সম্প্রতি “আসাম বাংলাদেশ সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা! বাংলাদেশে চলমান হিন্দু গণত্যার প্রচেষ্টার জেরে সমগ্র বারাক থেকে শুরু করে গৌহাটি অবদি আসামের সর্বস্তরের হিন্দুরা জেগে ওঠেছে!ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত।” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাবিকৃত তথ্যের সাথে আলোচিত ছবিটির কোন সম্পর্ক নেই বরং ছবিটি বিজেপির কর্নাটকের ২০১৯ সালের একটি নির্বাচনী জনসভার।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে ২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি টুইটার একাউন্টে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টুইটার একাউন্টে একই দিনে প্রকাশিত একই স্থানের ভিন্ন ভিন্ন কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
This mega rally of Modi ji is attended by more than 6 Lakh people. Landslide victory of all BJP candidates in coastal Karnataka is guaranteed.#ModiInMangalurupic.twitter.com/kG833ZnKpB
মূলত, ভারতের লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে ২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিলে কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোরের নেহেরু ময়দানে একটি জনসভার আয়োজন করে বিজেপি। সেসময়ে নরেন্দ্র মোদি সেই জনসভায় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। জনসভাটি বিজেপির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে স্ট্রিম করা হয়েছিল।
অধিকতর যাচাইয়ের জন্য আমরা গুগল ম্যাপসে থাকা নেহেরু ময়দানের ছবির সঙ্গে ২০১৯ সালের বিজেপির জনসভার এই ছবিটির পাশাপাশি তুলনা করলে ছবি দুটিতে থাকা বস্তুর মিল পাওয়া যায়।
এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে আসামের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা নিয়ে কোন খবর পাওয়া যায়নি। এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত দেশীয় এবং ভারতের কোন সংবাদমাধ্যমেও এধরণের কোন খবর প্রকাশিত হয়নি।
অর্থাৎ, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এর কর্ণাটকের জনসভার দুই বছর পুরোনো একটি ছবি ব্যবহার করে বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে আসামের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনার দাবি করা হচ্ছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]
Claim Review: আসাম বাংলাদেশ সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা! বাংলাদেশে চলমান হিন্দু গণত্যার প্রচেষ্টার জেরে সমগ্র বারাক থেকে শুরু করে গৌহাটি অবদি আসামের সর্বস্তরের হিন্দুরা জেগে ওঠেছে!
সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীতে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। আর এই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ইন্টারনেটে নানা ধরণের গুঞ্জন এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দেখা যায়। আমাদের এই ফ্যাক্ট ফাইল প্রতিবেদনে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সরল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করবো।
জলবায়ু পরিবর্তন কি?
কোনও একটি জায়গায় বছরের পর বছর ধরে আবহাওয়ার যে গড়-পড়তা ধরন, তাকেই বলা হয় জলবায়ু। আর জলবায়ু পরিবর্তন বলতে ৩০ বছর বা তার বেশি সময়ে কোনো জায়গার গড় জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদী ও অর্থপূর্ণ পরিবর্তন বুঝায়। একটি নির্দিষ্ট এলাকার তাপমাত্রা বা বৃষ্টিপাতের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকে বোঝায়
জলবায়ু পরিবর্তন কেন হয়?
