Home Blog Page 44

কিশোর কর্তৃক স্কুলছাত্রীর গলায় ছুরি ধরার ঘটনাটি ভারতের, বাংলাদেশের নয় 

সম্প্রতি ‘বর্তমান বাংলাদেশের কিশোর গ্যাং এর কাহিনী সব দেশের সিনেমাকে হার মানায়।’ ক্যাপশনে ‘বাংলাদেশে এক কিশোরীর গলায় কিশোর গ্যাংয়ের একজন সদস্য ছুরি ধরেছে’ এমন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে৷ 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত জুলাইয়ে ভারতের মহারাষ্ট্রের সাতারায় এক কিশোরীর গলায় একজন কিশোরের ছুরি ধরার দৃশ্যকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতের গণমাধ্যম Times Now এর এক্স হ্যান্ডেলে গত ২২ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে যুক্ত ছবিগুলোর সাথে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

পোস্টটির সাথে যুক্ত লিংকে স্থানীয় গণমাধ্যম Mumbai Now এর ওয়েবসাইটে গত ২২ জুলাই ‘Maharashtra: Teen Holds Knife To School Girl’s Neck But One Man’s Quick Move Saves Her Life – VIDEO’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে আলোচিত ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও যুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সেদিন ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাতারার কারাঞ্জের বাসাপ্পা পেঠের করাদ রোড এলাকায় একজন যুবক রাস্তার মাঝখানে এক স্কুলছাত্রীর গলায় ছুরি ধরে। পরবর্তীতে আশপাশের লোকজন কৌশলে দ্রুত এগিয়ে এসে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। সাতারার পুলিশ সুপার তুষার দোশি বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেছেন যে অভিযুক্তকে হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং বিস্তারিত তদন্ত চলছে।

একই বিষয়ে আরেক ভারতীয় গণমাধ্যম NEWS9 এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২২ জুলাই ‘Satara Horror: Cop Saves Girl from Knife-Wielding Stalker in Broad Daylight’ শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনে একই চিত্র ও তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

সুতরাং, বাংলাদেশে একজন কিশোর গ্যাং সদস্য এক স্কুল ছাত্রীর গলায় ছুরি ধরার ভিডিও দাবিতে ভারতে এক কিশোরের স্কুলছাত্রীর গলায় ছুরি ধরার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

গেল মার্চে হিযবুত তাহ্‌রীর সাথে পুলিশের সংঘর্ষের দৃশ্যকে ০১ আগস্টের ঘটনা দাবিতে প্রচার

গতকাল ০১ আগস্ট (শুক্রবার)  ‘ঢাকা এই মুহুর্তে জুম্মার নামাজে পরে জাতীয় মসজিদ এলাকায় নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিজবুল তাহরীর নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ব‍্যাপক সংঘর্ষ চলছে…জঙ্গিবাদ বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ৭ মার্চ (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের একটি মিছিল টিয়ারশেল ও সাউন্ডগ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এটি সেই ঘটনারই একটি ভিডিও।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটিতে থাকা লোগোর সূত্র ধরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল “NEWS NOW বাংলা” ফেসবুক পেজে ২০২৫ সালের ৭ মার্চ ‘ক্যামেরায় ধ’রা পড়লো হিজবুত তা’হরীর উপ’র পু’লি’শের সা’উন্ড গ্রে’নেড মা’রা’র দৃ’শ্য!’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের ওয়েবসাইটে ২০২৫ সালের ৭ মার্চ “নিষিদ্ধ হিযবুতের মিছিলে পুলিশের টিয়ারশেল, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৭ মার্চ (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় মার্চ ফর খিলাফা কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিছিল বের করেছে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর। মিছিলটি পল্টন থেকে বিজয়নগরের দিকে এলে পুলিশের টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় হিযবুত তাহরীরের কর্মীরা।

এ বিষয়ে সেসময় বিভিন্ন গণমাধ্যম একই তথ্যসংবলিত সংবাদ (,,) প্রচার করে।

সুতরাং, গত মার্চে ঢাকায় পুলিশ কর্তৃক টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হিযবুত তাহ্‌রীরের নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার দৃশ্যকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র 

