সম্প্রতি, “দুই সম্বনয়ক এর বিরুদ্ধে ত্রানের ১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ এর ঘটনা ঘটেছে’’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম যমুনা টেলিভিশন এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “দুই সম্বনয়ক এর বিরুদ্ধে ত্রানের ১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ এর ঘটনা ঘটেছে’’- শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভি বা অন্য কোনো গণমাধ্যম কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে যমুনা টিভির লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
Screenshot: Facebook
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে যমুনা টিভি‘র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও যমুনা টিভি’র ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেলও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে যমুনা টিভি কর্তৃক প্রচারিত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ফন্টের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পাশাপাশি ফটোকার্ডের শিরোনামে সমন্বয়ক এবং ত্রাণ বানানেও ভুল পাওয়া যায় যেখানে, ‘সমন্বয়ক’ এর পরিবর্তে ‘সম্বনয়ক’ এবং ‘ত্রাণের’ পরিবর্তে ‘ত্রানের’ লেখা হয়েছে।
Photocard Comparison By Rumor Scanner
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার গণমাধ্যম বা বিশ্বস্ত অন্য কোনো সূত্রেও আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “দুই সম্বনয়ক এর বিরুদ্ধে ত্রানের ১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ এর ঘটনা ঘটেছে’’- শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে ফেসবুকে একই দাবি সম্বলিত কতিপয় পোস্ট আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত পোস্টকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের মণিপুর রাজ্যে আবারও অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। জাতিগত সহিংসতাসহ নানা কারণে ড্রোন হামলা, গুলাগুলিসহ নানা সহিংসতার ঘটনায় গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটিতে “সেভেন সিস্টার্সের অন্তর্ভুক্ত মণিপুরের স্বাধীনতাকামীরা ভারতীয় হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে” শীর্ষক দৃশ্য প্রদর্শিত হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ভারতের কোনো জায়গার নয়। তাছাড়া ভিডিওটিতে প্রদর্শিত হেলিকপ্টার মণিপুরের স্বাধীনতাকামীরা ভূপাতিত করেনি বরং মিয়ানমারের কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (KIA) মায়ানমারে উক্ত হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত করে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করলে বিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া নানা সংঘর্ষের সংবাদ প্রচার করা প্ল্যাটফর্ম ক্ল্যাশ রিপোর্টের এক্স অ্যাকাউন্টে গত ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে হুবহু একই ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়।
Comparison : Rumor Scanner
ভিডিওটির বর্ণনায় বলা হয়, ফুটেজটিতে MANPAD ব্যবহার করে মিয়ানমারের মিলিটারি জান্তার হেলিকপ্টারে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (KIA) এর ছোড়া গুলি বা গোলাবর্ষনের দৃশ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। ভিডিওটি পুরনো ঘটনার হতে পারে তবে আজ (৬ সেপ্টেম্বর) ভিডিওটি প্রকাশ হয়েছে। অস্ত্র এবং সংঘর্ষের বিষয়ে রিসার্চ করা প্ল্যাটফর্ম War Noir এর এক্স অ্যাকাউন্টেও গত ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়৷ ভিডিওটি সম্পর্কে বলা হয়, কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (KIA) মায়ানমারে জান্তা হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে। এটি ওয়াইঙমাও, শান এলাকার উপর Mil Mi-17 হতে পারে। গ্রুপটি এক্ষেত্রে খুবই বিরল চাইনিজ FN-6 (Feinu 6) MANPAD ব্যবহার করেছে।
উক্ত একই ভিডিও মায়ানমার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম “মায়ানমার নাও” গত ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে তাদের ফেসবুক পেজেও পোস্ট করেছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে তারা বার্মিজ ভাষায় ভিডিওটির সম্পর্কে জানায়, কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (KIA) এর দ্বারা একটি মিলিটারি কাউন্সিল হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ভিডিও আজ (৬ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। KIA এর একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, ভিডিওটিতে প্রদর্শিত হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনাটি এ বছরের ৩ জানুয়ারি তারিখে নাফাও অঞ্চলের সামরিক ঘাঁটিতে খাদ্য বা রসদ সরবরাহকালীন সময়ে ঘটেছে। (গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্যে অনুবাদ করে)
Comparison : Rumor Scanner