মূলত মানবকূলই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ তবে প্রাকৃতিক কারণেও স্বাভাবিকভাবে জলবায়ুতে কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়। যেমনঃ পৃথিবীর বিভিন্ন গতিশীল প্রক্রিয়া, সৌর বিকিরণের মাত্রা, পৃথিবীর অক্ষরেখার দিক-পরিবর্তন কিংবা সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর অবস্থান।
আধুনিক যুগে প্রবেশের পর মানব সৃষ্ট কলকারখানা, যানবাহন, শীতে ঘর গরম রাখতে তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়ানো ইত্যাদি কর্মকান্ডের ফলে পূর্বের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গিয়েছে।
বর্তমান সময়ে মনুষ্যজনিত গ্রিনহাউজ গ্যাসের ফলে পৃথিবীর উষ্ণায়নকে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অন্যতম কারণ ধরা হয়। যেটি কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধিতে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সর্বোপরি জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে।
বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। ফলে, সেই গাছ যখন কাটা হয় বা পোড়ানো হয়, সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়। গ্রিন হাউজ গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ উনবিংশ শতকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত দুই দশকে বেড়েছে ১২ শতাংশ।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষ, পরিবেশ এবং প্রকৃতির পরিণতিঃ
জলবায়ু পরিবর্তন কখন, কীভাবে ও কতটা ক্ষতি করবে পৃথিবীর তা সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট ভাবে বলা না গেলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফল এখনই পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর এই পরিবর্তনে বদলে যাবে আমাদের জীবন যাপন। পানির সঙ্কট তৈরি হবে। খাদ্য উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়বে।
কোনো কোনো অঞ্চল বিপজ্জনক মাত্রায় গরম হয়ে পড়বে, এবং সেই সাথে সমুদ্রের পানি বেড়ে বহু এলাকা প্লাবিত হবে। ফলে সে সব জায়গা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া – অতিরিক্ত গরমের পাশাপাশি ভারি বৃষ্টি এবং ঝড়ের প্রকোপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকবে। ফলে জীবন এবং জীবিকা হুমকিতে পড়বে। গরীব দেশগুলোতে এসব বিপদ মোকাবেলার সক্ষমতা কম বলে তাদের ওপর এই চরম আবহাওয়ার ধাক্কা পড়বে সবচেয়ে বেশি।
তাপমাত্রা বাড়ায় উত্তর মেরুর জমাট বাধা বরফ এবং হিমবাহগুলো দ্রুত গলে যাচ্ছে। ফলে সাগরের উচ্চতা বেড়ে উপকুলের নিচু এলাকাগুলো ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
Projected changes in mean temperature (top) and mean precipitation (bottom) at 1.5°C (left) and 2°C (middle) of global warming compared to the pre-industrial period (1861–1880), and the difference between 1.5°C and 2°C of global warming (right).
এছাড়া সাইবেরিয়ার মত অঞ্চলে মাটিতে জমে থাকা বরফ গলতে থাকায় বরফের নিচে আটকে থাকা মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে, মিথেনের মত আরেকটি গ্রিনহাউজ গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। পৃথিবীর উষ্ণতা তাতে আরো বাড়বে, এবং বন-জঙ্গলে আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়বে।
প্রকৃতি- তাদের চির চেনা বসতির আবহাওয়া বদলের জেরে অনেক প্রাণী নতুন জায়গায় চলে যাবে বা যাওয়ার চেষ্টা করবে।
কিন্তু জলবায়ুর এই পরিবর্তন এত দ্রুত হারে এখন ঘটছে যে অনেক প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। যেমন, বরফ গলতে থাকায় পোলার বিয়ার বা উত্তর মেরুর শ্বেত ভালুকের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
পাশাপাশি, আটলান্টিক মহাসাগরের স্যামন মাছ বিপন্ন হবে, কারণ যেসব নদীতে ঢুকে তারা ডিম পেড়ে বাচ্চার জন্ম দেয়, সেগুলোর পানি গরম হয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে ভবিষ্যতে যে প্রভাব দেখা দিতে পারেঃ
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিল্প বিপ্লব শুরুর আগে বিশ্বের যে তাপমাত্রা ছিল তার থেকে বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেরাখা গেলে বড় ধরণের বিপদ এড়ানো যাবে। তা না পারলে বিপজ্জনক হয়ে পড়বে প্রকৃতি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবন।
অনেক বিজ্ঞানীর আশঙ্কা যে ভয়ঙ্কর এই পরিণতি ঠেকানোর আর কোনো উপায় নেই এবং চলতি শতকের শেষে গিয়ে বিশ্বের তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। তা হলে এর প্রভাব বিশ্বের একেক জায়গায় একেক রকম হবে:
ব্রিটেন এবং ইউরোপে বৃষ্টিপাতের মাত্রা প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গিয়ে ঘনঘন বন্যা হবে।
সাগরের উচ্চতা বেড়ে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের ছোট অনেক দ্বীপ বা দ্বীপরাষ্ট্র বিলীন হয়ে যেতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো চরম তাপপ্রবাহ অনুভব হবে এবং কৃষিজমি মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে।
আফ্রিকার অনেক দেশে খরার প্রকোপ বাড়তে পারে এবং পরিণতিতে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
পশ্চিমা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খরা পরিস্থিতি হতে পারে, অন্য অঞ্চলে আরও তীব্র ঝড় দেখা দিতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা জার্মানওয়াচ কর্তৃক প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলের পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম।
গত ২০ বছরে বাংলাদেশে ১৮৫টি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বড় দুর্যোগ আঘাত হেনেছে যার মধ্যে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, পাহাড়ধসের মতো দুর্যোগ রয়েছে। এতে ১১ হাজার ৪৫০ জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ৩৭২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশে বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা ও পানি বৃদ্ধি এবং মাটির লবণাক্ততাকে প্রধান প্রাকৃতিক বিপদহিসেবে চিহ্নিত। ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় খুবই সাধারণ ঘটনা। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বসবাসের এই এলাকাগুলো ওই সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের তিন জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও ভোলায় জলবায়ু পরিবর্তন ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। ঘন ঘন দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে এই জেলাগুলো। বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি সংকটকে আরও ঘনীভুত করছে। পানির লবণাক্ততাও একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপকূলের অনেক এলাকা এখন এই সমস্যায় আক্রান্ত। তাছাড়া বৈষ্ণিক উষ্ণায়ন ও বিরুপ ভূমিকা রাখে। অতিরিক্ত গরমের ফলে ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে মানুষের জীবিকা সংকটের মুখে পড়ে। প্রতি পাঁচ বছরে একবার খরার কারণে বিপদে পড়ে বাংলাদেশের মানুষ, আর এক্ষেত্রে দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইউনিসেফের শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) ২০২১ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশের (আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান) শিশুরা জলবায়ু সংকটজনিত প্রভাবের শিকার হওয়ার অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক জর্জ লারিয়া-আদজেই বলেন, “প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার লাখ লাখ শিশুর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সুস্পষ্ট প্রমাণ আমরা পেয়েছি। এই অঞ্চলে খরা, বন্যা, বায়ু দূষণ ও নদী ভাঙনের কারণে লাখ লাখ শিশু গৃহহীন ও ক্ষুধার্ত এবং কোনো স্বাস্থ্যসেবা ও পানিবিহীন অবস্থায় রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ মহামারি একত্রে দক্ষিণ এশিয়ার শিশুদের জন্য একটি উদ্বেগজনক সংকট তৈরি করেছে। এখনই পদক্ষেপ গ্রহণের সময় – আমরা যদি পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার পেছনে বিনিয়োগ করি, তাহলে পরিবর্তনশীল জলবায়ু এবং অবনতিশীল পরিবেশের প্রভাব থেকে তাদের ভবিষ্যতকে আমরা রক্ষা করতে পারি।“
জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে মানুষের ভূমিকাঃ
বনভূমি বা বৃক্ষ কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর মোট অক্সিজেনের ২০ শতাংশ উৎপাদিত হয় ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ খ্যাত আমাজনের চিরহরিৎ বন থেকে। তার থেকেও বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেয় এই বনভূমি। প্রায় ২০০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে ৭০ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশাল এই বনাঞ্চল। তাই যত বেশি সম্ভব সবাইকে গাছ রোপন করতে হবে। একইসঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। গাড়ির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সাইকেল বা জনপরিবহনের ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। তাছাড়া বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহারও জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ভূমিকা রাখতে পারে।
