সম্প্রতি, ‘বি/এনপি নেতা চাঁদা নেওয়ার সময় শুধু বলেছিল ১৭ বছর আমরা খাইতে পারি নাই! অতঃপর সে/নাবাহিনী তাকে উত্তম মাধ্যম দিচ্ছে!’- শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন সেনা সদস্য একজন ব্যক্তিকে পিটিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক বিএনপির নেতা মারধরের শিকার হওয়া সংক্রান্ত কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত মার্চ মাসে বগুড়ায় দুই শ্রমিক নেতাকে মারধরের ঘটনায় শ্রমিক নেতারা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ চলাকালে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগেরও ঘটনা ঘটে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অ্যাকশনে যায় সেনাবাহিনী। এটি সেই ঘটনারই দৃশ্য।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ‘তালুকদার ফল ভান্ডার’ এবং ‘রহমান ব্রাদার্স’ নামক দুইটি দোকানের সামনের ঘটনা এটি। উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে গুগল ম্যাপে দেখা যায়, দোকানগুলোর অবস্থান বগুড়ায়।
স্থানের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ‘Subrata Ghosh BD’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৯ মার্চ প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, “বগুড়ায় মোটর শ্রমিক সদস্যদের মাঝে দ্বন্দ্বের জেরে সাতমাথা থেকে স্টেশন রোডে উত্তেজনা শুরু হলে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী ঘটনার স্থলে চলে আসে। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এসময় সাধারণ মানুষ আতংকিত হয়ে পরে।” এই পোস্টে থাকা ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর স্থান ও প্রেক্ষাপটের মিল রয়েছে।
উল্লেখিত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ডিবিসি নিউজের ফেসবুক পেজে গত ১৯ মার্চ প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Video Comparison By Rumor Scanner
ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, বগুড়ায় শ্রমিক নেতাদের মারধরের জেরে দোকান ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের সময়কার দৃশ্য এটি।
পাশাপাশি, উক্ত ঘটনায় একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হতে দেখা যায়। দেখুন- বিডিনিউজ২৪, মানবকণ্ঠ এবং সময় টিভি।
সুতরাং, বগুড়ায় গত মার্চ মাসে শ্রমিক নেতাদের সময় আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী কর্তৃক অ্যাকশনে যাওয়ার দৃশ্যকে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক বিএনপির নেতা মারধরের শিকার হওয়ার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “প্রবাস থেকে বাড়িতে আসার পথে চাঁদাবাজদের হামলার শিকার হলেন ইয়া আল্লাহ কি শুরু হইলো দেশে” শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী উক্ত ভিডিওটি প্রচার করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি প্রবাস থেকে বাড়ি ফেরার পথে চাঁদাবাজদের হামলার শিকার হওয়া সংক্রান্ত বাংলাদেশের কোনো ঘটনার নয়, বরং এটি ভারতের উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার দৃশ্য।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ‘Mo.Of.Everything’ নামক ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ০৭ জুলাই “A video of Kanwariyas attacking a Muslim family has gone viral on social media” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর দৃশ্যাবলীর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, গত ০৫ জুলাই ভগবান শিবের ভক্ত কাঁওয়ারিয়া তীর্থযাত্রীরা হরিদ্বার থেকে পবিত্র জল নিয়ে ফিরছিলেন। এসময় তারা একটি চলন্ত গাড়ি তাদের কাঁওয়ার (পবিত্র জল বহনের সাজানো কাঠামো) ভেঙে ফেলেছে অভিযোগ এনে এক মুসলিম পরিবারকে, নারী-শিশুসহ রাস্তায় তাড়া করে মারধর করেন ও গাড়ি ভাঙচুর করেন।
উল্লিখিত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে
এ বিষয়ে ভারতীয় ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ‘The Free Press Journal’ এর ওয়েবসাইটে গত ০৬ জুলাইয়ে ‘Video: Kanwariyas Vandalise Car, Assault Muslim Family After Minor Accident In Uttarakhand’s Haridwar; FIR Registered’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot by Rumor Scanner
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, হরিদ্বারের মাঙ্গলৌরে কাঁওয়ার যাত্রার সময় একটি মুসলিম পরিবারের গাড়িকে ধাক্কার অভিযোগে কাঁওয়ারিয়ারা গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের, নারী-শিশুসহ, মারধর করে। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ এফআইআর দায়ের করে এবং দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনায় বিষয়টি আপোষ হয়ে যায়।
অর্থাৎ, এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনার নয়।
