সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদের দ্বারা ফরিদপুরের আটরশি মাজার ভাঙ্গার দৃশ্যের।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উল্লিখিত ভিডিওগুলো সম্মিলিতভাবে প্রায় ৩৫ লক্ষ বার দেখা হয়েছে এবং তন্মধ্যে একটি পোস্টেই ১৫ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আটরশি মাজার ভাঙ্গা হয়নি বরং প্রায় ৬ বছর পুরনো একটি ভিডিও ব্যবহার করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে সার্চ করলে ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে “Faraeji Andolon-ফরায়েজী আন্দোলন” নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে “জিন্দা পীরের নামে – সবেমাত্র মাজার করার পস্তুুতি চলছে | আলহামদুলিল্লাহ – মুসলিম জনতা গিয়ে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে…” শিরোনামে হুবহু একই ভিডিওটির দীর্ঘায়িত সংস্করণ প্রচার হতে দেখা যায়।
একই দিনে Islamic Video BD সহ আরো কিছু ফেসবুক পেজ থেকেও একই দাবিতে ভিডিওটির দীর্ঘায়িত সংস্করণ প্রচার হতে দেখা যায়। উক্ত ভিডিওগুলোতে জিন্দা পীরের মাজার উল্লেখ থাকলেও স্থানের নাম পাওয়া যায়নি৷ পরবর্তীতে এরই সূত্র ধরে অধিকতর অনুসন্ধান করলে তার একদিন পূর্বে ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে সুহাইল আহমেদ নামের একটি ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও উক্ত ঘটনার ভিডিওটি পোস্ট হতে দেখা যায় যেখানে জায়গাটি ত্রিশাল মোমেনশাহী বলা হয়েছে।
উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও ফরিদপুর বা আটরশির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য যে, ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে ত্রিশাল নামে একটি উপজেলা আছে। তবে, ২০১৮ সালে ত্রিশাল বা ময়মনসিংহে কোনো জিন্দা পীরের মাজার ভাঙ্গা হয়েছিল কি না গণমাধ্যম সূত্রে তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।
ফরিদপুরের আটরশি মাজারে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো হামলা বা ভাঙ্গচুর হয়েছিল কি না তা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও নির্ভরযোগ্য বা গণমাধ্যম সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আলোচিত দাবির বিষয়ে সত্যতা জানতে ফরিদপুর আটরশি মাজারের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গদের অন্যতম একজন মোহাম্মদ আখতার হোসেন কাবুলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, “এগুলো (আটরশি মাজার ভাঙ্গচুরের দাবি) ভুয়া, গুজব। ফেসবুকে এগুলো প্রচার হচ্ছে শুনেছি। এগুলোর সত্যতা নাই। মাজারে এরকম (সাম্প্রতিক সময়ে ভাঙ্গচুর বা হামলা) কিছু হয়নি।”
সুতরাং, সম্প্রতি ছাত্রজনতা ফরিদপুরের আটরশি মাজার ভেঙ্গেছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
তথ্যসূত্র
- Faraeji Andolon-ফরায়েজী আন্দোলন – Facebook Post
- Islamic Video BD – Facebook Post
- Suhail Ahmed – Facebook Post
- Statement of MD Akhtar Hossain Kabul, Atroshi, Faridpur
- Rumor Scanner’s own analysis