সম্প্রতি “কুষ্টিয়াতে হিন্দু পুলিশ কমকর্তা সৌমেন কুমার রায় প্রকাশ্যে গুলি করে মুসলিম স্বামী-স্ত্রীসহ ৬ বছরের শিশুকে হত্যা করেছে..” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অস্ত্র হাতে থাকা ব্যক্তির নাম সৌমেন কুমার রায় নয় বরং তার নাম আনিচুর রহমান ওরফে আনিচ এবং গুলি ছুড়ার দৃশ্যটি ছয় বছর আগের ভিন্ন ঘটনার।
ছবি যাচাই: রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে ২০১৫ সালের ১৬ আগষ্টে দৈনিক প্রথম আলোর “কুষ্টিয়ায় শোক র্যালি শেষে সংঘর্ষে আ.লীগ কর্মী নিহত” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায় এবং একই ছবি সম্বলিত প্রথম আলোর ফলোয়াপ প্রতিবেদন পাওয়া যায়, দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
মূলত, ২০১৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের র্যালিত পরে দুই গ্রপের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে এবং এই সংঘর্ষে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী আনিসুর রহমান আনিসকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। ফেনসিডিল আত্মসাতের দায়ে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর আনিস কুষ্টিয়ায় স্থানীয় রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপে যোগদান করেন।
তাছাড়া আলোচিত ছবির ব্যক্তিকে পুলিশ কমকর্তা সৌমেন কুমার রায় দাবি করা হলেও এটি কুষ্টিয়ায় ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে সংঘর্ষের ঘটনা চলাকালীন সময়ের ছবি বলে বার্তা সংস্থা এএফপি কে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাব্বিরুল আলম।
তথ্য যাচাই: কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সৌমেন রায় সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিবিসি নিউজ বাংলা, প্রথম আলো এবং নিউজ এজ সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
মূলত পুলিশ কর্মকর্তা সৌমেন কুমার রায় চলতি বছরের ১৩ জুন ব্যক্তিগত ক্রোধের জেরে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী আসমা খাতুন, সৎ ছেলে রবিন ও তাঁদের পারিবারিক বন্ধু শাকিল আহমেদ খানকে কুষ্টিয়ায় সার্ভিস রিভলবারের সাহায্যে গুলি করে খুন করে।
অর্থাৎ, ২০১৫ সালের রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনার ছবি এবং ২০২১ সালের জুন মাসের ঘটনার তথ্য ব্যবহার করে চলমান সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মধ্যে হিন্দু পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক মুসলিম পরিবার হত্যার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]
Claim Review: কুষ্টিয়াতে হিন্দু পুলিশ কমকর্তা সৌমেন কুমার রায় প্রকাশ্যে গুলি করে মুসলিম স্বামী-স্ত্রীসহ ৬ বছরের শিশুকে হত্যা করেছে
সম্প্রতি “পূর্ণিমা রাণী বলেন, হামলাকারীরা বাড়িতে ঢুকে তার দুই তরুণী মেয়ে কোথায়, জানতে চায়। ঘরে ঢুকে ভাঙচুর করে টাকা, গরু নিয়ে যায়। ঘরে আগুন লাগিয়ে যায়।” শীর্ষক শিরোনামে একজন মহিলার কান্না বিজড়িত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি সাম্প্রতিক সময়ে ঘটা রংপুরের পীরগঞ্জে হামলার শিকার পূর্ণিমা রাণী নয় বরং ছবিটি ২০১৭ সালে রংপুরে হিন্দু গ্রামে হামলার শিকার এক নারীর।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বরে ডেইলি স্টারে “Clash over Facebook post, 1 killed in Rangpur” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উক্ত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়াও, একই ছবিটি Bdnews24 এর ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও খুঁজে পাওয়া যায়।