ভারতের আসামে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী গ্রেফতারের দৃশ্য দাবিতে ভারতীয় সাইবার অপরাধী আটকের দৃশ্য প্রচার

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের আসাম রাজ্যসহ নানা রাজ্যে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী দাবিতে ভারত সরকার নানা জায়গায় আটক ও উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ঘরের মধ্যে বাঁশের সিলিং বা ছাঁদ থেকে একজন ব্যক্তিকে অপর একজন ব্যক্তি নামাচ্ছেন। ভিডিওটি প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “আসাম পুলিশ ঘরের ভিতর বাঁশের তৈরি সিলিং এর উপর লুঙ্গি বাহিনী লুকিয়ে রয়েছে ভারতে অবস্থানরত  বাং*লাদেশি ও রো*হিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশ এর বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে এদের বিভিন্ন রাজ্য থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।”

অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে যে প্রচারিত ভিডিওটি ভারতের আসামে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী গ্রেফতারের দৃশ্য।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উল্লেখ্য, আলোচিত দাবিটি মূলত ভারত থেকে পরিচালিত অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার হতে দেখা যায়।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ভারতের আসামে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী গ্রেফতারের দৃশ্যের নয় বরং, গত ১৬ এপ্রিল ভারতের আসামের মরিগাঁও জেলা থেকে ভারতীয় সাইবার অপরাধীর আটকের ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১ কোটি ২৭ লক্ষ রুপি জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে ভারতের আসাম ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘এনকেটিভি’র ফেসবুক পেজে গত ১৭ এপ্রিলে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে হুবহু মিল পাওয়া যায়। এছাড়া, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতেও ‘এনকেটিভি’র লোগো দেখতে পাওয়া যায় যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে মূলত এনকেটিভির উক্ত ভিডিওটি আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, “পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ছাদের ওপর লুকিয়ে ছিল। রাতে অভিযান চালিয়ে ছাদ থেকে নামিয়ে ৫ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মরিগাঁও পুলিশের সহযোগিতায় মুম্বাই সিটি সাইবার সেল এই অভিযান চালিয়েছে।” (অনূদিত)

এছাড়াও, অনুসন্ধানে ভারতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে এনই’ এর ইউটিউব চ্যানেলে এ বিষয়ে গত ১৭ এপ্রিলে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে আলোচিত দৃশ্যেরও সংযুক্তি পাওয়া যায়। ভিডিওটির বর্ণনা অংশে বলা হয়, “১৬ এপ্রিল রাতে মুম্বাই পুলিশের সাইবার সেল আসামের মরিগাঁও জেলার লাহরিঘাট এলাকায় মরিগাঁও জেলা পুলিশের সহযোগিতায় একটি বড়সড় অভিযান চালায়। এই যৌথ অভিযানে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।” (অনূদিত)

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে ভারতীয় আরেক সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের ওয়েবসাইটে গত ১৮ এপ্রিলে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “একটি সুচিন্তিতভাবে পরিকল্পিত অভিযানে, মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চ আসামের মরিগাঁও জেলার একটি দূরবর্তী গ্রাম থেকে পাঁচজন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা একটি বড়সড় ক্রেডিট কার্ড প্রতারণার ছক চালিয়ে বৈশ্বিক ব্যাংক সংস্থা HSBC-কে ১.২৭ কোটি রুপির ক্ষতির মুখে ফেলে। তদন্তকারীদের মতে, অভিযুক্তরা – যাদের বয়স ২০ ও ৩০-এর দশকে – ডিজিটাল ঘাটতি ও পরিচয় জালিয়াতির সুযোগ নিয়ে ভুয়া নথিপত্র ব্যবহার করে HSBC-র ৫৫টি ক্রেডিট কার্ড সংগ্রহ করে। এসব কার্ড ব্যবহার করে তারা বিলাসবহুল কেনাকাটা ও বিভিন্ন ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গোপনে টাকা স্থানান্তর করে। অভিযুক্তদের পরিচয়: মোহেবুর আব্দুল রহমান (২৮), সাদিকুল ইসলাম (২৭), ইলিয়াস রফিকুল ইসলাম (২৫), আবু বকর সিদ্দিক রমজান আলি (৩৭), এবং মহিমুদ্দিন আহমেদ আব্দুল মালিক (২৬), এরা সবাই মরিগাঁও জেলার বাসিন্দা। (অনূদিত)

