বিশ বছর পর সাপের কঙ্কাল পাওয়ার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, “পৃথিবীর সব থেকে বড় সাপের কঙ্কাল……”  শীর্ষক সহ সমজাতীয় শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম টিকটকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে একটি ভিডিওর (একইসাথে সংযুক্ত দুটি ভিডিওর অংশ) প্রথম অংশকে দাবি করা হচ্ছে ২০০২ সালে জীবিত অবস্থায় সাপটির ভিডিও এবং অন্য অংশটিকে দাবি করা হচ্ছে বিশ বছর পরে ২০২২ সালে সেই (পূর্বে দেখানো জীবিত) সাপটির কঙ্কাল।

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত প্রথম ভিডিওটি জীবিত সাপের বাস্তব ভিডিও নয় এবং সাপের কঙ্কালের ভিডিওটি বাস্তব কঙ্কালের নয় বরং জীবিত সাপের ভিডিওটি কম্পিউটার দ্বারা নির্মিত দৃশ্য এবং কঙ্কালের ভিডিওটি একটি ভাস্কর্যের দৃশ্য।

১ম অংশের ভিডিওটি যাচাই

রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, ছবি এবং ভিডিও শেয়ারিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে borisao_blois নামক একটি প্রোফাইলে হুবহু দাবির ভিডিওটিসহ একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টের ক্যাপশনে (হ্যাশট্যাগ দিয়ে) উল্লেখ করা হয়, ভিডিওটি একটি সিজিআই (CGI) বা কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজারি। অর্থাৎ ভিডিওটি কম্পিউটার দ্বারা নির্মিত একটি দৃশ্য, বস্তব ভিডিও নয়।

পাশাপশি, শর্ট ভিডিও শেয়ারিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একই ব্যবহারকারী borisao_blois নামক একটি প্রোফাইলে হুবহু দাবির ভিডিওটিসহ আরও একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টের ক্যাপশনে (হ্যাশট্যাগ দিয়ে) উল্লেখ করা হয়, ভিডিওটি একটি সিজিআই (CGI) বা কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজারি। অর্থাৎ ভিডিওটি কম্পিউটার দ্বারা নির্মিত একটি দৃশ্য, বাস্তব ভিডিও নয়।

এছাড়াও, টিকটকে জীবিত সাপের দাবি’র একটি ভিডিওতে borisao_blois ইউজারনেমটি খুঁজে পাওয়া যায়।

২য় অংশের ভিডিওটি যাচাই

রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অনলাইন ম্যাগাজিন এবং ভ্রমণ সংস্থা ‘Atlasobscura’ এর ওয়েবসাইটে ‘Serpent D’Océan’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি ফ্রান্সের ন্যানটেস শহরের সেন্ট ব্রেভিন লেস পিনস উপকূলে অবস্থিত ‘সার্পেন্ট ডি ওশান’ নামের একটি ভাস্কর্য। একটি শিল্প প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে চীনা-ফরাসি শিল্পী হুয়াং ইয়ং পিং ২০১২ সালে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করে।

পাশাপাশি, ফ্রেঞ্চ ভাষার সংবাদপত্র ‘20 minutes’ এর ওয়েবসাইটে গত মে মাসের ২৯ তারিখে গুগল স্ট্রিট ভিউ ভার্সনে বিখ্যাত “সার্পেন্ট ডি ওশান” বাস্তবে দেখতে আরও সুন্দর ( ভাবানুবাদ)  শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে  ‘সার্পেন্ট ডি ওশান’ কে ১৩০ মিটারের একটি শিল্পকর্ম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

এছাড়াও, গুগল ম্যাপসেও উক্ত ভাস্কর্যটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে ভাস্কর্যটি সম্পর্কে লেখা রয়েছে, “Giant skeleton sculpture shaped like a slithering serpent, by Chinese-French artist Huang Yong Ping.” যা বাংলা ভাষায় ভাবানুবাদ করলে হয়ঃ চাইনিজ-ফরাসি শিল্পী হুয়াং ইয়ং পিং-এর তৈরি একটি সাপের কঙ্কালের বিশাল ভাস্কর্য।


মূলত, ইন্সাটাগ্রাম ও টিকটক ব্যবহারকারী borisao blois নামক একজনের কম্পিউটার দ্বারা নির্মিত সাপের ভিডিওকে ২০০২ সালে জীবিত একটি দৈত্যাকার সাপের আসল ভিডিও হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। একইসাথে ২০১২ সালে চাইনিজ-ফরাসি শিল্পী হুয়াং ইয়ং পিং-এর তৈরি ফ্রান্সের ন্যানটেস শহরের উপকূলে অবস্থিত ‘সার্পেন্ট ডি ওশান’ নামের একটি ভাস্কর্যকে ২০০২ সালের জীবিত সাপটির বাস্তব কঙ্কাল দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, এর আগেও কম্পিউটার দ্বারা নির্মিত দৃশ্য সত্য হিসেবে প্রচার হয়েছে এমন কয়েকটি দাবি ফ্যাক্টচেক করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

উল্লেখ্য, ভাস্কর্যকে বাস্তব হিসেবে দাবি-ও ফ্যাক্টচেক করেছে রিউমর স্ক্যানার। মিশরের কায়রো বিমানবন্দরে অবস্থিত একটি ভাস্কর্যকে মহানবী (সা.) কর্তৃক ১৪০০ বছর পূর্বে বেঁধে রাখা পাথর দাবিতে প্রচার করা হলে দাবিটিকে ভুয়া শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ। 

সুতরাং, কম্পিউটার নির্মিত ভিডিওকে বাস্তব সাপ এবং কঙ্কালের ন্যায় নির্মিত একটি ভাস্কর্যকে বাস্তব সাপের কঙ্কাল দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img