এরই সূত্র ধরে অধিকতর অনুসন্ধান করলে বার্মিজ ভাষার সংবাদমাধ্যম পিপলস স্প্রিং এ উক্ত ভিডিও এর একটি স্ক্রিনশটসহ এ বিষয়ে ৫ দিন পূর্বে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সংবাদ প্রতিবেদনটি পড়ে জানা যায়, সামরিক তথ্যসূত্র, সামরিক অস্ত্র গবেষণা এজেন্সিদের তথ্যমতে, এ বছরের জানুয়ারির প্রথম দিকে লাইজার কাছে নানফো এলাকায় কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (KIA) একটি সামরিক কাউন্সিল সাপোর্ট হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে। ৩ জানুয়ারিতে হওয়া এই হামলায় একজন মেজর ও ২ জন ক্যাপ্টেনসহ প্রায় ৮ জন নিহত হন। সেনাবাহিনীর Mi-17 হেলিকপ্টার ভূপাতিত হওয়ার ভিডিও ফুটেজটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে ভাইরাল হয়। KIA এর তথ্য বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্ণেল ন বু’কে ভিডিওটির ব্যাপারে গত ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এটিকে পুরোনো ঘটনার দৃশ্য বলে জানান। অর্থাৎ, এ থেকেও জানা যায়, ভিডিওটি মায়ানমারের। তাছাড়া, Resonant News নামের একটি এক্স প্ল্যাটফর্মও ভিডিওটিকে মায়ানমারের বলে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টলিও একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে তারা আলোচিত ভিডিওটি ভারতের নয় বরং মায়ানমারের বলে জানিয়েছে।
সুতরাং, মায়ানমারের হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার দৃশ্যকে মণিপুরের স্বাধীনতাকামীরা ভারতের একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার ভিডিও মর্মে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর ছবি যুক্ত করে ‘দেশে সিগারেট সহ সকল মাদক ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হবে – ড. ইউনূস’ শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘দেশে সিগারেট সহ সকল মাদক ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হবে – ড. ইউনূস’ শীর্ষক দাবিতে দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস বা অন্য কোনো গণমাধ্যম কোনো প্রতিবেদন বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং, দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস এর ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি ফটোকার্ডের শিরোনাম পরিবর্তন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটি দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস এর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের আদলে তৈরি করা হয়েছে। আলোচিত ফটোকার্ডটিতে প্রকাশের তারিখ হিসেবে ১০ আগস্ট ২০২৪ উল্লেখ রয়েছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে ১০ আগস্ট প্রকাশিত উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে গত ০৮ সেপ্টেম্বর “ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে: ড. ইউনূস” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ফটোকার্ডের সঙ্গে আলোচিত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত গ্রাফিক্যাল ডিজাইন ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এই ফটোকার্ডটির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির তূলনামূলক বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফটোকার্ড দুটির ছবির মিল থাকলেও আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনাম ও শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস এর ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডের ফন্টের ডিজাইনের মিল নেই। এছাড়াও, দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস এর অফিশিয়াল ফটোকার্ড ফরম্যাটে তারিখ উল্লেখ থাকে না।
Photocard Comparison: Rumor Scanner
আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনামে “ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে: ড. ইউনূস” বাক্যাংশের পরিবর্তে “দেশে সিগারেট সহ সকল মাদক ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হবে – ড. ইউনূস” বাক্যাংশটি যুক্ত করা হয়েছে। এটি থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস এর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডটিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
একই দিনে অর্থাৎ গত ০৮ সেপ্টেম্বর দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস এর ওয়েবসাইটে “ন্যায্যতা এবং সমতার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হবে: ড. ইউনূস” শিরোনামে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায়, রাজধানীর তেজগাঁও অবস্থিত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছাত্র সংগঠক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে সম্পর্ক প্রসঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই কথা বলেন।
