সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় মারধরের শিকার দাবিতে প্রচার 

সম্প্রতি, ‘তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সুনামগঞ্জ পৌরসভা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকেরকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে যাই আজকে স্বাধীন দেশ দেশের এই অবস্থা হলে একটি মানুষও বর্তমানে নিরাপদ নাই আল্লাহ আপনি বিচার করুন এ দেশ’- শীর্ষক ক্যাপশনে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত একাধিক ছবি যুক্ত করে একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

পোস্টগুলোতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় বসে আছেন। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সুনামগঞ্জ পৌরসভার একটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিকে মারধরের দাবিতে প্রচারিত ব্যক্তিটি আওয়ামী লীগের সুনামগঞ্জ পৌরসভার কোনো  ওয়ার্ড এর আওয়ামী লীগ সভাপতি নন এবং তার বাড়িও সুনামগঞ্জ নয়। এমনকি তাকে মারধরও করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, রক্তাক্ত ব্যক্তির নাম বাদল মিয়া। তার বাড়ি নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার চাঁনপুর গ্রামে। গত ২৪ জুলাই সুনামগঞ্জে শান্তিগঞ্জ উপজেলার সুনামগঞ্জ-দিরাই আঞ্চলিক মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনার শিকান হন। আহত অবস্থায় তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেইসময়কার ছবি এগুলো।

অনুসন্ধানে ‘মনির শেখ’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৪ জুলাই সন্ধ্যা ০৬ টা ১৯ মিনিটে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে যুক্ত চারটির ছবির সাথে আলোচিত ছবির মিল রয়েছে। 

Image Comparison By Rumor Scanner 

মনির শেখের পোস্টে দাবি করা হয়, ছবিতে থাকা রক্তাক্ত ব্যক্তিটির বাড়ি খালিয়াজুরী। তিনি সিএনজি এক্সিডেন্ট করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

উক্ত পোস্টে একটি মোবাইল নম্বর যুক্ত করে দেওয়া হয়। ওই মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে মোহাম্মদ নাঈম পরিচয়ে এক ব্যক্তি জানান, ওই ব্যক্তিকে কেউ মারধর করেননি। তিনি সিএনজি এক্সিডেন্ট করে আহত হয়েছিলেন। হাসপাতালে উনার (আহত ব্যক্তির) পরিবারের কেউ না থাকায় ভর্তি নিচ্ছিল না। তখন আমার মোবাইল নম্বর যুক্ত করে পোস্ট করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করেছিল। 

পরবর্তীতে আহত ব্যক্তির প্রতিবেশী মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, ‘প্রচারিত পোস্টটি আমারও চোখে পড়েছে। আসলে বিষয়টি হাস্যকর। তিনি মারধরের শিকার হননি, এক্সিডেন্ট করেছেন। দাবিটি গুজব। আহত ব্যক্তির নাম বাদল মিয়া। তিনি সাধারণ একজন মানুষ।’

আহত বাদল মিয়ার চাচাতো ভাই ফুল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও জানান, বাদল মিয়া সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। বর্তমানে তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

উল্লেখ্য, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ জুলাই দুপুরের দিকে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের গাগলি এলাকায় দিরাই-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে লেগুনা-সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ ০২ জন নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ০৬ যাত্রী। নিহতরা হলেন, সিএনজি চালক প্রদ্যুৎ চক্রবর্তী (৩৫) ও দিরাই উপজেলার কাদিরপুর ধল গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে হুমায়রা বেগম (৪)। আহতরা হলেন— দিরাই উপজেলার ভাঙ্গাডহর গ্রামের সারত দাসের ছেলে জ্যোতিষ দাস (২৬), একই উপজেলার সাদিরপুর গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে হাসান (৩৫), কাদিরপুর ধল গ্রামের মৃত আব্দুল হাসিমের মেয়ে সুফিয়া (১৮), শান্তিগঞ্জ উপজেলার বগলাখারা গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে নাসির উদ্দিন (৩০), সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ওয়েজখালি গ্রামের মৃত শাহিদ মিয়ার ছেলে রুবেল (২৫) এবং নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলার আবরীপুর গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে বাদল মিয়া (৪০)।

সুতরাং, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় মারধরের শিকার হয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img