনে মূল হোতা ছিলেন মো: শিলন রেজা বিশ্বাস নামে ঢাকার এক ব্যক্তি। আই ইউনিটের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ হয়েছে, থেমেছে অপপ্রচারও।
একইরকম বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক নানা গুজবের সাথে সাধারণ নারীদের জড়ানো হয়েছে, চালানো হয়েছে অপপ্রচার।
সচেতনতাই একমাত্র সমাধান?
নারীদের আপত্তিকর কনটেন্ট ব্যবহার করে রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে হেনস্তার ঘটনাগুলো চিন্তার কারণ হয়ে ওঠছে। এই প্রবণতা শুধু ব্যক্তি নারীকে নয়, নারী পরিচয়কেই হেয় করছে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা, সম্মান ও পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে রাজনীতি এবং বিনোদন ক্ষেত্রে নারীরা অপতথ্যের সমন্বিত ক্যাম্পেইনের শিকার হচ্ছেন। হেনস্তার এসব ঘটনা সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের জীবনে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে। ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যে দেখা গেছে, এসব অপতথ্যের উৎস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুয়া আইডি বা ফেক পেজ, যেগুলোর রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। এআই কনটেন্টের মাধ্যমে ভুয়া ছবি-ভিডিওর প্রচারও উদ্বিগ্ন করে তুলছে ভুক্তভোগীদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক বিষয়টিকে খুবই অনৈতিক হিসেবে দেখছেন। রিউমর স্ক্যানারের সাথে আলাপকালে তিনি বলছিলেন, “তথ্যকে ম্যানিপুলেট করার এই যে প্রবণতা এটা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, দুশ্চিন্তায় ফেলছে, মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে যাচ্ছে। জীবনযাত্রাকেও বদলে দিচ্ছে। এটার কারণে যে প্রভাব এটা নিয়ে আমরা চিন্তিত না। কারণ দুর্ঘটনার মতো এটার সরাসরি প্রভাবটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। দুর্ঘটনা যেটা চোখের সামনে দেখা যায়, এটাকে সেভাবে দেখা যায় না। কারণ এটা মানুষকে মনের দিক দিয়ে প্রভাবিত করছে। সুতরাং আমরা এটার ব্যাপারে খুব একটা সিরিয়াস না। আমরা ধরে নিচ্ছি, চলছে চলতে থাকুক। কিন্তু এটা তো এভাবে চলতে পারে না। এটাকে কঠোরভাবে দেখা উচিত। আইনের দিক দিয়েও এটির বিষয়ে কঠোর হওয়া উচিত।”
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় নারীদের জড়িয়ে প্রচার হওয়া অপতথ্যগুলোয় এআই দিয়ে তৈরি বা সম্পাদিত কনটেন্টের মাধ্যমেই অপপ্রচার বেশি হচ্ছে। প্রযুক্তির সহজলভ্যতার যুগে এসে এআই এর এই ধরণের অপব্যবহার রোধ করা চ্যালেন্জ বলে মনে করেন কিনা এমন প্রশ্নে অনেকটা দ্বিমতের সুরে এই শিক্ষিকা বলছিলেন, “এআই সহজলভ্যই হওয়া উচিত। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই বিষয়টা হওয়া ভালো।” তানিয়ার মতে, এআই এর যে অপব্যবহার তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে একটা নীতিমালা হওয়া উচিত এবং তা মানুষকে জানানো উচিত। “এই নীতিমালার মাধ্যমে আপনি এভাবে এটাকে ব্যবহার করবেন এবং না করলে পরে আপনার জন্য শাস্তি এটা, এই ধরণের বিষয়গুলো থাকবে।” তানিয়া হক মনে করেন, সবকিছুর আগে মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। অপতথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি যে অনৈতিক এবং একই সাথে অপরাধও তা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে মানুষকেই।
কাজের পদ্ধতি
এই পরিসংখ্যানটি প্রকাশের নিমিত্তে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ক্যাটাগরিভিত্তিক তথ্যগুলো নথিভুক্ত করে পর্যালোচনা করার পর প্রাপ্ত ফলাফল বিভিন্ন উপায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকার।
Feature Design: Md. Shahajalal Mia