সম্প্রতি “সেনাবাহিনীর বীরত্ব নিরস্ত্র মানুষের উপর। দেখুন কিভাবে মানুষ কেমেরার সামনে খুন করতে যাচ্ছিল। শুনুন তাদের ভাষা! হয়ত, কেমেরা ছিল বলে লোকটা বেঁচেগেলো। ছি সেনাবাহিনী, ছিঃ” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক সাধারণ মানুষকে নির্যাতনের নয় বরং, দিনাজপুরে মাদকদ্রব্যসহ আটক এক ব্যক্তিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃক মারধরের ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওর কী-ফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘জনপদ সংবাদ’ এর ফেসবুক পেজে ২০২৫ সালের ২০ জুন তারিখে ‘৮০ পিছ নি’ষি’দ্ধ টাপেন্টাডল ট্যাবলেট ও মোটরসাইকেল সহ ১ জনকে দিনাজপুর থেকে আ’ট’ক করেছে বিজিবি।’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিন্ন ফ্রেমের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ২৮ সেকেন্ড অংশ থেকে ৩৭ সেকেন্ড হুবহু অংশের মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
পরবর্তী, একই ঘটনায় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঠাকুরগাঁও সংবাদের ওয়েবসাইটে গত ১৯ জুন “দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে ৮০পিছ নিষিদ্ধ টাপেন্টাডল ট্যাবলেট এবং মোটরসাইকেল সহ ১জনকে আটক করেছে বিজিবি” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৯ জুন বোচাগঞ্জ উপজেলার ৫নং- ছাতইল ইউনিয়নের মাহের পুর বাজার থেকে আফসার আলী নামে এক ব্যক্তিকে ৮০ পিস নিষিদ্ধ টাপেন্টাডল ট্যাবলেট এবং একটি ৮০ সিসি ডায়াং রানার মোটরসাইকেল সহ আটক করে বিজিবি।
সেসময় এ বিষয়ে বিভিন্ন স্থানীয় গণমাধ্যম সংবাদ (১, ২, ৩) প্রচার করে।
সুতরাং, দিনাজপুরে মাদকদ্রব্যসহ আটক এক ব্যক্তিকে বিজিবি কর্তৃক মারধরের ভিডিওকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক সাধারণ মানুষকে নির্যাতনের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ২৩৫ বিশিষ্ট নাগরিকদের নামে আন্তবর্তীন কালিন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডা: মোহাম্মদ ইউনুসের ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল দুর্নীতি দামন কোর্টে দায়ের করা পদ্মাসেতু দুর্নীতির মামলা থেকে নির্দোষ খালাস পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ ক্যাপশনে একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৩৫ বিশিষ্ট নাগরিকের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক বাংলাদেশ কিংবা বাংলাদেশের বাহিরে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। ২০১২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা যেটির কার্যক্রম ২০১৪ সালে গোপনে বন্ধ করে দেওয়া হয়, গত ০১ জুলাই দুদকের পক্ষ থেকে মামলাটি নতুন করে চালু হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, দুটি পুরোনো ভিন্ন ঘটনায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী রিম আল হাশিমির সাথে অন্যান্য ব্যক্তির একাধিক ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।
ছবি যাচাই–১
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রথম ছবিটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Comparison: Rumor Scanner
ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি দুবাইকে ‘এক্সপো ২০২০’ এর আয়োজক হিসেবে ঘোষণা করার মুহূর্ত উদযাপনের চিত্র। উক্ত ছবিতে উপস্থিত আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আল নাহিয়ান ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের পোশাক ও হাতে থাকা বস্তু এবং ছবিটির পারিপার্শ্বিকতার সাথে আলোচিত ছবিটির মিল রয়েছে।
অর্থাৎ, ছবিটি ২০১৩ সালে দুবাইকে ‘এক্সপো ২০২০’’ এর আয়োজক হিসেবে ঘোষণা করার মুহূর্ত উদযাপনের ঘটনার।
ছবি যাচাই– ২, ৩, ৪
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Miroslava Drobová নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর প্রকাশিত পোস্টে একাধিক ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিগুলোর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ছবিটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Comparison: Rumor Scanner
পোস্টটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ছবিগুলো ২০২১ সালে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০’ এর গ্র্যান্ড গালা প্রেজেন্টেশন উপলক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী রিম আল হাশিমির স্লোভাকিয়ার প্যাভিলিয়ন পরিদর্শনের মুহূর্তের চিত্র।
