Home Blog Page 33

চট্টগ্রামের বন্দর এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের দাবিটি ভুয়া

গত ১১ আগস্ট থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, চট্টগ্রামের বন্দর এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। ভিডিওটিতে রাতের আঁধারে কথিত ওই ভবনটিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য দেখা যায়। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।  

ইন্সটাগ্রামে এমন ভিডিও দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি চট্টগ্রামের নয় এবং চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় আবাসিক ভবনে বোমা বিস্ফোরণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় একটি বেবি শপে আগুন লাগার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে এটির কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘জয় বাংলা’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল প্রচারিত একটি ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়।  

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভিডিওটি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাথে হুবহু মিল না থাকলেও দুটো ভিডিও-ই একই ঘটনার। উভয় ভিডিওতেই আগুন লাগা ভবনের সামনের ভবনের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও দুটি ভিডিওতেই একই ব্যক্তির ব্যানার দেখতে পাওয়া যায়। ঘটনাস্থল থেকে ভিডিও ধারণকারী ক্যামেরাগুলোর দূরত্বের কারণে ব্যানারটি একেক ভিডিওতে একেক দূরত্বে দেখতে পাওয়া যায়।

এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, এটি চট্টগ্রামের কোনো আবাসিক ভবনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার নয়, বরং সেবছরের ১৭ এপ্রিল দিবাগত রাত প্রায় দুইটার দিকে রাজধানীর ওয়ারী এলাকার একটি বেবি শপে আগুন লাগার ঘটনার দৃশ্য।

প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল রাজধানীর ওয়ারীতে বেবি শপে আগুন; ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি শীর্ষক শিরোনামে একই ঘটনায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।  

উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ থেকেই উক্ত অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কথা জানা যায় প্রতিবেদনটি থেকে।

পাশাপাশি কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে গত ১১ আগস্ট কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের বন্দর এলাকায় আবাসিক ভবনে বোমা বিস্ফোরণের তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, রাজধানীর ওয়ারীতে বেবি শপে আগুন লাগার পুরোনো ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের বন্দর এলাকায় আবাসিক ভবনে বোমা বিস্ফোরণের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সামান্তা শারমিনের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার ও তাকে গ্রেফতারের ভুয়া দাবি প্রচার

সম্প্রতি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখপাত্র সামান্তা শারমিনের বাসা থেকে সিন্দুক ও বস্তা ভর্তি টাকা উদ্ধার দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), 

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এনসিপি নেত্রী সামান্তা শারমিনের বাসা থেকে সিন্দুক ও বস্তা ভর্তি টাকা উদ্ধারের কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং তাকে গ্রেফতারও করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার একটি বাড়ি থেকে র‍্যাবের অভিযানে নগদ সাড়ে ২৬ কোটি টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণালঙ্কার এবং ক্যাসিনো সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনার সংবাদ ফুটেজ আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, সামান্তা শারমিন গ্রেফতার দাবিতে গত মে মাসে গ্রেফতারকৃত আওয়ামী লীগের নেত্রী রজনী আক্তার তুশির ছবিতে সামান্তা শারমিনের মুখমন্ডল বসিয়ে আলোচিত ছবিটি তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। এতে টাকা উদ্ধারের কিছু ভিডিও ফুটেজ এবং একজন র‌্যাব সদস্য কর্তৃক সেই টাকা উদ্ধারের ঘটনা মিডিয়াকে বলছেন এমন একটি ফুটেজ দেখতে পাওয়া যায়। র‌্যাব সদস্যকে বলতে শুনা যায়, “নগদ ২৬ কোটি ৫৫ লক্ষ ৬’শ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এই অপারেশন থেকে উদ্ধার করতে পেরেছি। এখন যে আইনগত প্রক্রিয়া, উদ্ধারকৃত জিনিসপত্র আমরা থানায় হ্যান্ডওভার করব।”