মূলত, ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননামূলক পোস্টের অভিযোগে ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বরে রংপুরের সদর উপজেলায় কয়েকশো মানুষ একটি হিন্দু গ্রামে হামলা চালায় এবং এতে পুলিশের পাল্টা গুলিতে অন্তত একজন নিহত হয়েছিলো।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবরে দৈনিক প্রথম আলো‘তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে আলোচিত পূর্ণিমা রানীর বক্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথম আলোতে প্রকাশিত পূর্ণিমা রাণীর বক্তব্য, ‘পূর্ণিমা রানী বলেন, হামলাকারীরা বাড়িতে ঢুকে তাঁর দুই তরুণী মেয়ে কোথায়, তা জানতে চায়। ঘরে ঢুকে ভাঙচুর করে ৫০ হাজার টাকা ও একটি গরু নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা’। তবে প্রথম আলো তাদের প্রতিবেদনে পূর্ণিমা রানীর কোনো ছবি সংযুক্ত করেনি এবং একই প্রতিবেদনে প্রথম আলো তাদের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন সংযুক্ত করেছে যেখানে কিছু মহিলাকে দেখানো হলেও ফেসবুকে প্রচারিত পূর্ণিমা রাণীর ছবির সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ অক্টোবর দিবাগত রাতে কাবা শরীফ অবমাননার অভিযোগ তুলে রংপুরের পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা, এতে প্রায় ১৫-২০ টি বাড়ি পুড়ে যাওয়া সহ লুটপাটের অভিযোগও এসেছে।
অর্থাৎ, ২০১৭ সালে রংপুর সদর উপজেলায় ধর্মীয় অবমাননাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হামলার ঘটনার পুরোনো ছবিকে বর্তমানে রংপুরের পীরগঞ্জে অগ্নিসংযোগে ভুক্তভোগী পূর্ণিমা রাণীর ছবি দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]
Claim Review: পূর্ণিমা রাণী বলেন, হামলাকারীরা বাড়িতে ঢুকে তার দুই তরুণী মেয়ে কোথায়, জানতে চায়। ঘরে ঢুকে ভাঙচুর করে টাকা, গরু নিয়ে যায়। ঘরে আগুন লাগিয়ে যায়। (রংপুর, প্রথম আলো)
সম্প্রতি, “কিছুক্ষণ আগে গুজব ছড়িয়ে রংপুরের পীরগঞ্জে রামনাথপুর ইউনিয়নের বটের বাজার মাঝিপাড়া সহ দুটি হিন্দু গ্রামে অগ্নিসংযোগ চালিয়ে শতশত হিন্দু বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে মুসলিম সন্ত্রাসীরা” শীর্ষক শিরোনামে পীরগঞ্জে অগ্নিকান্ডের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান নিউজচেকার এর প্রতিবেদন অনুসারে Unity Council BD টুইটার একাউন্টটি ভুয়া
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পীরগঞ্জে অগ্নিকান্ডের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং ভিডিওটি ভারতের ত্রিপুরায় পূজামণ্ডপ ও দোকানপাটে আগুন লাগার।
রিভার্স ইমেজ সার্চ এবং ভিডিও সার্চিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাঙ্খিত ফলাফল না পাওয়ায়, ভিডিওটির প্রতিটি দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম এবং ভিডিওতে থাকা কয়েকজন দমকল কর্মীর পোশাকের সূত্র ধরে আমরা ভারতের দমকল বাহিনীর পোশাকের সাথে ভিডিওর দমকল কর্মীদের পোশাকের মিল খুঁজে পাই।
ভাইরাল ভিডিওতে থাকা ফায়ার সার্ভিস (বামে) এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতীয় ফায়ার সার্ভিসের ছবি (ডানে)ভাইরাল ভিডিও (বামে) এবং Manisha Ghosh পেজে পোস্ট করা ভিডিও (ডানে)
পরবর্তীতে, ভিডিওটি ভারতের কিনা এটি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে আমরা সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে ঘটা অগ্নিকান্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করি এবং ‘Today Tripira 24×7′ নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ১৩ অক্টোবরে “সপ্তমীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভষ্মীভূত হল মরা ছড়া বাজারের দুর্গা পুজোর প্যান্ডেল সহ আশেপাশের কিছু দোকান, দমকলের দীর্ঘ চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।”শিরোনামে প্রকাশিতঐ ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটির সূত্র ধরে এই সম্পর্কিত আরো কিছু ফেসবুক পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও এবং সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়।
ত্রিপুরার স্থানীয় স্যন্দন পত্রিকা ও গৌহাটি, আসাম ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Time8 অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আগরতলা ভিত্তিক বাংলা ভাষার টেলিভিশন ‘CHANNEL DINRAAT’ এর ইউটিউব চ্যানেলে অগ্নি দূর্ঘটনা নিয়ে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়
মূলত, ভারতের ত্রিপুরার কমলপুর থানাধীন মরাছড়া বাজার এলাকায় গত ১২ অক্টোবর রাতে একটি পূজামণ্ডপ ও বেশ কিছু দোকানপাটে অগ্নি দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। রংপুরের পীরগঞ্জের দাবিতে ৫৬ সেকেন্ডের ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি সেই ঘটনারই একটি ভিডিওচিত্র।
সম্প্রতি “আগামী ১৮ তারিখ থেকে প্রতিদিন সকাল ১০ টা হতে দুপুর ১টা পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকবে” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৮ অক্টোবর হতে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের বিষয়টি চলতি বছরের নয় বরং বিষয়টি গত বছরের।
কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গত বছরের অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রকাশিত দেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর অনলাইন ভার্সন এবং ইউটিউব চ্যানেলে ১৮ অক্টোবর থেকে ইন্টারনেট বন্ধ সংক্রান্ত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথম আলো এবং ঢাকা ট্রিবিউনের প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
মূলত, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিনা নোটিশে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক অপসারণ কার্যের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধের হুমকি জানিয়েছিল ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও ক্যাবল অপারেটর অব বাংলাদেশ (কোয়াব)। গতবছরের ১২ অক্টোবরে প্রেসক্লাবে আইএসপিএবি ও কোয়াবের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদী সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, ‘ডিএনসিসির বিনা নোটিশে বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক অপসারণের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে গত দুই মাসে রাজধানীর মগবাজার, সায়েদাবাদ, জিরো পয়েন্ট, ধানমন্ডি, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্যাবল সংযোগ দিতে হয়েছে। এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইন্টারনেট ক্যাবল টিভি অপারেটর ব্যবসায়ীরা। তাই ডিএনসিসি এ হটকারী সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না এলে, কিংবা এ সমস্যার সমাধান না হলে আগামী রোববার (১৮ অক্টোবর) থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হবে।’
তবে, গতবছরের ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে জুমে এক জরুরি অনলাইন সভায় অংশ নেয় সংগঠন দুটি। মিটিংয়ে সরকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আইএসপিএবি ও কোয়াব তাদের কর্মসূচি বাতিল করে।
তাছাড়া গত ১৬ অক্টোবর ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) তাদের ফেসবুকে পেজে, আগামী ১৮ অক্টোবর থেকে ৩ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ রাখার ঘটনাটি পুরোনো ও বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করা একটি বিবৃতি প্রকাশ করে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ অক্টোবর ভোর থেকে সারাদেশে প্রায় ১২ ঘণ্টা উচ্চগতির থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে বিকেল ৫ টায় ধীরে ধীরে সব অঞ্চলে পুনরায় ইন্টারনেট সেবা সচল হয়।
অর্থাৎ, ২০২০ সালের ডিএনসিসি কর্তৃক বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক অপসারণ কার্যের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে আইএসপিএবি ও কোয়াব ঘোষিত ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণাকে চলতি বছরের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]
Claim Review: ১৮ তারিখ থেকে প্রতিদিন সকাল ১০ টা হতে দুপুর ১টা পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ থাকবে
সম্প্রতি “কুমিল্লায় পূজা মন্ডপে কোরান শরীফ রেখে আসার ঘটনায় প্রমাণসহ গ্রেপ্তার হয়েছে কুমিল্লা জেলার দক্ষিণ এর শিবির সভাপতি জয়নাল আবেদীনসহ চার শিবির নেতা। মূলত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়ানোর লক্ষ্যেই পুরো বিষয়টি সাজিয়েছিলো জামাত-শিবির।” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য ও কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুমিল্লায় পূজা মন্ডপে কোরআন শরীফ অবমাননার ঘটনায় কোনো শিবির নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলা ভিন্ন দুইটি ঘটনার।
সম্প্রতি “চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে একই হিন্দু পরিবারের মা-বোন ও দশ বছরের মেয়ে ধর্ষণ, মেয়েটি মারা গেছে” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে একই হিন্দু পরিবারের মা-বোন ও দশ বছরের মেয়ে ধর্ষণের তথ্যটির কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি বরং হাজীগঞ্জের পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রুহিদাস বনিকের বক্তব্য থেকে জানা যায় তথ্যটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও গুজব।