তবে কোথাও আটককৃত ব্যক্তি অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসী এরূপ তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও, অনুসন্ধানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজতকের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে গত ৩১ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আটককৃতরা অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী কিনা তা জানতে মরিগাঁও জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সমীরণ বৈশ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিশ্চিত করে জানান, “ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তি-সহ ধৃত ৫ অভিযুক্তই মরিগাঁও জেলার বাসিন্দা। তাদের কেউই অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী নয়। এবং তাদেরকে  অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী হওয়ার জন্য নয় বরং সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল।”

সুতরাং, গত ১৬ এপ্রিল ভারতের আসামের মরিগাঁও জেলা থেকে ভারতীয় সাইবার অপরাধীর আটকের ভিডিওকে ভারতের আসামে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী গ্রেফতারের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

‘আমরা শেখ হাসিনাকে চাই’ শীর্ষক প্লেকার্ড হাতে শিক্ষার্থীদের এই ছবিটি এআই দ্বারা তৈরি

0

সম্প্রতি, এক শিক্ষার্থীর হাতে ‘আমরা শেখ হাসিনাকে চাই’ শীর্ষক লেখা যুক্ত প্লেকার্ডের একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ড্রেস পরা কিছু শিক্ষার্থী শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাদের মধ্যে সামনের জন প্লেকার্ডটি ধরে আছেন।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এক্সে প্রচারিত ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষার্থীর হাতে ‘আমরা শেখ হাসিনাকে চাই’ শীর্ষক লেখা যুক্ত প্লেকার্ডের এই ছবিটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ছবি তৈরি করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এই ছবির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

রিউমর স্ক্যানার টিমের বিশ্লেষণে শিক্ষার্থীদের হাতে ‘আমরা শেখ হাসিনাকে চাই’ শীর্ষক লেখা যুক্ত প্লেকার্ডের ছবিটিতে এআই-জনিত একাধিক অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে। যেমন – এক. প্লেকার্ড হাতে রাখা ছেলেটির আঙ্গুলে অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। দুই. প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মুখাবয়ব দেখতে প্রায় একই রকম। সাধারণত এআই দিয়ে তৈরি ছবির ক্ষেত্রে এমন অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়।

Indicated by Rumor Scanner

বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ছবিটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট সাইটইঞ্জিনে পরীক্ষা করা হয়। ওয়েবসাইটটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৮ শতাংশ।

Screenshot From Sightengine

সুতরাং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি শিক্ষার্থীদের হাতে ‘আমরা শেখ হাসিনাকে চাই’ শীর্ষক লেখা যুক্ত প্লেকার্ডের একটি ছবিকে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis.
  • Sightengine.

জুলাই মাসে ৩১০ ভুল তথ্য শনাক্ত

0

চলতি বছরের জুলাই মাসে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ৩১০টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে গত জুলাই মাসে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক থেকে গণনাকৃত এই সংখ্যার মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (১৮৪) ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের প্রায় ৫৯ শতাংশ। এছাড়া জাতীয় বিষয়ে ৬১টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে ১৫টি, ধর্মীয় বিষয়ে ১৩টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ১১টি, প্রতারণা বিষয়ে সাতটি, খেলাধুলা বিষয়ে পাঁচটি, শিক্ষা বিষয়ে ছয়টি, স্বাস্থ্য বিষয়ে একটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে দুইটি, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে জুলাইতে।

এসব ঘটনায় ভিডিও কেন্দ্রিক ভুলই ছিল সবচেয়ে বেশি, ১৭১টি। এছাড়া তথ্য কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৮২টি এবং ছবি কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৫৭টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসেবে ২২১টি, বিকৃত হিসেবে ৩৮টি এবং বিভ্রান্তিকর হিসেবে ৫১টি ঘটনাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। 

