সম্প্রতি “কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ধান্যদৌল গ্রামের একটি জামে মসজিদে মল-মূত্র ত্যাগ, ২৫/৩০ টি কোরআন শরীফ ছিড়ে ফেলা, কোরআন রাখার রেল ও মসজিদের ৪ টি জানালার গ্লাস ভাংচুর করার খবর পাওয়া গেছে।” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভাইরাল কিছু ফেসবুক পোস্টের আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মসজিদে ঢুকে পবিত্র কুরআন বিনষ্টিকরণ ও মলত্যাগের ঘটনাটি ৫ বছর পূর্বের এবং উক্ত ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি হিন্দু ধর্মের নয়।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে সর্বপ্রথম ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস সহ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কয়েকটি ফেসবুক আইডি ও পেজে প্রকাশিত একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
মূলত, ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবরে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার একটি মসজিদে জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন মানসিক বিকারগ্রস্থ ব্যক্তি তালা ভেঙে প্রবেশ করে মসজিদে থাকা কয়েকটি কুরআন শরীফ ছিঁড়ে ফেলে এবং সেখানে মলত্যাগ করে। সেসময়ে মসজিদে কেউ উপস্থিত না থাকায় মুসল্লিরা পরদিন সকালে ঘটনাটি দেখতে পায়। পরবর্তীতে অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীর আলম এর সম্পৃক্ততা ধরা পড়ে।
বিষয়টি ২০১৯ সালেও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ পুলিশ এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে “কুমিল্লার ব্রাহ্মনপাড়ায় মসজিদে পবিত্র কোরান শরীফ বিনষ্টকরণের ঘটনাটি ২০১৬ সালের” শিরোনামে একটি প্রেস নোট প্রকাশ করা হয়। যেখানে বলা হয়, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া উল্লেখিত শিরোনামের ঘটনাটি ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের ১৯ তারিখের। ওই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছিল, যার নম্বর-১১/২১৬, তারিখ-১৯/১০/২০১৬। মামলার সংশ্লিষ্ট আসামি মো. জাহাঙ্গীর আলমকে (৩৮) পুলিশ দ্রুততম সময়ে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তকে আসামি করে পুলিশ এই মামলায় আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করে, যার নম্বর-২১২, তারিখ-৩০/১১/২০১৬। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।”
এছাড়াও, দেশের আরেকটি ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ‘বিডিফ্যাক্টচেক’ সেসময়ে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সাম্প্রতিক সময়ে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলো নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচ এবং বুম বাংলাদেশও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লা সদরের নানুয়ার দিঘীরপাড়ের হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পূজামন্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
অর্থাৎ, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় একটি মসজিদে পবিত্র কুরআন বিনষ্টকরণ ও মলত্যাগের ৫ বছর পুরোনো ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, এছাড়া উক্ত ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত ব্যক্তি হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয় বরং একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত মুসলিম ব্যক্তি এই ঘটনায় জড়িত ছিলো।
[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]
- Claim Review: কুমিল্লায় এক মসজিদে ঢুকে হিন্দুরা কুরআন শরীফ ছিড়ে
- Claimed By: Facebook Posts
- Fact Check: False
[/su_box]