রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসা সহায়তা দিতে ঢাকায় এসেছে ভারতের চার সদস্যের প্রতিনিধিদল। গত ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় ভারতীয় প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় পৌঁছে। এরই প্রেক্ষিতে গত রাতে DrPuja Mukherjee নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নিজেকে মাইলস্টোনের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিতে আসা ভারতীয় চিকিৎসক হিসেবে উপস্থাপন করে দেওয়া এক ব্যক্তির পোস্ট নজরে আসে রিউমর স্ক্যানারের। পোস্টে দাবি করা হয়, ঢাকা মেডিকেলে দায়িত্ব পালনের সময় তৃষ্ণা লাগলে তিনি পানি কিনতে বাইরে যান এবং দোকানদার তার কাছে ৪০ টাকার পানি ৩০০ টাকা দাবি করে! এই পোস্টে দাবি করা হয়, “হাসপাতালের কিছু ডাক্তারের ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছে আমরা তাদের বোঝা, অথচ কাজের সব সময় আমরাই আছি পাশে।”

অ্যাকাউন্টটি থেকে দেওয়া পোস্টটি দেখুন এখানে।
একই দাবির এক্স পোস্ট দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডা. পূজা মুখার্জি নামের কেউ ভারত থেকে আসা চিকিৎসক দলে কেউ নেই। ডা. পূজা মুখার্জি নামে পরিচালিত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ভুয়া। ভিন্ন অন্তত দুই ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে এই অ্যাকাউন্টটি পরিচালিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের ফেসবুক পেজে গত ২৪ জুলাইয়ের এক পোস্ট থেকে জানা যায়, ভারতের দুটি শীর্ষস্থানীয় বার্ন ইনজুরী চিকিৎসা হাসপাতাল – রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল এবং নয়াদিল্লির সফদরজং হাসপাতাল – থেকে দুইজন ভারতীয় বিশেষজ্ঞ এবং একজন নার্সিং সহকারীর একটি দল ২১ জুলাই ঢাকায় বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় সহায়তা করার জন্য ঢাকায় অবতরণ করেছে। এই পোস্ট থেকে উক্ত দলের সদস্যদের নাম জানা যায়নি। পরবর্তীতে আরো অনুসন্ধান করে ভারতীয় দুই গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও আউটলুক ইন্ডিয়ায় উক্ত দলের সদস্যদের নাম পাওয়া যায়। দলে রয়েছেন দুইজন বার্ন বিশেষজ্ঞ—আরএমএল হাসপাতালের ডা. রাম মোহন এবং সফদারজং হাসপাতালের ডা. পিয়ুষ থায়াল। এছাড়া, আরএমএল হাসপাতালের নার্স পুনীত শর্মা ও অনিতা ভার্মাও একই দলে রয়েছেন।

অর্থাৎ, ভারতীয় চিকিৎসক দলটিতে ডা. পূজা মুখার্জি নামে কেউ নেই। পরবর্তী অনুসন্ধানে DrPuja Mukherjee নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি বিশ্লেষণ করে দেখে রিউমর স্ক্যানার। অ্যাকাউন্টটি ২০২৪ সালের ০৮ এপ্রিল চালু করা হয়। অ্যাকাউন্টে থাকা ছবিগুলো যাচাই করে দেখা যায়, এসব ছবি ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিদের। অ্যাকাউন্টে পায়েল দাস এবং পূজা দাস সাহা নামের দুটি ভিন্ন ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট এর পুরোনো ছবি সংগ্রহ করে নিজের বলে পোস্ট করেছেন। কিছু ছবি এআই দিয়ে পরিবর্তন করারও চেষ্টাও হয়েছে।

ভারতীয় ফ্যাক্টচেকার ঋদ্ধীশ দত্তের মতে, অ্যাকাউন্টটি বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তি দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, “কোনও ভারতীয় বাঙালি পানি শব্দ ইউস করে না। জল বলে। এটা একটা বড় উদাহরণ হিসাবে দেওয়া যেতে পারে হ্যান্ডলটা যে বাংলাদেশের কেউ পরিচালনা করছে তার।”
সুতরাং, উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ডা. পূজা মুখার্জি নামে ভারতীয় চিকিৎসক বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা দিতে এসে হয়রানীর শিকার হয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।