সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “শোক সংবাদ আনবার নাজাহ নামের এই মেয়েটির দেশের বাড়ি ফেরীঘাট পাড়া, পাবনা । বর্তমান ঠিকানা মিরপুর -১২, ঢাকা । স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকা এসেছিলো। মেয়েটি অসুস্থ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে…ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না-ইলাইহে রাজিউন। মেয়েটির লাশ জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টাতে Emory Hospital রয়েছে। পরিবারের সাথে যোগাযোগ কিংবা খোজ পেতে সকলে শেয়ার দিয়ে পরিবারকে জানাতে সাহায্য করুন…।।” প্রচারিত ছবিটিতে একজন নারীর ছবিসহ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা লেখা দেখতে পাওয়া যায়।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত আনবার নাজাহ সম্প্রতি নিহত হননি বরং প্রায় দুইমাস পূর্বে গত মে মাসের প্রথমার্ধে নিহত হয়েছেন। এছাড়া, আনবারের পরিবার এ বিষয়ে ইতোমধ্যে অবগত আছে এবং আনবারকে দাফনও করা হয়ে গিয়েছে।
অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ এর ওয়েবসাইটে ‘আটলান্টায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নাজাহর মৃত্যু এখনও রহস্যময়’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২২ মে তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে একটি ছবির সংযুক্তি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে সংযুক্ত ছবির হুবহু মিল পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের পর সুন্দর ভবিষ্যতের অভিপ্রায়ে ঢাকার ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)’র অর্থনীতি বিভাগের মেধাবী ছাত্রী আনবার নাজাহ (২৬) ২০২৩ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার দেড় বছর পর চলতি মাসের (গত মে মাসের) প্রথমার্ধে জর্জিয়া স্টেটের আটলান্টাস্থ ইমোরি জোন্স ক্রিক হাসপাতালে মারা যান। তার এ মৃত্যুকে রহস্যজনক বলে মনে করা হচ্ছে। সাবেক সহপাঠিসহ সচেতন প্রবাসীরা আনবার নাজাহ’র এই অকাল মৃত্যুর কারণ উদঘাটন এবং মরদেহ তার মা-বাবার কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন। আটলান্টাস্থ সামাজিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব জর্জিয়া’ এবং ‘বাংলাধারা’র সভাপতি মাহবুব ভূঁইয়া ২১ মে রাতে এ সংবাদদাতাকে আরো জানান, আনবার নাজাহ এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ডেভিড উ নিউবাই নামক এক আমেরিকানের সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আটলান্টার জোন্স ক্রিক সিটিতে স্বামীর সাথে বাস করছিলেন। আনবারের বাবা ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা জাকিউর রহমান জিতুর সাথে কথোপকথনের উদ্ধৃতি দিয়ে মাহবুব ভূইয়া জানান, আনবার ২ মে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ৩ মে ডেভিডের সাথে ফোনে কথা বলার সময় ফেসটাইমে আনবার গুরুতর অবস্থায় ইমোরি জোন্স ক্রিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার দৃশ্য দেখিয়েছেন। ৯ মে পর্যন্ত জিতুর সাথে ডেভিডের যোগাযোগ ছিল। আনবার হাসপাতালে অচেতন থাকায় কিছুই জানতে পারেননি জিতু। ৩ দিন পর ১২ মে ডেভিড তার শ্বশুরকে অবহিত করেন যে ১১ মে তাকে দাফন করা হয়েছে স্থানীয় মুসলিম গোরস্থানে।…”
এছাড়াও, এ বিষয়ে ‘খবর সংযোগ’ নামক গণমাধ্যমে গত ২৩ মে তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী আনবার নাজাহ (২৬) গত সপ্তাহে আমেরিকার আটলান্টার একটি হাসপাতালে মারা যান। এরপর পরিবারকে না জানিয়ে মরদেহ দাফন করে ফেলেন তার স্বামী ডেভিড উ নিউবাই।…নাজাহর বাবার সঙ্গে তার স্বামীর যোগাযোগ ছিল ৯ মে পর্যন্ত। এর তিন দিন পর ১২ মে ডেভিড নাজাহর বাবাকে অবহিত করেন যে, ১১ মে নাজাহকে দাফন করা হয়েছে স্থানীয় মুসলিম গোরস্থানে। অথচ মৃত্যুর খবরটি জানায়নি ডেভিড।”
অনুসন্ধানে এ বিষয়ে গত মে মাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নানা পোস্ট হতে দেখা যায়। ‘Dream USA Group – Mock & Visa applications’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে এ বিষয়ে গত ২১ মে তারিখে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে বলা হয়, “গুজব ছড়ানো বন্ধ করুন! নাজাহ আনবার গত সপ্তাহে মারা গেছেন এবং তার পরিবার এই বিষয়ে অবগত আছে।… তার বোন, নিহা আনবার, ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত করেছেন যে তারা সমস্ত কিছু সঠিকভাবে সামলাচ্ছেন। আমরা সবাইকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি যে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন।” (অনূদিত)।
সুতরাং, গত মে মাসে নিহত হওয়া নাজাহ আনবার সম্প্রতি নিহত হয়েছেন এবং তার পরিবারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Bangladesh Pratidin – আটলান্টায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নাজাহর মৃত্যু এখনও রহস্যময়
- Khobor Sangjog – আমেরিকায় বাংলাদেশি তরুণীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য
- Dream USA Group – Mock & Visa applications – Facebook Post