উল্লেখ্য, International Anti-Corruption Court একটি প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক আদালত যা দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইন প্রয়োগকে শক্তিশালী করার প্রয়াস রাখে, এটি বর্তমানে সক্রিয় কোনো আদালত নয়। এছাড়া, এটি ব্রিটেন বা কোনো একক দেশের আদালত হিসেবে প্রস্তাবিত নয়। তাই, ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন আদালত থেকে পদ্মাসেতু দুর্নীতি মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৩৫ বিশিষ্ট নাগরিকের নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে খালাস পাওয়ার তথ্যটি বানোয়াট।
এছাড়া, ২০১২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা, যেটির কার্যক্রম ২০১৪ সালে গোপনে বন্ধ করে দেওয়া হয়, গত ০১ জুলাই দুদকের পক্ষ থেকে মামলাটি নতুন করে চালু হয়েছে। উক্ত মামলাটি দুদকের পক্ষ থেকে দায়ের করা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক নয়।
উল্লেখ্য, Tamanna Akhter Yesman নামে পরিচালিত এই ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ভুয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমিরর ছবি ব্যবহার করে এই ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে রাজনৈতিক প্রভাব তৈরির চেষ্টা নিয়ে গত ১৯ জুন বিস্তারিত ফ্যাক্টস্টোরি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে কথিত মামলা থেকে শেখ হাসিনাসহ ২৩৫ বিশিষ্ট নাগরিকের নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে খালাস পাওয়ার ছবি দাবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রী রিম আল হাশিমির সাথে অন্যান্য ব্যক্তির একাধিক ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, “New Project for Bangladeshi Citizens” শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, সরকার একটি বিনিয়োগ প্লাটফর্ম চালু করেছে যেখানে একজন নাগরিক প্রতি মাসে প্রায় ১২ কোটি টাকা আয় করতে পারবে এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ এ বিষয়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। এছাড়া ভিডিওটিতে আরো দাবি করা হয়েছে, মাত্র ৩০৫০০ টাকা বিনিয়োগ করলেই মাসে প্রায় ১২ কোটি টাকা আয় করার নিশ্চয়তা রয়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকার একটি বিনিয়োগ প্লাটফর্ম চালু করেছে এবং সেখানে ৩০৫০০ টাকা বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করা যাবে- শীর্ষক দাবিটি ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে, সংস্কার প্রসঙ্গে দেশীয় ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম এখন টিভিতে দেওয়া অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিওকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি থেকে প্রাপ্ত স্থিরচিত্র রিভার্স সার্চের মাধ্যমে দেশীয় ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম ‘এখন টিভি’ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৯ জুন তারিখে “সংস্কারের ভেতরের প্রশ্ন নিয়ে মুখোমুখি ড. আলী রীয়াজ” শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
৮ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড সময়ের উক্ত ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর ভিজুয়াল সাদৃশ্যতা থাকলেও অডিওর (ভয়েস) সঙ্গে অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। উক্ত সাক্ষাৎকারে ড. আলী রীয়াজকে এরূপ বিনিয়োগ উদ্যোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।
এছাড়া, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ড. আলী রীয়াজের কন্ঠস্বর, ঠোঁটের অস্বাভাবিক নড়াচড়া এবং স্বাভাবিক উপস্থাপনে কিছুটা অমিল দেখতে পাওয়া যায়, যেটা আসল সাক্ষাৎকারে পরিলক্ষিত হয়নি।
পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে অনুসন্ধানেও সরকারের এরূপ বিনিয়োগ উদ্যোগের বিষয়ে কোনো তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত হতে ভিডিওটি ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ টুলে পরীক্ষা করে রিউমর স্ক্যানার। টুলটির তিনটি পৃথক মডেল ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনায় ৯৫ শতাংশের বেশি স্কোর দিয়েছে। এর মধ্যে ‘AVSRDD (2025)’ মডেলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি করা ড. আলী রীয়াজের সাক্ষাৎকারের ভিডিওকে সরকার একটি বিনিয়োগ প্লাটফর্ম চালু করেছে দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ না করলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি প্রায় ১২ লক্ষ বার দেখা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান কর্তৃক প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া সংক্রান্ত কোনো ঘটনা ঘটে নি বরং, ভিন্ন ঘটনার ভিডিওর অডিও অংশ সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওতে থাকা বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম বাংলা ভিশনের লোগোর সূত্র ধরে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যমটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৫ সালের ১২ জুলাই ‘সন্ধ্যা ৭:৩০ টার বাংলাভিশন সংবাদ | ১২ জুলাই ২০২৫’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ২২ মিনিট ০০ সেকেন্ড অংশ থেকে ২২ মিনিট ১৭ সেকেন্ড অংশের হুবহু মিল রয়েছে।