এরপর ভয়েসওভারে পুরুষ কন্ঠে বলা হয়, র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে এনসিপি নেত্রি সামান্তা শারমিনের বাসায় ৪ সিন্দুক ও বস্তাভর্তি টাকা পাওয়া গেছে। উক্ত ঘটনায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে এনসিপি নেত্রী সামান্তা শারমিন। তার বাড়ি থেকে প্রায় ছাব্বিশ থেকে সাতাশ কোটি টাকার মতো পেয়েছে র‌্যাব।

টাকা উদ্ধারের ভিডিও ফুটেজ যাচাই

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘বাংলাভিশন’ -এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘আওয়ামী লীগ নেতা এনু-রুপনের বাসায় টাকার পাহাড়’ শিরোনামে প্রচারিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে থাকা টাকা উদ্ধারের ফুটেজগুলো দেখতে পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার বাড়ি থেকে র‍্যাবের অভিযানে নগদ সাড়ে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ছাড়াও তাদের বাড়ি থেকে ৫ কোটি টাকার এফডিআর বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছিল।

সেই সময় এই বিষয় নিয়ে সময় টিভি ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ইউটিউবে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও প্রায় একই তথ্য জানা যায়।

এছাড়াও, যুগান্তর ও আরটিভির ওয়েবসাইটে সেই সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেই সময় চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর পুরান ঢাকায় র‌্যাব-৩-এর একটি দল ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১২টায় পুরান ঢাকার ১১৯/১  লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এনু-রুপনের একটি বাড়িতে অভিযান চালায়। ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর দেড়টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টা ধরে শ্বাসরুদ্ধকর এই অভিযান চলে।

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহৃত টাকা উদ্ধারের ফুটেজের সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখপাত্র সামান্তা শারমিনের কোনো সম্পর্ক নেই। 

এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সামান্তা শারমিনের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমান টাকা উদ্ধারের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

গ্রেফতারকৃত ছবি যাচাই

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে সমকালের ওয়েবসাইটে চলতি বছরের ২৫ মে ‘নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার ঢাকা মহানগর আ.লীগ নেত্রী রজনী আক্তার’ শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজে থাকা গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির মুখমণ্ডল ব্যতিত বাকি অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison : Rumor Scanner

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৪ মে শনিবার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুরের একটি ভাড়া করা বাড়ি থেকে আওয়ামী লীগের নেত্রী রজনী আক্তার তুশিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এই বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও একই ছবি দেখতে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, গত মে মাসে গ্রেপতারকৃত আওয়ামী লীগের নেত্রী রজনী আক্তার তুশির ছবিতে সামান্তা শারমিনের মুখমন্ডল বসিয়ে আলোচিত ছবিটি তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, যেহেতু সামান্তা শারমিনকে গ্রেফতারই করা হয়নি সেহেতু তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার দাবিটিও অবান্তর।

সুতরাং, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখপাত্র সামান্তা শারমিনের বাসা থেকে সিন্দুক ও বস্তা ভর্তি টাকা উদ্ধার এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে শীর্ষক দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

৫ আগস্ট দেশত্যাগের বিষয়ে শেখ হাসিনার সশরীরে কথা বলার দৃশ্য দাবিতে ডিপফেক ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, “৫ আগস্ট দেশত্যাগ নিয়ে শেখ হাসিনার সশরীরে কথা বলার দৃশ্য” দাবিতে একটি ভিডিও টিকটকে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে দেশত্যাগ বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে কথা বলছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালের মে মাসে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকায় দেওয়া শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিন্ন একটি অডিও সংযুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি থেকে প্রাপ্ত ইমেজ রিভার্স সার্চের মাধ্যমে দেশিয় মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম একাত্তর টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ০২ মে তারিখে “ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার” শিরোনামে প্রকাশিত একতি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

মুল ভিডিওর দৃশ্যাবলীর সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটির ভিজ্যুয়াল সাদৃশ্যতা থাকলেও ভিডিওটির অডিওর সঙ্গে অমিল লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া কথা বলার সময় শেখ হাসিনার মুখ ও ঠোঁটের অসাদৃশ্যতা লক্ষ্য করা যায়। 