এছাড়া অনুসন্ধানে অন্য কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটির বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্ধৃত করে ‘দেশে সিগারেট সহ সকল মাদক ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হবে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত মন্তব্যটি ভুয়া এবং উক্ত দাবিতে দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস এর নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা সম্পাদিত।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভির একটি ফটোকার্ড ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। ফটোকার্ডটিতে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “ক্ষমতায় আসতে দেন। তা না হলে আমাদের পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, উন্নয়ন আমাদের দিয়ে দেন, ব্যস্।”
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত সবচেয়ে ভাইরাল পোস্টটিতে ১৫ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে, ৪ হাজারেরও অধিক বার মন্তব্য করা হয়েছে এবং প্রায় চারশত বার পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “হিন্দুস্তান টাইমসকে সাক্ষাৎকার – ক্ষমতায় আসতে দেন। তা না হলে আমাদের পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, উন্নয়ন আমাদের দিয়ে দেন, ব্যস্। – শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনাম বা তথ্যে আরটিভি কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং আরটিভির ভিন্ন একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার একাধিক ফেসবুক মনিটরিং টুল ব্যবহার করে আলোচিত ফটোকার্ড সম্বলিত পোস্ট ফেসবুকে গত ১১ সেপ্টেম্বর রাত থেকে প্রচার হতে দেখতে পায়। ১১ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টায় “Nusrat Jahan” নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এ সংক্রান্ত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি পাওয়া যায়।
আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে এটিতে আরটিভির লোগো ও ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ এর কথা উল্লেখ পাওয়া যায়।
অতঃপর, আরটিভির ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে এমন দাবি সম্পর্কিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড পাওয়া না গেলেও আরটিভির ফেসবুক পেজে গত ১১ সেপ্টেম্বর তারিখে “ঢাকার আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ২ হত্যা মামলা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত ছবির ও তারিখের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত ফটোকার্ডের ডিজাইনের সাথেও আলোচিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনাম ও শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্ট ডিজাইনের সাথে আরটিভির ফটোকার্ডের ফন্টের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনামে “ঢাকার আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ২ হত্যা মামলা” বাক্যের পরিবর্তে “হিন্দুস্তান টাইমসকে সাক্ষাৎকার – ক্ষমতায় আসতে দেন। তা না হলে আমাদের পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, উন্নয়ন আমাদের দিয়ে দেন, ব্যস্।” বাক্য যুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া, উক্ত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত ছবির বর্ডার বা স্ট্রোকের সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডটির অমিল রয়েছে।
তাছাড়া, আরটিভি সাধারণত তাদের প্রতিটি ফটোকার্ডে ফটোকার্ডটির নিম্নাংশে “বিস্তারিত কমেন্টে” বাক্য সংযুক্ত করে থাকে যা প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে নেই। যা অধিকতর নিশ্চিত করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি আরটিভির তৈরি আসল কোনো ফটোকার্ড নয়।
যা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, আরটিভির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডটিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য বা গণমাধ্যম সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, হিন্দুস্থান টাইমসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ক্ষমতায় আসতে দেন। তা না হলে আমাদের পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, উন্নয়ন আমাদের দিয়ে দেন, ব্যস্।’ শীর্ষক দাবিটি ভিত্তিহীন এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা সম্পাদিত।
গত ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে গত ৯ আগস্ট ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে নিপীড়ন, ধর্ষণ এবং হত্যার অভিযোগে রাস্তায় নেমে আসে প্রায় গোটা রাজ্য। এরই প্রেক্ষিতে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে উদ্ধৃত করে ‘শেখ হাসিনা প্রবেশের পর থেকে ভারতে অশান্তি শুরু হয়েছে’ শীর্ষক দাবিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ‘শেখ হাসিনা প্রবেশের পর থেকে ভারতে অশান্তি শুরু হয়েছে’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায় সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত দাবিটি অন্তত গত ১৮ আগস্ট থেকে পাওয়া যাচ্ছে- ১, ২, ৩। তবে এসব পোস্টে কোনো সূত্র উল্লেখ নেই।
