সম্প্রতি, “বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলের আলোয় সিজার অপারেশনে মা ও নবজাতকের মৃত্যু” শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টেলিভিশনের একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে এই ঘটনাটি বাংলাদেশের।
যমুনা টেলিভিশনের ফটোকার্ড যুক্ত করে উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলের আলোয় সিজার অপারেশনে মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ঘটনাটি ভারতের মুম্বাইয়ের।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ফটোকার্ডটিতে বেসরকারি ইলেকট্রনিক টেলিভিশন যমুনা টেলিভিশনের লোগো রয়েছে এবং প্রচারের তারিখ হিসেবে ০৪ মে ২০২৪ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে এসব তথ্যের সূত্র ধরে ফেসবুকে ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে আলোচিত ফটোকার্ডটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ফটোকার্ড পোস্টের মন্তব্য ঘরে এসম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনের (আর্কাইভ) উল্লেখ পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের মুম্বাইয়ের বৃহন্মুম্বই পৌরসভার (বিএমসি) ‘সুষমা স্বরাজ মেটারনিটি হোম’ নামক একটি হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোনের লাইটে হয় অস্ত্রোপচার! তবে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় গর্ভে থাকা শিশুর সঙ্গে মারা যায় প্রসূতিও। নিহত ব্যক্তি খুসরুদ্দিন আনসারি স্ত্রী সাহিদুন।
এছাড়া একই বিষয়ে শিরোনামে ভারতের কথা উল্লেখ না করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশীয় গণমাধ্যম ইনকিলাব, যুগান্তর, বাংলা নিউজ২৪, চ্যানেল ২৪, কালবেলা, ডেইলি বাংলাদেশ, দেশ রূপান্তর, জাগো নিউজ এবং সময় টিভি।
প্রতিবেদনের শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করায় বিষয়টি নিয়ে নেটিজেনদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বিস্তারিত প্রতিবেদন না পড়েই তারা বিষয়টিকে বাংলাদেশের মনে করে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এর ওয়েবসাইটে গত ০২ মে “Mumbai Hospital Carries Out Delivery Using Phone Torch, Mother And Baby Die”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনটিতে ঘটনাটি ভারতের মুম্বাইয়ের বৃহন্মুম্বই পৌরসভার (বিএমসি) ‘সুষমা স্বরাজ মেটারনিটি হোম’ নামক একটি হাসপাতালের বলে উল্লেখ করা হয়৷
অর্থাৎ, বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলের আলোয় সিজার অপারেশনে মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। তবে এসম্পর্কিত খবরের শিরোনামে স্থানের নাম না উল্লেখ করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে নেটিজেনরা বিভ্রান্ত হয়েছেন।
পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এসংক্রান্ত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, ভারতের মুম্বাইয়ের বৃহন্মুম্বই পৌরসভার (বিএমসি) ‘সুষমা স্বরাজ মেটারনিটি হোম’ নামক একটি হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোনের লাইটে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় গর্ভে থাকা শিশুর সঙ্গে মারা যায় প্রসূতিও। উক্ত বিষয়ে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ফটোকার্ড ও গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করে সংবাদ প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিষয়টিকে বাংলাদেশের ঘটনা মনে করে ফেসবুকে প্রচার করেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতের একাধিক ঘটনা বাংলাদেশের দাবিতে প্রচারিত হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, ভারতের মুম্বাইয়ে একটি হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোনের লাইটে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় মা ও নবজাতক মারা যাওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশে স্থানের নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Jamuna Television- Facebook Post
- Jamuna Television- মুম্বাইয়ের হাসপাতালে মোবাইলের আলোয় অস্ত্রোপচার, মা ও নবজাতকের মৃত্যু
- NDTv- Mumbai Hospital Carries Out Delivery Using Phone Torch, Mother And Baby Die
- Rumor Scanner’s Own Analysis