Home Blog Page 50

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় মারধরের শিকার দাবিতে প্রচার 

0

সম্প্রতি, ‘তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সুনামগঞ্জ পৌরসভা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকেরকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে যাই আজকে স্বাধীন দেশ দেশের এই অবস্থা হলে একটি মানুষও বর্তমানে নিরাপদ নাই আল্লাহ আপনি বিচার করুন এ দেশ’- শীর্ষক ক্যাপশনে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত একাধিক ছবি যুক্ত করে একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

পোস্টগুলোতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় বসে আছেন। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সুনামগঞ্জ পৌরসভার একটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিকে মারধরের দাবিতে প্রচারিত ব্যক্তিটি আওয়ামী লীগের সুনামগঞ্জ পৌরসভার কোনো  ওয়ার্ড এর আওয়ামী লীগ সভাপতি নন এবং তার বাড়িও সুনামগঞ্জ নয়। এমনকি তাকে মারধরও করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, রক্তাক্ত ব্যক্তির নাম বাদল মিয়া। তার বাড়ি নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার চাঁনপুর গ্রামে। গত ২৪ জুলাই সুনামগঞ্জে শান্তিগঞ্জ উপজেলার সুনামগঞ্জ-দিরাই আঞ্চলিক মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনার শিকান হন। আহত অবস্থায় তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেইসময়কার ছবি এগুলো।

অনুসন্ধানে ‘মনির শেখ’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৪ জুলাই সন্ধ্যা ০৬ টা ১৯ মিনিটে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে যুক্ত চারটির ছবির সাথে আলোচিত ছবির মিল রয়েছে। 

Image Comparison By Rumor Scanner 

মনির শেখের পোস্টে দাবি করা হয়, ছবিতে থাকা রক্তাক্ত ব্যক্তিটির বাড়ি খালিয়াজুরী। তিনি সিএনজি এক্সিডেন্ট করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

উক্ত পোস্টে একটি মোবাইল নম্বর যুক্ত করে দেওয়া হয়। ওই মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে মোহাম্মদ নাঈম পরিচয়ে এক ব্যক্তি জানান, ওই ব্যক্তিকে কেউ মারধর করেননি। তিনি সিএনজি এক্সিডেন্ট করে আহত হয়েছিলেন। হাসপাতালে উনার (আহত ব্যক্তির) পরিবারের কেউ না থাকায় ভর্তি নিচ্ছিল না। তখন আমার মোবাইল নম্বর যুক্ত করে পোস্ট করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করেছিল। 

পরবর্তীতে আহত ব্যক্তির প্রতিবেশী মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, ‘প্রচারিত পোস্টটি আমারও চোখে পড়েছে। আসলে বিষয়টি হাস্যকর। তিনি মারধরের শিকার হননি, এক্সিডেন্ট করেছেন। দাবিটি গুজব। আহত ব্যক্তির নাম বাদল মিয়া। তিনি সাধারণ একজন মানুষ।’

আহত বাদল মিয়ার চাচাতো ভাই ফুল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও জানান, বাদল মিয়া সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। বর্তমানে তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

উল্লেখ্য, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ জুলাই দুপুরের দিকে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের গাগলি এলাকায় দিরাই-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে লেগুনা-সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ ০২ জন নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ০৬ যাত্রী। নিহতরা হলেন, সিএনজি চালক প্রদ্যুৎ চক্রবর্তী (৩৫) ও দিরাই উপজেলার কাদিরপুর ধল গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে হুমায়রা বেগম (৪)। আহতরা হলেন— দিরাই উপজেলার ভাঙ্গাডহর গ্রামের সারত দাসের ছেলে জ্যোতিষ দাস (২৬), একই উপজেলার সাদিরপুর গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে হাসান (৩৫), কাদিরপুর ধল গ্রামের মৃত আব্দুল হাসিমের মেয়ে সুফিয়া (১৮), শান্তিগঞ্জ উপজেলার বগলাখারা গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে নাসির উদ্দিন (৩০), সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ওয়েজখালি গ্রামের মৃত শাহিদ মিয়ার ছেলে রুবেল (২৫) এবং নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলার আবরীপুর গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে বাদল মিয়া (৪০)।

সুতরাং, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় মারধরের শিকার হয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

