সম্প্রতি ‘একদল মুসলমান একটি মন্দিরের হাতিকে পায়ে শেকল বেঁধে লাঠিপেটা করছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) একাধিক ভারতীয় অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার করা হচ্ছে৷
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি মুসলমান কর্তৃক মন্দিরের হাতিকে পায়ে শেকল বেঁধে লাঠিপেটা করার ঘটনার ভিডিও নয় বরং, ২০২৪ সালের ভিন্ন একটি ঘটনার ভিডিও উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে৷
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৬ আগস্ট সকালে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সামনে একজন মাহুত ও তার সহযোগী একটি হাতিকে নির্যাতন করে এবং এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কুমিল্লা জেলার বন কর্মকর্তা জি এম মোহাম্মদ কবির জানান, ভিডিও দেখার পর থেকে তাদের টিম কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হাতিটি ও তার মাহুতকে খুঁজতে৷ ইতোমধ্যে ঢাকা থেকেও একটি বিশেষ টিম এসেছে।
পরবর্তীতে একই বিষয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর এর ওয়েবসাইটে সে বছরের ৩১ আগস্ট ‘নির্যাতনের শিকার সেই হাতিটির ঠাঁই হলো গাজীপুর সাফারি পার্কে’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার সোনাই উল্ল্যাহ এলাকা থেকে হাতিটি উদ্ধার করা হয়, তবে মাহুতরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। উদ্ধারের পর হাতিটিকে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে নেওয়া হয়েছে। আরো জানা যায়, তিনজন মাহুত দোকানপাটে ঘুরে ঘুরে হাতিটিকে দিয়ে টাকা তুলতেন। টাকা তোলার সময় হাতিটি হঠাৎ বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং দাউদকান্দি এলাকার বেশ কয়েকটি দোকানে তাণ্ডব চালায়। পরে হাতিটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে মাহুতরা সেটিকে পায়ে শেকল বেঁধে আঘাত করতে থাকে।
সুতরাং, কুমিল্লায় চাঁদাবাজির কাজে ব্যবহৃত হাতিকে নির্যাতনের ভিডিওকে মুসলমান ব্যক্তি কর্তৃক মন্দিরের হাতি নির্যাতন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, নারী ও মদের সাথে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের আপত্তিকর ছবি দাবিতে কয়েকটি ছবির একটি কোলাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের নয়। প্রকৃতপক্ষে, পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ বেপারীর একটি ভাইরাল ভিডিওর কয়েকটি স্ক্রিনশটের সমন্বয়ে তৈরি কোলাজকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানের VIRAL DRAMA নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর সাথে উক্ত ভিডিওর বেশকিছু অংশের মিল পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির নাম আশুতোষ বেপারী। তিনি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্রে জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১৫ জুন নারীর সঙ্গে আ.লীগ নেতার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Jugantor
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এতে ব্যবহৃত ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটির একটি দৃশ্যের মিল রয়েছে। এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে একই তথ্য জানা যায়।
অর্থাৎ, পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ছবিকে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়াও হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে প্রাপ্ত তার ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে বেশ মিল পাওয়া গেলেও তাদের মধ্যে কিছুটা সূক্ষ্ম পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
Face Comparison by Rumor Scanner
সুতরাং, নারী ও মদ নিয়ে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের উল্লাসের ছবি দাবিতে ফেসবুক একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, “ইতিহাসের সেরা মিথ্যাক মিথ্যা গল্পের রাজা পিনিক” শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভি’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “ইতিহাসের সেরা মিথ্যাক মিথ্যা গল্পের রাজা পিনিক” শীর্ষক দাবিতে একুশে টিভি কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, একুশে টিভি কর্তৃক প্রকাশিত ভিন্ন শিরোনামের একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে একুশে টিভি’র নাম, লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ‘২৬ জানুয়ারি ২০২৫’ উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তী অনুসন্ধানে একুশে টিভির লোগো ও প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে ‘ইতিহাসের সেরা মিথ্যাক মিথ্যা গল্পের রাজা পিনিক’ শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, একুশে এর ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ২৬ জানুয়ারি গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘গণহত্যায় জড়িত এক পুলিশকে গ্রেপ্তারের খবর দিলেন পিনাকী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির সাথে এই ফটোকার্ডটির ডিজাইনের মিল রয়েছে।
Photocard Comparison by Rumor Scanner
তবে, আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনাম ও শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে একুশে টিভির ফটোকার্ডের ফন্টের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। উভয় ফটোকার্ডের পিনাকী ভট্টাচার্যের ছবির মিল থাকলেও শিরোনামে পরিবর্তন দেখা যায়।
এছাড়া, সাধারণত গণমাধ্যমের ফটোকার্ডে বানান ভুল পরিলক্ষিত হয় না যা উক্ত ফটোকার্ডটিতে লক্ষ্য করা গেছে।
