শেখ হাসিনা হিন্দুস্তান টাইমসকে সাক্ষাৎকার দেননি, আরটিভির নামে ভুয়া ফটোকার্ড

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভির একটি ফটোকার্ড ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। ফটোকার্ডটিতে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “ক্ষমতায় আসতে দেন। তা না হলে আমাদের পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, উন্নয়ন আমাদের দিয়ে দেন, ব্যস্।”

হিন্দুস্থান টাইমসের

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত সবচেয়ে ভাইরাল পোস্টটিতে ১৫ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে, ৪ হাজারেরও অধিক বার মন্তব্য করা হয়েছে এবং প্রায় চারশত বার পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “হিন্দুস্তান টাইমসকে সাক্ষাৎকার – ক্ষমতায় আসতে দেন। তা না হলে আমাদের পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, উন্নয়ন আমাদের দিয়ে দেন, ব্যস্। – শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনাম বা তথ্যে আরটিভি কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং আরটিভির ভিন্ন একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। 

রিউমর স্ক্যানার একাধিক ফেসবুক মনিটরিং টুল ব্যবহার করে আলোচিত ফটোকার্ড সম্বলিত পোস্ট ফেসবুকে  গত ১১ সেপ্টেম্বর রাত থেকে প্রচার হতে দেখতে পায়। ১১ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টায় “Nusrat Jahan” নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এ সংক্রান্ত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি পাওয়া যায়। 

আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে এটিতে আরটিভির লোগো ও ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ এর কথা উল্লেখ পাওয়া যায়।

অতঃপর, আরটিভির ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে এমন দাবি সম্পর্কিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড পাওয়া না গেলেও আরটিভির ফেসবুক পেজে গত ১১ সেপ্টেম্বর তারিখে “ঢাকার আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ২ হত্যা মামলা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত ছবির ও তারিখের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

উক্ত ফটোকার্ডের ডিজাইনের সাথেও আলোচিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনাম ও শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্ট ডিজাইনের সাথে আরটিভির ফটোকার্ডের ফন্টের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনামে “ঢাকার আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ২ হত্যা মামলা” বাক্যের পরিবর্তে “হিন্দুস্তান টাইমসকে সাক্ষাৎকার – ক্ষমতায় আসতে দেন। তা না হলে আমাদের পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, উন্নয়ন আমাদের দিয়ে দেন, ব্যস্।” বাক্য যুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া, উক্ত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত ছবির বর্ডার বা স্ট্রোকের সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডটির অমিল রয়েছে।

তাছাড়া, আরটিভি সাধারণত তাদের প্রতিটি ফটোকার্ডে ফটোকার্ডটির নিম্নাংশে “বিস্তারিত কমেন্টে” বাক্য সংযুক্ত করে থাকে যা প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে নেই। যা অধিকতর নিশ্চিত করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি আরটিভির তৈরি আসল কোনো ফটোকার্ড নয়।

যা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, আরটিভির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডটিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য বা গণমাধ্যম সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, হিন্দুস্থান টাইমসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ক্ষমতায় আসতে দেন। তা না হলে আমাদের পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, উন্নয়ন আমাদের দিয়ে দেন, ব্যস্।’ শীর্ষক দাবিটি ভিত্তিহীন এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img