ইসকন সদস্যের দ্বারা মুসলিম নারী নির্যাতনের দৃশ্য দাবিতে স্ক্রিপ্টেড ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, ‘ইসকন সদস্যের ধোঁকায় পড়ে বাড়ি ছাড়া এক পর্দাশীল মুসলিম নারী। প্রতিটি জেলায় জেলায় এমনকি প্রতিটি থানায় এরকম শোনা যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে। এরপরও মুসলিম বোনদের হুঁশ ফিরছে না।’ – এই দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক ছেলে কর্তৃক বোরকা পরিহিত বাচ্চা কোলে থাকা একজনকে নির্যাতন করছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসকন সদস্যের ধোঁকায় পড়ে বাড়ি ছাড়া এক পর্দাশীল মুসলিম নারী নির্যাতনের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল কোনো ঘটনার নয় বরং,কনটেন্ট ক্রিয়েটরের স্ক্রিপ্টেড বা সাজানো ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে, এক ছেলে কর্তৃক বোরকা পরিহিত বাচ্চা কোলে থাকা একজনকে এভাবে প্রাকাশ্যে লাথি দেওয়া এবং বোরকা পরিহিতের কোনো প্রতিবাদ না করতে দেখা যায়। উক্ত ব্যক্তিদের আশেপাশে আর কাউকে দেখা যায়নি। আমাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড বলে প্রতীয়মান হয়।

পরবর্তীতে, ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান অল্ট নিউজ এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২০ মার্চ ‘Yet another scripted video viral with claims of burqa being used for child kidnapping’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot From Altnews

অল্ট নিউজ জানায়, ভিডিওতে দেখা ব্যক্তিটি হলেন অঙ্কুর জাটুসকরণ, যিনি প্রায়শই স্ক্রিপ্টেড ভিডিও পোস্ট করেন। ভিডিওটি তার ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আপলোড করা হয়েছিল। অঙ্কুরের একাধিক ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব-ভেরিফাইড চ্যানেল রয়েছে। এই সব চ্যানেলে সহিংস স্ক্রিপ্টেড ভিডিও পোস্ট করা হয়। কিছু ভিডিওতে কোনো ডিসক্লেমার থাকে না।

অল্ট নিউজ অঙ্কুরের ফেসবুক পেজগুলো পর্যবেক্ষণ করে জানায়,  উভয় পেজেই এই ভাইরাল ভিডিওটির একটি দীর্ঘ সংস্করণ পোস্ট করা হয়েছিল। একটি পেজে এটি ১৯ ফেব্রুয়ারি [২০২৩] এবং অন্য পেজে ২৩ ফেব্রুয়ারি [২০২৩] পোস্ট করা হয়েছিল। ভাইরাল ভিডিওটির দীর্ঘ সংস্করণটি ৭ মিনিটের দৈর্ঘ্যের। এতে একটি ডিসক্লেমার রয়েছে যা ভিডিওর শুরুতে এবং শেষে মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য দেখা যায়। ডিসক্লেমারে অন্যান্য কথার মধ্যে বলা হয়েছে, “এই ভিডিওটি সম্পূর্ণরূপে দর্শকের বিনোদনের জন্য এবং এটি একটি কাল্পনিক কাজ।”

অল্ট নিউজ আরও জানায়, তিনি প্রায়শই সহিংস স্ক্রিপ্টেড ভিডিও পোস্ট করেন যেখানে কোনো ডিসক্লেমার থাকে না, ফলে মানুষ প্রায়শই সেগুলোকে বাস্তব ঘটনা বলে ভুল করে।

এছাড়াও, ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম ‘বুমলাইভ’ (BoomLive) ও FactCrescendo এবং আরব ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম Misbar (মিসবার) এর ওয়েবসাইটে ভিডিওটি নিয়ে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন থেকেও এটি একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও বলে জানা যায়।

উক্ত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনগুলোতে থাকা তথ্যের সূত্র ধরে অঙ্কুর জাটুসকরণ -এর ইউটিউব চ্যানেল (,), এবং ‘Ankur Sharma Films’ ও ‘Ankur Sharma Vines’ নামের ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে 

বর্তমানে এই ভিডিওটির অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। তবে, অ্যাকউন্টগুলোতে একই ব্যক্তির স্ক্রিপ্টেড ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়। 

এছাড়া, আলোচিত ভিডিওতে দেখা ব্যক্তির সাথে অঙ্কুর জাটুসকরণের ইনস্টাগ্রাম ছবির সাথে তুলনা করে দেখা যায়, ভিডিওর ব্যক্তি ও ছবির ব্যক্তির মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। 

 Comparison & Indicated by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত যে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড। এছাড়া, অ্যাকউন্টগুলোতে থাকা লোকেশন থেকে জানা যায়, অঙ্কুর জাটুসকরণ একজন ভারতীয়।

সুতরাং, ভারতীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরের স্ক্রিপ্টেড বা সাজানো ভিডিওকে ইসকন সদস্যের ধোঁকায় পড়ে বাড়ি ছাড়া এক পর্দাশীল মুসলিম নারী নির্যাতিত হওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ক্ষমা চেয়ে ভাইরাল অ্যান্ডি বায়রনের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত বিবৃতিটি ভুয়া