প্লাটফর্ম হিসেবে গত মাসে ফেসবু্কে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, সংখ্যার হিসেবে যা ২৯৫টি। এছাড়া ইনস্টাগ্রামে ১৩৯টি, ইউটিউবে ৭৫টি, এক্সে ৪৪টি, টিকটকে ৫২টি, থ্রেডসে অন্তত সাতটি ভুল এবং টেলিগ্রামে অন্তত একটি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের গণমাধ্যমও। ১৬টি ঘটনায় দেশের একাধিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।  

বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারের বিষয়টি গেল বেশ কয়েক মাস ধরে আলোচনায় থাকলেও সম্প্রতি তা কিছুটা হ্রাস পেতে দেখা যাচ্ছিল। তবে জুলাই মাসে তা আবার বৃদ্ধি পেতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এই সময়ে ১০টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে সাতটি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পরিচয়ধারী অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গেল মাসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে তিনটি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ভুলতথ্যগুলোর ধরণ বুঝতে এগুলোকে রিউমর স্ক্যানার দুইটি আলাদা ভাগে ভাগ করেছে৷ সরকারের পক্ষে যায় এমন ভুল তথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায় এমন ভুলতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এসব ভুলতথ্যের ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই সরকারকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

জুলাই মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ১১টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। সবগুলোতেই তাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে জড়িয়ে একটি (নেতিবাচক), আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে জড়িয়ে দুইটি (সবগুলোই নেতিবাচক) এবং ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সি আর আবরার, ফারুক-ই-আজম ও বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারকে নিয়ে একটি করে (সবগুলোই নেতিবাচক) ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে সর্বত্র। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপতথ্যের প্রচার বৃদ্ধি পেতে দেখা গেলেও গত মাসে তা অনেকাংশে কমে আসে। শনাক্ত হয় ছয়টি অপতথ্য৷ অথচ এর আগের মাসেও শনাক্ত হয়েছিল ২৮টি অপতথ্য। 

রিউমর স্ক্যানার গেল মাসের ফ্যাক্টচেকগুলো বিশ্লেষণে দেখেছে, এই সময়ে সক্রিয় রাজনীতিতে থাকা দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), তার অঙ্গসংগঠন এবং নেতাকর্মীদের জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য (৩৮টি) প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে দল হিসেবে বিএনপিকে জড়িয়ে ২১টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে, যার প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দলটিকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে। এই সময়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে তিনটি (৬৬ শতাংশই নেতিবাচক) অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। দলটির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে জড়িয়ে এই সময়ে ছয়টি (৮৩ শতাংশই নেতিবাচক) অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

বিএনপির পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, তার অঙ্গসংগঠন এবং নেতাকর্মীদের জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি (৩৫টি) অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে দল হিসেবে জামায়াতকে জড়িয়ে ২৩টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৮৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই দলটিকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে। দলটির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে এই সময়ে ১০টি (সবগুলোই নেতিবাচক) অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

এছাড়া, জুলাই মাসে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও দলটির নেতাকর্মীদের জড়িয়ে ৩৪টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে দল হিসেবে এনসিপিকে জড়িয়ে ২১টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে, যার সবগুলোই দলটিকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে। এই দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে গত মাসে তিনটি (সবগুলোই নেতিবাচক) অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে গত মাসে। এছাড়া দলটির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহকে জড়িয়ে চারটি (সবগুলোই নেতিবাচক), সারজিস আলমকে জড়িয়ে তিনটি (সবগুলোই নেতিবাচক), তাসনিম জারাকে জড়িয়ে দুইটি (সবগুলোই নেতিবাচক), নুসরাত তাবাসসুমকে জড়িয়ে একটি (নেতিবাচক) অপতথ্যের প্রচার দেখা গেছে।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গ-ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে জুলাইতে ৪৭টি অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে ১৫টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে যার ৮৭ শতাংশই দলটির পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে এই সময়ে ১৭টি অপতথ্য (৯৪ শতাংশই ইতিবাচক) প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়া দলটির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে জড়িয়ে জুলাইে ১০টি অপতথ্য (৬০ শতাংশই ইতিবাচক) শনাক্ত করা হয়েছে। 