সুতরাং, ভারতের উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার দৃশ্যকে বাংলাদেশে প্রবাস থেকে বাড়ি ফেরার পথে চাঁদাবাজদের হামলার শিকার হওয়ার দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, বিএনপির পক্ষে মিছিল বের করার কারণে সাভারে কলেজ ছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। একই ভিডিওটি কিছু সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী ক্যাপশনে বিএনপির পক্ষে মিছিল বের করার কারণে ছাত্রদলের কর্মীদের ওপর পুলিশের হামলার দাবিতে প্রচার করেছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বিএনপির পক্ষে মিছিল বের করার কারণে সাভারে ছাত্রদের কিংবা এবং ছাত্রদলের কর্মীদেরকে পুলিশের মারধরের কোনো ঘটনার নয়। বরং, উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ৪০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে ও অন্যান্য দাবিতে গত ২১ জুন ঢাকার নতুনবাজারে সড়ক অবরোধের সময় পুলিশের সঙ্গে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে থাকা ইত্তেফাকের লোগোর সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২১ জুন প্রচারিত ‘শিক্ষার্থী-পুলিশ মুখোমুখি, উত্তাল নতুন বাজার মোড়’ শিরোেনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির একটি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Comparison : Rumor Scanner
গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজেও গত ২১ জুন একই দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করতে দেখা যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ৪০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে ও অন্যান্য দাবিতে গত ২১ জুন রাজধানীর নতুনবাজারে সড়ক অবরোধ করেছিলেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা। আরও জানা যায়, পুলিশ শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও, এ বিষয়ে কালের কন্ঠ ও কালবেলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
অর্থাৎ, এটি উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ৪০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে ও অন্যান্য দাবিতে গত ২১ জুন নতুনবাজারে সড়ক অবরোধের সময় পুলিশের সঙ্গে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ভিডিও।
সুতরাং, রাজধানীর নতুনবাজারে ভিন্ন কারণে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষের ভিডিওকে সাভারে বিএনপির পক্ষে মিছিল বের করার কারণে ছাত্রদের কিংবা ছাত্রদলের কর্মীদের ওপর পুলিশের হামলার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি “শুরু হয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখলকে কেন্দ্র করে শিবির বনাম ছাত্রদলের মধ্যে তুমুল সংঘ’র্ষ চলছে, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে শিবির কর্মীরা।” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখলকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি এবং ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবকেও হলে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিপীড়ন বিরোধী’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওর কী-ফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘আবু রায়হান খান’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৯ সালের ২২ জুলাই তারিখে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রথম অংশ! ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ রেজিস্টার বিল্ডিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
পরবর্তী, প্রাসঙ্গিক কী ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় দৈনিক আলোর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি “ছাত্রলীগের হামলায় আহত ৪০ শিক্ষার্থী” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি ছাত্রী নিপীড়নের বিচারসহ চার দফা দাবিতে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করায় ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। সেসময় হামলা ও মারামারির ঘটনায় প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে বাম ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ জন আর ছাত্রলীগের ১২ নেতা-কর্মী আহত হয়েছিলেন।”
সে সময় এ বিষয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রতিবেদন (১, ২) প্রকাশ করে।
এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো স্থানে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে অবরুদ্ধ করা হলে উক্ত বিষয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে ঢালাওভাবে সংবাদ প্রচার হওয়ার কথা। তবে, দেশের কোনো গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার হতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রিফাত হকের সাথে কথা বলে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতিকে অবরুদ্ধ করে রাখার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সুতরাং, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিপীড়ন বিরোধী’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনার ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখলকে কেন্দ্র করে শিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, কণ্ঠশিল্পী মনির খান বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন দাবিতে যমুনা টিভির লোগো যুক্ত মনির খানের বক্তব্যের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটিতে মনির খানকে বলতে দেখা যায়, “আজ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমি এই দল থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আপনারা সবাই জানেন যে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সাথে আমি সংশ্লিষ্ট ছিলাম। পদ পদবি সহ এবং কেন্দ্রীয় ঘোষিত সমস্ত কর্মসূচিতে আমার উপস্থিতি ছিলো। এই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকে আমি নানান রকমের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। যারা আমার সংগীত কর্মে মুগ্ধ হয়ে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষ, যারা বিদেশের মাটিতে অবস্থান করছেন, সকল পর্যায়ের ভক্তদের কাছ থেকে সন্তুষ্টি, অসন্তুষ্টির কিছু কথা বার্তা আমার কানে আসে। সেরকম একটি বুকে ভিতরে ব্যথা-বেদনায় আমার কাজ করতো। অনেকের প্রশ্ন ছিলো, ‘সংগীতশিল্পী হিসেবে আপনাকে বুকে ধারণ করেছি, রাজনীতির মাঠে আমরা একটু অশান্তি বা একটু কষ্ট পাই।’ এই রাজনীতির মাঠে এসে আমি ভেবে ছিলাম রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর জিয়ার আদর্শ বুকে ধারণ করে এই দলের সাথে আমি সংযুক্ত হই। এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ওনি আহ্বান জানিয়েছিলেন কাজ করার জন্য। আমি তার কথায় এই দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছি, বড় বড় পদও পেয়েছি। আজ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমি এই দল থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। তেমন বড় কোন কারণ নাই। বলতে পারেন সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছা থেকেই। রাজনীতির ভেতরে যে কৌশলগত দিক, রাজনীতির মধ্যে যে রাজনীতি থাকে, এটা আমার জানা ছিল না।”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কণ্ঠশিল্পী মনির খান বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। বরং, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ইস্যুতে তার বিএনপি থেকে পদত্যাগের ঘোষণার ভিডিও সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে থাকা যমুনা টিভির লোগোর সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রচারিত ‘ক্ষোভে-অভিমানে বিএনপি ছাড়লেন মনির খান’ শিরোনামের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর ৬ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট ২ সেকেন্ড অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। তবে, এই ভিডিওর ১ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড অংশ থেকে ১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড অংশ অর্থাৎ, ‘আজ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমি এই দল থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি’ কথাটি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর শুরুতেও ব্যবহার করা হয়েছে।
Comparison : Rumor Scanner
সংবাদ প্রতিবেদনটির বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, মর্যাদা ক্ষুন্ন ও শৃঙ্খলা না থাকার অভিযোগ জানিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন, সঙ্গীতশিল্পী মনির খান। বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তিনি। বলেন, রাজনীতির ভেতরেও যে রাজনীতি থাকে সেটি তার জানা ছিলো না। পদত্যাগপত্র বিএনপি মহাসচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান, মনির খান। গত ১০ বছর ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো বলেও মন্তব্য করেন এই সংগীত শিল্পী।’
অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত যে কণ্ঠশিল্পী মনির খান বিএনপি থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণার এই ভিডিওটি ২০১৮ সালের।
উল্লিখিত প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর ডেইলি স্টারের বাংলা সংস্করণে ‘বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলেন মনির খান’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, কণ্ঠশিল্পী মনির খান বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। নেমেছিলেন ভোটের প্রচারণাতেও। কিন্তু শেষদিকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে তার মনোনয়ন। তার পরিবর্তে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মতিয়ার রহমানকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন মনির খান।