অর্থাৎ, একুশে টিভির এই ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
পরবর্তীতে, এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে একুশে টিভির ওয়েবসাইটে ২৬ জানুয়ারি “গণহত্যায় জড়িত এক পুলিশকে গ্রেপ্তারের খবর দিলেন পিনাকী!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনে রামপুরা-বনশ্রীর মেরাদিয়া বাজারে গুলি চালায় পুলিশ। অনেকে চলে যেতে পারলেও এক কিশোর একটি নির্মানাধীন বিল্ডিংয়ের ৪ তলা কার্ণিশে ঝুলেছিলেন। কিন্তু উপর থেকে তাকে দেখে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। রোববার পিনাকী ভট্টাচার্য তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে পোস্টে জানিয়েছেন ওই পুুলিশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, মনে আছে রামপুরায় ছাদে ঝুলে লুকিয়ে ছিল একজন ছাত্র। ওপর থেকে গুলি করেছিল পুলিশ। সেই পুলিশের এসআই চঞ্চল সরকারকে ধাওয়া করে ধরা হয়েছে খাগড়াছড়িতে।
সুতরাং, ‘ইতিহাসের সেরা মিথ্যাক মিথ্যা গল্পের রাজা পিনিক’ শীর্ষক শিরোনামে একুশে টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা সম্পাদিত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বইয়ের স্টলে কুকুরের উঁকি দেওয়ার ছবিটি এই বছরের অর্থাৎ ২০২৫ সালের বইমেলার নয় বরং, প্রচারিত ছবিটি ২০২৩ সালের বইমেলার।
অনুসন্ধানে Naziur Rahman Nayem নামের এক লেখকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে থেকে ২০২৩ সালের ০৬ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে থাকা ছবির সাথে আলোচিত ছবির মিল রয়েছে।
Image Comparison By Rumor Scanner
আরও অনুসন্ধানে ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি “ভাইরাল কুকুরের নেপথ্যের ঘটনা!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে থাকার ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির মিল রয়েছে।
Screenshot: DBC News
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি ২০২৩ সালের বইমেলায় তোলা।
উল্লেখ্য, এর আগে উক্ত ছবিটি সম্পাদনা করে অধ্যাপক জাফর ইকবালের ছবি যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছিল। যা নিয়ে সেসময় ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ২০২৩ সালের বইমেলার ছবিকে ২০২৫ সালের বইমেলার ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “এই সেই জামাত শিবির রাজাকার কুলা*ঙ্গার সদরপুর থানার হাট কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের চার বছরের শিশুকে ধর্ষ*নকারী। পালিয়ে যায় পরে নগরকান্দা থানার গজারিয়া এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে।”
প্রচারিত উক্ত ভিডিওটিতে কোনো একজন ব্যক্তিকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য প্রদর্শিত হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরিদপুরের সদরপুর থানার হাট কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের চার বছরের শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামায়াত-শিবির কর্মী নয় বরং অভিযুক্ত ব্যক্তি ঐ এলাকার একটি মসজিদের ইমাম। তার সাথে জামায়াত-শিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে “হাট কৃষ্ণপুর নিউজ” নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৩১ জানুয়ারিতে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে একই ঘটনার ভিডিও বলে প্রতীয়মান হয়।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটি সম্পর্কে পোস্টটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, “ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা হাট কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৪ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মসজিদের ইমাম আব্দুল আহাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে হাট কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন রামচন্দ্রপুর গ্রামের মসজিদের বারান্দায় এই ঘটনা ঘটে। শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইমাম আব্দুল আহাদ শিশুটিকে বাদাম খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে মসজিদের বারান্দায় নিয়ে যান এবং সেখানে তাকে ধর্ষণ করেন। শিশুটির চিৎকার শুনে তার মা এসে তাকে উদ্ধার করেন।
আব্দুল আহাদ (৪২) ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার মাঝিয়ালী পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত সারাফত আলীর ছেলে। সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোতালেব হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শিশুটিকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে। অভিযুক্ত ঈমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে”।
উক্ত পোস্টে অভিযুক্ত ইমামের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। এরই সূত্র ধরে এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ইনকিলাবের ওয়েবসাইটে “সদরপুরে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত সেই ইমাম গ্রেপ্তার” শীর্ষক শিরোনামে গত ৩১ জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ইমামের একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয় যার সাথে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ব্যক্তির সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি মূলত উক্ত ঘটনারই।
