রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ঢাকার গাজীপুরে সামরিক যানে মিসাইল বহনের আসল দৃশ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত এই ভিডিওর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘MINIMAX | Hailuo Ai’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Hailuo Ai’ মিনিম্যাক্স নামের একটি চাইনিজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠানের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৬ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৬ সেকেন্ড।
এছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটিতে বেশকিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। যেমন, সামরিক যানের নড়াচড়া, গাড়ির নাম্বার প্লেটে অসঙ্গতিসহ রাস্তার আশেপাশে বেশিরভাগ সাইনবোর্ডে GAZIPUR শব্দ লেখা দেখা যায়, যা অস্বাভাবিক।
Screenshot from TikTok by Rumor Scanner
পরবর্তীতে, বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে ভিডিওটি এআই (AI) কন্টেন্ট ডিটেকশন টুল ‘Cantilux’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
Screenshot from Cantilux by Rumor Scanner
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে ঢাকার গাজীপুরে সামরিক যানে মিসাইল বহনের আসল দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল এলাকায় গত ২১ জুলাই বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় এখন অবধি অন্তত ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। এছাড়া, আহত ও দগ্ধ হয়েছে অন্তত শতাধিক, যাদের বেশিরভাগই শিশু শিক্ষার্থী। এরই প্রেক্ষিতে অনলাইনে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, প্রচারিত ভিডিওটি “ঢাকা উত্তরা মাইলস্টোন ইস্কুলে ট্রনিং বিমান বিধস্ত চিত্র”।
এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত ভিডিওটি প্রায় ২১ লক্ষ বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ১৩ হাজারটি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আসল দৃশ্যের নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে বিমান দুর্ঘটনার এরূপ কোনো ভিডিও ধারণ করা হলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো।
পাশাপাশি প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে বিমানের বিধ্বস্ত হওয়া ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।
Screenshot of Claimed Video
এছাড়া, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আসল দৃশ্য দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একজন বয়স্ক ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। যেখানে গণমাধ্যমকর্মী তার কাছে ৫ আগস্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে তাকে ‘অবুঝ ছাত্ররা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে দেশ ধ্বংস করেছে’ শীর্ষক মন্তব্য করতে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা বয়স্ক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার প্রদানের আলোচিত ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। এতে ভিডিওটিতে বেশ কিছু এআই সংক্রান্ত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওটির নিচের অংশে দেখতে পাওয়া বাংলা লেখাগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণ যার কোনো অর্থবোধকতা নেই।
Screenshot: Facebook
পাশাপশি ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
Screenshot: Facebook
এছাড়াও ভিডিওটির উপরের ডান কোণে টিকটকের একটি লোগো দেখতে পাওয়া যায়। যার পাশে ‘আমি বাঙালী’ শীর্ষক লেখা ভেসে উঠে। এ থেকে ধারণা করা যাচ্ছে ভিডিওটি ওই নামের কোনো অ্যাকাউন্ট পরিচালনাকারী তৈরি করতে পারেন।
ভিডিওটি এআই দ্বারা তৈরি কিনা তা যাচাই করতে ভিডিওটিকে এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করা হলে, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৭৩ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।
Screenshot: Cantilux
পরবর্তীতে ‘আমি বাঙালী’ নামের ওই টিকটক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গত ২৬ জুন টিকটকে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Tiktok
উক্ত ভিডিওটিও অনেকটা একই ধরনের গ্রামভিত্তিক ভিডিও। ভিডিওটিতেও এই ফন্টে লেখা ‘আমি বাঙ্গালী’ শীর্ষক একটি জলছাপ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এটি @আমি বাঙ্গালী নামের একটি অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সাথে ডুয়েট করা হয়েছে।
‘@আমি বাঙ্গালী’ শীর্ষক ট্যাগটিতে ক্লিক করলে aslamhossainoffical1 নামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্টে নিয়ে যায়। উক্ত অ্যাকাউন্ট ব্যতীত ‘আমি বাঙ্গালী’ নামের কোনো অ্যাকাউন্ট টিকটকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে অ্যাকাউন্টটি পর্যালোচনা করে গত ২৬ জুন প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Tiktok