উক্ত ভিডিওটিতে সংবাদ পাঠিকাকে “যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে দ্বিতীয় দফার বাণিজ্য আলোচনার তৃতীয় ও শেষ দিনে কিছু বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে কয়েকটি বিষয়ে এখননো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এদিকে তৈরি পোশাক মালিকদের আশা শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ঘোষিত মার্কিন শুল্ক কমবে। আর শুল্ক কতটা কমানো যাবে তা নির্ভর করছে সফল দর কষাকষির ওপর।” বলতে শোনা গেলেও আলোচিত ভিডিওতে থাকা “ ড. ইউনূসকে গ্রেফতার করে জেলে ঢোকানোর নির্দেশ দিলেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। তিন উপদেষ্টাকে বিএনপির মুখপাত্র আখ্যায়িত করে এনসিপির হুঁশিয়ারি। ইশরাককে শপথ পড়াতে বাধা নেই।” শুনতে পাওয়া যায় নি।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি অডিও অংশটি সম্পাদিত।
এছাড়া অন্যান্য গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্তসূত্রে আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ না করলে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর অডিওটি সম্পাদিত।
সম্প্রতি, ‘চট্টগ্রামে এনসিপির মহিলা সমন্বয়ক কে গণধোলাই দিল সাধারণ জনগণ’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামে এনসিপির মহিলা সমন্বয়ককে গণধোলাইয়ের ভিডিও নয় বরং, এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে জনতার পিটুনির ঘটনার ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ‘Rtv News’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৫ সালের ১৯ মার্চ “ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ঈদ বাজারে হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পি’টু’নি” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির শুরু থেকে ১৬ সেকেন্ড অংশের হুবহু মিল রয়েছে।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে ‘The Daily Morning Voice’ নামক একটি ফেসবুক পেজেও একই তথ্যসংবলিত আলোচিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মহিলা সমন্বয়ক বলে কোনো পদ নেই।
সুতরাং, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে জনতার পিটুনির ঘটনার দৃশ্যকে চট্টগ্রামে এনসিপির মহিলা সমন্বয়ককে গণধোলাইয়ের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে দিনভর হামলা, সংঘর্ষ এবং ভাংচুরের ঘটনায় গত বুধবার (১৬ জুলাই) রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক ও লঞ্চঘাট এলাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এখন অবধি ০৫ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
এরই প্রেক্ষিতে, গোপালগঞ্জের ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে দোষারোপ করে বাংলাদেশ পুলিশের সংবাদ সম্মেলন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটিতে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশকে বলতে দেখা যায়, রাজাকার ওয়াকারের নির্দেশে গোপালগঞ্জ রক্তরঞ্জিত হয়েছে। প্রতেকটা প্রাণ মূল্যবান। এসব বর্বরতা থেকে তারা ফিরে আসুক। আমরা চেষ্টা করেছিলাম বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু ওয়াকারেরা বাংলাদেশকে গণহত্যার স্কোয়াড (অস্পষ্ট) মাঠ বানিয়ে ফেলেছে। এটা পরিতাপের বিষয় যে সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে আমরা এই রাজাকার দুষ্টু ওয়াকারের লাগাম টানতে পারছি না। কিন্তু জনগণ তা পারে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গোপালগঞ্জের ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে দোষারোপ করে পুলিশের সংবাদ সম্মেলন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কথিত এই সংবাদ সম্মেলনের ভিডিওর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও রিউমর স্ক্যানার টিমের বিশ্লেষণে ভিডিওতে এআই-জনিত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে। যেমন – পুলিশের পোশাক, ভয়েস, বুমে অজ্ঞাত গণমাধ্যমের লোগো। তাছাড়াও, ভিডিওটি তিনটি অংশ সংযুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
প্রথম অংশ – রাজাকার ওয়াকারের নির্দেশে গোপালগঞ্জ রক্তরঞ্জিত হয়েছে। প্রতেকটা প্রাণ মূল্যবান। এসব বর্বরতা থেকে তারা ফিরে আসুক।