ভুল তথ্যের রোষানল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। গেল মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে পাঁচটিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে ২৬টি ভুল তথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। গত বছরের আগস্ট পরবর্তী সময়ে একক মাস হিসেবে এটিই সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে সর্বোচ্চ শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যের সংখ্যা। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশকে জড়িয়ে ১৩টি ভুল তথ্য, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে জড়িয়ে ১১টি, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে জড়িয়ে একটি এবং র‌্যাবকে জড়িয়ে তিনটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।    

গেল মাসের ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এই সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভুয়া কনটেন্ট শনাক্ত হয়েছে ৬৮টি। চলতি বছর একক মাস হিসেবে যা সর্বোচ্চ। একই সময়ে ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করা হয়েছে দুইটি। 

জুলাই মাসে পাঁচটি বড় ঘটনা বা ইস্যু দেখেছে বাংলাদেশ। গত ০৯ জুলাই রাজধানীর মিটফোর্ডে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা, ১৯ জুলাই ঢাকায় জামায়াতের সমাবেশ, ২০ জুলাই আওয়ামী লীগের চারটি সংগঠনের ডাকা হরতাল এবং ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোনে বিমান বাহিনীর বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ভুয়া তথ্যের ব্যাপক প্রবাহ লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সর্বাধিক (৩৯টি) ভুয়া তথ্যের প্রচার দেখা গেছে। এছাড়া, গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ৩৮টি, সোহাগ হত্যাকে কেন্দ্র করে ১৯টি, আ’লীগের হরতালকে কেন্দ্র করে ১২টি এবং জামায়াতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে চারটি ভুয়া তথ্য শনাক্ত হয়েছে। 

গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচারের পরিমাণ হ্রাস পেতে দেখা যাচ্ছে৷ গত মাসে এই পদ্ধতির ব্যবহার করে ২০টি ঘটনায় দেশি ও বিদেশি ১৫টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ২১টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।   

বার্তা প্রেরক

তানভীর মাহতাব আবীর

জ্যেষ্ঠ ফ্যাক্টচেকার,

রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ। 

[email protected]

বাংলাদেশি যুবকের তৈরিকৃত ‘বিমান’ উড্ডয়নের দৃশ্যকে ভারতীয় কিশোরের দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, ভারতের বিহার রাজ্যে অবনীশ কুমার নামের ১৭ বছরের এক কিশোর কোনো প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই একটি বিমান তৈরি করেছে দাবিতে বিমান উড্ডয়নের একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত পোস্টগুলোতে আরও দাবি করা হয়, মাত্র ৭ হাজার ভারতীয় রুপি ব্যয় করে ৭ দিনের মধ্যে তিনি বিমানটি তৈরি করেছেন।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

থ্রেডসে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন নিউজ১৮, টি নিউজ তেলেগু এবং মিডিয়া৫জোন নিউজ। 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওর ‘বিমানটি’ ভারতের বিহার রাজ্যের অবনীশ কুমার নামের কিশোর তৈরি করেননি। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার জুলহাস নামের এক ব্যক্তির নিজ হাতে তৈরিকৃত ‘বিমান’ উড্ডয়নের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে এর কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চের মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক অনলাইন গণমাধ্যম কৃষাণ টিভি-এর ফেসবুক পেজে গত ৯ মার্চ প্রচারিত একটি ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়।

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ‍আলোচিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। উভয় ভিডিওতে একই ‘বিমানকে’ উড্ডয়ন করতে দেখা যায়। ভিডিওটির শিরোনামে দাবি করা হয়, এটি বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার জুলহাস নামের এক ব্যক্তির ‘বিমান’ উড্ডয়নের ভিডিও। যা দেখতে হাজারো মানুষ সেখানে ভিড় জমান। এছাড়াও দাবি করা হয়, জুলহাস একজন কৃষকের ছেলে।