পরবর্তীতে, শেখ হাসিনার দেয়া উক্ত সাক্ষাৎকারের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক এনটিভি’র ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ০১ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from NTV by Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের মে মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে তিনি (শেখ হাসিনা) বিএনপি ও তার মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ও সাংবাদিক হয়রানি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। 

উল্লেখ্য, গত ০৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের বিষয়ে এক বছর পূর্তি উপলক্ষে শেখ হাসিনা লাইভে আসার দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, ২০২৪ সালের ০৫ আগস্ট দেশত্যাগ বিষয়ে শেখ হাসিনা গত ০৫ আগস্ট সশরীরে কথা বলেছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র 

সাম্প্রতিক সময়ের আওয়ামী লীগের সমাবেশ দাবিতে ২০২৩ সালের মিছিলের ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, “আগস্টের আজ ৮ তারিখ, আওয়ামী লীগের সমাবেশ আজ সফল হোক জয়*বাংলা*জয়*বঙ্গবন্ধু” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

টিকটকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি প্রায় ৯১ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, এটি ২০২৩ সালে বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে বগুড়ায় আওয়ামী লীগের আনন্দ মিছিলের ভিডিও। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে অনলাইন গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১ জুন “বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে বগুড়ায় আনন্দ মিছিল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কিছু ফ্রেমের মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১ জুন প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে বগুড়ায় আনন্দ মিছিল করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শহরের সাতমাথা থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। 

এছাড়া, একই বিষয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘পুন্ড্রকথা’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১ জুন প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। 

আলোচিত মিছিলের বিষয়ে সেসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত পোস্ট (,) খুঁজে পাওয়া যায়।

গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট কোনো সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বগুড়ায় আওয়ামী লীগের কোনো সমাবেশের সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, ২০২৩ সালে বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে বগুড়ায় আনন্দ মিছিলের ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ের আওয়ামী লীগের সমাবেশ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র 

ছুরি হাতে পুলিশকে তাড়া করার এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, ২০২০ সালের

সম্প্রতি, “আজকে সন্ধ্যায় গাজীপুরে রাস্তায় টহলরত পুলিশের উপর ছুরিকাঘাত করেছে এক জঙ্গি। পরে অন্য পুলিশের সহায়তায় জঙ্গিকে ধরে ফেলে। রাস্তাঘাটে এখন প্রশাসনও নিরাপদ নয়।” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং গাজীপুরে নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২০ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছুরি হাতে যুবকের পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার ভিডিও। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম এনটিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর ‘থানায় ঢুকে ছুরি হাতে পুলিশের ওপর যুবকের হামলা’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি শুরু থেকে ৫৭ সেকেন্ড অংশের হুবহু মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর “ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থানায় ছুরি নিয়ে যুবকের হামলার অভিযোগ, ২ পুলিশ আহত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানার ভেতরে এক যুবক ছুরি নিয়ে ঢুকে পুলিশের ওপর হামলা চালালে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ শাহজাহান (৪২) ও সাধন চাকমা (৩২) নামের এক কনস্টেবল আহত হয়। পুলিশ জেলা শহরের উত্তর মৌড়াইল এলাকার বাসিন্দা মোবাশ্বের হোসেন (৩০) নামক এক যুবককে সঙ্গে সঙ্গেই আটক করে।

সেসময় দেশে অন্যান্য গণমাধ্যমগুলোও এবিষয়ে সংবাদ (,) প্রকাশ করে। 

সুতরাং, ২০২০ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছুরি হাতে যুবকের পুলিশের ওপর হামলার ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ের গাজীপুরের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ভিডিওকে বাংলাদেশিদের ভারতের আসামে আক্রমণের দৃশ্য দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, ‘অবৈধ বাংলাদেশিরা আসামের গোলপাড়ায় কর্মকর্তাদের এবং পুলিশকে সহিংসভাবে আক্রমণ করার জন্য হাতে তৈরি বর্শা নিয়ে সশস্ত্র হয়েছে।’ (অনূদিত) ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