দ্বিতীয়াংশ – আমরা চেষ্টা করেছিলাম বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু ওয়াকারেরা বাংলাদেশকে গণহত্যার স্কোয়াড (অস্পষ্ট) মাঠ বানিয়ে ফেলেছে।
তৃতীয়াংশ – এটা পরিতাপের বিষয় যে সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে আমরা এই রাজাকার দুষ্টু ওয়াকারের লাগাম টানতে পারছি না। কিন্তু জনগণ তা পারে।
প্রত্যেক অংশ ৮ সেকেন্ড করে।
পাশাপশি ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির প্রত্যেকটি অংশের দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড। পরবর্তীতে, বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে ভিডিওটি এআই (AI) কন্টেন্ট ডিটেকশন টুল ‘Cantilux’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।
সুতরাং, গোপালগঞ্জের সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে দোষারোপ করে বাংলাদেশ পুলিশের সংবাদ সম্মেলন দাবিতে এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ২৮ জুলাই ময়মনসিংহে গণজমায়েত করে দলটি। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, গোপালগঞ্চের মত ময়মনসিংহেও তারা স্থানীয়দের হামলার শিকার হয়েছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এনসিপির নেতাকর্মীদের হামলার ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ময়মনসিংহের নয়। বরং, গোপালগঞ্জে হামলা শিকার এনসিপি নেতাকর্মীদের সুরক্ষার জন্যে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নেওয়ার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ময়মনসিংহে এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার তথ্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে BANGLA STATION নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৬ জুলাই একই ভিডিওটি প্রচারিত হতে দেখা যায়।
ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, এটি গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জের চিত্র। সেদিন এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে তৈরি হওয়া গণপ্রতিরোধে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে হাসনাত আবদুল্লাহসহ বাকি নেতাকর্মীদের জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ভিডিওটি সেই মুহুর্তে ধারণ করা। এছাড়াও ভিডিওটিতেও গণমাধ্যম কর্মীকে একই কথা বলতে শোনা যায়।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে সমাবেশ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি বহরে হামলার পর জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীরা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থান নেন। প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে মূল লাইভ ভিডিওটি পাওয়া না গেলেও একই সময় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের গেটের বাইরে থেকে চ্যানেল ২৪-এর সরাসরি সম্প্রচারকৃত আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উভয় ভিডিওতেই হাসনাত আবদুল্লাহকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নেওয়ার পর গেটের বাইরে MUFI 60 লেখা জার্সি পরিহিত ব্যক্তি ও টুপি-পাঞ্জাবি পরিহিত একজন দাড়িওয়ালা ব্যক্তিকে দেখতে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ভিডিওটি ময়মনসিংহের কোনো ঘটনার নয়, বরং ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের।
উল্লেখ্য, গত ২৮ জুলাই ময়মনসিংহের টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত এনসিপির গণজমায়েত কর্মসূতিতে বক্তব্য প্রদানের পর অসুস্থ হয়ে পরেন হাসনাত আবদুল্লাহ। পরবর্তীতে তিনি নেক্সাস নামে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
সুতরাং, গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হওয়া হামলার ঘটনায় তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার ভিডিওকে পুনরায় ময়মনসিংহে তাদের ওপর হামলা হওয়ার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি ‘বিপুল পরিমাণে দেশি ও বিদেশি অস্ত্রসহ জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির ৬ নেতা আটক যৌথ বাহিনীর অভিযানে’ শিরোনামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদারীপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে দেশী-বিদেশী অস্ত্র উদ্ধার ও ৬ জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) জড়িয়ে ঢাকা পোস্ট এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। মূলত, গত ২৫ জুলাই মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের ঘুনসি গ্রামে যৌথ বাহিনীর অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র উদ্ধার ও ৬ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন মাদারীপুর সদর উপজেলার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সমন্বয়কারী তুষার সব্যসাচীর বাবা মিলন সব্যসাচী ওরফে মিলন মাতুব্বর।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে ঢাকা পোস্টের লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ২৫ জুলাই, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে ঢাকা পোস্টের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ঢাকা পোস্টের প্রচলিত ফটোকার্ডের শিরোনামের ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ফন্টের পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়।
