Home Blog Page 332

নামের বিভ্রান্তিতে আওয়ামী লীগ নেতা যখন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান

0

গতকাল (১১ সেপ্টেম্বর) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এই ভাষণে জানান, সংস্কারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন ‘সরফরাজ চৌধুরী’। রিউমর স্ক্যানার তার বক্তব্যের ভিডিও এবং এ-সংক্রান্ত স্ক্রিপ্ট যাচাই করে এই কমিশনের প্রধান হিসেবে সরফরাজ চৌধুরীর নামই উল্লেখ পেয়েছে। 

পুলিশ সংস্কার
Screenshot: Doc File

তার দেওয়া এই তথ্যের পর একাধিক গণমাধ্যমেও (নয়া দিগন্ত, সমকাল, ইত্তেফাক, বার্তা বাজার, ঢাকা প্রকাশ, সারা বাংলা, বাংলানিউজ২৪, রাইজিং বিডি, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস)   সরফরাজ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করা হয়। 

সরফরাজ চৌধুরী। Source: Internet

যদিও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো স্ক্রিপ্টে বা কার্যালয় সূত্রে সরফরাজ চৌধুরীর কোনো ছবি সরবরাহ করা হয়নি। গণমাধ্যমগুলোও সরফরাজ চৌধুরীর বিষয়ে বাড়তি কোনো তথ্য দেয়নি। 

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ছবিটি চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডাক্তার সরফরাজ চৌধুরীর। ২০১৪ সালে সরফরাজ চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ওই সময়ে জেনারেল হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনার দুর্নীতির অভিযোগে একটি মামলাও হয় তার বিরুদ্ধে। ২০২২ সালে তাকে এই মামলায় কারাবরণও করতে হয়। 

তার অবশ্য আরেকটি পরিচয় আছে। ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য মনোনীত হন তিনি। 

এই বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক সমালোচনাও হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। 

Screenshot: Facebook 

সরফরাজ চৌধুরী নামের এই ব্যক্তি পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের কোনো প্রস্তাব পেয়েছেন কিনা তা জানতে রিউমর স্ক্যানার তার সাথে কথা বলেছে। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলছিলেন, “সবই আপনাদের দোয়া ভাই। আমি শুনেছি আমাকে এমন পদে নিয়োগ করা হয়েছে। আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করবো। আমার দুয়ার আপনাদের জন্যে সবসময় খোলা থাকবে।” 

তাকে কোনো অফিসিয়াল বার্তা পাঠানো হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান, “না, এমন কিছু আমি এখনো পাইনি। তবে আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারছি যে আমাকে নিয়োগ করা হয়েছে।” 

অর্থাৎ, তিনি এ বিষয়ে অফিশিয়াল কোনো বার্তাই পাননি। 

এরই মধ্যে মূল ধারার গণমাধ্যম ‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’ (টিবিএস) সূত্রে রিউমর স্ক্যানার জানতে পারে, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সফর রাজ হোসেন। খেয়াল করুন, ‘সরফরাজ’ না লিখে ‘সফর রাজ’ লিখেছে টিবিএস। টিবিএস জানায়, তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব। 

প্রাথমিক অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার এর সত্যতাও পেয়েছে। জনাব সফর রাজ ২০০৩ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ইউএসএআইডির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। সফর রাজ বর্তমানে ফেডারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের অডিট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন।  

Image: Facebook

রিউমর স্ক্যানারের কাছে এ সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে মনে হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার স্ক্রিপ্টে সম্ভবত ভুলবশত ভিন্ন নাম এসেছে। কারণ সাবেক একজন সিভিল সার্জনের পুলিশ সংস্কারের দায়িত্ব পাওয়ার কথা নয়। তার চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক একজন সচিবের এই দায়িত্ব পাওয়া। 

এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার যোগাযোগ করে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদারের সাথে। তাকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি আমাদের অনুমান সঠিক বলে জানান। বলেন, ভুলবশত ভিন্ন নাম এসেছে। মূলত এই দায়িত্ব যিনি পাচ্ছেন তার নাম সফর রাজ হোসেন। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও এ বিষয়ে সংশোধনী পাঠানো হয়।

অর্থাৎ, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের জন্য তৈরি ভাষনের স্ক্রিপ্টে নামের বানান ভুল আসার দরুণ ড. ইউনূস ভুল বানানটি উচ্চারণ করেছেন। এর ফলে গণমাধ্যমেও ভুল ব্যক্তির ছবি এসেছে। 