অর্থাৎ দাবি করা হয়েছে, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিরা বাংলাদেশী নাগরিক। তারা হাতে তৈরি বর্শা নিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের গোলপাড়ায় পুলিশ এবং কর্মকর্তাদের আক্রমণ করতে প্রস্তুত হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ভারতের আসাম রাজ্যের নয় প্রকৃতপক্ষে, এটি  গত জুলাই মাসে বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামের আব্দুল্লাপুর গ্রামে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ভিডিও।

অনুসন্ধানে চ্যানেল আইয়ের ইউটিউব চ্যানেলে গত ০১ জুলাই ‘অষ্টগ্রামে বিএনপির দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত অন্তত ৪০, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওর ডেসক্রিপশন থেকে জানা যায়, গত ০১ জুলাই সকালে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে উপজেলার খয়েরপুর-আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাপুর গ্রামে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলেও জানা যায়। 

এই সূত্র ধরে অনুসন্ধানে একই তারিখে ঢাকা মেইলের ওয়েবসাইটে “অষ্টগ্রামে বিএনপির দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত ৪০” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত একটি ছবির সাথেও আলোচিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল রয়েছে। 

ঢাকা মেইলের প্রতিবেদন থেকেও এ বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি ভারতের আসাম রাজ্যের নয়।

সুতরাং, গত জুলাই মাসে বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ভিডিওকে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতের আসামে আক্রমণের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বিএনপি কার্যালয়ে হামলা-অগ্নিকাণ্ডের পুরোনো ভিডিও দিয়ে মিথ্যা প্রচারণা

গত ৯ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও পাথর ছুড়ে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামের এক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে। উক্ত ঘটনার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির নামে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে।

এরই প্রেক্ষিতে সেই সময় একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ঝিনাইদহে বিএনপির অফিস ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে সাধারণ জনতা এবং কিছু কিছু পোস্টে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ছাত্রশিবির আগুন দিয়েছে বলেও দাবি করা হয়।

সাধারণ জনতা আগুন দিয়েছে দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), 

এনসিপি ও শিবির আগুন দিয়েছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

টিকটকে প্রচারিত দাবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি ঝিনাইদহে বিএনপির অফিস জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ছাত্রশিবির কিংবা সাধারণ জনতা কর্তৃক ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়েরও নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ঝিনােইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কার্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এটি সেই ঘটনারই দৃশ্য।

শুরুতেই ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে অফিস বা কার্যালয়টির সাইনবোর্ডে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, কালীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর শাখা কার্যালয়’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবির বিষয়ে ঝিনাইদহের সাংবাদিক মাহমুদ হাসান টিপু -এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১২ জুলাই প্রকাশিত একটিপোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot : Mahmud Hassan Tipu (Facebook)

পোস্টটিতে আলোচিত ভিডিওটি যুক্ত করে ক্যাপশনে বলা হয়, ‘২০২৪ সালের ৪ আগষ্ট ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বিএনপি অফিসে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা আগুন ধরিয়ে দেয়। এবার   “ঝিনাইদহে এনসিপি ও শিবির কর্মিরা বিএনপির অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে” শিরোনামে  সেই ০৪ আগষ্টের ভিডিওটি দেখিয়ে  গুজব ছড়াচ্ছে “প্রতিবাদি কন্ঠ”  নামে একটি আইডি —অথচ এমন কোনটাই ঘটেনি!!’

এছাড়াও, গত ১২ জুলাই ‘উৎসব জাহান’ নামের ফেসবুক অ্যাকউন্ট থেকে প্রকাশিত এক পোস্টেও উক্ত ভিডিওটি ২০২৪ সালের ৪ আগস্টের ঘটনা বলে দাবি করা হয়।

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘৪ আগস্ট ২০২৪

কালীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির কার্যালয়ে স্বৈরাচারীদের সন্ত্রাসী হামলা,,,’

প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) -এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২৩ আগস্ট ‘ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কালীগঞ্জ শহরের থানা রোডস্থ বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

পরবর্তীতে, আলোচিত দাবিটি প্রচারের সময় কালিগঞ্জ বিএনপির কার্যালয়ের অবস্থা সম্পর্কে জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘সবুজ বাংলা টিভি’ নামক ফেসবুক পেজে গত ১২ জুলাই ‘কালিগঞ্জ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হা/ম/লা-ভাং/চু/রে/র গুজব,,,’ শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করতে দেখা যায়।