গত ১৬ জুলাই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ব্যান্ড কোল্ডপ্লের একটি কনসার্টে এক অস্বস্তিকর ঘটনার জন্ম দেন মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাস্ট্রোনোমার কোম্পানির সিইও অ্যান্ডি বায়রন। কনসার্ট চলাকালীন তিনি নিজ কোম্পানির এইচআর-প্রধান এক নারী কর্মকর্তাকে জড়িয়ে ধরেন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি গণমাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, অ্যান্ডি বায়রন এ ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন। বায়রনের ক্ষমা চেয়ে দেওয়া বিবৃতি দাবিতে একটি ছবিও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সংবাদে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বায়রনের বিবৃতি দাবিতে বলা হয়, “সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া এক বিবৃতিতে বায়রন বলেন, ‘সময়টা একটি সংগীতময় ও আনন্দঘন রাত হওয়ার কথা ছিল, তবে তা এক গভীর ব্যক্তিগত ভুলে পরিণত হয়েছে — যা জনসম্মুখে ঘটে গেছে। আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি আমার স্ত্রী, আমার পরিবার এবং অ্যাস্ট্রোনোমার টিমের কাছে। একজন সঙ্গী, একজন বাবা এবং একজন নেতা হিসেবে আপনারা আমার কাছ থেকে এর চেয়ে অনেক ভালো কিছু আশা করেন এবং আমি বিশ্বাস করি আপনারা তার যোগ্য।’ নিজের সমালোচনা করে বায়রন বলেন, ‘আমি এমন একজন মানুষ হতে চাই না যে এইভাবে নিজের গড়া প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে। আমি সময় নিচ্ছি আত্মপর্যালোচনার জন্য, নিজের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য এবং ব্যক্তিগত ও পেশাগতভাবে সামনে কী করব, তা নির্ধারণের জন্য। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন আমি সবার কাছে গোপনীয়তা কামনা করছি।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘পাশাপাশি আমি বিষয়টি নিয়েও উদ্বিগ্ন, যে একটি ব্যক্তিগত মুহূর্ত আমার অনুমতি ছাড়াই জনসম্মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি শিল্পী ও বিনোদন জগতকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু আশা করি আমরা সবাই একটু গভীরভাবে চিন্তা করবো। অন্য কারও জীবনের ব্যক্তিগত মুহূর্তকে মানুষের পরিহাসের উপকরণ বানানো কতটা নৈতিক।’ সবশেষে তার প্রিয় এক বন্ধুর একটি গানের লাইন লিখে বলেন, ‘ “আলো তোমার পথ দেখাবে গন্তব্যের দিকে,আর জ্বালিয়ে দেবে তোমার হাড়-মজ্জা, তবে আমি চেষ্টা করব তোমায় সারিয়ে তুলতে।””

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন: ইনকিলাব, বাঙি নিউজ

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের থ্রেডস অ্যাকাউন্টে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাস্ট্রোনোমার কোম্পানির সিইও অ্যান্ডি বায়রন কোল্ডপ্লে কনসার্টের ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে বক্তব্য দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। বরং, অ্যাস্ট্রোনোমার কোম্পানি এর মতে, একটি প্যারোডি অ্যাকাউন্ট থেকে আলোচিত বিবৃতিটির উৎপত্তি হয়েছে।

অনুসন্ধানে আলোচিত প্রযুক্তি কোম্পানি ‘অ্যাস্ট্রোনোমার’ এর এক্স অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করলে গত ১৯ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি এক্স পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটির এক পর্যায়ে বলা হয়, “অ্যান্ডি বায়রন কোনো বিবৃতি দেননি; (এর বিপরীতে) অন্য যেসব খবর আসছে, তা সম্পূর্ণ ভুল।” (অনূদিত) এরপর ১৯ জুলাইয়ের আরেকটি পোস্টে বলা হয়, বায়রনকে ছুটিতে রাখা হয়েছে এবং ২০ জুলাইয়ে আরেক পোস্টে জানানো হয়, “পূর্বে উল্লেখিত অনুযায়ী, অ্যাস্ট্রোনোমার প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই যে মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে, আমরা তা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের নেতৃবৃন্দের কাছে আমরা আচরণ ও জবাবদিহিতার সর্বোচ্চ মান প্রত্যাশা করি, এবং সম্প্রতি সেই মান পূরণ হয়নি। অ্যান্ডি বায়রন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, এবং পরিচালনা পর্ষদ তা গ্রহণ করেছে। পরবর্তী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সন্ধানে পরিচালনা পর্ষদ কাজ শুরু করবে, এ সময় সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পণ্য কর্মকর্তা পিট ডিজয় অস্থায়ী সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবেন।” (অনূদিত) তবে কোথাও বায়রন ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন এরূপ উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার মূহুর্তে বায়রনের লিংকড-ইন বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া, অনুসন্ধানে দেখা যায় আলোচিত বিবৃতিটি বায়রনের আসল কি না এরূপ প্রশ্নের জবাবে অ্যাস্ট্রোনোমার কোম্পানির সাবেক সিইও ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা রি ওয়াকার জানান, এটি ‘সুপার ফেইক’ বা ভুয়া।