মূলত, গত ১৫ অক্টোবর শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে এই মর্মে একটি তথ্য প্রচার হতে থাকে যে, ‘চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে একই হিন্দু পরিবারের মা-বোন ও দশ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে, নির্যাতিত পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে তবে ধর্ষিত মেয়েটি মারা গেছে’।
তবে সেসব পোস্টগুলোতে পোস্টদাতা কোন সূত্র উল্লেখ করেনি এবং মন্তব্যকারীরা সূত্র চাইলে তারা পরিবারটির নিরাপত্তার জন্য সূত্র উল্লেখ করবেনা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ঘটনাটিকে নোয়াখালীর দাবি করেও পোস্ট করেছেন, দেখুন এখানে।
এছাড়া, একই ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার পরিবার দাবিতে ছবি সম্বলিত কিছু পোস্ট খুঁজে পাওয়াযায়, আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ফেসবুকে প্রকাশিত কিছু পোস্ট পাওয়া যায়, দেখুন এখানে এবং এখানে।
এছাড়াও, ২০১৭ সালের নভেম্বরে ইউটিউবে প্রকাশিত বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতনের প্রামাণ্য চিত্র শিরোনামের একটি ভিডিওতেও ছবিটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এমন আরেকটি ভিডিও দেখুন এখানে, আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে।
অর্থাৎ, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ৫ বছর বা এর থেকেও পুরোনো কোন ঘটনার ছবি।
বিষয়টি কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়াই সারাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে ১৬ অক্টোবর (শনিবার) অর্থাৎ আজ বিকেলে চাঁদপুরের পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রুহিদাস বনিক একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ঘটনাটিকে সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়াও, হাজীগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ সাহা এবং হাজীগঞ্জ উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সত্যব্রত ভদ্র মিঠুনও বিষয়টিকে ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লা সদরের নানুয়ার দিঘীরপাড়ের হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পূজামন্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
অর্থাৎ, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দু পরিবারের মা-বোন ও দশ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং গুজব।
[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]
Claim Review: চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে একই হিন্দু পরিবারের মা-বোন ও দশ বছরের মেয়ে ধর্ষণ, মেয়েটি মারা গেছে
সম্প্রতি “কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার ঘটনায় ৪৩ জন আটক, ৩২ জনই আওয়ামী লীগ” শীর্ষক শিরোনামে কিছু ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত একটি সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার জেরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৪৩ জন সন্দেহভাজনের আটকের খবর সত্য হলেও সেখানে ৩২ জনই আওয়ামী লীগ কর্মী উল্লেখের বিষয়টি বানোয়াট এবং মিথ্যা।
মূলত, কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার জেরে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনায় গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত শুধুমাত্র কুমিল্লা থেকেই ৪৩ জনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সেদিন এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে, উক্ত ঘটনায় আটককৃত ব্যক্তিদের নাম, বয়স, লিঙ্গ, রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা পূর্ণাঙ্গ নামের তালিকাও এখন পর্যন্ত প্রকাশ করেনি পুলিশ। দেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও আটককৃত ব্যক্তিদের কোন পরিচয় প্রকাশিত হয়নি। কুমিল্লার ঘটনায় ৪৩ জন সন্দেভাজনের আটকের খবর দৈনিক ইত্তেফাক, দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ঢাকা ট্রিবিউন, একুশে টিভি, এন টিভি সহ একাধিক জাতীয় এবং অনলাইন সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
উল্লেখ্য, ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টালগুলোর শিরোনামের সাথে ভেতরের খবরের কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেখানে শিরোনামে ৩২ জন আওয়ামী লীগ সদস্য আটকের তথ্য থাকলেও ভেতরে এই ধরণের কোন তথ্যের উল্লেখ নেই। অর্থাৎ, ‘কোরআন অবমাননার ঘটনায় আটক ৪৩ জনের মধ্যে ৩২ জনই আওয়ামী লীগ’ এই তথ্যটি কোন সূত্র ছাড়াই চটকদার শিরোনামে প্রকাশ করা হয়েছে।
ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত প্রতিবেদন। আর্কাইভ দেখুন এখানে
প্রসঙ্গত, কুমিল্লা সদরের নানুয়ার দিঘীরপাড়ের হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পূজামন্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংঘর্ষের ঘটনায় সন্দেহভাজনদের গ্রেফতারের খবর পাওয়াগিয়েছে।
একই বিষয়ে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ‘ফ্যাক্টওয়াচ’ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
অর্থাৎ, কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার জেরে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনায় আটক ৪৩ জনের মধ্যে ৩২ জনই আওয়ামী লীগ কর্মী দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও গুজব।
[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]
Claim Review: কুরআন অবমাননার ঘটনায় আটক ৪৩ জনের মধ্যে ৩২ জনই আওয়ামী লীগের
সম্প্রতি “কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ধান্যদৌল গ্রামের একটি জামে মসজিদে মল-মূত্র ত্যাগ, ২৫/৩০ টি কোরআন শরীফ ছিড়ে ফেলা, কোরআন রাখার রেল ও মসজিদের ৪ টি জানালার গ্লাস ভাংচুর করার খবর পাওয়া গেছে।” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মসজিদে ঢুকে পবিত্র কুরআন বিনষ্টিকরণ ও মলত্যাগের ঘটনাটি ৫ বছর পূর্বের এবং উক্ত ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি হিন্দু ধর্মের নয়।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে সর্বপ্রথম ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস সহ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কয়েকটি ফেসবুক আইডি ও পেজে প্রকাশিত একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
মূলত, ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবরে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার একটি মসজিদে জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন মানসিক বিকারগ্রস্থ ব্যক্তি তালা ভেঙে প্রবেশ করে মসজিদে থাকা কয়েকটি কুরআন শরীফ ছিঁড়ে ফেলে এবং সেখানে মলত্যাগ করে। সেসময়ে মসজিদে কেউ উপস্থিত না থাকায় মুসল্লিরা পরদিন সকালে ঘটনাটি দেখতে পায়। পরবর্তীতে অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীর আলম এর সম্পৃক্ততা ধরা পড়ে।
ছবিঃ বিডিফ্যাক্টচেক
বিষয়টি ২০১৯ সালেও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ পুলিশ এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে “কুমিল্লার ব্রাহ্মনপাড়ায় মসজিদে পবিত্র কোরান শরীফ বিনষ্টকরণের ঘটনাটি ২০১৬ সালের” শিরোনামে একটি প্রেস নোট প্রকাশ করা হয়। যেখানে বলা হয়, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া উল্লেখিত শিরোনামের ঘটনাটি ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের ১৯ তারিখের। ওই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছিল, যার নম্বর-১১/২১৬, তারিখ-১৯/১০/২০১৬। মামলার সংশ্লিষ্ট আসামি মো. জাহাঙ্গীর আলমকে (৩৮) পুলিশ দ্রুততম সময়ে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তকে আসামি করে পুলিশ এই মামলায় আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করে, যার নম্বর-২১২, তারিখ-৩০/১১/২০১৬। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।”
এছাড়াও, দেশের আরেকটি ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ‘বিডিফ্যাক্টচেক’ সেসময়ে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সাম্প্রতিক সময়ে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলো নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচ এবং বুম বাংলাদেশও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লা সদরের নানুয়ার দিঘীরপাড়ের হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পূজামন্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
অর্থাৎ, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় একটি মসজিদে পবিত্র কুরআন বিনষ্টকরণ ও মলত্যাগের ৫ বছর পুরোনো ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, এছাড়া উক্ত ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত ব্যক্তি হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয় বরং একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত মুসলিম ব্যক্তি এই ঘটনায় জড়িত ছিলো।
[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]
Claim Review: কুমিল্লায় এক মসজিদে ঢুকে হিন্দুরা কুরআন শরীফ ছিড়ে