পরবর্তীতে মনির খান রাজনীতিতে ফিরেছেন কিনা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলা ট্রিবিউন এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ‘বিএনপির রাজনীতিতে ফিরছেন কণ্ঠশিল্পী মনির খান’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আবারও রাজনীতিতে আসছেন বলে জানিয়েছেন এই শিল্পী।
রাজনীতিতে ফেরা প্রসঙ্গে মনির খান গণমাধ্যমকে জানান, সেই সময় অভিমান থেকে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। অভিমানটা ছিল নির্বাচনকেন্দ্রিক। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনে বিএনপি মনির খানকে মনোনয়ন না দিয়ে জামায়াতের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল।
এছাড়াও, এই বিষয়ে কালের কন্ঠের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও প্রায় একই তথ্য জানা যায়।
মনির খানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থান বিষয়ে জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাগোনিউজ২৪.কম এর ওয়েবসাইটে চলতি মাসের ১৩ তারিখ ‘বিএনপি থেকে পদত্যাগ প্রসঙ্গে যা বললেন মনির খান’ শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
গত ১৩ জুলাইজাগো নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মনির খান বলেন, ‘আমার এলাকার শত্রুপক্ষ এ অপপ্রচার চালাচ্ছে। ২০১৮ সালের বিএনপির সঙ্গে আমার মনোমালিন্যের ঘটনাটিকে আমার শত্রুপক্ষ দুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এ মিথ্য তথ্য ছড়াচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে অনেকেই আমাকে ফোন করছেন।’
নতুন করে সেই ঘটনা ছড়ানোর কারণ কি বলে মনে করছেন? এ প্রশ্নের জবাবে মনির খান বলেন, ‘বিএনপি থেকে নমিনেশন সংগ্রহ করলেই তো আমিই মনোনয়ন পাবো। এ বিষয়টি অনেকের সহ্য হচ্ছে না। বিএনপির সবাই তো আমার বন্ধু বা শুভাকাঙ্ক্ষী নয়। যারা আমার ভালো চায় না, সেই শত্রুপক্ষ এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। মিথ্যা একটা ঘটনাকে আবার নতুন করে ছড়ানো হচ্ছে। ২০১৮ সালে একটা ঘটনার কারণে আমি বিএনপির পদ-পদবি থেকে দূরে সরে এসেছিলাম। আমি তো কখনো বিএনপি থেকে পদত্যাগ করিনি।’
মনির খান আরও জানান, বিএনপির ভেতরের কিছু অসাধু লোক এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। এতে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্যও তিনি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, মনির খান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন।
সুতরাং, ২০১৮ সালে বিএনপি থেকে কণ্ঠশিল্পী মনির খানের পদত্যাগ করার ঘোষণার ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি চাঁদা না পেয়ে বিএনপি নেতা কর্তৃক আগুন দিয়ে বাস পোড়ানোর কোনো ঘটনার নয় বরং, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির দিন অজ্ঞাত দুই যুবক কর্তৃক বাস পোড়ানোর একটি পুরোনো ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ‘আগুনে জ্বলছে বাস; চালকের আহাজারি’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর দৃশ্যাবলীর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া গেছে।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রায় সাড়ে ৩ মিনিট দৈর্ঘ্যের মূল ভিডিওটির ০০:০৮ থেকে ০০:৩৫ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটি আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে একজন ব্যক্তিকে তার বাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলে আহাজারি করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম বাংলা ভিশনের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ‘আগুনে জ্বলছে বাস, চালকের আহাজারি’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একই চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সেদিন বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে পুলিশের ভেস্ট পরে মোটরসাইকেলে আসা দুই যুবক রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় চালকের সামনে ঢাকা-কুমিল্লা রুটের এশিয়ান পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়। বাসচালক মনির হোসেন বলেন, ‘পুলিশ বাসটি রিকুইজিশন নিয়েছিল। আমি বিকাল ৫টার দিকে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে কাকরাইল আসি। পুলিশ নেমে যাওয়ার পর দুই যুবক এসে বাসে আগুন ধরিয়ে দেন।’
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২৮ আগস্ট বিভিন্ন দাবিতে ঢাকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোট পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করে।