এছাড়াও, এ বিষয়ে ফ্রান্সভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ‘এএফপি ফ্যাক্টচেকিং’ এর ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে আলোচিত বিবৃতিটি ভুয়া বলে জানানো হয়। এছাড়াও, প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, অ্যাস্ট্রোনোমারের মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক হুইলার এএফপিকে জানান, “অনলাইনে অ্যান্ডি বায়রনের নামে ছড়ানো বক্তব্যটি সম্পূর্ণ ভুয়া। এটি একটি ট্রোল অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ানো হয়েছে এবং এটি নিঃসন্দেহে ভুয়া”।

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, হুইলার যে “ট্রোল অ্যাকাউন্ট”-এর কথা বলছেন, সেটি হচ্ছে “@PeterEnisCBS” নামের এক্স প্রোফাইল, যেটি ১৭ জুলাই এই ভুয়া বক্তব্যের ছবি পোস্ট করে এবং পরে প্ল্যাটফর্মের নীতিমালা ভঙ্গের কারণে সাসপেন্ড করা হয়। ওই অ্যাকাউন্টটি নিজেকে “CBS News”-এর রিপোর্টার “Peter Enis” হিসেবে পরিচয় দিচ্ছিল, কিন্তু CBS-এর ওয়েবসাইটে ঐ নামে কোনো প্রতিবেদকের লেখা খুঁজে পাওয়া যায়নি। অ্যাকাউন্টটির বায়োর স্ক্রিনশট থেকে জানা যায়, এক সময় সেটিকে “প্যারোডি” হিসেবেও ট্যাগ করা হয়েছিল। অ্যাকাউন্টটি কোনো গণমাধ্যমকর্মীর কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও আলোচিত বিবৃতিটি বায়রনের হওয়ার সপক্ষে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাস্ট্রোনোমার কোম্পানির সিইও অ্যান্ডি বায়রন কোল্ডপ্লে কনসার্টের ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে বক্তব্য দিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত বিবৃতিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

বাংলাদেশি অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির ছবি দাবিতে ভারতীয় মডেলের সম্পাদিত ছবি প্রচার

0

সম্প্রতি, বাংলাদেশী অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি দাবিতে কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো মাহিয়া মাহির নয়। বরং, ইন্টারনেট থেকে আর্চিকা গুপ্তা (Archika Gupta) নামের ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের এক মেয়ের ছবি সংগ্রহ করে তাতে প্রযুক্তির সাহায্যে মাহিয়া মাহির মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিগুলো প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Santanu Karmakar’ নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১১ জুলাই প্রচারিত কিছু ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। ছবিতে উক্ত নারীর মুখমণ্ডলে পার্থক্য ছাড়া অন্য সব উপাদানে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত পোস্ট থেকে জানা যায়, ছবিগুলো ‘Archika Gupta’ নামের একজন নারীর। পোস্টে মেনশন থাকা Archika Gupta -এর ফেসবুক অ্যাকউন্ট থেকেও ছবিগুলো ১১ জুলাই প্রচার করতে দেখা যায়। 

ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, আর্চিকা গুপ্তা (Archika Gupta) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে বসবাস করেন। এছাড়াও জানা যায়, তিনি ফ্যাশন মডেলিং করেন।

অর্থাৎ, মূল ছবিগুলো আর্চিকা গুপ্তা (Archika Gupta) নামের একজন ভারতীয় ফ্যাশন মডেলের।

অনুসন্ধানের স্বার্থে রিউমর স্ক্যানার বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আর্চিকা গুপ্তা (Archika Gupta))-এর ছবির ওপর মাহিয়া মাহির মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করেছে। এতে সম্পাদিত ছবির মতোই অনুরূপ ফলাফল পাওয়া গেছে।

সুতরাং, অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত এই ছবিগুলো সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