অ্যালিসা কার্সনের মঙ্গলে যাওয়ার তথ্যটি বানোয়াট  

0

গত কয়েক বছর ধরে অ্যালিসা কার্সন মঙ্গল গ্রহে অভিযানে যাচ্ছেন দাবিটি প্রচার হয়ে আসছে। সম্প্রতি দাবিটি সামাজিক মাধ্যমে আবার প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অ্যালিসা কার্সন ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে নাসার সব আকাশ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম মানব হিসেবে মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

মূলত, যুক্তরাষ্ট্রের লুজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা অ্যালিসা কার্সন মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই মহাকাশ নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠে। এরই ধারাবাহিকতায় খুব অল্প বয়সেই মহাকাশ বিষয়ক একাধিক অর্জন নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে পুরে নেয়৷ ৩টি স্পেস শাটল উৎক্ষেপণ, ৭ বার স্পেস ক্যাম্পে অংশ নেওয়া, স্পেস একাডেমি ৩ বার, রোবোটিক্স একাডেমি একবার, অ্যাডভান্সড স্পেস একাডেমি থেকে কনিষ্ঠ স্নাতক, এবং একাধিক স্যালি রাইড ক্যাম্প অংশগ্রহণের অর্জন। তার এসব অর্জনের প্রেক্ষিতেই দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে যে, ‘অ্যালিসা কার্সন নাসার কনিষ্ঠতম সদস্য। নাসা তাকে মাত্র ১১ বছর বয়সে নাসা তাকে মনোনীত করে নেয় এবং ঘোষণা করে যে, সমস্ত অবস্থা অনুকূল হলে সে হবে ২০৩৩ সালে মঙ্গলে যাওয়া পৃথিবীর প্রথম মানুষ।’ তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, অ্যালিসা কার্সন নয়, নাসার সর্বকনিষ্ঠ মহাকাশচারী শেলী রাইড এবং ২০৩৩ সালে অ্যালিসা মঙ্গলে যাবেন এমন দাবিরও কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্যপ্রমাণ নেই।

উল্লেখ্য, পূর্বেও প্রায় এমন দাবি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৃতীয় নির্বাচিত হওয়ার তথ্যটি মিথ্যা

0

গত কয়েক বছর ধরে ‘বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারে তৃতীয় খালেদা জিয়া’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে। সম্প্রতি, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্যে আলোচিত সংবাদের ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবার প্রচার করা হচ্ছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ পরিবারের তালিকায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবার তৃতীয় হওয়ার দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে কিছু ভিত্তিহীন, ভুয়া এবং অনির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটের সূত্রে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ইনসাইডার এর প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে সর্বপ্রথম এই তথ্যটি প্রচার করা হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতিবছরই এই তথ্যটি ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

যমুনা টিভির ভুয়া ফটোকার্ডে সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে জড়িয়ে বানোয়াট তথ্য প্রচার 

0

সম্প্রতি, ‘‘মধ্যরাতে টিএসসি এলাকায় ধর্ষনের শিকার হয়েছেল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম’’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম যমুনা টেলিভিশন এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘মধ্যরাতে টিএসসি এলাকায় ধর্ষনের শিকার হয়েছেল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম’ শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভি বা অন্য কোনো গণমাধ্যম কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি এবং টিএসসিতে এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে যমুনা টিভির লোগো এবং এটি  প্রকাশের তারিখ হিসেবে ৩১ আগস্ট, ২০২৪ তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে যমুনা টিভি‘র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও যমুনা টিভি’র ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে যমুনা টিভির পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডের গ্রাফিক্যাল ডিজাইনের মিল থাকলেও আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে যমুনা টিভির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ফন্টের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

Comparison: Rumor Scanner 


এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম বা বিশ্বস্ত অন্য কোনো সূত্রেও এমন কোনো তথ্য বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, ‘মধ্যরাতে টিএসসি এলাকায় ধর্ষনের শিকার হয়েছেল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম’ শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট। 

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s Own Analysis

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বের তৃতীয় সৎ সরকার প্রধান নির্বাচিত হওয়ার তথ্যটি মিথ্যা