সুতরাং, চাঁদা না পেয়ে বিএনপি নেতা কর্তৃক বাসে আগুন দেওয়ার এই দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি “জামায়াত শিবিরের উশৃংখল ও নোংরা রাজনীতিতে অসহ্য হয়ে পদত্যাগ করলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা সাখার এক জামায়াত নেতা” শীর্ষক দাবিতে মূলধারার জাতীয় দৈনিক আমার দেশের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “জামায়াত শিবিরের উশৃংখল ও নোংরা রাজনীতিতে অসহ্য হয়ে পদত্যাগ করলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা সাখার এক জামায়াত নেতা” শীর্ষক দাবিতে আমার দেশ কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার সাহায্যে আমার দেশের আদলে এই ভুয়া ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে আমার দেশের লোগো ও ফটোকার্ডটি প্রচারের তারিখ হিসেবে ১২ জুলাই, ২০২৫ উল্লেখ থাকতে দেখা যায়। উক্ত তথ্যগুলোর সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজে পর্যবেক্ষণ করলে সাম্প্রতিক সময়ে উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। পত্রিকাটির ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফটোকার্ডটি বিশ্লেষণে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজের ফটোকার্ডগুলোর সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির গ্রাফিক্যাল ডিজাইন ও ফন্টের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।
পাশাপাশি অন্য গণমাধ্যম এবং বিশ্বস্ত সূত্রগুলোর বরাতেও আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো তথ্য বা সংবাদ পাওয়া যায়নি৷
বরং, আমার দেশের ফেসবুক পেজে গত ১৩ জুলাইয়ে আলোচিত ফটোকার্ডটিকে ভুয়া জানিয়ে একটি পোস্ট প্রচার হতে দেখা যায়।
পরবর্তীতে, আলোচিত দাবিটির সূত্রপাতের বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Jahidul Islam’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১২ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে সংযুক্ত ছবি ও উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটির প্রোফাইল ছবির সংযুক্তি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডে পাওয়া যায়। পোস্টটিতে ‘জাহিদুল ইসলাম’ নামক উক্ত ব্যক্তি বলেন ‘জামায়াত শিবিরের রাজনীতি পদত্যাগ করলাম’। তবে পোস্টটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় তিনি পোস্টটি ‘JaShi Troll’ নামক একটি এলবামে সংযুক্ত করেছেন। উক্ত এলবামটিতে তিনি এর আগেও জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে নানা ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট করেছেন। একই এলবামে তাকে গত ১৩ জুলাইয়ে আলোচিত ফটোকার্ডটিও প্রচার করতে দেখা যায়। এছাড়া, তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটির বায়োতে লেখা রয়েছে ‘কট্টর জাতীয়তাবাদী | জিয়ার সৈনিক|’। অর্থাৎ, ‘জাহিদুল ইসলাম’ উক্ত পোস্টটি মূলত ব্যঙ্গাত্মক উদ্দেশ্যে করেছিলেন এবং আমার দেশও এরূপ কোনো ফটোকার্ড প্রচার করেনি।
সুতরাং, “জামায়াত শিবিরের উশৃংখল ও নোংরা রাজনীতিতে অসহ্য হয়ে পদত্যাগ করলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা সাখার এক জামায়াত নেতা” শীর্ষক দাবিতে আমার দেশের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া।
শপিংমলে একজন নারীর সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর অন্তরঙ্গ মুহুর্তের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওতে শপিংমলে এক নারীর সাথে অন্তরঙ্গ মুুহুর্তে থাকা এই পুরুষ হাসনাত আবদুল্লাহর নয়। এছাড়া ভিডিওটি বাংলাদেশেরও নয়। প্রকৃতপক্ষে, আলোচিত ভিডিওটি ভারতের। যেটি অন্তত ২০২৩ সাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হতে দেখা যায়।
আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘abdul1551salam’ ইউজারনেমের একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ প্রচারিত একই ভিডিওর একটি বর্ধিত সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে এর শুরুর দিকে লক্ষ্য করা যায়, এটি ‘1 India Family M’ নামের কোনো একটি শপিং সেন্টারের ভেতরের দৃশ্য। কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জানা যায়, শপিং সেন্টারটির পুরো নাম 1-India Family Mart. যেটি একটি ভারতীয় চেইন রিটেইল শপ। এছাড়াও ভিডিওটির এক পর্যায়ে ছেলেটির চেহারা দেখতে পাওয়া যায়। যার সাথে হাসনাত আবদুল্লাহর চেহারার কোনো মিল নেই।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে উক্ত ঘটনায় ভারতীয় গণমাধ্যম IBC24 News এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, এটি ভারতের উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার এলাকার ঘটনা। তবে এ ঘটনায় অন্যান্য ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এমন দাবি করতে দেখা যায় না। অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
পরবর্তীতে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকার ঋদ্বীশ দত্তের সহায়তায় গুগল ম্যাপে হরিদ্বারে অবস্থিত 1-India Family Mart এর শোরুমের অবস্থান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর সাথে আলোচিত ভিডিওতে দেখতে পাওয়া 1-India Family Mart এর শো রুমের মিল নেই। তবে ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত 1-India Family Mart এর শো রুমের সাথে কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া গেলেও ঘটনাটি উক্ত শপিংমলেই ঘটেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এটি নিশ্চিত যে উক্ত ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়, ভারতের।