  • Santanu Karmakar : Facebook Post
  • Archika Gupta : Facebook Post

রিক্সাওয়ালার মুখে দেশের উন্নয়নের কথা দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাস্তায় নেওয়া একটি সাক্ষাৎকার সদৃশ একটি ভিডিও প্রচার করে ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, “রিক্সাওয়ালার মুখে দেশের উন্নয়নের কথা”।

ভিডিওটিতে একজন নারীর “ভাই, আওয়ামী লীগ যত দুর্নীতি করেছে এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?” প্রশ্নের জবাবে একজন রিকশাওয়ালাকে বলতে শোনা যায়, “কে বলেছে আওয়ামী লীগ দুর্নীতি করেছে? আওয়ামী লীগ দেশের উন্নতি করেছে। এটা আওয়ামী লীগ পালিয়ে না গেলে আমরা বুঝতাম না।”

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত ভিডিওগুলো সম্মিলিতভাবে ৮০ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ৪ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টগুলোতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত ভিডিওটি এককভাবে প্রায় ৬৯ লক্ষ বার দেখা হয়েছে এবং ৪৪ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টটিতে লাইক দেওয়া হয়েছে।

টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দেশের উন্নয়ন করার বিষয়ে রিকশাওয়ালার আসল বক্তব্যের দৃশ্যের নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভয়েস ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।

Screenshot of Claimed Video

এছাড়া, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।

Screenshot: Rumor Scanner/Hive Moderation

এছাড়াও, ভিডিওটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম “হাইভ মডারেশন” এ পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯ শতাংশ।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে আওয়ামী লীগের দেশের উন্নয়ন করার বিষয়ে রিকশাওয়ালার আসল বক্তব্যের দৃশ্য দাবি করে অনলাইনে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

গোপালগঞ্জে বাস দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার 

0

গত ২৮ জুলাই গভীর রাতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে চেয়ারম্যান পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে। এরই প্রেক্ষিতে, ‘পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলা হতে  ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে আসা চেয়ারম্যান পরিবহনের একটি বাস টেকেরহাটে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১২ জন ‘ স্পট ডেথ ‘, অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে ফরিদপুর ও ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। আল্লাহ সকলকে হেফাজত করুক!’ শীর্ষক দাবিতে একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গোপালগঞ্জে বাস দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত হন নি। প্রকৃতপক্ষে উক্ত দুর্ঘটনায় এখন অবধি ১ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিটি বাস চালক। এছাড়া এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন।।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২৫ সালের ২৯ জুলাই “গোপালগঞ্জে বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে, চালক নিহত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে যায়। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরইতলায় ঘটা এ দুর্ঘটনায় চেয়ারম্যান পরিবহনের বাসের চালক রফিক সিকদার (৪৩) নিহত হন। 

 এছাড়া, এই ঘটনায় জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইটে ২০২৫ সাথের ২৯ জুলাই “মধ্যরাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস পুকুরে, চালক নিহত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের লিডার মোহাম্মদ আমিনুর ইসলামের বরাতে বলা হয় বলা হয়, পটুয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা চেয়ারম্যান পরিবহনের একটি বাস মুকসুদপুরে বরইতলা নামক স্থানে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি পুকুরে পড়ে যায়। এতে বাসচালকসহ ১৫ জন আহত হয়। ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের একটি দল আহতদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাসচালককে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম একই তথ্যসংবলিত সংবাদ (,,) প্রচার করে।

সুতরাং, গোপালগঞ্জে বাস দুর্ঘটনায় ১ জন নিহতের ঘটনাকে ১২ জন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র 

উত্তরার আইচি হাসপাতালের নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার 

0

সম্প্রতি, “উত্তরার আইচি হাসপাতালে নিয়োগ” দাবিতে আইচি হাসপাতালের লোগো যুক্ত একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

প্রচারিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটির শর্তাবলীতে উল্লেখ করা হয়, 