স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে নিপীড়ন, ধর্ষণ এবং হত্যার কলকাতার উত্তাল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে মমতা ব্যানার্জী এমন কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য করলে তা সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হতো কিন্তু আলোচিত দাবির সপক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতীয় গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠে এল বাংলাদেশের পরিস্থিতি। মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা, ‘‘বাংলাদেশ নিয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করবেন না। ফেসবুক বা কোনও জায়গায় কিছু পোস্ট করবেন না। যা বলার ভারত সরকার বলবে৷’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সতর্কবার্তা রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যদের। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক চলাকালীন এই বার্তা দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
রাজ্যবাসীর কাছে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ, ‘‘বাংলার সবাইকে আমরা শান্ত থাকতে অনুরোধ করব। কেউ যেন উত্তেজনা না ছড়ায়। প্ররোচনায় পা না দেয়। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যা জানাবেন, তাই আমরা করব।’’
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, মমতার কথায়, ‘‘আরজি করের ঘটনা নিয়ে সিপিএম এবং বিজেপি রাজনীতি করছে। বাংলাদেশে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। অনেকে ভাবছেন, বাংলাদেশের ঘটনা টেনে এনে এখানেও ক্ষমতা দখল করবেন। কিন্তু মনে রাখবেন, আমি ক্ষমতার মায়া করি না। যত দিন বাঁচব, মানুষকে ন্যায়বিচার এনে দেব। এই ঘটনা জানার পরেও আমি পুলিশকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়েছিলাম। কিন্তু ওঁরা হাই কোর্টে গেলেন।’’
সুতরাং, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে উদ্ধৃত করে ‘শেখ হাসিনা প্রবেশের পর থেকে ভারতে অশান্তি শুরু হয়েছে’ দাবিতে প্রচারিত মন্তব্যটি ভুয়া ও বানোয়াট।
সম্প্রতি, ‘বিএনপি রাজি থাকলে বিএনপিতে যোগ দিতে চাই- ওবায়েদুল কাদের’ শীর্ষক শিরোনামে ‘দৈনিক আজকাল’ এর নাম যুক্ত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘বিএনপি রাজি থাকলে বিএনপিতে যোগ দিতে চাই- ওবায়েদুল কাদের’ শীর্ষক শিরোনামে দৈনিক আজকাল কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। তাছাড়া, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও এমন কোনো কথা বলেননি।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে ‘দৈনিক আজকাল’ এর নাম এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ৬ জুলাই, ২০২৪ তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে ‘দৈনিক আজকাল’ এর ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও দৈনিক আজকাল এর ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির সপক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, দৈনিক আজকাল এর ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত কোনো ফটোকার্ড দেখা যায়নি।
অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত যে দেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জড়িয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় দৈনিক আজকাল এর নাম ব্যবহার করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জড়িয়ে দৈনিক আজকাল এর নামে প্রচারিত এই ফটোকার্ডটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।
সম্প্রতি, ‘বিপিএলে শাকিব খানের ঢাকা দলে অধিনায়কত্ব করবেন সাকিব আল হাসান’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভির লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন ফটোকার্ড দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আসন্ন বিপিএল আসরে অভিনেতা শাকিব খানের দলে তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের অধিনায়কত্ব করবেন দাবি করে সময় টিভি কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রচার করেনি। বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সময় টিভির ফটোকার্ড নকল করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে সময় টিভির লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে সময় টিভি‘র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও সময় টিভি’র ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে সময় টিভির পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডের গ্রাফিক্যাল ডিজাইনের মিল থাকলেও আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে সময় টিভির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ফন্টের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