0

গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে সৎ পাঁচজন সরকার প্রধানের তালিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় স্থানে দবিতে একটি প্রতিবেদনের ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে। সম্প্রতি, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্যে আলোচিত সংবাদের ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবার প্রচার করা হচ্ছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে সৎ পাঁচজন সরকার প্রধানের তালিকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় স্থানে আছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে একটি ভিত্তিহীন, ভুয়া ওয়েবসাইটের সূত্রে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ইনসাইডারে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে সর্বপ্রথম এই তথ্যটি প্রচার করা হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতিবছরই এই তথ্যটি ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

গণঅধিকার পরিষদ নেত্রী ফাতিমাকে উপদেষ্টা নাহিদের বোন দাবিতে কোটায় চাকরির ভুয়া খবর

0

সম্প্রতি বিডি প্যানোরোমা নামের একটি ওয়েবসাইটে ‘কোটায় চাকুরি পেলেন উপদেষ্টা নাহিদের বোন ফাতেমা তাসনিম’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত কথিত এই সংবাদের বিস্তারিত অংশে এক নারীর ছবি ব্যবহার করে তার নাম ফাতিমা তাসনিম উল্লেখ করে দাবি করা হয়, “তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বড় বোন ফাতেমা তাসনিম চাকুরি পেয়েছেন বিশেষ বিবেচনায়। ফাতেমা তাসনিমকে কানাডাস্থ বাংলাদেশ মিশনের পাবলিক রিলেশন অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মূলত তাকে কানাডাস্থ বাংলাদেশ মিশনে সম্প্রতি চাকুরিচ্যুত মিথিলা ফারজানার স্থানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৩ বছরের মেয়াদে ফাতেমা তাসনিম এই চাকুরি পেয়েছেন। তাকে আগামী ১ অক্টোবর কানাডায় জয়েন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়।”

দাবি করা হয়, “ফাতেমা তাসনিম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংলিশে অনার্স ও মাস্টার্স করে মগবাজারে একটি কোচিং সেন্টারে পড়াতেন।”

নাহিদের বোন

উক্ত সংবাদের বরাতে ফেসবুকে একই দাবিতে কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷ 

একই দাবিতে ইউটিউবের একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যে নারীর ছবি ব্যবহার করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে তিনি উপদেষ্টা নাহিদের বোন নন এবং তিনি কোনো সরকারি চাকরিও পাননি বরং তিনি গণ অধিকার পরিষদের নেত্রী এবং তার সাথে নাহিদের আত্মীয়তার কোনো সম্পর্ক না থাকলেও তারা দুইজনই রাজনৈতিক সহকর্মী। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে বিডি প্যানোরোমা নামের সাইটটি পর্যবেক্ষণ এবং যাচাই করে রিউমর স্ক্যানার। সাইটটিতে বর্তমানে মাত্র চারটি নিউজ রয়েছে। এর একটি ফাতিমা তাসনিমকে নিয়ে। এই সাইটটির বর্তমান যে সংস্করণ সেটির ডোমেইন ২০২৩ সালের ০৩ আগস্ট রেজিষ্ট্রেশন করা হয়৷ গত ১২ জুলাই সর্বশেষ আপডেট হওয়া ডোমেইনটির মেয়াদ ২০২৫ সালের ০৩ আগস্ট পর্যন্ত রয়েছে। তবে সাইটটির অস্তিত্ব পাওয়া যায় ২০১৫ সাল থেকে৷ সে সময় থেকেই নিয়মিত এই সাইটে মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। সেগুলো পরে আবার সরিয়েও নেওয়া হয়। সে বছরই একই নামে একটি ফেসবুক পেজও খোলা হয়। পেজটি বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে একজন এবং যুক্তরাজ্য থেকে দুইজন অপারেট করছেন৷ 

Collage: Rumor Scanner 

এই পেজটি ২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে বেশ সচল দেখা যায়। সাইটের অনেক লিংক শেয়ার করা হয় সে সময়। ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি পোস্ট দিলেও গত দুইদিন আগে থেকে নতুন করে সচল করা হয়েছে পেজটি। ফাতিমা তাসনিমের বিষয়ে কথিত নিউজটির লিংকও শেয়ার হয়েছে।