১. আগ্রহী প্রার্থীকে অবশ্যই পূর্ণ জীবন বৃত্তান্ত, শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদপত্র ও সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ নিম্ন স্বাক্ষরকারীর বরাবর উক্ত জিমেইল- [email protected] মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
২. অত্র অফিস সরাসরি/হাতে কোন আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
৩. অত্র কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মোতাবেক পদের সংখ্যা হ্রাস/বৃদ্ধি করতে পারবে।
৪. উক্ত তারিখের পর প্রাপ্ত কোনো দরখাস্ত গ্রহণ করা হবে না।
৫. বয়স প্রমাণের জন্য এফিডেভিট গ্রহনযোগ্য নয়।
৬. অসম্পূর্ণ এবং ক্রটিপূর্ণ আবেদন কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে বাতিল বলে গণ্য হবে। প্রাথমিক বাছাই এর পর কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় কেবলমাত্র সর্বাধিক উপযুক্ত প্রার্থীগণকে লিখিত বা মৌখিক অথবা পরিক্ষায় অংশ গ্রহণের মেসেজ এর মাধ্যমে জানানো হবে।
৭. কর্তৃপক্ষ কোন কারণ প্রদর্শন ব্যতিরেকে যে কোন দরখাস্ত গ্রহণ বা বাতিলের ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন এবং এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের কারণে কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রদান করতে কিংবা ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করতে বাধ্য থাকবে না। দরখাস্তের সহিত দাখিলকৃত কাগজপত্র ফেরৎ দেয়া হবে না।
৮. যেকোন প্রকার তদবীর বা সুপারিশ প্রার্থীর অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে।
৯. প্রার্থীকে লিখিত/ মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের জন্য কোন প্রকার টি এ/ ডি এ প্রদান করা হবে না।
১০. আবেদনের সময়সীমা শেষ তারিখ ২৫.০৭.২০২৫ ইং। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উত্তরার আইচি হাসপাতালের নামে প্রচারিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি আইচি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেনি বরং, আর্থিক প্রতারণার উদ্দেশ্যে কথিত এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি আইচি হাসপাতালের নাম ব্যবহার করে প্রচার করা হয়েছে। 

এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতেই কথিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ছবিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের সময় হিসেবে ১৮ জুলাই, ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে এবং ছবির উপরে ‘Aichi Hospital’ এর লোগো এবং নাম যুক্ত আছে। 

পরবর্তীতে, আইচি হাসপাতালের ওয়েবসাইট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

তবে, ‘Aichi Hospital Ltd’ এর ফেসবুক পেজে গত ২৮ জুলাই আলোচিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং ভুয়া জানিয়ে একটি সতর্কবাণী পোস্ট করা হয়। উক্ত পোস্টে আইচি হসপিটাল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি বলে জানিয়ে এ ধরনের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ফাঁদে পা না দেয়ারও অনুরোধ জানায়। 

অর্থাৎ, প্রচারিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি আইচি হাসপাতালের নয়। 

সুতরাং, আইচি হাসপাতালের নামে প্রচারিত এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া ও বানোয়াট। 

তথ্যসূত্র 

  • Aichi Hospital Ltd: Facebook Post 
  • Rumor Scanner’s analysis 

মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা দাবিতে প্রচারিত ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

0

গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এখন অবধি অন্তত ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। এছাড়াও আহত ও দগ্ধ হয়েছে অন্তত শতাধিক, যাদের বেশিরভাগই শিশু শিক্ষার্থী। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা দাবিতে একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এক্সে প্রচারিত ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিহত শিক্ষার্থী দাবিতে প্রচারিত তালিকাটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই তালিকা ছবি তৈরি করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা দাবির এই ছবির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ছবিটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায় এতে, যেমন – ছবিটির উপরের একটি বৃত্তাকার লোগো রয়েছে, যেখানে একটি খোলা বই, 2001, এবং এমন একটি লেখার রয়েছে যা স্বাভাবিক বাংলা ভাষায় নয়। এছাড়া, বৃত্তকার লোগোটির নিচে বাংলায় লেখা ‘মাইলস্টন কুল এন্ড কলেজ’ এবং ইংরেজিতে লেখা ‘MILESTONE SCHOOL & COLLEGE’। তালিকাটিতে ২০ জনের ছবি রয়েছে। ১০ জন ছেলে এবং ১০ জন মেয়ে। ছবির নিচে লেখা রয়েছে ‘নিহত ছাত্র ছাত্রী’।

তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের বিশ্লেষণে নিহত শিক্ষার্থী দাবির এই তালিকা ছবিটিতে এআই-জনিত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে। যেমন – এক. বৃত্তকার লোগোর ভেতরে লেখাটির কোনো অর্থ নির্দেশ করেনা এবং লেখাটি স্বাভাবিক কোনো বাংলা ভাষায় নয়। দুই. বাংলায় লেখা ‘মাইলস্টন কুল এন্ড কলেজ’ লেখাটিতে ‘মাইলস্টন’, ‘কুল’ লেখা রয়েছে। তিন. তালিকাটিতে থাকা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মুখাবয়ব দেখতে প্রায় একই রকম। সাধারণত এআই দিয়ে তৈরি ছবির ক্ষেত্রে এমন অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়।

Indicated by Rumor Scanner

বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ছবিটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট সাইটইঞ্জিনে পরীক্ষা করা হয়। ওয়েবসাইটটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৭ শতাংশ।