সুতরাং, ভারতের একটি শপিংমলে এক তরুণ-তরুণীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিওকে এক নারীর সাথে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে: যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “গাজীপুরের এই ভাইটি চাঁদা দিতে না পারায় পানির টেংকির উপরে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে” শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সুউচ্চ পানির ট্যাংকের উপরে এক ব্যক্তিকে মারধরের এই ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং, এটি মরক্কোর বেনি মেল্লালের ওলেদ ইউসেফ শহরের ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি থেকে প্রাপ্ত ইমেজ রিভার্স সার্চে মরক্কোর সংবাদমাধ্যম ‘Morocco World News’ এর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ১২ জুলাই প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যাবলীর মিল রয়েছে।
উক্ত পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি মরক্কোর বেনি মেল্লালের ওলেদ ইউসেফ শহরের। বাবার মৃত্যুর তদন্তের দাবিতে ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে পানির টাওয়ারে অবস্থানরত এক ব্যক্তি গত শুক্রবার [১১ জুলাই] সন্ধ্যায় অসংলগ্ন আচরণ করেন। একজন ফায়ারফাইটার তাকে নিচে নামানোর চেষ্টা করলে, প্রতিবাদকারী তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে টাওয়ার থেকে নিচে ফেলে দেন, যার ফলে ফায়ারফাইটার গুরুতর আহত হয়েছেন। পরবর্তীতে, প্রতিবাদকারী নিজেও টাওয়ার থেকে ঝাঁপ দেন।
পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আলোচ্য বিষয়ে একই তারিখে অর্থাৎ গত ১২ জুলাইয়ে ‘Morocco World News’ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটির বিস্তারিত বিবরণীতে একই তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়।
এছাড়া, ‘Barlaman Today’ নামক মরক্কোর আরেক সংবাদমাধ্যমের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একই ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়। এই ভিডিওটির ক্যাপশন থেকেও এটি মরক্কোর বেনি মেলালে ঘটা ঘটনা হিসেবে বলা হয়েছে।
অর্থাৎ, এটি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে যে, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো স্থানের নয়।
সুতরাং, মরক্কোর বেনি মেল্লালের ওলেদ ইউসেফ শহরের একটি ভিডিওকে গাজীপুরে চাঁদা দেওয়ায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা এক ব্যক্তিকে পানির ট্যাংকের উপরে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি “নয় লক্ষ টাকা চাঁদা না দেয়ায় বিএনপি’র ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা এক ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা। দেশ যেন বিএনপির সন্ত্রাসীদের জন্য স্বর্গরাজ্য পরিণত হয়েছে।” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটির সাথে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদাবাজি কিংবা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২১ সালে রাজধানীর পল্লবীতে রাস্তায় ফেলে ছেলের সামনে বাবাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওর কী-ফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম ‘Channel 24’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ২০ মে তারিখে ‘পল্লবীতে প্রকাশ্যে সন্তানের সামনে বাবাকে কুপিয়ে খুন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ২৭ সেকেন্ড অংশ থেকে ৫২ সেকেন্ড অংশের মিল রয়েছে।
পরবর্তী, জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২০ মে “পল্লবীতে প্রকাশ্যে কোপানো সেই দুই যুবক গ্রেফতার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “২০২১ সালের ১৬ মে বিকেল ৪টায় জায়গা-জমির বিরোধের বিষয়ে মীমাংসার কথা বলে ভিকটিম শাহীন উদ্দিনকে পল্লবী থানার ডি ব্লকের একটি গ্যারেজের ভেতর নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রকাশ্য দিবালকে লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভিকটিমের মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ১৭ মে (২০২১) পল্লবী থানায় হত্যা মামলা হয়। চাঞ্চল্যকর এবং আলোচিত এ হত্যা মামলায় তৎক্ষণাৎ দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ।”
সে সময় এ বিষয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রতিবেদন (১, ২) প্রকাশ করে।
সুতরাং, ২০২১ সালে ঢাকায় ছেলের সামনে বাবাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে না চাঁদা না দেওয়ায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা চাঁদার দাবিতে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।