যেখানে প্রচারকারী ভিডিওটিকে এআই দ্বারা তৈরি কনটেন্ট বলে লেভেল করেছেন। এছাড়াও একই ধরনের আরও বেশকিছু ভিডিও অ্যাকাউন্টটিতে দেখতে পাওয়া যায়। যার প্রায় সবগুলোতেই ‘আমি বাঙ্গালী’ শীর্ষক জলছাপ রয়েছে। এ থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, উক্ত ব্যক্তিই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির ক্রিয়েটর।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে বয়স্ক ব্যক্তির গণমাধ্যমে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘অবুঝ ছাত্ররা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে দেশ ধ্বংস করেছে’ শীর্ষক মন্তব্য করার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ২৬ জুন রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে চাঁদা দাবি করার অভিযোগে ৫ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন, মো. সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. আমিনুল ইসলাম, ইব্রাহীম হোসেন ও আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ। এদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য এবং অন্যরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী বলে জানা যায়। এঘটনার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ‘গুলশানে যে ধরা পড়েছে সে আমাদের এনসিপির নেতা। আমি বকে দিয়েছি। বলেছে আর করবে না। চাঁদাবাজ হোক বা যা-ই হোক ওরা তো আমাদেরই সন্তান।’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটককৃতদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য প্রদানের ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। এতে ভিডিওটিতে বেশ কিছু এআই সংক্রান্ত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওটির নিচের অংশে দেখতে পাওয়া ইংরেজি লেখাগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণ, যার কোনো অর্থবোধকতা নেই। পাশাপশি ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে ভিডিওটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল ক্যান্টিলাক্সে বিশ্লেষণ করা হলে, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৮২ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।
Screenshot: Cantilux
আলোচিত ভিডিওটি রিভার্স সার্চের মাধ্যমে একাধিক গণমাধ্যমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর একই শার্ট পরিহিত অবস্থায় একই স্থানের বসে থাকার একটি ছবির সন্ধান পাওয়া যায়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। উক্ত গণমাধ্যমগুলোর কয়েকটিতে এটিকে ফাইল ছবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে একই স্থানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য প্রদানের কোনো ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই ধারণা করা যাচ্ছে, উক্ত ভিডিও ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটককৃতদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য প্রদানের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ‘আমরা সবাই শহীদ হবো, শেখ হাসিনাকে দেশে আনবো, শেখ হাসিনার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।’ শীর্ষক স্লোগান স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা দিচ্ছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটিতে অডিও হিসেবে শুনতে পাওয়া যায়, আমরা সবাই শহীদ হবো, শেখ হাসিনাকে দেশে আনবো, শেখ হাসিনার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে, শেখ হাসিনার কিছু হলে যুদ্ধ হবে বাংলাদেশে।
উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের স্লোগান দেওয়ার দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ২৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি কাঠামো বাতিল করে বিআইটি -এর আদলে স্বতন্ত্রতা নিশ্চিতকরণের এক দফা দাবিতে ময়মনসিংহে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। উক্ত কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের দেওয়া স্লোগানের ভিডিওতে প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনার মাধ্যমে ভিন্ন অডিও যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটিতে থাকা মিছিলের ব্যানারটি পর্যবেক্ষণ করে এতে দেখতে পাওয়া যায়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সংস্কার আন্দোলন “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি কাঠামো বাতিল করে BIT এর আদলে স্বতন্ত্রতা নিশ্চিতকরণ”। এছাড়াও লেখার রয়েছে, ১ দফা, ঢাবি এর অধিভুক্তি বাতিল চাই, BIT এর আদলে স্বতন্ত্রতা চাই। এবং শেষে লেখা রয়েছে, আন্দোলনে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসমূহের শিক্ষার্থীবৃন্দ।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘MD Kamal’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২৪ জুলাই ‘১ দফা দাবিতে ময়মনসিংহে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ…’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত দাবিতে আলোচিত ভিডিওর অডিও ছাড়া বাকী সব কিছুর মিল রয়েছে।