Screenshot From Sightengine

তালিকাটির বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল সেকশনের প্রধান শিক্ষক খাদিজা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, এটি নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা নয়। তিনি আরও বলেন, ছবিটি দেখে মনে হচ্ছে Al ছবি। একই বাচ্চার ছবি বার বার দেয়া হয়েছে।

সুতরাং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি একটি তালিকাকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis.
  • Sightengine.
  • Statement : Khadija Akter, Milestone School and College

চাঁদপুরে স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় জামায়াত ইসলামীকে জড়িয়ে ঢাকা পোস্টের নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার 

0

সম্প্রতি ‘চাঁদপুরে লেকের পাড় থেকে স্কুল ছাত্র আল-আমিন লা*শ উদ্ধার!’ ক্যাপশনে ‘চাঁদপুর জেলা কচুয়া উপজেলা জামায়াত নেতার হুমকি বিএনপির নেতা কর্মীদের প্রকাশ্যে হত্যার, এরপরই হত্যা’ শিরোনামে একাধিক ছবি যুক্ত করে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদপুরে স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়ে ঢাকা পোস্ট এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, গত ১২ জুলাই চাঁদপুর শহরের একটি লেক থেকে আল-আমিন নামে এক স্কুলছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনো উদঘাটিত হয়নি। প্রকৃত কারণ জানতে পুলিশের তদন্ত চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে ঢাকা পোস্টের লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ১৩ জুলাই, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে ঢাকা পোস্টের  ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ঢাকা পোস্টের প্রচলিত ফটোকার্ডের শিরোনামের ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ফন্টের পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়। 

ঢাকা পোস্ট ব্যতীত অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিকে সমর্থন করে এমন কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি৷

তবে, ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে গত ১৩ জুলাই ‘শহরের লেক থেকে স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডে যুক্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছবির দৃশ্যের মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চাঁদপুর শহরের লেকের পানি থেকে আল-আমিন (১৭) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত ১২ জুলাই রাত ৯টার দিকে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আল-আমিন চাঁদপুুর সদর রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী প্রধানিয়ার ছেলে। তাদের পরিবার বর্তমানে চাঁদপুর শহরের মমিনপাড়া এলাকায় বসবাস করে। সে চাঁদপুর শহরের গনি মডেল হাই স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল।

পরিবার ও পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি আরও জানায়, শনিবার বিকেলে আল-আমিন বাসা থেকে বের হয়ে চাঁদপুর শহরের হাসান আলী হাই স্কুল মাঠ সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য অঙ্গীকারের সম্মুখে লেকের পাড় এলাকায় কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল। পরে রাত ১০টার দিকে হঠাৎ লেকের পানিতে ভাসমান অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে আনার পর তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান স্বজনরা। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে আল-আমিনের ৭ জন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আটক করে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ। চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমান বলেন, বিষয় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ওয়েবসাইটে ১৩ জুলাই ‘চাঁদপুরে লেক থেকে স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার, আটক ৭ সহপাঠী’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই চিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়। 

সুতরাং, ‘চাঁদপুর জেলা কচুয়া উপজেলা জামায়াত নেতার হুমকি বিএনপির নেতা কর্মীদের প্রকাশ্যে হত্যার, এরপরই হত্যা’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট। 

তথ্যসূত্র

গাজীপুরের প্রেম সংক্রান্ত ঘটনার নয়, এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে জখমের এই ভিডিওটি বরিশালের ভিন্ন ঘটনার

সম্প্রতি, ‘গাজীপুরে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াই ইউনিয়ন বিএনপি’র সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রদলের সভাপতি এক তরুণীকে প্রকাশ্যে পাইপ দিয়ে এলোপাথাড়ি পেঠাচ্ছেন।’ – এই দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এছাড়াও, ভিডিওটিকে ২০২০ সালের ছাত্রলীগ নেতার ভিডিও দাবি করে ২০২০ সালের যুগান্তরের একটি নিউজে আলোচিত ভিডিওর ফ্রেম কোলাজ দেখিয়ে ভিডিওটিকে পুরোনো হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।

ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ‘এভাবেই বটবাহিনী গুজব ছড়িয়েই যাচ্ছে প্রতিনিয়ত! ২০২০ সালের ছাত্রলীগ নেতার ভিডিও ২০২৫ সালে এসে ছাত্রদল বলে চালিয়ে দিলো!’