এই সংবাদে বেশ কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। যেমন দাবি করা হচ্ছে, ফাতেমা তাসনিমকে কানাডাস্থ বাংলাদেশ মিশনের পাবলিক রিলেশন অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মূলত তাকে কানাডাস্থ বাংলাদেশ মিশনে সম্প্রতি চাকুরিচ্যুত মিথিলা ফারজানার স্থানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৩ বছরের মেয়াদে ফাতেমা তাসনিম এই চাকুরি পেয়েছেন। তাকে আগামী ১ অক্টোবর কানাডায় জয়েন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। কিন্তু এসব কথিত তথ্যের বিপরীতে কোনো সূত্র বা প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়নি। নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। তবে এই সংবাদে সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। উল্টো দাবি করা হচ্ছে,  ফাতিমাকে কানাডায় যোগ দিতে নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

এই সাইট এবং এর ফেসবুক পেজের কন্টেন্ট বিশ্লেষণে রিউমর স্ক্যানারের কাছে এটিকে ভুঁইফোঁড় সাইট বলে প্রতীয়মান হয়েছে।  

রিউমর স্ক্যানার পরবর্তীতে কথিত সংবাদে উল্লিখিত তথ্যগুলো যাচাই করে। শুরুতে ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, ২০২৩ সালের আগস্টে গণঅধিকার পরিষদের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ফাতিমা তাসনিমের বক্তব্যের ফুটেজ এটি। 

Screenshot : Facebook 

গত ১৪ আগস্ট প্রকাশিত ফাতিমার একটি বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ থেকে জানা যায়,  তার জন্ম পটুয়াখালীতে। অন্যদিকে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, নাহিদের জন্ম  ঢাকার অদূরে ফকিরখালীতে। ফাতিমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করে নাহিদের সাথে তার আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকার কোনো প্রমাণ মেলেনি। ফাতেমা রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, এটা পুরোটাই একটা ভুয়া নিউজ। এর সাথে বাস্তবে কোন সত্যতা নেই। তাছাড়া, জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো নাহিদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছে। তিনিও জানিয়েছেন, “ফাতিমা তাসনিম নামের এই নারী আমার পরিবারের কেউ নন। তাঁর সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগও নেই।” 

পরবর্তী অনুসন্ধানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ফাতিমার কথিত এই নিয়োগের বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন দিয়েছে কিনা তা জানতে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের সংশ্লিষ্ট শাখায় সম্প্রতি এমন কোনো প্রজ্ঞাপনের তথ্য মেলেনি। কানাডার অটোয়া হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার দেওয়ান হোসনে আইয়ুব রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, তারাও এ বিষয়ে কিছু জানেন না। 

দাবি করা হচ্ছিল যে ফাতিমাকে কানাডাস্থ বাংলাদেশ মিশনের পাবলিক রিলেশন অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু মিশনের অটোয়া এবং টরন্টোর ওয়েবসাইটে এমন কোনো পদের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, তাকে কানাডাস্থ বাংলাদেশ মিশনে সম্প্রতি চাকুরিচ্যুত মিথিলা ফারজানার স্থানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করা হলেও মিথিলার পদটি পাবলিক রিলেশন অফিসারের নয়, ছিল হাইকমিশনে কাউন্সেলর। হাইকমিশন সূত্রেও আলোচিত এই নিয়োগের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে একই সংবাদে ফাতিমা তাসনিম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংলিশে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্নের দাবি করা হলেও ফাতিমার অ্যাকাউন্টে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। ফাতিমা নিজেও রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, “আমি এই ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করিনি। সবকিছুই অসত্য ও মিথ্যা।”

তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বিভাগে সান্ধ্যাকালীন মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে ২০২০ সালে কোর্সটি শেষ করেন৷ এর আগে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ এনং সিদ্ধেশ্বরী ইউনিভার্সিটি কলেজে পড়াশোনার তথ্য পাওয়া যায় তার অ্যাকাউন্টে। 

অর্থাৎ, বিডি প্যানোরোমা নামের একটি ভুঁইফোড় সাইটে গণপরিষদ নেত্রী ফাতিমা তাসনিমের ছবি ব্যবহার করে তাকে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বোন বলে দাবি করা হলেও আদতে তাদের মধ্যে কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। ফাতিমা কানাডার বাংলাদেশ মিশনে চাকুরিও পাননি। এমনকি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি পড়াশোনা করেননি। 