Photocard Comparison by Rumor Scanner
পরবর্তীতে এবারের আসরে অভিনেতা শাকিব খান কোনো দল কিনছেন কিনা জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি-এর ওয়েবসাইটে গত ৮ সেপ্টেম্বর বিপিএলে শাকিবের দলে খেলবেন সাকিব? শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: NTV
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রতিবারের মতো এবারও বিপিএলে দল মালিকানার পরিবর্তন আসছে। আর এবার এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছে ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের প্রতিষ্ঠান রিমার্ক-হারল্যানের নাম। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা নিতে আগ্রহী। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন বিসিবি কার্যালয়ে সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে আলোচনাও করেন। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান প্রতিষ্ঠানটির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ায় তাকে এবারের বিপিএল আসরে শাকিবের দলে দেখতে পাওয়া যেতে পারে কিনা এমন একটি সম্ভাবনা থাকার কথা ইঙ্গিত হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। তবে এ বিষয়ে প্রতিবেদনটিতে নিশ্চিতভাবে কিছু জানানো হয়নি।
এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম বা বিশ্বস্ত অন্য কোনো সূত্রেও এবারের বিপিএল আসরে অভিনেতা শাকিব খানের দলে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের অধিনায়কত্ব করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ‘বিপিএলে শাকিব খানের ঢাকা দলে অধিনায়কত্ব করবেন সাকিব আল হাসান’ শীর্ষক দাবিতে সময় টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।
সম্প্রতি ক্রেজি ক্যাপশন নামে একটি কথিত ব্লগ সাইটে তাহসান মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি দাবি করেছেন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী আত্মগোপনে যাওয়ার পূর্বে তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে বন্ধুর বাসায় রেখে যান। পরবর্তীতে জানা গেছে, তার বউ এবং টাকা পয়সা নিয়ে বন্ধু ইমরানের সাথে পালিয়ে গেছে।
উক্ত সাইটের সংবাদটি দেখুন এখানে। তাহসান মাহমুদের এ সংক্রান্ত পোস্ট দেখুন এখানে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গোলাম রাব্বানী তার স্ত্রীকে বন্ধুর বাসায় রেখে যাওয়া এবং পরবর্তীতে তার স্ত্রী বন্ধু ইমরানের সাথে পালিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত দাবিটি সঠিক নয় বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ভুয়া এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, বিষয়টি ভুয়া বলে রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন রাব্বানীর স্ত্রী ইসরাত বারী তৃনা।
এ বিষয়ে ফেসবুকে প্রচারিত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায় Crazy Captions (5) নামের একটি গ্রুপে। তাহসান মাহমুদ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গত ০২ সেপ্টেম্বর গ্রুপটির নামের আদলে তৈরি www.crazycaption.info নামের একটি সাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত কথিত একটি সংবাদের মাধ্যমে দাবিটি প্রচার করা হয়৷ এই সংবাদটিও লিখেছেন একই ব্যক্তিই৷ তবে রাব্বানী ও তার স্ত্রীর বিষয়ে যে দাবিগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলোর পক্ষে কোনো প্রমাণ উল্লেখ করা হয়নি। সাইটটি পর্যবেক্ষণ করে মনগড়া এবং সূত্রবিহীন এমন একাধিক সংবাদের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে৷ পরবর্তীতে তাহসান মাহমুদের অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি মালয়েশিয়ার পোর্ট ডিকসনে থাকেন। বাংলাদেশে তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জে বলে উল্লেখ করা হয়েছে অ্যাকাউন্টে।
Screenshot: Facebook
দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম সূত্রে কোনো তথ্য না পেয়ে গোলাম রাব্বানীর সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার৷ তিনি জানান, বিষয়টি পুরোপুরি গুজব। তার স্ত্রী পরিবারের সাথেই আছেন।
রিউমর স্ক্যানার রাব্বানীর স্ত্রী ইসরাত বারী তৃনার সাথেও কথা বলেছে। তিনি বলছেন, বিষয়টি ভুয়া। তিনি এবং তার পরিবার বিষয়টি নিয়ে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছেন।
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, তাহসান মাহমুদ নামে যে ব্যক্তি দাবিটি প্রচার করছেন তিনি পূর্বেও বিতর্কিত ফেসবুক পোস্টের জন্য আলোচনায় আসেন। ২০২০ সালে করোনার সময় তিনি নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে করোনার বিধিনিষেধের মধ্যে সিগারেট আনতে গিয়ে দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা কতিপয় ব্যক্তির মারের শিকার হওয়ার একটি ভিডিও শেয়ার করে মালয়েশিয়া থেকে ভিডিও ধারণ করে বলেন, “বাসায় আসতে আসতেই দেখি সব তোলপাড় হয়ে গেছে। সিগারেট আনতে বাইরে গেছিলাম। তারপর দুএকটা মার খাইছি।’
ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিচয় কি আমরা দেব না। আমরা কি? আমরা কি কৃষক নাকি? আমরা ছাত্রলীগ। পাগলের মতো আপনারা। দুএকটা চটকানো খাইলে কি হয়ে যাইগা? আজকে আমাদের গোলাম রাব্বানী বাজান থাকলে এমন দিন দেখতে হইতো না।”
এই ভিডিওর জন্য পরবর্তীতে তিনি ক্ষমাও চেয়েছিলেন৷ রাব্বানী সে সময় এক পোস্টে জানান, “দেশের এই ক্রাইসিস মোমেন্টে সারাদেশে ছাত্রলীগের কর্মীরা রাত-দিন শ্রম দিচ্ছে, মানুষকে সচেতন করছে, অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য ও সুরক্ষা সরঞ্জাম বিতরণ করে গণমানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা পাচ্ছে। আর তাই, সে অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই প্রাঙ্ক ভিডিও বানিয়েছে। দেশের বাইরে থাকে বলেই, এমনটা করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে।”
অর্থাৎ, একই ব্যক্তি চার বছর পর গোলাম রাব্বানীকে নিয়ে আবার গুজব ছড়ালেন।
এদিকে গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পরবর্তী সময়ে ফেসবুকে এক ব্যক্তির ছবি পোস্ট করে তাকে গোলাম রাব্বানী দাবি করে প্রচার করা হয় যে তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন।
Screenshot: Facebook
রাব্বানীর সাথে রিউমর স্ক্যানারের আলাপের পর এটা স্পষ্ট যে এই বিষয়টিও ভুয়া ছিল। সে সময় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই ব্যক্তি রাব্বানী নয় বলে অনলাইন ভেরিফিকেশন ও মিডিয়া গবেষণা প্লাটফর্ম ডিসমিসল্যাবকে নিশ্চিত করেন হাসপাতালেরই একজন চিকিৎসক।
সুতরাং, ক্রেজি ক্যাপশন নামে একটি ভুঁইফোঁড় সাইটের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর স্ত্রীর তার (রাব্বানী) বন্ধুর সাথে পালিয়ে যাওয়ার দাবি করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, রাজধানীর মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে টয়লেট ব্যবহারের আগে হারপিক নিয়ে আসতে হবে, টয়লেট ব্যবহারের পর ভালো মতো পরিষ্কার করতে হবে এবং নিজে পরিষ্কার করতে না চাইলে ১০ টাকা প্রদান করতে হবে শীর্ষক দাবিতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর লোগোযুক্ত একটি নোটিশের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত নোটিশটি ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ দেয়নি বরং মেট্রোরেল সার্ভিস সংক্রান্ত একটি ফেসবুক গ্রুপে ব্যাঙ্গাত্মকভাবে উক্ত নোটিশটি তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে Metro Memes নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে গত ০২ সেপ্টেম্বর এই নোটিশ সংবলিত প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে পোস্টদাতার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। পরবর্তীতে, এই নোটিশের বিষয়ে উক্ত ফেসবুক গ্রুপের এডমিন প্যানেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রচারিত নোটিশটি সঠিক নয় ও বিনোদনের উদ্দেশ্যে ব্যাঙ্গাত্মকভাবে তৈরি করা হয়েছে বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন তারা।
পরবর্তীতে, অনুসন্ধানে কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত নোটিশটির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং মেট্রোরেল স্টেশনেও এমন কোনো নোটিশের ছবি থাকার প্রমাণ মেলেনি।
বিষয়টি সম্পর্কে অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড এর সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। প্রচারিত নোটিশটি সঠিক নয় বলে নিশ্চিত করেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ।
তবে, মেট্রোরেল স্টেশনে টয়লেট ব্যবহার সংক্রান্ত নোটিশ সম্পর্কে মূলধারার গণমাধ্যম দেশ রূপান্তর এর ওয়েবসাইটে গত ০৮ মে প্রকাশিত একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদের বরাতে জানা যায়, মেট্রোরেলের টয়লেটসমূহ ‘মেসার্স বৈশাখী সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড’ নামক এক প্রতিষ্ঠানকে এই ইজারা দিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। এতে মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে টয়লেট ব্যবহার করতে প্রত্যেক যাত্রীকে ১০ টাকা করে দিতে হবে।
Screenshot: Desh Rupantor
সুতরাং, মেট্রোরেল স্টেশনে টয়লেট ব্যবহারের জন্য হারপিক নিয়ে যাওয়া, টয়লেট পরিষ্কার করা অথবা পরিষ্কার না করলে ১০ টাকা ফি দেওয়ার দাবিতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড এর লোগো যুক্ত একটি নোটিশ প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Statement from Metro Meme Group Admin
Statement from Dhaka Mass Transit Company Limited Authority
