সেনাবাহিনীর পোশাক পরে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছেন শিবিরের নেতা শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা

ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল এলাকায় গত ২১ জুলাই বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন গভীর রাত তিনটার দিকে গত ২২ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণা দেয় সরকার। এসব ঘটনার জেরে শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষাসচিবের পদত্যাগের দাবিতে গত ২২ জুলাই সচিবালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় পুলিশ ও সেনা সদস্যদের সাথে সংঘর্ষও হয় শিক্ষার্থীদের। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৩ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুইটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “গতকাল (২২ জুলাই) সেনাবাহিনীর পোশাক পরে, শিক্ষার্থীদের উপর গু*লি চালিয়েছেন শিবিরের নেতা”।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত পোস্টে থাকা শার্ট-টাই পরিহিত ব্যক্তি এবং সেনা পোশাক পরিহিত ব্যক্তি একই নন বরং, দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি। দুইজনের কেউই শিবির নেতা নন। প্রকৃতপক্ষে একটি ছবি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল আছাদুল ইসলামের এবং অপর ছবিটি নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা আবসার হাসান রানার।

প্রচারিত পোস্টে থাকা শার্ট-টাই পরিহিত ব্যক্তির ছবির বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘আবসার হাসান রানা’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কয়েকটি ছবির স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে গত ২৩ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে বলা হয়, “… আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাই গতকাল এক বড় ভাই সেনাবাহিনীর ছবিটা দিয়ে বলছিলো যে উনি দেখতে হুবহু আমার মতো। এর পরে আমি আমার ছবি উনার সাথে দিয়ে উনাকে উপহাস করছিলাম। আজকে দেখি ইতিহাস চেতনা সবাই আমার ছবি দিয়ে শিবির বানাই দিলেন…”।

Comparison Image : Rumor Scanner

পরবর্তীতে উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে আরো নানা ছবি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত শার্ট-টাই পরিহিত ব্যক্তির ছবির মিল পাওয়া যায়। এছাড়াও অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণে নিশ্চিত হওয়া যায় যে অ্যাকাউন্টটি আসল এবং এই ব্যক্তির নাম আবসার হাসান রানা। আবসার হাসান রানার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটির বায়ো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে লেখা পাওয়া যায়, “উপ-কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক | বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।”

অর্থাৎ, শার্ট-টাই পরিহিত ব্যক্তির ছবিটি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা আবসার হাসান রানার। রানার মজার ছলে করা রানার একটি ফেসবুক পোস্ট থেকেই আলোচিত দাবিটির সূত্রপাত।

পরবর্তীতে সেনাসদস্যের পোশাক পরিহিত ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন গণমাধ্যম ‘ঢাকা মেইল’ এর ফেসবুক পেজে “বিমান দূ/র্ঘ’টনায় বাচ্চাদের উদ্ধার করতে করতে হাপিয়ে উঠেন সেনাবাহিনীর এই সদস্য!” শীর্ষক ক্যাপশনে গত ২১ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ছবিটি উক্ত ভিডিওটি থেকেই নেওয়া হয়েছে। উক্ত সেনা সদস্যের বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘ঢাকা মেইল’ এর ফেসবুক পেজে “সেনা সদস্যকে নিয়ে অ*প’প্র’চা’র, ফেসবুকে নি*ন্দা’র ঝড়” শীর্ষক ক্যাপশনে গত ২৪ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে বলা হয়, আলোচিত সেনা সদস্যের নাম ‘মোহাম্মদ আছাদুল ইসলাম আছাদ’ এবং তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত আছেন।

Comparison Image: Rumor Scanner

পরবর্তী অনুসন্ধানে উক্ত সেনাসদস্য আছাদুল ইসলামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। আছাদুল ইসলামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করলে সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত অবস্থায় আছাদের ছবিসহ একাধিক ছবি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সেনাসদস্যের পোশাক পরিহিত ছবিটির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সেনাসদস্যের পোশাক পরিহিত ছবিটি আছাদুল ইসলাম নামে এক সেনাসদস্যের। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ছবি দুইটি দুই ভিন্ন ব্যক্তির ছবি।

সুতরাং, সেনাবাহিনীর পোশাক পরে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছেন শিবিরের নেতা শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img