ভিডিওটিতে অধিভুক্তি না বিআইটি? বিআইটি বিআইটি বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এছাড়াও বলতে শোনা যায়, ১,২,৩,৪ বিআইটি মোদের অধিকার। কিন্তু ভিডিওটিতে ‘আমরা সবাই শহীদ হবো, শেখ হাসিনাকে দেশে আনবো, শেখ হাসিনার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।’ শীর্ষক কোনো স্লোগান ছিল না।
Comparison : Rumor Scanner
এছাড়াও, ভিডিওটি ‘১ দফা দাবিতে ময়মনসিংহে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ…’ শিরোনামে ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও অ্যাকাউন্ট থেকে (১,২) প্রচার হতে দেখা যায়।
অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে ভিডিওটিতে ‘আমরা সবাই শহীদ হবো, শেখ হাসিনাকে দেশে আনবো, শেখ হাসিনার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।’ শীর্ষক স্লোগানগুলো সম্পাদনা করে যুক্ত করা হয়েছে।
উক্ত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে একই ঘটনার বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর ওয়েবসাইট (১,২,৩)প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি কাঠামো বাতিল করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (বিআইটি) আদলে স্বতন্ত্রতার দাবিতে ফেসটুন, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিক্ষোভ করছেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সুতরাং, ময়মনসিংহে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ঘটনার বিক্ষোভ কর্মসূচির ভিডিওর অডিও পরিবর্তন করে তা শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের মিছিল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পাদিত।
গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ অনেকে নিহত হন। এরই প্রেক্ষিতে, “মাইলস্টোনের হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্রগুলো মৃত্যুর কয়দিন আগে এভাবে বৃষ্টিতে ভিজে উল্লাসে মেতে ছিলো, কে জানতো, এটাই হবে শেষ উল্লাস… বৃষ্টির ফোঁটার নিচে চাপা পড়ে গেলো হাজারো না বলা কথা…” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি বিমান দুর্ঘটনার কিছুদিন আগে মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের বৃষ্টিতে ভিজে আনন্দ করার দৃশ্যের নয় বরং, এটি ভারতের মধ্য প্রদেশের একটি স্কুলের ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Anurag Dwivedi’ নামক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২৫ সালের ১১ জুলাই ‘# Children usually develop social laughter and giggles.* Today at Jyoti School Rewa’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ক্যাপশনের সূত্র ধরে ‘Jyoti Senior Secondary School’ এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পাওয়া তাদের স্কুলের ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে থাকা স্কুলের হুবহু মিল হয়েছে।
Collage: Rumor Scanner
এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক অ্যাকাউন্টে একই তথ্যসংবলিত আলোচিত ভিডিওটি (১,২) খুঁজে পাওয়া যায়।
উল্লিখিত তথ্যগুলো থেকে এটি নিশ্চিত যে, আলোচিত ভিডিওটি মাইলস্টোনের নয়।
সুতরাং, ভারতের মধ্য প্রদেশের একটি স্কুলের ভিডিওকে বিমান দুর্ঘটনার কিছুদিন আগে বৃষ্টিতে ভিজে ক্যাম্পাসে মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের আনন্দ করার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
গত ২৬ জুলাই, চট্টগ্রাম নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান’-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক পেশাজীবী সমাবেশে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ও বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন তার বক্তব্যে চট্টগ্রামে জুলাই আন্দোলনে নিহত ওয়াসিম আকরামকে প্রথম শহীদ দাবি করে বলেন- “আমি শহীদ আবু সাঈদের অবদান কখনোই অস্বীকার করি না। তবে ঘটনার নিরিখে যদি সময় অনুযায়ী বিচার করি, তাহলে প্রথম শহীদ হচ্ছেন ওয়াসিম আকরাম। তিনি ১৬ জুলাই বিকেল সাড়ে চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আর আবু সাঈদের মৃত্যুর সময় রাত।”
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন ওয়াসিম আকরামকে প্রথম শহীদ দাবি করে আবু সাঈদের মৃত্যুর সময় নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি সঠিক নয়। আবু সাঈদের মৃত্যু রাতে নয়, বরং বিকেল তিনটার আগেই ঘটে। আবু সাঈদ দুপুর ২ টা ১৯ মিনিটের দিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় নিস্তেজ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে যেতে যেতেই তার মৃত্যু হয়। বিকেল ০৩ টা ০৫ মিনিটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবু সাঈদকে মৃত ঘোষণা করে ডেথ সার্টিফিকেট দেয়৷