ঢাকা পোস্ট ব্যতীত অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিকে সমর্থন করে এমন কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তবে, ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে গত ২৫ জুলাই ‘যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক ৬’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডে যুক্ত ছবিটির মিল রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, মাদারীপুরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে বিদেশি পিস্তল, কাটা রাইফেল ও এয়ারগানসহ বিপুল পরিমাণে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গত ২৫ জুলাই ভোররাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের ঘুনসি গ্রামে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়।
এ সময় মাদারীপুর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র ও সদর উপজেলার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সমন্বয়কারী তুষার সব্যসাচীর বাবা মিলন সব্যসাচী ওরফে মিলন মাতুব্বরকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। তিনি ওই গ্রামের মৃত আ. করিম সব্যচারীর ছেলে। মিলন মাতুব্বর সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খানের ঘনিষ্ঠ লোক বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
একইসঙ্গে আরও তিন নারীসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন—সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের ঘুনসি গ্রামের শাহ আলম মাতুব্বরের ছেলে কামাল মাতুব্বর (৫৩) ও মনু মাতুব্বর (৫০), কালাম মাতুব্বরের স্ত্রী লাকি বেগম (৪৫), মফিজ মাতুব্বরের স্ত্রী পারুল বেগম (৪৫) ও শিহাব মাতুব্বরের স্ত্রী খাদিজা বেগম (২৩)।
এ বিষয়ে ২৫ জুলাই দুপুরে মাদারীপুর সেনা ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় সেনাবাহিনী জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ে ঘুনসী এলাকায় অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করেন সেনা সদস্যরা। এ অভিযানে একই বংশের ৭টি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র রাখার অপরাধে তিন নারীসহ ছয়জনকে আটক করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পরে উদ্ধারকৃত বিদেশি ও দেশীয় অস্ত্রসহ আটককৃতদের সদর মডেল থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে মাদারীপুর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র ও সদর উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সমন্বকারী তুষার সব্যসাচী বলেন, বাড়িতে নির্মাণকাজ চলায় গত এক সপ্তাহ ধরে আমার বাবা প্রতিবেশী এক চাচার বাড়িতে রাতে আশ্রয় নিতেন। ওই বাড়িতে অভিযান চালান সেনা সদস্যরা। এ সময় আমার বাবাকেও আটক করেন তারা। কিন্তু আমার বাবা ও আমি এসব অস্ত্র মজুদের বিষয়ে কিছুই জানি না। আমরা কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নই। আমার বাড়িতে সেনাবাহিনীর কোনো অভিযানও হয়নি।
এই বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে ২৫ জুলাই ‘মাদারীপুরে বিদেশি অস্ত্র-রাইফেল উদ্ধার’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই চিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়।
সুতরাং, ‘বিপুল পরিমাণে দেশি ও বিদেশি অস্ত্রসহ জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির ৬ নেতা আটক যৌথ বাহিনীর অভিযানে’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।