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হা/ম /লা ভাং/চু/রে/র এক‌টি ভিডিও পোস্ট করা হচ্ছে। প্রচার করা ভিডিওটি গত বছরের ৪ আগস্টের ২০২৫। সম্প্রতি এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। শনিবার (১২ জুলাই) বিকেল  ৬ টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত আছেন।’

অর্থাৎ, উল্লিখিত তথ্যপ্রমাণ থেকে নিশ্চিত যে ভিডিওটি ২০২৪ সালে ০৪ আগস্টের। সেসময় জামায়াত, এনসিপি কিংবা সাধারণ জনতা ন বরং, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দিয়েছিল।

এছাড়া, জাতীয় দৈনিক কালের কন্ঠের ওয়েবসাইটে গত ১২ জুলাই ‘বিএনপির কার্যালয় পোড়ানোর পুরনো ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে বিভ্রান্তি’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সম্প্রতি ঝিনাইদহে বিএনপির কার্যালয় পোড়ানো এবং ভাংচুর দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পুরোনো। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কার্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। 

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, ‘শনিবার (১২ জুলাই) বিকেলে ওই কার্যালয়ে দেখা যায়, ভবনটি নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা অনেকে সেখানে আড্ডা দিচ্ছেন।’

সুতরাং, গেল জুলাই মাসে ঝিনাইদহে বিএনপির অফিস জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ছাত্রশিবির কিংবা সাধারণ জনতা ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে শীর্ষক দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সম্প্রতি তুরস্কের ভূমিকম্পের ঘটনায় তরুণীর বুদ্ধিমত্তার দৃশ্য দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার 

তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমের বালিকেশির প্রদেশে গত ১০ আগস্ট সন্ধ্যায় ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ১। এরই প্রেক্ষিতে এরপর গণমাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়, ‘তুরস্কে ভূমিকম্পের সময় বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলো তরুণী’। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ভূমিকম্প শুরু হলে তা থেকে বাঁচতে এক তরুণী টেবিলের নিচে বসে পড়েন।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত পোস্ট: মাছরাঙা টিভি (ইউটিউব), বাংলা ভিশন (ফেসবুক), নিউজ২৪ (ইউটিউব), প্রথম আলো (ইউটিউব), যায় যায় দিন (ফেসবুক)।

আলোচিত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এছাড়াও, এরূপ দাবিতে ইন্সটাগ্রাম পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গত ১০ আগস্টে তুরস্কে হওয়া ভূমিকম্পের দৃশ্যের নয়। প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটি এই ঘটনার অন্তত ৪ মাস আগে গত ৭ এপ্রিল থেকেই অনলাইনে বিদ্যমান আছে।

অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ‘poncikledin’ ইউজারনেমের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ৭ এপ্রিলে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে দৃশ্যের হুবহু মিল পাওয়া যায়। তবে পোস্টটিতে ভিডিওটি কোথাকার এবং ঠিক কবেকার তা উল্লেখ করা হয়নি।

Comparison : Rumor Scanner

এছাড়াও, অনুসন্ধানে ‘4FdAmusita’ ইউজারনেমের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকেও ভিডিওটি গত ৯ এপ্রিলে প্রচার হতে দেখা যায়। অনুসন্ধানে ভিডিওটি গত জুন মাসেও প্রচার হতে দেখা যায়। 

তবে, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের তুরস্কে হওয়া ভূমিকম্পের ঘটনার নয় এটি নিশ্চিত হওয়া গেলেও ভিডিওটি ঠিক কবেকার এবং কোথাকার সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সুতরাং, গত ১০ আগস্টে তুরস্কে হওয়া ভূমিকম্পের ঘটনার দৃশ্য দাবিতে অন্তত ৪ মাস পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ মিছিল দাবিতে গত বছরের ১ আগস্টের ভিডিও প্রচার 

গত ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিলের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও টিকটকে প্রচার করা হয়েছে। 