তবে ফাতিমা তাসনিম নামে নাহিদের একজন বড় বোন থাকার দাবি পাওয়া যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপির বরাতে হওয়া সংবাদে। গত ২৬ জুলাই বিবিসি সংস্থাটির বরাত দিয়ে জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বকর মজুমদারকে সাদা পোশাকে ছয়জন তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন নাহিদের বড় বোন ফাতেমা তাসনিম। 

এ বিষয়ে সেসময় দেশি-বিদেশি একাধিক গণমাধ্যমেই সংবাদ প্রকাশিত হয়। দেখুন ডয়চে ভেলে বাংলা, দ্য ডেইলি স্টার, ইত্তেফাক, কালের কণ্ঠ, আমার বার্তা

বিষয়টি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে ফাতিমাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়৷ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই নারীই গণঅধিকার পরিষদের নেত্রী ফাতিমা তাসনিম। 

Screenshot: YouTube 

ফাতিমা তাসনিম এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ২১ জুলাই যখন নাহিদকে মেরে পূর্বাচলে ফেলে রেখে যাওয়া হয় তখন তাকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আনা হয়। এই হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন কাজের সূত্রে ফাতিমার পরিচিত ছিল। নাহিদকে যখন হাসপাতালে নেওয়া হয়, তখন তার দল থেকে তাকে বলা হয় নাহিদকে ভর্তির ক্ষেত্রে সহায়তা করতে। সে সময় নাহিদের সাথে তার স্ত্রী ছিলেন। বিভিন্ন সংস্থার চাপের কারণে ভর্তি নিতে কালবিলম্ব করায় সে সময় নিজেকে নাহিদের বড় বোনের পরিচয় দিয়ে ভর্তি করান তিনি। 

ফাতিমা রিউমর স্ক্যানারকে বলছিলেন, নাহিদকে সহায়তার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সম্পর্কটাকেও প্রাধান্য দিতে চেয়েছেন তিনি। জানান, “আমি গণঅধিকার পরিষদের স্থায়ী কমিটির সদস্য আর ওরা (নাহিদ, আসিফ, তাবাসসুম) আমাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি শাখার কমিটিতে ছিল। সেই জায়গা থেকে আমার সাথে বড় বোন ছোট ভাইয়ের একটা সম্পর্ক ছিল শুরু থেকেই। ওদেরকে আমি অনেক স্নেহ করতাম। আবার ইউনিভার্সিটিরও বড় বোন আমি। তো এত এক্সপ্লেইন, আপন বোন না ফুফাতো বোন না সাংগঠনিক বোন ওই সময়টা এত ব্যাখ্যা করার সময় ছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছে, ও একজন যোদ্ধা। ও আমার ভাই এবং ওকে বাঁচিয়ে রাখাটা, ট্রিটমেন্টটা প্রথম দরকার। সে জায়গা থেকে আমি বলেছি যে আপনারা ভর্তি নেন, আমি ওর গার্ডিয়ান। ওর ট্রিটমেন্টটা করেন।” গণমাধ্যমেও সেভাবেই নাহিদের সাথে তাকে জড়ানো হয় বলে মনে করছেন গণঅধিকার পরিষদের এই নেত্রী। 

ফাতিমা তাসনিম নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক যে পরিচয় উল্লেখ করেছেন তা বিগত কয়েক বছরে নাহিদের রাজনৈতিক কার্যক্রমের সাথে মিল পাওয়া যায়। গত আগস্টে বাংলা ট্রিবিউন জানায়, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন নাহিদ। সেখান থেকে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ছাত্র অধিকার পরিষদের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। এ সময় তিনি এই সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।

জুলাইতে গণমাধ্যমটি জানায়, গত বছরের শুরু থেকে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের দ্বন্দ্বের সময় দল দুই ভাগ হয়ে পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নুরের অনুসারী হিসেবে পরিচিতদের একটি অংশ ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ গড়ে তোলেন। নাহিদ ইসলাম এই সংগঠনের সদস্য সচিব। বাংলা ট্রিবিউন খোঁজ নিয়ে জেনেছে, নাহিদ ইসলাম বিগত ডাকসু নির্বাচনে নুরুল হক নুরের প্যানেল থেকে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। যুগান্তরের ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

সুতরাং, গণঅধিকার পরিষদের নেত্রী ফাতিমা তাসনিম ও উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে ভুঁইফোঁড় একটি সাইটে প্রচারিত দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।   