সম্প্রতি বাংলাদেশি টিভি অভিনেত্রী তানজিন তিশার ছবি দাবিতে ‘তানজিন তিশা:-)🥰💝💯’ ক্যাপশনে একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো অভিনেত্রী তানজিন তিশার নয়। প্রকৃতপক্ষে, একজন ভারতীয় মডেল ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে অভিনেত্রী তানজিন তিশার ফেসবুক পেজ ও ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট যাচাই করে আলোচিত ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, Pratima Pramanick নামক ভারতীয় মডেল ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট গত ১১ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্টে কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এসব ছবির সাথে আলোচিত ছবিগুলোর আংশিক সাদৃশ্য রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিগুলোর সাথে এসব ছবিতে থাকা ব্যক্তির পোশাক, অঙ্গভঙ্গি ও পারিপার্শ্বিক সবকিছুর মিল রয়েছে কিন্তু ছবিগুলোতে থাকা নারীদের চেহারা ভিন্ন। প্রকৃতপক্ষে, মূল ছবিগুলোতে উক্ত ব্যক্তির মুখমণ্ডলের স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তানজিন তিশার মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
উক্ত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের বিবরণী থেকে জানা যায়, ছবির ব্যক্তির নাম প্রতিমা প্রামাণিক এবং তিনি একজন ভারতীয় মডেল ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। একই পোশাক পরিহিত তার একাধিক ছবির পোস্ট (১, ২) উক্ত ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হয়েছে।
সুতরাং, অভিনেত্রী তানজিন তিশা ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো সম্পাদিত।
সম্প্রতি, ভারতের দিল্লীতে বাংলাদেশের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের সামনে কথা বলছেন দাবি করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শেখ হাসিনার ভাষণের আলোচিত এই ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালে ১৭ জুলাই দেশব্যাপী আন্দোলন চলাকালীন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া তার ভাষণের ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করে ও ভিন্ন অডিও যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। পর্যালোচনায় ২ ঘন্টা ১৮ মিনিটের এই ভিডিওতে শেষ হাসিনার বক্তব্য প্রদানের পাশাপাশি দর্শক-শ্রোতাদের বিভিন্ন ধরনের ফুটেজ দেখানো হয়। যাতে ভারতীয় রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন বিদেশী ব্যক্তিত্বদের দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ভিডিওগুলোর আসনের ধরন ও ফুটেজের ধরনের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যা থেকে ধারণা করা যাচ্ছে যে ২ ঘন্টার এই ভিডিওটি বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের ফুটেজ সমন্বয়ের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও পুরো ভিডিওতে শেখ হাসিনাকে ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গে অসাঞ্জস্যপূর্ণভাবে কথা বলতে শোনা যায়। যা থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, ভিডিওটির মত অডিওটিও বিভিন্ন সময় দেওয়া শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে।
পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশিয় কিংবা ভারতীয় গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের দিল্লিতে শেখ হাসিনার কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানের তথ্য পাওয়া যায়নি।
শেখ হাসিনার ভাষণের ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে এটির কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Maasranga News-এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই সরাসরি সম্প্রচারিত শেখ হাসিনার ভাষণের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির শেখ হাসিনার পরনের শাড়ি, চশমা, বুকের বা দিকে থাকা ব্যাজ এবং দুই হাতের অবস্থনের মিল রয়েছে। কিন্তু ভিডিও দুটির ব্যাকগ্রাউন্ড, পতাকা এবং টেবিলের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। প্রাপ্ত ভাষণের ভিডিওটি মূলত, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশব্যাপী চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের সরাসরি সম্প্রচারকৃত ভিডিও। যেখানে তিনি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীরা ন্যায়বিচার পাবেন বলেও ভাষণটিতে তাকে সবাইকে আশ্বস্ত করতে শোনা যায়।
এছাড়াও পূর্বে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রদানের আলোচিত এই ভিডিওটি ভিন্ন অডিওর সাথে প্রচার হতেও দেখা যায়। সেসময় তিনি লাইভে এসে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছিল।
অর্থাৎ, গতবছর জুলাইয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া শেখ হাসিনার ভাষণের ভিডিওটি সম্পাদনার মাধ্যমে তার সাথে ভিন্ন ভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও অডিও যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, বাংলাদেশের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ভারতের দিল্লীতে বিশ্ব নেতাদের সামনে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রদানের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড বা সম্পাদিত।