পরবর্তীতে উক্ত অনলাইন গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে একইদিনে অর্থাৎ, ৯ মার্চ ওই ‘বিমান’ উড্ডয়ন সংক্রান্ত একাধিক ভিডিও প্রচার হতে দেখা যায়। যার একটিতে সেদিন ‘বিমানের’ উড্ডয়ন দেখতে আসা এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর শিরোনাম থেকে জানা যায়, মানিকগঞ্জের জুলহাস নামের ওই ব্যক্তি ‘বিমানটি’ নিজে তৈরি করেছে। জুলহাসের তৈরি ‘বিমান’ উড্ডয়ন দেখতে সেদিন অন্যান্যদের মত বাংলাদেশি ইউটিউবার মাসান স্বপ্নও সেখানে যান। পেজটিতে প্রচারিত একটি ভিডিওতে তারও সাক্ষাৎকার নিতে দেখা যায়। 

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, তার ‘বিমান’ দেখতে সেদিন বাংলাদেশ বিমানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ নামের একজন ব্যক্তিও সেখানে যান। 

গণমাধ্যমটির পক্ষ থেকে সেদিন জুলহাসের একটি সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়। যেখানে তিনি ‘বিমান’ তৈরির ক্ষেত্রে তার পরিবার থেকে পাওয়া সহযোগিতার কথা বলার পাশাপাশি তরুণ সমাজদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্যও প্রদান করে। 

এছাড়া, কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আরেক গণমাধ্যম সময় টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে জুলহাসের ‘বিমান’ উড্ডয়ন বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৯ মার্চ মানিকগঞ্জের শিবালয়ের জাফরগঞ্জের চরে জুলহাসের ‘বিমান’ উড্ডয়ন প্রদর্শনীটি হয়। এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, পানির পাম্পের শ্যালো মেশিন, টেম্পোর চাকাসহ দেশীয় প্রযুক্তি দিয়ে দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে আলট্রা লাইফ এই ‘বিমানটি’ তৈরি করেন জুলহাস। 

কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় কোনো মূলধারার গণমাধ্যমে বিহারের অবনীশ কুমার নামের কিশোরের বিমান তৈরির বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং, বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের দাবিতে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের জুলহাসের তৈরি ‘বিমান’ উড্ডয়নের ভিডিওকে ভারতের বিহারে অবনীশ কুমার নামের এক কিশোরের তৈরি বিমান উড্ডয়নের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা দাবিতে ভারতের ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, ‘১৯৭১ ফিরে আসলো। এভাবে হত্যা ধর্ষন আগুন লুটপাট ঘর ভাঙা উচ্ছেদ করা। মামলা হামলা’- শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

পোস্টের ক্যাপশনে দেশের নাম উল্লেখ না করা এবং ১৯৭১ সাল উল্লেখ করায় অনেকেই ঘটনাটি বাংলাদেশের মনে করছেন।

ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, শাখা, তুলসির মালা পরা একজন নারী কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বাড়িঘর ভাঙা এবং নির্যাতনের অভিযোগ তুলছেন।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগের ঘটনায় ভুক্তভোগীর বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং, এটি ভারতের ভিডিও। 


অনুসন্ধানে BJP West Bangla নামক একটি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২১ এপ্রিল প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে থাকা ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

উক্ত পোস্টে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে বিধান মজুমদারের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে মুসলিমরা। উক্ত এলাকাটি মুসলিম-অধ্যুষিত।

০২ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের ভিডিওটির ০১ মিনিটের সময় ভুক্তভোগী নারীকে বলতে শোনা যায়, ভুক্তভোগীদের হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে ‘তোদেরকে এখানে থাকতে দেব না। তোরা বাংলাদেশ থেকে এসেছিস, তোদের বাংলাদেশেই পাঠায়া দেব।’ ০১ মিনিট ১১ সেকেন্ডের তিনি বলারও বলেন হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে ‘তোদেরকে মুর্শিদাবাদ করে দেব।’ 

অর্থাৎ, ভুক্তভোগী নারীর ০১ মিনিটের সময়কার বক্তব্যে বলা হয়েছে হুমকিদাতারা তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন ‘তোদেরকে এখানে থাকতে দেব না। তোরা বাংলাদেশ থেকে এসেছিস, তোদের বাংলাদেশেই পাঠায়া দেব।’

ভুক্তভোগীদের এই বক্তব্যে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন না।

