গতকাল (১১ সেপ্টেম্বর) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এই ভাষণে জানান, সংস্কারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন ‘সরফরাজ চৌধুরী’। রিউমর স্ক্যানার তার বক্তব্যের ভিডিও এবং এ-সংক্রান্ত স্ক্রিপ্ট যাচাই করে এই কমিশনের প্রধান হিসেবে সরফরাজ চৌধুরীর নামই উল্লেখ পেয়েছে।
তার দেওয়া এই তথ্যের পর একাধিক গণমাধ্যমেও (নয়া দিগন্ত, সমকাল, ইত্তেফাক, বার্তা বাজার, ঢাকা প্রকাশ, সারা বাংলা, বাংলানিউজ২৪, রাইজিং বিডি, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস) সরফরাজ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করা হয়।
যদিও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো স্ক্রিপ্টে বা কার্যালয় সূত্রে সরফরাজ চৌধুরীর কোনো ছবি সরবরাহ করা হয়নি। গণমাধ্যমগুলোও সরফরাজ চৌধুরীর বিষয়ে বাড়তি কোনো তথ্য দেয়নি।
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ছবিটি চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডাক্তার সরফরাজ চৌধুরীর। ২০১৪ সালে সরফরাজ চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ওই সময়ে জেনারেল হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনার দুর্নীতির অভিযোগে একটি মামলাও হয় তার বিরুদ্ধে। ২০২২ সালে তাকে এই মামলায় কারাবরণও করতে হয়।
তার অবশ্য আরেকটি পরিচয় আছে। ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য মনোনীত হন তিনি।
এই বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক সমালোচনাও হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সরফরাজ চৌধুরী নামের এই ব্যক্তি পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের কোনো প্রস্তাব পেয়েছেন কিনা তা জানতে রিউমর স্ক্যানার তার সাথে কথা বলেছে। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলছিলেন, “সবই আপনাদের দোয়া ভাই। আমি শুনেছি আমাকে এমন পদে নিয়োগ করা হয়েছে। আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করবো। আমার দুয়ার আপনাদের জন্যে সবসময় খোলা থাকবে।”
তাকে কোনো অফিসিয়াল বার্তা পাঠানো হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান, “না, এমন কিছু আমি এখনো পাইনি। তবে আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারছি যে আমাকে নিয়োগ করা হয়েছে।”
অর্থাৎ, তিনি এ বিষয়ে অফিশিয়াল কোনো বার্তাই পাননি।
এরই মধ্যে মূল ধারার গণমাধ্যম ‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’ (টিবিএস) সূত্রে রিউমর স্ক্যানার জানতে পারে, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সফর রাজ হোসেন। খেয়াল করুন, ‘সরফরাজ’ না লিখে ‘সফর রাজ’ লিখেছে টিবিএস। টিবিএস জানায়, তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার এর সত্যতাও পেয়েছে। জনাব সফর রাজ ২০০৩ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ইউএসএআইডির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। সফর রাজ বর্তমানে ফেডারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের অডিট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন।
রিউমর স্ক্যানারের কাছে এ সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে মনে হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার স্ক্রিপ্টে সম্ভবত ভুলবশত ভিন্ন নাম এসেছে। কারণ সাবেক একজন সিভিল সার্জনের পুলিশ সংস্কারের দায়িত্ব পাওয়ার কথা নয়। তার চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক একজন সচিবের এই দায়িত্ব পাওয়া।
এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার যোগাযোগ করে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদারের সাথে। তাকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি আমাদের অনুমান সঠিক বলে জানান। বলেন, ভুলবশত ভিন্ন নাম এসেছে। মূলত এই দায়িত্ব যিনি পাচ্ছেন তার নাম সফর রাজ হোসেন। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও এ বিষয়ে সংশোধনী পাঠানো হয়।
অর্থাৎ, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের জন্য তৈরি ভাষনের স্ক্রিপ্টে নামের বানান ভুল আসার দরুণ ড. ইউনূস ভুল বানানটি উচ্চারণ করেছেন। এর ফলে গণমাধ্যমেও ভুল ব্যক্তির ছবি এসেছে।