তথ্যসূত্র 

  • Statement from Fatema Tasnim 
  • Rumor Scanner’s own investigation

আটরশি মাজার ভাঙ্গার দাবিটি গুজব

0

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদের দ্বারা ফরিদপুরের আটরশি মাজার ভাঙ্গার দৃশ্যের। 

আটরশি মাজার ভাঙ্গা

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উল্লিখিত ভিডিওগুলো সম্মিলিতভাবে প্রায় ৩৫ লক্ষ বার দেখা হয়েছে এবং তন্মধ্যে একটি পোস্টেই ১৫ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আটরশি মাজার ভাঙ্গা হয়নি বরং প্রায় ৬ বছর পুরনো একটি ভিডিও ব্যবহার করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে সার্চ করলে ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে “Faraeji Andolon-ফরায়েজী আন্দোলন” নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে “জিন্দা পীরের নামে – সবেমাত্র মাজার করার পস্তুুতি চলছে | আলহামদুলিল্লাহ – মুসলিম জনতা গিয়ে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে…” শিরোনামে হুবহু একই ভিডিওটির দীর্ঘায়িত সংস্করণ প্রচার হতে দেখা যায়। 

Comparison : Rumor Scanner

একই দিনে Islamic Video BD সহ আরো কিছু ফেসবুক পেজ থেকেও একই দাবিতে ভিডিওটির দীর্ঘায়িত সংস্করণ প্রচার হতে দেখা যায়। উক্ত ভিডিওগুলোতে জিন্দা পীরের মাজার উল্লেখ থাকলেও স্থানের নাম পাওয়া যায়নি৷ পরবর্তীতে এরই সূত্র ধরে অধিকতর অনুসন্ধান করলে তার একদিন পূর্বে ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে সুহাইল আহমেদ নামের একটি ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও উক্ত ঘটনার ভিডিওটি পোস্ট হতে দেখা যায় যেখানে জায়গাটি ত্রিশাল মোমেনশাহী বলা হয়েছে। 

Comparison : Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও ফরিদপুর বা আটরশির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য যে, ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে ত্রিশাল নামে একটি উপজেলা আছে। তবে, ২০১৮ সালে ত্রিশাল বা ময়মনসিংহে কোনো জিন্দা পীরের মাজার ভাঙ্গা হয়েছিল কি না গণমাধ্যম সূত্রে তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।

ফরিদপুরের আটরশি মাজারে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো হামলা বা ভাঙ্গচুর হয়েছিল কি না তা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও নির্ভরযোগ্য বা গণমাধ্যম সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

আলোচিত দাবির বিষয়ে সত্যতা জানতে ফরিদপুর আটরশি মাজারের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গদের অন্যতম একজন মোহাম্মদ আখতার হোসেন কাবুলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, “এগুলো (আটরশি মাজার ভাঙ্গচুরের দাবি) ভুয়া, গুজব। ফেসবুকে এগুলো প্রচার হচ্ছে শুনেছি। এগুলোর সত্যতা নাই। মাজারে এরকম (সাম্প্রতিক সময়ে ভাঙ্গচুর বা হামলা) কিছু হয়নি।”

সুতরাং, সম্প্রতি ছাত্রজনতা ফরিদপুরের আটরশি মাজার ভেঙ্গেছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।

তথ্যসূত্র

  • Faraeji Andolon-ফরায়েজী আন্দোলন – Facebook Post
  • Islamic Video BD – Facebook Post
  • Suhail Ahmed – Facebook Post
  • Statement of MD Akhtar Hossain Kabul, Atroshi, Faridpur
  • Rumor Scanner’s own analysis

আঁখি আলমগীরের ফেসবুক পেজের পোস্টের কমেন্ট সম্বলিত স্ক্রিনশটটি এডিটেড

0

গত কয়েক বছর ধরে সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীরের ফেসবুক পেজের একটি পোস্টের কমেন্ট ও রিপ্লাই সম্বলিত স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।

স্ক্রিনশটটিতে যা দেখা যাচ্ছে,

Reaz Muhammad নামে এক ব্যক্তি আঁখি আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে কমেন্টে লিখেন, “আঁখি ম্যাম, আপনার চোখ অনেক সুন্দর। আমি আপনাকে চোখ মারতে চাই!” এই কমেন্টের রিপ্লাইতে আঁখি আলমগীরের পেজ থেকে কমেন্ট করা হয়, “পাছাও অনেক সুন্দর, মারবি নাকি?”

