ইসকন সদস্যের দ্বারা মুসলিম নারী নির্যাতনের দৃশ্য দাবিতে স্ক্রিপ্টেড ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, ‘ইসকন সদস্যের ধোঁকায় পড়ে বাড়ি ছাড়া এক পর্দাশীল মুসলিম নারী। প্রতিটি জেলায় জেলায় এমনকি প্রতিটি থানায় এরকম শোনা যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে। এরপরও মুসলিম বোনদের হুঁশ ফিরছে না।’ – এই দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক ছেলে কর্তৃক বোরকা পরিহিত বাচ্চা কোলে থাকা একজনকে নির্যাতন করছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসকন সদস্যের ধোঁকায় পড়ে বাড়ি ছাড়া এক পর্দাশীল মুসলিম নারী নির্যাতনের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল কোনো ঘটনার নয় বরং,কনটেন্ট ক্রিয়েটরের স্ক্রিপ্টেড বা সাজানো ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে, এক ছেলে কর্তৃক বোরকা পরিহিত বাচ্চা কোলে থাকা একজনকে এভাবে প্রাকাশ্যে লাথি দেওয়া এবং বোরকা পরিহিতের কোনো প্রতিবাদ না করতে দেখা যায়। উক্ত ব্যক্তিদের আশেপাশে আর কাউকে দেখা যায়নি। আমাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড বলে প্রতীয়মান হয়।

পরবর্তীতে, ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান অল্ট নিউজ এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২০ মার্চ ‘Yet another scripted video viral with claims of burqa being used for child kidnapping’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot From Altnews

অল্ট নিউজ জানায়, ভিডিওতে দেখা ব্যক্তিটি হলেন অঙ্কুর জাটুসকরণ, যিনি প্রায়শই স্ক্রিপ্টেড ভিডিও পোস্ট করেন। ভিডিওটি তার ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আপলোড করা হয়েছিল। অঙ্কুরের একাধিক ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব-ভেরিফাইড চ্যানেল রয়েছে। এই সব চ্যানেলে সহিংস স্ক্রিপ্টেড ভিডিও পোস্ট করা হয়। কিছু ভিডিওতে কোনো ডিসক্লেমার থাকে না।

অল্ট নিউজ অঙ্কুরের ফেসবুক পেজগুলো পর্যবেক্ষণ করে জানায়,  উভয় পেজেই এই ভাইরাল ভিডিওটির একটি দীর্ঘ সংস্করণ পোস্ট করা হয়েছিল। একটি পেজে এটি ১৯ ফেব্রুয়ারি [২০২৩] এবং অন্য পেজে ২৩ ফেব্রুয়ারি [২০২৩] পোস্ট করা হয়েছিল। ভাইরাল ভিডিওটির দীর্ঘ সংস্করণটি ৭ মিনিটের দৈর্ঘ্যের। এতে একটি ডিসক্লেমার রয়েছে যা ভিডিওর শুরুতে এবং শেষে মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য দেখা যায়। ডিসক্লেমারে অন্যান্য কথার মধ্যে বলা হয়েছে, “এই ভিডিওটি সম্পূর্ণরূপে দর্শকের বিনোদনের জন্য এবং এটি একটি কাল্পনিক কাজ।”

অল্ট নিউজ আরও জানায়, তিনি প্রায়শই সহিংস স্ক্রিপ্টেড ভিডিও পোস্ট করেন যেখানে কোনো ডিসক্লেমার থাকে না, ফলে মানুষ প্রায়শই সেগুলোকে বাস্তব ঘটনা বলে ভুল করে।

এছাড়াও, ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম ‘বুমলাইভ’ (BoomLive) ও FactCrescendo এবং আরব ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম Misbar (মিসবার) এর ওয়েবসাইটে ভিডিওটি নিয়ে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন থেকেও এটি একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও বলে জানা যায়।

উক্ত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনগুলোতে থাকা তথ্যের সূত্র ধরে অঙ্কুর জাটুসকরণ -এর ইউটিউব চ্যানেল (,), এবং ‘Ankur Sharma Films’ ও ‘Ankur Sharma Vines’ নামের ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে 

বর্তমানে এই ভিডিওটির অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। তবে, অ্যাকউন্টগুলোতে একই ব্যক্তির স্ক্রিপ্টেড ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়। 

এছাড়া, আলোচিত ভিডিওতে দেখা ব্যক্তির সাথে অঙ্কুর জাটুসকরণের ইনস্টাগ্রাম ছবির সাথে তুলনা করে দেখা যায়, ভিডিওর ব্যক্তি ও ছবির ব্যক্তির মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। 

 Comparison & Indicated by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত যে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড। এছাড়া, অ্যাকউন্টগুলোতে থাকা লোকেশন থেকে জানা যায়, অঙ্কুর জাটুসকরণ একজন ভারতীয়।

সুতরাং, ভারতীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরের স্ক্রিপ্টেড বা সাজানো ভিডিওকে ইসকন সদস্যের ধোঁকায় পড়ে বাড়ি ছাড়া এক পর্দাশীল মুসলিম নারী নির্যাতিত হওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img