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি গাজীপুরের প্রেম সংক্রান্ত কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি বরিশালের ঘটনা। উক্ত ঘটনার সাথে প্রেমের কোনো সম্পর্ক নেই। উক্ত ঘটনায় ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্তের পক্ষ থেকে চাঁদা এবং জমি সংক্রান্ত বিষয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হয়েছে। তবে, কোনো পক্ষই তাদের অভিযোগে প্রেম সংক্রান্ত ঘটনা এমন কোনো দাবি করেনি। তাছাড়া, এটি ২০২০ সালের ঘটনাও নয়। এমনকি যুগান্তরের সংবাদ দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটিও সম্পাদিত। যুগান্তরের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পুরোনো একটি সংবাদের ফিচারে আলোচিত ভিডিওটি যুক্ত করে স্ক্রিনশটটি তৈরি করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে থাকা ‘এখন বাংলা টিভি’ লেখার সূত্র ধরে  ‘Ekhon Bangla Tv’ নামক ফেসবুক পেজে গত ২৩ জুলাই ভিডিওটি প্রচার করতে দেখা যায়।

ভিডিওটির ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, ‘আব্বা আব্বা বলে তরুণীর আহাজারি।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন যুবক পাইপ দিয়ে এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়ি আঘাত করছে।
স্থান : উজিরপুর, ধামুরা বাজার।’

Comparison : Rumor Scanner

পেজটি থেকে ভিডিওটির মন্তব্যের ঘরে উল্লেখিত তথ্য থেকে জানা যায়, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুরা বাজারে সোহেল রানা (৪০) নামের এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে পিটিয়ে জখম করার ভিডিও এটি। জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে বুধবার [২৩ জুলাই] বিকেলে ধামুরা বাজারে প্রকাশ্যে এ হামলা হয়। 

জানা যায়, হামলার নেতৃত্ব দেওয়া ধামুরা ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি সাব্বির ব্যাপারী। এবং নির্যাতনের শিকার সোহেল শোলক ইউনিয়নের ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

তবে, ঘটনাটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। সোহেল রানার অভিযোগ, ধামুরা বাজারে তাঁর কাঠ, স্যানিটারি রিং-স্ল্যাব বিক্রি ও চায়ের দোকান রয়েছে। হামলাকারীরা তাঁর প্রতিবেশী। তাঁর কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। টাকা না দেওয়ায় তাঁকে নির্মমভাবে পেটানো হয়। তাঁকে রক্ষা করতে গেলে বাবা আবু বক্কর ও স্ত্রী নেহেরু বেগম হামলার শিকার হন। আহত হয়ে তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর হামলাকারীরা তাঁর চায়ের দোকান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বলেও দাবি করা হয়।

অভিযুক্ত সাব্বিরের বাবা সেলিম ব্যাপারীর দাবি, পাশাপাশি বসতবাড়ি হওয়ায় সোহেল তাঁর ২ শতাংশ জমি দখলে রেখেছেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছে। ২৩ জুলাই বিকেলে সেলিমের স্ত্রী বিরোধীয় জমিতে গেলে সোহেল হামলা করেন। মাকে আঘাতের খবর পেয়ে সাব্বির ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ খবর জানতে পেরে সাব্বিরের ঘনিষ্ঠজন ছাত্রদলের কর্মীরা সোহেলকে পিটিয়েছেন।

পরবর্তীতে, উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় গণমাধ্যম আজকের পত্রিকা, ঢাকা ট্রিবিউন, বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং বরিশালের স্থানীয় অনলাইন সংবাদ মাধ্যম টাইমস অফ বরিশাল -এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে ঘটনাটি গাজীপুরের নয়। এটি বরিশালের ঘটনা। তাছাড়া, উক্ত ঘটনার সাথে প্রেমের কোনো সম্পর্ক নেই। ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্তের পক্ষ চাঁদা এবং জমি সংক্রান্ত বিষয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করলেও প্রেম সংক্রান্ত ঘটনার কোনো তথ্য তাদের অভিযোগে নেই।

যুগান্তরের নিউজ যাচাই

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে যুগান্তরের স্ক্রিনশট দাবিতে থাকা স্ক্রিনশটের তথ্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে যুগান্তরের ফেসবুক পেজে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর প্রচারিত পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, পোস্টের সংবাদে আলোচিত ছবিটি ছিল না। এছাড়াও পোস্টের সংবাদ লিংকটিতে প্রবেশ করেও আলোচিত স্ক্রিনশটে থাকা ছবি দেখতে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, যুগান্তরের প্রতিবেদনের ঘটনাটি ২০২০ সালের কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের ঘটনা। আর বর্তমানের আলোচিত ভিডিওর ঘটনাটি বরিশালের।

Screenshot : Jugantor

সুতরাং, বরিশালের ভিন্ন একটি ঘটনার ভিডিওকে গাজীপুরে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াই ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতির এক তরুণীকে প্রকাশ্যে পাইপ দিয়ে এলোপাথাড়ি পেঠানোর দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। এছাড়া, যুগান্তরের সংবাদ  দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র