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আঁখি আলমগীরের ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট সম্বলিত স্ক্রিনশটটি বাস্তব নয় বরং প্রচারিত স্ক্রিনশটটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করা।

মূলত, সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীর আলোচিত ছবিটি পোস্ট করেন ২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর। সে পোস্টে রিয়াজ মুহাম্মদ নামক একটি আইডির কমেন্ট ও আঁখি আলমগীরের একটি রিপ্লাই সম্বলিত একটি স্ক্রিনশট পরবর্তীতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারকে রিয়াজ মুহাম্মদ জানিয়েছেন, তিনি এ কাজ করেননি এবং ছবিটি এডিট করা। তাছাড়া, তার আইডিতেও এ সংক্রান্ত একটি পোস্টে তিনি এ কাজ করেননি বলে নিশ্চিত করেন। এছাড়া, আঁখি আলমগীরের পেজের পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনি এখন পর্যন্ত তার কোনো পোস্টে কমেন্ট বা রিপ্লাই করেননি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিরত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

ইত্তেফাকের ফটোকার্ড নকল করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে ড. ইউনূসের ভুয়া মন্তব্য প্রচার 

0

সম্প্রতি, “১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়নি বরং দেশ পাকিস্তান থেকে ভারতের কবলে চলে গিয়েছিলো। যেকারণে সেই তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধে আমি শরিক হইনি। দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫ আগস্ট। আমরা ২ পাকিস্তান এক থাকলে ভারত কোনদিনও আমাদের সাথে পারবে না। জামাতে সাথে নিয়েই দেশ পুনর্গঠিত করছি কারণ ১৯৭১ সালে জামাতই সঠিক রাস্তায় ছিলো” শীর্ষক মন্তব্যটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দাবিতে দৈনিক ইত্তেফাকের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

এছাড়া, উক্ত মন্তব্যটি লেখা আকারেও প্রচার হতে দেখা যায়। 

স্বাধীনতা নিয়ে

ফটোকার্ড যুক্ত করে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

লিখা আকারে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য দাবিতে দৈনিক ইত্তেফাক এমন কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসও এমন কোনো মন্তব্য করেননি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ইত্তেফাকের ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ড পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে ইত্তেফাকের লোগো রয়েছে। সেই সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ইত্তেফাকের ফেসবুক পেজ এমন কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, ইত্তেফাকের ওয়েবসাইটইউটিউব চ্যানেলও এসংক্রান্ত কোনো তথ্য বা সংবাদ পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া, ইত্তেফাক কর্তৃক প্রকাশিত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত ফন্টের মধ্যে অমিল লক্ষ্য করা যায়।

Photocard Comparison By Rumor Scanner 

পাশাপাশি, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অন্য কোনো গণমাধ্যমেও এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে ড. ইউনূসের নামে প্রচারিত এই মন্তব্যটি ভুয়া এবং ইত্তেফাকের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট। 

তথ্যসূত্র

আলেম-ওলামারা না থাকলে আন্দোলন সফল হতো না শীর্ষক মন্তব্য করেননি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

0

সম্প্রতি, ‘‘আলেম-ওলামাদের সমন্বয়করা শ্রদ্ধা করে। তারা না থাকলে আন্দোলন সফল হতো না। – উপদেষ্টা আসিফ’’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম যমুনা টেলিভিশন এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘আলেম-ওলামাদের সমন্বয়করা শ্রদ্ধা করে। তারা না থাকলে আন্দোলন সফল হতো না। – উপদেষ্টা আসিফ’ শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভি বা অন্য কোনো গণমাধ্যম কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে যমুনা টিভির লোগো এবং এটি  প্রকাশের তারিখ হিসেবে ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে যমুনা টিভি‘র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও যমুনা টিভি’র ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল বা অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে যমুনা টিভির পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডের গ্রাফিক্যাল ডিজাইনের মিল থাকলেও আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে যমুনা টিভির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ফন্টের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

Comparison: Rumor Scanner 

এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম বা বিশ্বস্ত অন্য কোনো সূত্রেও অন্তরবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এর করা এমন কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, ‘আলেম-ওলামাদের সমন্বয়করা শ্রদ্ধা করে। তারা না থাকলে আন্দোলন সফল হতো না। – উপদেষ্টা আসিফ’ শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট। 

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s Own Analysis