এই প্রতিবেদন লেখা অবধি টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৬০ হাজার বারেরও বেশি। এছাড়াও ভিডিওটিতে ৩ শত এর বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে এবং ভিডিওটি ১৬ শতবারেরও বেশি শেয়ার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিলের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানসহ হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া সকল শহীদদের স্মরণে গত বছরের ১ আগস্ট ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত শোক মিছিলের ভিডিও।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। পর্যবেক্ষণে ভিডিওটিতে জাতীয় ‘আজকের পত্রিকা’ লেখা ওয়াটার মার্কের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। 

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে আজকের পত্রিকার ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ০২ আগস্টে ‘ফেনীতে আওয়ামী লীগের শোকযাত্রা ও সমাবেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে থাকা দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison by Rumor Scanner  

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ১ আগস্টে ‘শোকাবহ আগস্ট : ফেনীতে আওয়ামী লীগের শোক র‌্যালি-সমাবেশ’ শিরোনামে আলোচ্য বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের ফিচারে যুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল রয়েছে।

Screenshot from BSS News by Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ‘শোকাবহ আগস্ট’ উপলক্ষে গত বছরের ১ আগস্টে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে একটি শোক মিছিলের আয়োজন করা হয়।

সুতরাং, গত বছরের ১ আগস্টের ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের একটি শোক র‍্যালীর ভিডিওকে আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক সময়ের বিক্ষোভ মিছিল দাবিতে টিকটকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র 

জামায়াত-শিবির বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ‘৩৬ জুলাই: আমরা থামব না’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি আয়োজন করে। সেই আয়োজনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবিটি প্রদর্শিত হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানায় বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বামপন্থী সংগঠনগুলোর প্রতিবাদের মুখে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের সরিয়ে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যার পরবর্তীতে টিএসসিতে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয় ছাত্রশিবির ও বামপন্থী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। এসময় বামপন্থী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ‘তুমিও জানো, আমিও জানি; জামাত মানেই পাকিস্তানী’ শীর্ষক স্লোগান দিতে দেখা যায়। সম্প্রতি এর প্রেক্ষিতে, শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে একটি বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। যাতে বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারীদের একই স্লোগান দিতে দেখা যায়।

টিকটকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত জামায়াত-শিবির বিরোধী বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি ভিডিওতে বাম ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের জামায়াত-শিবির বিরোধী স্লোগান যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। এতে ভিডিওটিতে বেশ কিছু এআই সংক্রান্ত অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওতে দেখতে পাওয়া বিক্ষোভ মিছিলের ব্যানারগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় এতে থাকা লেখা অর্থপূর্ণ নয়। সবগুলো ব্যানারের লেখা-ই বিকৃত। যা দেখে বোঝা যাচ্ছে ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি। কারণ এআই প্রযুক্তির সহায়তায় বাংলা লেখা সম্বলিত কোনো ব্যানার বা ছবি তৈরি করতে গেলে লেখাগুলো বিকৃত হয়ে যায়।

বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম Cantilux এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৫৭ শতাংশ।

তবে ভিডিওটিতে কোনো ওয়াটারমার্ক না থাকায় এটি কোন এআই এজেন্ট ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে সেটি জানা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন কোনো বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।  

অডিও যাচাই

আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহৃত স্লোগানের বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মধুর ক্যান্টিন – Modhur Canteen নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ৫ আগস্ট প্রচারিত একটি ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়। 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসুর নেতৃত্বে সেদিন টিএসসিতে শিবিরের মুখোমুখি বামপন্থী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের জামাত-শিবির বিরোধী স্লোগান দেওয়ার ভিডিও। যার শুরু থেকে ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত দেওয়া স্লোগানের সাথে আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহৃত স্লোগানের কণ্ঠের হুবহু মিল পাওয়া যায়। যা থেকে স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে, উক্ত ভিডিওর স্লোগানের ওই নির্দিষ্ট অংশটুকু কাট করে আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে জামাত-শিবির বিরোধী বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Cantilux 
  • মধুর ক্যান্টিন – Modhur Canteen Facebook Page Post
  • Rumor Scanner’s Analysis