পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে আন্তর্জাতিক কোনো আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাই হয়নি, অব্যাহতির দাবিটি বানোয়াট

সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ২৩৫ বিশিষ্ট নাগরিকদের নামে আন্তবর্তীন কালিন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডা: মোহাম্মদ ইউনুসের ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল দুর্নীতি দামন কোর্টে দায়ের করা পদ্মাসেতু দুর্নীতির মামলা থেকে নির্দোষ খালাস পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ ক্যাপশনে একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৩৫ বিশিষ্ট নাগরিকের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক বাংলাদেশ কিংবা বাংলাদেশের বাহিরে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। ২০১২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা যেটির কার্যক্রম ২০১৪ সালে গোপনে বন্ধ করে দেওয়া হয়, গত ০১ জুলাই দুদকের পক্ষ থেকে মামলাটি নতুন করে চালু হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, দুটি পুরোনো ভিন্ন ঘটনায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী রিম আল হাশিমির সাথে অন্যান্য ব্যক্তির একাধিক ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।

ছবি যাচাই

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রথম ছবিটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি দুবাইকে ‘এক্সপো ২০২০’ এর আয়োজক হিসেবে ঘোষণা করার মুহূর্ত উদযাপনের চিত্র। উক্ত ছবিতে উপস্থিত আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আল নাহিয়ান ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের পোশাক ও হাতে থাকা বস্তু এবং ছবিটির পারিপার্শ্বিকতার সাথে আলোচিত ছবিটির মিল রয়েছে। 

অর্থাৎ, ছবিটি ২০১৩ সালে দুবাইকে ‘এক্সপো ২০২০’’ এর আয়োজক হিসেবে ঘোষণা করার মুহূর্ত উদযাপনের ঘটনার। 

ছবি যাচাই ২, ৩, ৪

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Miroslava Drobová নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর  প্রকাশিত পোস্টে একাধিক ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিগুলোর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ছবিটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

পোস্টটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ছবিগুলো ২০২১ সালে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০’ এর গ্র‍্যান্ড গালা প্রেজেন্টেশন উপলক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী রিম আল হাশিমির স্লোভাকিয়ার প্যাভিলিয়ন পরিদর্শনের মুহূর্তের চিত্র। 

উল্লেখ্য, International Anti-Corruption Court একটি প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক আদালত যা দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইন প্রয়োগকে শক্তিশালী করার প্রয়াস রাখে, এটি বর্তমানে সক্রিয় কোনো আদালত নয়। এছাড়া, এটি ব্রিটেন বা কোনো একক দেশের আদালত হিসেবে প্রস্তাবিত নয়। তাই, ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন আদালত থেকে পদ্মাসেতু দুর্নীতি মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৩৫ বিশিষ্ট নাগরিকের নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে খালাস পাওয়ার তথ্যটি বানোয়াট। 

এছাড়া, ২০১২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা, যেটির কার্যক্রম ২০১৪ সালে গোপনে বন্ধ করে দেওয়া হয়, গত ০১ জুলাই দুদকের পক্ষ থেকে মামলাটি নতুন করে চালু হয়েছে। উক্ত মামলাটি দুদকের পক্ষ থেকে দায়ের করা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক নয়। 

উল্লেখ্য, Tamanna Akhter Yesman নামে পরিচালিত এই ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ভুয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমিরর ছবি ব্যবহার করে এই ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে রাজনৈতিক প্রভাব তৈরির চেষ্টা নিয়ে গত ১৯ জুন বিস্তারিত ফ্যাক্টস্টোরি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে কথিত মামলা থেকে শেখ হাসিনাসহ ২৩৫ বিশিষ্ট নাগরিকের নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে খালাস পাওয়ার ছবি দাবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রী রিম আল হাশিমির সাথে অন্যান্য ব্যক্তির একাধিক ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img