এছাড়া, উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম এইদিন এর ওয়েবসাইটে গত ২১ এপ্রিল “মুর্শিদাবাদের পর উত্তর দিনাজপুর, হিন্দু পরিবারকে ঘরছাড়া করার অভিযোগ, ভুট্টা খেতে লুকিয়ে করা দম্পতির ভিডিও শেয়ার করলেন বিজেপি নেতা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ফিচারে ব্যবহৃত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জ ও ধুলিয়ানের পর উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের বাসুদেবপুর গ্রামে এক হিন্দু দম্পতিকে ঘরছাড়া করার অভিযোগ উঠল স্থানীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে। ভুট্টাখেতে লুকিয়ে এক দম্পতির করা ভিডিওটি এক্স-এ শেয়ার করেছেন বিজেপি নেতা দেবদত্ত মাঝি। যদিও ভিডিও-এর সত্যতা যাচাই করেনি এইদিন।

এছাড়া, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২১ এপ্রিল দেওয়া একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টেও একই তথ্যে আলোচিত ভিডিও যুক্ত রয়েছে। 

Hindu Voice এবং Hindu Post সহ একাধিক বিজেপি সমর্থিত ওয়েবসাইটে একই তথ্য ভারতের দিনাজপুরের উল্লেখ করে প্রচার করা হয়েছে। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। 

সুতরাং, ভারতের দিনাজপুরে মুসলিম কর্তৃক হিন্দু নিযার্তন এবং বাড়িঘর ভাঙার অভিযোগে ভুক্তভোগীদের করা একটি ভিডিওকে বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র 

শেখ হাসিনার ভারত থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার দাবিটি মিথ্যা

0

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দাবি প্রচার করা হয়েছে, ‘ভারত থেকে লন্ডনে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা’।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই শেখ হাসিনার নামে পরিচালিত ভুয়া একটি ফেসবুক পেজের পোস্টের প্রেক্ষিতে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনা লন্ডনে যাওয়ার তথ্যটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রকাশ্যে আসলে তা গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো। এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতেও আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তবে অনুসন্ধানে শেখ হাসিনার ছবি প্রোফাইল ছবিতে সংযুক্ত করে “Sheikh Hasina” নামে পরিচালিত একটি ফেসবুক পেজে গত ২ জুলাই দুপুর ১ টা ১৭ মিনিটে প্রচারিত একটি বেশ ভাইরাল পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টটিতে লেখা হয়, “লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম| সবাই দোয়া করবেন”। আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো উক্ত পোস্টটি প্রচারের পরবর্তী সময়ে পোস্ট হতে দেখা যায় যা থেকে বুঝা যায় যে আলোচিত দাবিটি শেখ হাসিনার নামে পরিচালিত উক্ত ফেসবুক পেজের পোস্টের প্রেক্ষিতে প্রচার করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় কি না জানতে অনুসন্ধান করলে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেখ হাসিনার সক্রিয় থাকার ব্যাপারে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের নভেম্বরে শেখ হাসিনার নামে পরিচালিত একটি এক্স অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ই-মেইলে যোগাযোগ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম। সেসময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেখ হাসিনার কোনো অ্যাকাউন্ট নেই।

এছাড়া, সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করলেও আলোচিত ফেসবুক পেজটি বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পরিচালিত হতে দেখা যায়। 

উক্ত ফেসবুক পেজটি থেকে গত ২ জুলাই সন্ধ্যা ৬ টা ১৮ মিনিটে আরেকটি পোস্ট করে লেখা হয়, “বিশেষ কারণে আমার লন্ডন সফর স্থগিত করা হয়েছে,লন্ডন সফরের তারিখ পরবর্তীতে জানানো হবে | সবাই ভালো এবং সুস্থ থাকবেন”।

সুতরাং, শেখ হাসিনার ভারত থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্য রওনা দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis

এআই তৈরি ভিডিওকে ভারতের গুজরাটে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে সিংহ উঠার আসল ভিডিও দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, গণমাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে যেখানে দেখা যায় এক নির্মাণাধীন ভবনের ছাঁদে সিংহ উঠে এবং ঘুমন্ত এক শ্রমিককে শুঁকে। অতঃপর ঘুমন্ত শ্রমিকের ঘুম ভাঙলে প্রাণ বাঁচাতে সেই শ্রমিক দৌড়ে পালিয়ে যান। উক্ত ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, এটি একটি আসল ঘটনার ভিডিও এবং ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের গুজরাটের আমরেলির ধারি এলাকায়।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন- কালবেলা (ফেসবুক)।

এছাড়াও, এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এছাড়া, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত নেটিজেনের ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ভারতের গুজরাটে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে সিংহ উঠার কোনো আসল ভিডিও নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে ভিডিওটি আসল হওয়ার সপক্ষে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভিডিওটিতে প্রদর্শিত সিংহ, সিংহের চলাফেরা, মানুষের অঙ্গভঙ্গিতে বেশ অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।

এছাড়া, এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারত ভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ‘ফ্যাক্টলি’ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে আলোচিত ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি বলে জানানো হয়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ভিডিওটি ‘@ataquesferoz’ ইউজারনেমের একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৬ জুনে প্রথমবার পোস্ট করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওটিতেও উক্ত অ্যাকাউন্টের নামের জলছাপ পরিলক্ষিত হয়। পোস্টটিতে ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট হিসেবে পোস্টকারী লেবেল করেছেন৷ তবে এই মূহুর্তে উক্ত টিকটক অ্যাকাউন্টটি আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এছাড়াও, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট যাচাইকারী প্ল্যাটফর্ম ‘Cantilux’ এ পরীক্ষা করলেও দেখা যায় ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৪ শতাংশ।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি মূলত এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে ভারতের গুজরাটে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে সিংহ উঠার আসল ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

গওহর রিজভীকে জড়িয়ে জুয়ার ভুয়া বিজ্ঞাপন প্রচার

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর একটি বক্তব্য জুড়ে একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

পোস্টটিতে ‘PIEPAY.NET’ একটি লিংক দেওয়া রয়েছে এবং গওহর রিজভীকে উক্ত বিষয়ের প্রমোশন করতে শোনা যায়। এছাড়া পোস্টটিতে দেখানো হয়েছে, মিনিমাম বিনিয়োগ ৩০ হাজার ৫০০ টাকা। 

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘PIEPAY.NET’ এর সাথে গওহর রিজভীর কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি এবং গওহর রিজভী ‘PIEPAY.NET’ এর প্রমোশনও করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৯ সালে ভিন্ন প্রেক্ষিতে তুরস্কের গণমাধ্যমকে দেওয়া তার বক্তব্যকে সম্পাদনা করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

শুরুতে গওহর রিজভীর বক্তব্যের বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। প্রচারিত ভিডিওটিতে TRT World এর লোগো লক্ষ্য করা যায়। উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে তুর্কী গণমাধ্যম TRT World এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে থাকা রিজভীর পোষাক এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

TRT World এর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নেওয়া গওহর রিজভীর সাক্ষাৎকারে কোথাও ‘PIEPAY.NET’ এর প্রমোশন সংক্রান্ত কোনো কথা বলতে শোনা যায়নি। 

এরপর ‘PIEPAY.NET’ এর বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ‘PIEPAY.NET’ এর লিংকে প্রবেশ করে দেখা যায়, উক্ত লিংকে জাতীয় ইংরেজি গণমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টারের নেওয়া গওহর রিজভীর একটি সাক্ষাৎকারের লিংক দেওয়া রয়েছে। 

Screenshot: PIEPAY.NET

তবে, দ্য ডেইলি স্টারের মূল ওয়েবসাইটে এসংক্রান্ত কোনো সাক্ষাৎকার খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

PIEPAY.NET এর ওয়েবসাইটে থাকা সাক্ষাৎকারে গওহর রিজভীর বক্তব্যে ‘SecuroomAi’ নামক একটি ওয়েবসাইটের কথা উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেখা যায়, এটি একটি জুয়ার ওয়েবসাইট। 

Image By Rumor Scanner 

সুতরাং, গওহর রিজভী জুয়ার বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র