হেলিকপ্টার ধ্বংসের এই ভিডিওটি ভারতের নয়, মিয়ানমারের

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের মণিপুর রাজ্যে আবারও অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। জাতিগত সহিংসতাসহ নানা কারণে ড্রোন হামলা, গুলাগুলিসহ নানা সহিংসতার ঘটনায় গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটিতে “সেভেন সিস্টার্সের অন্তর্ভুক্ত মণিপুরের স্বাধীনতাকামীরা ভারতীয় হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে” শীর্ষক দৃশ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। 

হেলিকপ্টার ধ্বংসের

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ভারতের কোনো জায়গার নয়। তাছাড়া ভিডিওটিতে প্রদর্শিত হেলিকপ্টার মণিপুরের স্বাধীনতাকামীরা ভূপাতিত করেনি বরং মিয়ানমারের কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (KIA) মায়ানমারে উক্ত হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত করে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করলে বিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া নানা সংঘর্ষের সংবাদ প্রচার করা প্ল্যাটফর্ম ক্ল্যাশ রিপোর্টের এক্স অ্যাকাউন্টে গত ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে হুবহু একই ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়। 

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটির বর্ণনায় বলা হয়, ফুটেজটিতে MANPAD ব্যবহার করে মিয়ানমারের মিলিটারি জান্তার হেলিকপ্টারে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (KIA) এর ছোড়া গুলি বা গোলাবর্ষনের দৃশ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। ভিডিওটি পুরনো ঘটনার হতে পারে তবে আজ (৬ সেপ্টেম্বর) ভিডিওটি প্রকাশ হয়েছে। অস্ত্র এবং সংঘর্ষের বিষয়ে রিসার্চ করা প্ল্যাটফর্ম War Noir এর এক্স অ্যাকাউন্টেও গত ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়৷ ভিডিওটি সম্পর্কে বলা হয়, কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (KIA) মায়ানমারে জান্তা হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে। এটি ওয়াইঙমাও, শান এলাকার উপর Mil Mi-17 হতে পারে। গ্রুপটি এক্ষেত্রে খুবই বিরল চাইনিজ FN-6 (Feinu 6) MANPAD ব্যবহার করেছে।

উক্ত একই ভিডিও মায়ানমার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম “মায়ানমার নাও” গত ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে তাদের ফেসবুক পেজেও পোস্ট করেছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে তারা বার্মিজ ভাষায় ভিডিওটির সম্পর্কে জানায়, কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (KIA) এর দ্বারা একটি মিলিটারি কাউন্সিল হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ভিডিও আজ (৬ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। KIA এর একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, ভিডিওটিতে প্রদর্শিত হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনাটি এ বছরের ৩ জানুয়ারি তারিখে নাফাও অঞ্চলের সামরিক ঘাঁটিতে খাদ্য বা রসদ সরবরাহকালীন সময়ে ঘটেছে। (গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্যে অনুবাদ করে)

Comparison : Rumor Scanner

এরই সূত্র ধরে অধিকতর অনুসন্ধান করলে বার্মিজ ভাষার সংবাদমাধ্যম পিপলস স্প্রিং এ উক্ত ভিডিও এর একটি স্ক্রিনশটসহ এ বিষয়ে ৫ দিন পূর্বে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সংবাদ প্রতিবেদনটি পড়ে জানা যায়, সামরিক তথ্যসূত্র, সামরিক অস্ত্র গবেষণা এজেন্সিদের তথ্যমতে, এ বছরের জানুয়ারির প্রথম দিকে লাইজার কাছে নানফো এলাকায় কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (KIA) একটি সামরিক কাউন্সিল সাপোর্ট হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে। ৩ জানুয়ারিতে হওয়া এই হামলায় একজন মেজর ও ২ জন ক্যাপ্টেনসহ প্রায় ৮ জন নিহত হন। সেনাবাহিনীর Mi-17 হেলিকপ্টার ভূপাতিত হওয়ার ভিডিও ফুটেজটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে ভাইরাল হয়। KIA এর তথ্য বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্ণেল ন বু’কে ভিডিওটির ব্যাপারে গত ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এটিকে পুরোনো ঘটনার দৃশ্য বলে জানান। অর্থাৎ, এ থেকেও জানা যায়, ভিডিওটি মায়ানমারের। তাছাড়া, Resonant News নামের একটি এক্স প্ল্যাটফর্মও ভিডিওটিকে মায়ানমারের বলে জানিয়েছে।

এ বিষয়ে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টলিও একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে তারা আলোচিত ভিডিওটি ভারতের নয় বরং মায়ানমারের বলে জানিয়েছে।

সুতরাং, মায়ানমারের হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার দৃশ্যকে মণিপুরের স্বাধীনতাকামীরা ভারতের একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার ভিডিও মর্মে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img