আবু সাঈদের মৃত্যুর সময় সংক্রান্ত বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনের মন্তব্যটি সঠিক নয়

গত ২৬ জুলাই, চট্টগ্রাম নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান’-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক পেশাজীবী সমাবেশে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ও বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন তার বক্তব্যে চট্টগ্রামে জুলাই আন্দোলনে নিহত ওয়াসিম আকরামকে প্রথম শহীদ দাবি করে বলেন- “আমি শহীদ আবু সাঈদের অবদান কখনোই অস্বীকার করি না। তবে ঘটনার নিরিখে যদি সময় অনুযায়ী বিচার করি, তাহলে প্রথম শহীদ হচ্ছেন ওয়াসিম আকরাম। তিনি ১৬ জুলাই বিকেল সাড়ে চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আর আবু সাঈদের মৃত্যুর সময় রাত।”

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন ওয়াসিম আকরামকে প্রথম শহীদ দাবি করে আবু সাঈদের মৃত্যুর সময় নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি সঠিক নয়। আবু সাঈদের মৃত্যু রাতে নয়, বরং বিকেল তিনটার আগেই ঘটে। আবু সাঈদ দুপুর ২ টা ১৯ মিনিটের দিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় নিস্তেজ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে যেতে যেতেই তার মৃত্যু হয়।  বিকেল ০৩ টা ০৫ মিনিটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবু সাঈদকে মৃত ঘোষণা করে ডেথ সার্টিফিকেট দেয়৷

অনুসন্ধানে গত ১৬ জুলাই দ্য ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে দুপুর ৪:০১ মিনিটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সেদিন দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আবু সাঈদ নিহত হন। 

১৬ জুলাই সন্ধায় প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দিন বেলা ২টার দিকে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় আহত হন আবু সাঈদ। পরে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে, হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশিকুল আরেফিন।

পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় ঢলে পড়ার মুহুর্তের সময় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ঘটনার দিন দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেজের একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ওই লাইভ ভিডিওটির ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডে আবু সাঈদকে গুলিবিদ্ধ হতে, ১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে তাকে রাস্তায় লুটিয়ে পড়তে এবং ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে কয়েকজন ব্যক্তিকে তাকে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। লাইভ ভিডিওর টাইমলাইন অনুযায়ী, আবু সাঈদ দুপুর ২টা ১৮ মিনিটের দিকে নিস্তেজ অবস্থায় রাস্তায় ঢলে পড়েন।

অপরদিকে বেলা ৩টা ৫৯ মিনিটে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের এক প্রতিবেদনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেওয়া আবু সাঈদের মৃত্যুর প্রমাণপত্রের ছবি পাওয়া যায়। প্রমাণপত্র অনুযায়ী, আবু সাঈদকে বেলা ৩টা ০৫ মিনিটে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। বিকেল ৪টা ১৮ মিনিটে ঢাকা পোস্টের একটি প্রতিবেদনেও মৃত্যুর প্রমাণপত্রের অন্য একটি ছবি পাওয়া যায়। ৪টার পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টেও (,) একই প্রমাণপত্র প্রচার হতে দেখা যায়।

দৈনিক ডেইলি সানের বাংলা সংস্করণে ৪টা ১৩ মিনিটে আবু সাঈদের মৃত্যুর ব্যাপারে হাসপাতালের মৃত্যুর প্রমাণপত্রের তথ্যের বরাতে লেখা হয়, আবু সাঈদকে বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়।

Image by Rumor Scanner

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক ফেসবুক পেজ BRUR Campus এ “সরাসরি রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে” শিরোনামে বিকেল ৩.৫৯ মিনিটের একটি লাইভে শিক্ষার্থীদের আবু সাঈদের মৃত্যুর প্রতিবাদে তার মৃতদেহ নিয়ে মিছিল করতে করতে রংপুর মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে স্লোগান দিতে দিতে বেরিয়ে মূল সড়কে আসতে দেখা যায়। 

উপরিউক্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায়— আবু সাঈদ রাতে নয়, দিনের বেলা বিকেল তিনটার আগেই নিহত হন।

এদিকে বিডি নিউজ২৪-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ষোলশহর থেকে ৪:৩০ মিনিটের দিকে শহিদ ওয়াসিম আকরামের মৃত্যুর খবর আসে। ডেইলি স্টারের ওই দিনের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলামের বক্তব্য থেকে জানা যায়, “বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত দুই জন হলেন মো. ফারুক (৩২) ও ওয়াসিম আকরাম (২৪)।” তবে, ওয়াসিম আকরামের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর সময় উল্লেখ করা হয় ০৬ টা ৫০ মিনিট।

Image By Rumor Scanner

সুতরাং, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ও বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেনের বক্তব্যে দাবি করা ‘আবু সাঈদ রাতে মারা গেছেন’ শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img