গত ০১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকার বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে নারীর হিস্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ উক্ত আলোচনা সভায় বক্তারা নানা বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। এরই প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে দাবি প্রচার করা হয়, “সংগঠনের [জাতীয় নাগরিক কমিটি] মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেছেন, ফ্যাসিবাদী সরকার ১৫ বছরে নারী নেতৃত্ব তৈরির পুরো প্রক্রিয়াকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। নারীকে নিয়ে রাজনীতির প্রচলিত সংস্কৃতির পরিবর্তন করা হবে। সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়গুলো এখন আলোচনায় আসা উচিত।”

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদন দেখুন : প্রথম আলো।
উল্লেখ্য যে, প্রথম আলো তাদের প্রতিবেদন পরবর্তীতে সংশোধিত করেছে।
একই দাবিতে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ক্যাম্পাস টাইমস প্রেসও ফটোকার্ড প্রচার করেছে যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে তারা ফটোকার্ডটি সরিয়ে নিয়ে এ বিষয়ে নতুন ফটোকার্ড প্রচার করে।

উক্ত দাবিতে ক্যাম্পাস টাইমসের ফটোকার্ডসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নেটিজেনদের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ‘সম্পদে নারীর সমান অধিকার’ এর কথা বলেননি বরং তিনি নারীদের সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিতের কথা বলেছেন। ‘সমান অধিকার’ শব্দগুচ্ছ তিনি উল্লেখ করেননি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় নাগরিক কমিটির ফেসবুক পেজে গত ০১ ফেব্রুয়ারিতে “গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে নারীর হিস্যা।” শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ফেসবুক লাইভ ভিডিও সম্প্রচার পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনের বক্তব্যও পাওয়া যায়।
তার বক্তব্যে তিনি বলেছেন : “[…] ফিমেল এম্পাওয়ারমেন্ট এর সাথে অবশ্যই এখানে সম্পত্তির অধিকার জড়িত। আমাদের দেশে এই মুহুর্তে নারীদের সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করার জন্য যে আইন ব্যাবহার করা হয় সেটা একচুয়ালি পাকিস্তান আমলের আইন। পাকিস্তান আমলের আইন দিয়ে আমরা এখনো.. পাকিস্তান আমলের আইন দিয়ে আমরা শ্রম আইন করেছি, ১৮৬১ সালের ব্রিটিশ আইন দিয়ে পেনাল কোড এবং পরবর্তীতে পুলিশ আইন সেটাও ১৮৬১ সালের। নারীদের অধিকার রক্ষার জন্য যে আইন সেটাও পাকিস্তান আমলের।.. নারীদের সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করা, পাওয়ার এক্সারসাইজ এর জায়গাগুলোতে নারীদের কি জায়গা থাকতে পারে এ জায়গাগুলো নিয়ে কথা বলা , সামনের দিনে এই আলাপগুলো আসা জরুরি।..”
তার উক্ত বক্তব্যে ‘সম্পদে নারীর সমান অধিকার’ এর কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, সামান্তা শারমিন মূলত নারীদের সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিতের কথা বলেছেন। একইসাথে বর্তমান আইনটি (মুসলিম পারিবারিক আইন – ১৯৬১) পাকিস্তানের আইন বলে উল্লেখ করেছেন। বিদ্যমান এই আইনের সমস্যা কিংবা এই আইনের কেমন সংস্কার চান, এখানে তিনি সমতা চান কিনা সে বিষয়ে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি। তবে এটি নিশ্চিত যে তিনি তার বক্তব্যে ‘সম্পদে নারীর সমান অধিকার’ শব্দগুচ্ছ উল্লেখ করেননি।
সুতরাং, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ‘সম্পদে নারীর সমান অধিকার’ এর কথা বলেছেন শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- জাতীয় নাগরিক কমিটি – Jatiya Nagorik Committee – গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে নারীর হিস্যা।