সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “হিজাব! হিজাব!” স্লোগান দিতে দেখা যায় এমন একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম শিক্ষার্থীরা মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক হিজাবের দাবি করেছে।

উক্ত দাবির এক্স পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
একই দাবির ইউটিউব ভিডিও দেখুন এখানে।
একই দাবির ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে।
একই দাবির থ্রেডস পোস্ট দেখুন এখানে।
একই দাবির ইনস্টাগ্রাম ভিডিও দেখুন এখানে।
একই দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন ইন্ডিয়া টিভি।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা এই ভিডিওতে হিজাব বাধ্যতামূলক করার দাবিতে “হিজাব, হিজাব” স্লোগান দেননি। বরং, পূর্ববর্তী একটি ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবাদ হিসেবে তারা এই স্লোগান তুলেছেন।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পর ১০ সেপ্টেম্বর সকালে ফলাফল ঘোষণার সময় একজন নির্দিষ্ট প্রার্থীর জয় ঘোষণার পরই “হিজাব, হিজাব” স্লোগান দেওয়া হয়। উক্ত প্রার্থী ছিলেন হিজাব-নিকাব পরিহিত ছাত্রী সাবিকুন্নাহার তামান্না, যিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের অধীনে কার্যনির্বাহী সদস্য পদের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
ডাকসু নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিনেই ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা এবং ছবি বিকৃত করার ঘটনা ঘটে। সেদিনই নির্বাচনী ফেস্টুনে প্রদর্শিত সাবিকুন্নাহার তামান্নাসহ বেশ কয়েকজন প্রার্থীর ছবি বিকৃত করা হয়েছিল।
২৬শে আগস্ট এক বিবৃতিতে, ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট জানায়, “বোরকা পরা একজন নারী শিক্ষার্থীর ছবিকে বিকৃত করার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়—এখনো খুনি হাসিনার আমলের ঘৃণা, ইসলামোফোবিয়া ও হিজাবোফোবিয়ার কুৎসিত রাজনীতি টিকে আছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং ধর্মীয় প্রতীকের অবমাননার সামিল।”
৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে সাবিকুন্নাহার তামান্না সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সদস্য পদে নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে যখন তার নাম এবং ভোট গণনা ঘোষণা করা হয়, তখন তিনি উঠে দাঁড়ান এবং কিছুক্ষণ পরেই উপস্থিত শিক্ষার্থীরা “হিজাব! হিজাব!” স্লোগান দিতে থাকেন।
“হিজাব” স্লোগানের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে নেটিজেনরা বলছেন, “হিজাব পরার জন্য উপহাসের শিকার হওয়া সাবিকুন্নাহার তামান্না ১০,০০০ এরও বেশি ভোট পেয়ে প্রথম সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এই কারণেই শিক্ষার্থীরা ‘হিজাব! হিজাব!’ স্লোগান দিচ্ছে।”
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট থেকে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত এসএম ফরহাদ সাংবাদিকদের সাথে হিজাব স্লোগান সম্পর্কে কথা বলেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: “সাবিকুন্নাহার তামান্নার ক্ষেত্রে কেন এটা (হিজাব স্লোগান) ঘটলো? চারুকলায় তার ছবিতে শিং এঁকে দিয়ে তার হিজাব বিকৃত করা হয়েছিল। সেখান থেকে একটা ভয়েস রেইজ করা হয়েছিল যে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাবফোবিয়া চলে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যিনি হিজাব পরতে চান তাকে আপনি পেছন থেকে এসে গোপনে ছবি বিকৃত করবেন, বিভাগে হেনস্থা করবেন, এই জিনিসগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে চলা উচিত নয়। সেই ভয়েসটা শিক্ষার্থীরা রেইজ করেছেন। ওই স্পেসিফিক ইস্যুতে। সবকিছু জানা স্বত্ত্বেও সেটাকে বিদেশি মিডিয়া কেন উপস্থাপন করেছে, এটা তাদের এজেন্ডার বিষয়। কিন্তু আমাদের দেশের মিডিয়ার ভাইয়েরা সবই দেখেছেন। তারা সত্যটাই উপস্থাপন করেছেন।”
অর্থাৎ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের ভেতরে “হিজাব” স্লোগান সুনির্দিষ্ট একজন প্রার্থীর বিজয় ঘোষণার পর হিজাব-ভীতির প্রতিবাদ হিসেবেই হয়েছিল। উক্ত ব্যক্তির নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টারে থাকা তার ছবি পূর্বে বিকৃত করা হয়েছিল। হিজাব বাধ্যতামূলক করার দাবির সাথে এই স্লোগানের তাই কোনো সম্পর্ক ছিল না এবং উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এমন কোনো দাবিও করেনি।
সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম শিক্ষার্থীরা মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক হিজাব দাবি করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Jagonews24: Facebook Video
- Ekhon Tv: হিজাব, হিজাব স্লোগান নিয়ে যা বললেন এস এম ফরহাদ