অনুসন্ধানে গত ১৬ জুলাই দ্য ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে দুপুর ৪:০১ মিনিটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সেদিন দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আবু সাঈদ নিহত হন।
১৬ জুলাই সন্ধায় প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দিন বেলা ২টার দিকে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় আহত হন আবু সাঈদ। পরে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে, হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশিকুল আরেফিন।
পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় ঢলে পড়ার মুহুর্তের সময় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ঘটনার দিন দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেজের একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ওই লাইভ ভিডিওটির ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডে আবু সাঈদকে গুলিবিদ্ধ হতে, ১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে তাকে রাস্তায় লুটিয়ে পড়তে এবং ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে কয়েকজন ব্যক্তিকে তাকে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। লাইভ ভিডিওর টাইমলাইন অনুযায়ী, আবু সাঈদ দুপুর ২টা ১৮ মিনিটের দিকে নিস্তেজ অবস্থায় রাস্তায় ঢলে পড়েন।
অপরদিকে বেলা ৩টা ৫৯ মিনিটে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের এক প্রতিবেদনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেওয়া আবু সাঈদের মৃত্যুর প্রমাণপত্রের ছবি পাওয়া যায়। প্রমাণপত্র অনুযায়ী, আবু সাঈদকে বেলা ৩টা ০৫ মিনিটে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। বিকেল ৪টা ১৮ মিনিটে ঢাকা পোস্টের একটি প্রতিবেদনেও মৃত্যুর প্রমাণপত্রের অন্য একটি ছবি পাওয়া যায়। ৪টার পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টেও (১,২) একই প্রমাণপত্র প্রচার হতে দেখা যায়।
দৈনিক ডেইলি সানের বাংলা সংস্করণে ৪টা ১৩ মিনিটে আবু সাঈদের মৃত্যুর ব্যাপারে হাসপাতালের মৃত্যুর প্রমাণপত্রের তথ্যের বরাতে লেখা হয়, আবু সাঈদকে বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়।
Image by Rumor Scanner
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক ফেসবুক পেজ BRUR Campus এ “সরাসরি রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে” শিরোনামে বিকেল ৩.৫৯ মিনিটের একটি লাইভে শিক্ষার্থীদের আবু সাঈদের মৃত্যুর প্রতিবাদে তার মৃতদেহ নিয়ে মিছিল করতে করতে রংপুর মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে স্লোগান দিতে দিতে বেরিয়ে মূল সড়কে আসতে দেখা যায়।
উপরিউক্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায়— আবু সাঈদ রাতে নয়, দিনের বেলা বিকেল তিনটার আগেই নিহত হন।
এদিকে বিডি নিউজ২৪-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ষোলশহর থেকে ৪:৩০ মিনিটের দিকে শহিদ ওয়াসিম আকরামের মৃত্যুর খবর আসে। ডেইলি স্টারের ওই দিনের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলামের বক্তব্য থেকে জানা যায়, “বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত দুই জন হলেন মো. ফারুক (৩২) ও ওয়াসিম আকরাম (২৪)।” তবে, ওয়াসিম আকরামের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর সময় উল্লেখ করা হয় ০৬ টা ৫০ মিনিট।
Image By Rumor Scanner
সুতরাং, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ও বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেনের বক্তব্যে দাবি করা ‘আবু সাঈদ রাতে মারা গেছেন’ শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “শোক সংবাদ আনবার নাজাহ নামের এই মেয়েটির দেশের বাড়ি ফেরীঘাট পাড়া, পাবনা । বর্তমান ঠিকানা মিরপুর -১২, ঢাকা । স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকা এসেছিলো। মেয়েটি অসুস্থ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে…ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না-ইলাইহে রাজিউন। মেয়েটির লাশ জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টাতে Emory Hospital রয়েছে। পরিবারের সাথে যোগাযোগ কিংবা খোজ পেতে সকলে শেয়ার দিয়ে পরিবারকে জানাতে সাহায্য করুন…।।” প্রচারিত ছবিটিতে একজন নারীর ছবিসহ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা লেখা দেখতে পাওয়া যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত আনবার নাজাহ সম্প্রতি নিহত হননি বরং প্রায় দুইমাস পূর্বে গত মে মাসের প্রথমার্ধে নিহত হয়েছেন। এছাড়া, আনবারের পরিবার এ বিষয়ে ইতোমধ্যে অবগত আছে এবং আনবারকে দাফনও করা হয়ে গিয়েছে।
অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ এর ওয়েবসাইটে ‘আটলান্টায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নাজাহর মৃত্যু এখনও রহস্যময়’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২২ মে তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে একটি ছবির সংযুক্তি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে সংযুক্ত ছবির হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের পর সুন্দর ভবিষ্যতের অভিপ্রায়ে ঢাকার ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)’র অর্থনীতি বিভাগের মেধাবী ছাত্রী আনবার নাজাহ (২৬) ২০২৩ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার দেড় বছর পর চলতি মাসের (গত মে মাসের) প্রথমার্ধে জর্জিয়া স্টেটের আটলান্টাস্থ ইমোরি জোন্স ক্রিক হাসপাতালে মারা যান। তার এ মৃত্যুকে রহস্যজনক বলে মনে করা হচ্ছে। সাবেক সহপাঠিসহ সচেতন প্রবাসীরা আনবার নাজাহ’র এই অকাল মৃত্যুর কারণ উদঘাটন এবং মরদেহ তার মা-বাবার কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন। আটলান্টাস্থ সামাজিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব জর্জিয়া’ এবং ‘বাংলাধারা’র সভাপতি মাহবুব ভূঁইয়া ২১ মে রাতে এ সংবাদদাতাকে আরো জানান, আনবার নাজাহ এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ডেভিড উ নিউবাই নামক এক আমেরিকানের সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আটলান্টার জোন্স ক্রিক সিটিতে স্বামীর সাথে বাস করছিলেন। আনবারের বাবা ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা জাকিউর রহমান জিতুর সাথে কথোপকথনের উদ্ধৃতি দিয়ে মাহবুব ভূইয়া জানান, আনবার ২ মে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ৩ মে ডেভিডের সাথে ফোনে কথা বলার সময় ফেসটাইমে আনবার গুরুতর অবস্থায় ইমোরি জোন্স ক্রিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার দৃশ্য দেখিয়েছেন। ৯ মে পর্যন্ত জিতুর সাথে ডেভিডের যোগাযোগ ছিল। আনবার হাসপাতালে অচেতন থাকায় কিছুই জানতে পারেননি জিতু। ৩ দিন পর ১২ মে ডেভিড তার শ্বশুরকে অবহিত করেন যে ১১ মে তাকে দাফন করা হয়েছে স্থানীয় মুসলিম গোরস্থানে।…”
এছাড়াও, এ বিষয়ে ‘খবর সংযোগ’ নামক গণমাধ্যমে গত ২৩ মে তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী আনবার নাজাহ (২৬) গত সপ্তাহে আমেরিকার আটলান্টার একটি হাসপাতালে মারা যান। এরপর পরিবারকে না জানিয়ে মরদেহ দাফন করে ফেলেন তার স্বামী ডেভিড উ নিউবাই।…নাজাহর বাবার সঙ্গে তার স্বামীর যোগাযোগ ছিল ৯ মে পর্যন্ত। এর তিন দিন পর ১২ মে ডেভিড নাজাহর বাবাকে অবহিত করেন যে, ১১ মে নাজাহকে দাফন করা হয়েছে স্থানীয় মুসলিম গোরস্থানে। অথচ মৃত্যুর খবরটি জানায়নি ডেভিড।”
অনুসন্ধানে এ বিষয়ে গত মে মাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নানা পোস্ট হতে দেখা যায়। ‘Dream USA Group – Mock & Visa applications’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে এ বিষয়ে গত ২১ মে তারিখে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে বলা হয়, “গুজব ছড়ানো বন্ধ করুন! নাজাহ আনবার গত সপ্তাহে মারা গেছেন এবং তার পরিবার এই বিষয়ে অবগত আছে।… তার বোন, নিহা আনবার, ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত করেছেন যে তারা সমস্ত কিছু সঠিকভাবে সামলাচ্ছেন। আমরা সবাইকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি যে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন।” (অনূদিত)।
সুতরাং, গত মে মাসে নিহত হওয়া নাজাহ আনবার সম্প্রতি নিহত হয়েছেন এবং তার পরিবারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল এলাকায় গত ২১ জুলাই বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন গভীর রাত তিনটার দিকে গত ২২ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণা দেয় সরকার। এসব ঘটনার জেরে শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষাসচিবের পদত্যাগের দাবিতে গত ২২ জুলাই সচিবালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় পুলিশ ও সেনা সদস্যদের সাথে সংঘর্ষও হয় শিক্ষার্থীদের। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৩ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুইটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “গতকাল (২২ জুলাই) সেনাবাহিনীর পোশাক পরে, শিক্ষার্থীদের উপর গু*লি চালিয়েছেন শিবিরের নেতা”।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত পোস্টে থাকা শার্ট-টাই পরিহিত ব্যক্তি এবং সেনা পোশাক পরিহিত ব্যক্তি একই নন বরং, দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি। দুইজনের কেউই শিবির নেতা নন। প্রকৃতপক্ষে একটি ছবি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল আছাদুল ইসলামের এবং অপর ছবিটি নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা আবসার হাসান রানার।
প্রচারিত পোস্টে থাকা শার্ট-টাই পরিহিত ব্যক্তির ছবির বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘আবসার হাসান রানা’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কয়েকটি ছবির স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে গত ২৩ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে বলা হয়, “… আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাই গতকাল এক বড় ভাই সেনাবাহিনীর ছবিটা দিয়ে বলছিলো যে উনি দেখতে হুবহু আমার মতো। এর পরে আমি আমার ছবি উনার সাথে দিয়ে উনাকে উপহাস করছিলাম। আজকে দেখি ইতিহাস চেতনা সবাই আমার ছবি দিয়ে শিবির বানাই দিলেন…”।