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুইটি সাপের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটিতে “সাপেদের মৈথুন” প্রদর্শিত হচ্ছে। উক্ত দাবিটি কতিপয় মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে সাপেদের মৈথুন নয় বরং কম্ব্যাট ডান্স প্রদর্শিত হচ্ছে। সাধারণত নিকটবর্তী নারী সাপের সাথে কে মিলন করবে তা নির্ধারণ করতে এই কম্ব্যাট ডান্স বা যুদ্ধ নৃত্যটি হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সাপটির গঠনগত বৈশিষ্ট্যের সাথে Indian Rat Snake বা দাঁড়াশ সাপের মিল পাওয়া যায়। মূলধারার সংবাদমাধ্যম দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ অনুসারে, বাংলাদেশের এক অতিপরিচিত বিষহীন সাপ হচ্ছে দাঁড়াশ সাপ। হলুদ বাদামি বা হালকা বাদামি কিংবা জলপাই বাদামি বর্ণের সাপটি প্রায় তিন মিটার বা তার থেকেও বেশি লম্বা হতে পারে। সাধারণত এ সাপকে মানুষের আবাসস্থলের আশপাশে, চাষের জমি, বন-জঙ্গল বা ছোটো ঝোপঝাড়ে দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া, দেশীয় সংবাদমাধ্যম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ফিচার বিভাগে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার ও বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদের লেখা নিবন্ধতে সংযুক্ত দাঁড়াশ সাপের ছবির সাথেও আলোচিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত সাপের মিল পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার যোগাযোগ করে সাপে কাটা বিষয়ে সতর্কতা, প্রকৃতি সংরক্ষণের মতো বিষয় নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের এইচআর অ্যান্ড রেস্কিউ কোর্ডিনেটর তাসবীন শাকীবের সাথে। তিনি সাপটি দাঁড়াশ বা Indian Rat Snake বলে নিশ্চিত করেন।
সাপ ও সাপের উদ্ধার নিয়ে কাজ করা প্ল্যাটফর্ম Snake Rescue Team Bangladesh এর প্রেসিডেন্ট মোঃ রাজু আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনিও সাপটি দাঁড়াশ বলেই নিশ্চিত করেন।
দাঁড়াশ সাপ বা Indian Rat Snake এর এরকম কার্যকলাপের বিষয়ে অনুসন্ধান করলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি মেইলে ২০১৩ সালের ৩ মার্চ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায় যেখানে Rat Snake সাপের উল্লিখিত কার্যকলাপকালীন একাধিক ছবি পাওয়া যায়, যার সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত সাপের কার্যকলাপের মিল পাওয়া যায়৷
Comparison : Rumor Scanner
এই প্রতিবেদন জানা যায়, প্রদর্শিত ছবিতে নিজের এলাকা নির্ধারণ করতে ও সঙ্গীকে অপরের থেকে সরাতে রেট স্ন্যাক সাপ দুইটি একে অপরের সাথে লড়াই করছে৷ উক্ত লড়াইয়ে যে হারবে সে চলে যাবে এবং যে জিতবে সে নারী সাপের সাথে মিলিত হবে। উক্ত প্রজাতির সাপ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ইন্দো-চীন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। উক্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয় যে, প্রদর্শিত কার্যকলাপকে অনেকেই ভুলবশত মৈথুন ভাবে কিন্তু প্রদর্শিত সাপ দুইটির মধ্যে দুইটিই পুরুষ সাপ।
বন্যজীবন ও প্রাকৃতিক ইতিহাস বিষয়ক বৈশ্বিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ওয়াইল্ড বা Nat Geo Wild এর ইউটিউব চ্যানেলেও Rat Snake জাতীয় সাপের একইরকম কার্যকলাপকালীন অবস্থায় ধারণকৃত একটি ভিডিও ২০১৮ সালে প্রকাশিত হতে দেখা যায়৷ ভিডিওটির বর্ণনায় বলা হয়, সাপদেরকে দেখে মনে হতে পারে তারা প্রজনন নৃত্য করছে। তবে আদতে এটি পুরুষ সাপদের মধ্যে যুদ্ধ বা Combat রীতি।
Comparison : Rumor Scanner
বর্ণনায় বলা হয়, শ্রীলঙ্কায় ধারণকৃত এই ভিডিওটিতে তাদেরকে কোনো এক নারী সাপ ফেরোমন নিঃসরণ করে আকৃষ্ট করেছে। এরপর তারা লড়াই করে নির্ধারণ করছে সেই নারী সাপের সাথে কে মিলিত হবে। এটি অনেকটাই কুস্তির মতো। এখানে লক্ষ্য হলো প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারানো।
ফেরোমন সাপদের আকৃষ্ট করতে পারে এমন তথ্য একাধিক গবেষণাতেও পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্তৃক পরিচালিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ মেডিক্যাল লাইব্রেরি National Library of Medicine এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, Brown Tree Snake এর উপর ফেরোমনের প্রভাব দেখা যায়। গবেষণাটিতে উক্ত প্রজাতির সাপদের কম্ব্যাট রীতির ব্যাপারেও উল্লেখ পাওয়া যায়। তাছাড়া, ১৬৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত পাবলিশিং হাউজ ব্রিলে প্রকাশিত একটি গবেষণার ফলাফল থেকে পুরুষ ইউরোপীয়ান হুইপ সাপের প্রতিও ফেরোমনের প্রভাব আছে সম্পর্কে জানা যায়। এক্ষেত্রে নারী সাপের নিঃসৃত ফেরোমন তাদের কাছে অগ্রাধিকার পেতে দেখা যায়।
বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট লাইভ সায়েন্সে একইরকম কার্যকলাপকালীন সময়ে ধারণকৃত একটি ভিডিও সংযুক্তিসহ একটি প্রতিবেদন ২০১৭ সালের ২ জুন তারিখে প্রকাশ করা হয়। ভিডিওটিতে দুইটি বিষধর ব্ল্যাক ম্যাম্বা সাপকে অনুরূপভাবে লড়াই করতে দেখা যায়৷ লড়াইটি সম্পর্কে অ্যাডভোকেট ফর স্নেক প্রিজার্ভেশন (ASP) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ডিরেক্টর অফ এজুকেশন মেলিসা আমারেলো লাইভ সায়েন্সকে বলেন, লড়াইটি দেখে লাগছে দুইটি পুরুষ সাপ একটি নারীর জন্য এখানে লড়াই করছে। নারী সাপকে পেতে সাপ এমন লড়াই করে থাকে৷ আমারেলোর ধারণা, কাছে কোথাও একটি নারী ব্ল্যাক ম্যাম্বা সাপ রয়েছে। নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে সাপ এরকম লড়াই করে থাকে। তাছাড়া একই প্রতিবেদনে আমারেলো বলেন, অনেকেই এই যুদ্ধ লড়াইকে নারী ও পুরুষ সাপের পাণিপ্রার্থনা ভেবে গুলিয়ে ফেলে।
অনেকটা একই রকম কার্যকলাপ করতে দেখা যায় রেটল স্ন্যাক জাতের সাপকেও। আমেরিকান ম্যাগাজিন নিউজউইকের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালে এমন একটি কার্যকলাপকালীন দৃশ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷ ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন বায়োলজি গ্র্যাজুয়েট জাস্টিন হ্যারিস যা ভার্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্ট অফ ওয়াইল্ডলাইফ রিসোর্সেসের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজেও প্রকাশিত হয়েছে। ভার্জিনিয়া ডিপার্টমেন্ট অফ ওয়াইল্ডলাইফ রিসোর্সেসের তথ্য মতে, ভিডিওটিতে পুরুষ সাপ দুইটিকে কম্ব্যাট ডান্সরত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। এরকম আচরণ করার কারণ হলো লড়াইয়ের জয়ী পুরুষ সাপ নিকটবর্তী নারী পুরুষ সাপের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ পাবে। এই আচরণটি একাধিক জাতীয় সাপের মধ্যে দেখা যায়।
এ বিষয়ে নিউজ উইককে হ্যারিস বলেন, “নিকটবর্তী নারী সাপ ফেরোমন নিঃসৃত করে মিলনের জন্য পুরুষ সাপকে আকৃষ্ট করে থাকে।” এবং এজেন্সির মতে, “এই লড়াইয়ে জয়ী সাপটি নিকটবর্তী নারী সাপটির সাথে মিলিত হতে পারে।”
আলোচিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত সাপদের কার্যকলাপের বিষয়ে ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের এইচআর অ্যান্ড রেস্কিউ কোর্ডিনেটর তাসবীন শাকীব এবং স্ন্যাক রেস্কিউ টিম বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মোঃ রাজু আহমেদ রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন, আলোচিত ভিডিওটিতে মৈথুন নয় বরং কম্ব্যাট ডান্স প্রদর্শিত হয়েছে। তাসবীন শাকীব জানান, “ভিডিওতে যে সাপ দুইটি দেখা যাচ্ছে সেগুলো Indian Rat snake, বাংলায় বলা হয় দাঁড়াশ সাপ। এটা মেটিং বা মৈথুন না, কম্ব্যাট ড্যান্সের দৃশ্য। মূলত এই যুদ্ধের মাধ্যমে যে সাপ জয়ী হবে সে সেই এলাকায় থাকা স্ত্রী সাপের সাথে মিলন করবে। এখানে (ভিডিওটিতে) দু’টোই পুরুষ সাপ। সাধারণ মানুষের কাছে এটা “সাপের শঙ্খ লাগা” হিসেবে পরিচিত। এটাকে তারা সাপের মিলন মনে করে। সব সময় যে দুটো সাপের মধ্যে কম্ব্যাট ড্যান্স হবে এমনটাও না। অনেক সময় তিন থেকে চারটা সাপের মধ্যে এ যুদ্ধ হতে দেখা যায়। মূলত যখন মেটিং সিজন আসে তখন ওই এলাকার সব পুরুষ সাপ নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ প্রমানের যুদ্ধে নেমে পরে, জয়ী হয় একজনই। সে একজন সে এলাকায় স্ত্রী সাপের সাথে মিলনের সুযোগ পায়।
যে সাপ অধিক সময় নিজেকে উপরে রাখতে পারে সে বিজয়ী গণ্য হয়। কম্ব্যাট ড্যান্সের সময় সাপ একপ্রকার যুদ্ধে থাকে তাই সাধারণ মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়, অপরদিকে সাপের মিলন খুবই ধীর-স্থিরতার মধ্যে দিয়ে হয়। তাই খুব একটা মানুষের চোখে পড়ে না।”
রাজু আহমেদ জানান, “ভিডিওটিতে প্রদর্শিত কার্যকলাপটি মেটিং বা মৈথুন নয়৷ এটি কম্ব্যাট ডান্স। এটি মূলত এলাকায় আধিপত্য ও কে নারী সাপের সাথে মিলিত হবে তা ঠিক করতে করা হয়৷ এখানে সাপগুলো নিজের মাথা উঁচু করে রাখতে চায়। যে শেষ পর্যন্ত মাথা উঁচু করে রাখতে পারবে সে জয়ী হবে এবং ঐ এলাকার নারী সাপগুলোর সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ পাবে।”
কম্ব্যাট রীতি বা ডান্সে একটি সাপ তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাপের চেয়ে মাথা উঁচু করতে রাখতে চায় এমন তথ্য অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের অ্যাকাডেমিক রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম অক্সফোর্ড অ্যাকাডেমিকে ২০১৫ সালের ১ আগস্ট তারিখে “Communication and Displays of Snakes” শিরোনামে প্রকাশিত জার্নাল আর্টিকেলেও পাওয়া যায়। জার্নাল আর্টিকেলটি মূলত ১৯৭৭ সালে আমেরিকান জুলজিস্টে প্রকাশিত হয়েছিল এবং লিখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ওকলাহোমার জুলজি বিভাগের চার্লস সি কার্পেন্টার। তাছাড়া, আলোচিত ভিডিওটিতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে সাপ দুইটি নিজেদের মাথা উঁচু করে রাখতে চাচ্ছে যা কার্যকলাপটি কম্ব্যাট ডান্সের পক্ষে সায় দেয়।
তাছাড়া, তাসবীন শাকীব দাঁড়াশ সাপের মিলনের দৃশ্যের একটি ভিডিও রিউমর স্ক্যানারকে সরবরাহ করেন এবং জানান যে মিলন শান্ত অবস্থায় হয়ে থাকে। উক্ত মিলনের দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সুস্পষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।