Comparison Image : Rumor Scanner
পরবর্তীতে উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে আরো নানা ছবি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত শার্ট-টাই পরিহিত ব্যক্তির ছবির মিল পাওয়া যায়। এছাড়াও অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণে নিশ্চিত হওয়া যায় যে অ্যাকাউন্টটি আসল এবং এই ব্যক্তির নাম আবসার হাসান রানা। আবসার হাসান রানার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটির বায়ো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে লেখা পাওয়া যায়, “উপ-কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক | বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।”
অর্থাৎ, শার্ট-টাই পরিহিত ব্যক্তির ছবিটি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা আবসার হাসান রানার। রানার মজার ছলে করা রানার একটি ফেসবুক পোস্ট থেকেই আলোচিত দাবিটির সূত্রপাত।
পরবর্তীতে সেনাসদস্যের পোশাক পরিহিত ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন গণমাধ্যম ‘ঢাকা মেইল’ এর ফেসবুক পেজে “বিমান দূ/র্ঘ’টনায় বাচ্চাদের উদ্ধার করতে করতে হাপিয়ে উঠেন সেনাবাহিনীর এই সদস্য!” শীর্ষক ক্যাপশনে গত ২১ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ছবিটি উক্ত ভিডিওটি থেকেই নেওয়া হয়েছে। উক্ত সেনা সদস্যের বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘ঢাকা মেইল’ এর ফেসবুক পেজে “সেনা সদস্যকে নিয়ে অ*প’প্র’চা’র, ফেসবুকে নি*ন্দা’র ঝড়” শীর্ষক ক্যাপশনে গত ২৪ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে বলা হয়, আলোচিত সেনা সদস্যের নাম ‘মোহাম্মদ আছাদুল ইসলাম আছাদ’ এবং তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত আছেন।
Comparison Image: Rumor Scanner
পরবর্তী অনুসন্ধানে উক্ত সেনাসদস্য আছাদুল ইসলামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। আছাদুল ইসলামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করলে সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত অবস্থায় আছাদের ছবিসহ একাধিক ছবি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সেনাসদস্যের পোশাক পরিহিত ছবিটির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সেনাসদস্যের পোশাক পরিহিত ছবিটি আছাদুল ইসলাম নামে এক সেনাসদস্যের।
অর্থাৎ, প্রচারিত ছবি দুইটি দুই ভিন্ন ব্যক্তির ছবি।
সুতরাং, সেনাবাহিনীর পোশাক পরে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছেন শিবিরের নেতা শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকটি ছবি প্রচার করা হয়েছে যেখানে দেখা যায় আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি ও প্রাক্তন পর্ণতারকা মিয়া খলিফা একই ফ্রেমে ছবি তুলেছেন। ছবিগুলো প্রচার করে ক্যাপশনে মেসিকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে, “ভাইটিকে খুব ভালো মনে করেছিলাম।”
অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে মেসির সাথে মিয়া খলিফার প্রচারিত ছবিগুলো আসল।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, লিওনেল মেসির সাথে মিয়া খলিফার প্রচারিত ছবিগুলো আসল নয় বরং, এগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
ছবিগুলোর বিষয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে অনুসন্ধান করলে ছবিগুলো আসল হওয়ার দাবির সপক্ষে বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে ছবিগুলোর সম্ভাব্য মূল পোস্ট “_ul_0” ইউজারনেমের একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ২ জুলাইয়ে প্রচার হতে দেখা যায়। পোস্টটির ক্যাপশনে একটি ডিসক্লেইমার বা দায়মুক্তিও পাওয়া যায় যেখানে বলা হয়, “এই ছবিগুলো বাস্তব নয়। এগুলো সর্বাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে দক্ষতার সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে।” (অনূদিত)
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে এআই দিয়ে তৈরি একাধিকছবি নানাসময়ে প্রচার হতে দেখা যায়। পাশাপাশি প্রচারিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে মুখমণ্ডলের গঠনসহ সামগ্রিকভাবে খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।
Screenshot: Hive Moderation
বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম “হাইভ মডারেশন” এ ছবিগুলো পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এগুলো এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫-৯৯ শতাংশ।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ছবি আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির সাথে সাবেক পর্ণতারকা মিয়া খলিফার আসল ছবি দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।