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “ফরিদপুরের সদরপুরে ৪ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত মসজিদের ইমাম আব্দুল আহাদকে (৪২)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধর্ষণের পরপরই সে সুযোগ বুঝে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) মধ্য রাতে জেলা সদরের কোতোয়ালী থানার গজারিয়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্ত ইমাম ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার বানীহালা ইউনিয়নের মাঝিয়ালী গ্রামের মৃত শরাফত আলীর পুত্র। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, একই দিন দুপুরে উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের একটি মসজিদের বারান্দায় ওই শিশুকে ধর্ষণ করে মসজিদের ইমাম। শিশুটির পরিবার জানিয়েছে, ইমাম আব্দুল আহাদ শিশুটিকে বাদাম খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে মসজিদের বারান্দায় নিয়ে যান এবং সেখানে তাকে ধর্ষণ করেন। শিশুটির চিৎকার শুনে তার মা এসে তাকে উদ্ধার করেন।
এ প্রসঙ্গে সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোতালেব হোসেন জানান, শিশুটিকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। ধর্ষণ করার পর অভিযুক্ত ইমাম পালিয়েছিলেন। ইমামকে মধ্যরাতে জেলা সদরের কোতোয়ালী থানাধীন গজারিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনী পক্রিয়া শেষে শীঘ্রই তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।”
এ বিষয়ে মূলধারার সংবাদমাধ্যম সমকাল ও বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। তবে কোথাও তার সাথে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোতালেব হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি একটি মসজিদের ইমাম৷ জামায়াত বা শিবিরের সাথে তার কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ফরিদপুরের সদরপুর থানার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের চার বছরের শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামায়াত-শিবির কর্মী শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
পহেলা ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া অমর একুশে বইমেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ঘৃণা স্তম্ভ’র ছবি যুক্ত একটি ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সম্প্রতি, সেই ডাস্টবিনে একটি কুকুর ওঠার ভিডিও ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে।
ইন্সটাগ্রামে একই দাবির পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ডাস্টবিনে কুকুর আরোহণের ভাইরাল ভিডিওটি বাস্তব নয়। বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর সাহায্যে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ভিডিওটিতে ‘Arch Sheehab’ নামে একটি জলছাপ (ওয়াটারমার্ক) লক্ষ্য করা যায়। এই সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে একই নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইলে ৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টা ৫৬ মিনিটে পোস্ট হওয়া একই ভিডিও পাওয়া যায়। এটি ফেসবুকে ভিডিওটির প্রথম প্রকাশিত সংস্করণ বলে প্রতীয়মান হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে জনাব শিহাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে তৈরি করেছেন তিনি।
রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণেও ভিডিওটির এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। ভিডিও বিশ্লেষণে কিছু অসংগতি দেখা যায়। যেমন: ভিডিওতে দেখা যায়, কুকুরটি বালির ওপর হাঁটলেও সেখানে কোনো পায়ের ছাপ পড়ছে না।
আরও অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি একটি নির্দিষ্ট ছবির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। ছবিটি গত ১ ফেব্রুয়ারি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। আলোচিত ভিডিও ও তার পোস্ট করা ছবির মধ্যে কুকুর ব্যতীতি সকল বিষয়বস্তুর হুবহু মিল দেখা যায়।
সুতরাং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি একটি ভিডিও অমর একুশে বইমেলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ঘৃণা স্তম্ভ’র ছবি যুক্ত ডাস্টবিনে কুকুর আরোহণের বাস্তব ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজির ঘটনায় আটক হওয়া পাঁচ ব্যক্তি শিবির নেতা নয় বরং, গ্রেফতারকৃত চক্রটির নেতৃত্বে রয়েছেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম আমিন, যাকে ঘটনার পর দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে সেগুলোতে প্রচারিত দাবিটির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের ২৪ ডিসেম্বর,২০২৪ এ প্রকাশিত ‘আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজি, আটক ৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ঘটনার বিস্তারিত বিবরন এবং আটককৃতদের নাম পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কবরস্থানে কর্মরত শ্রমিক ও কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে পুরোনো কবর সরিয়ে নতুন কবর স্থাপনের অজুহাতে জোরপূর্বক অর্থ আদায় করে আসছিল। তারা প্রতি কবর থেকে মাসিক ১ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য করত। চাঁদা না দিলে কবরের অস্তিত্ব নিশ্চিত না রাখার হুমকি দেওয়া হতো। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪) দুপুরে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে আটককৃতদের লালবাগ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আটককৃতরা হলেন— আরমান মিয়া (৫৪), মো. জাহিদ মিয়া (৩০), মো. জামিল হোসেন (৩৪), মো. আরমান ইসলাম (৩৭) এবং রবিন মিয়া (৩৪)। ভুক্তভোগীদের দাবি, চক্রটির নেতৃত্বে রয়েছেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম আমিন।
উল্লেখ্য, দৈনিক কালবেলা অনলাইন এর ‘আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজির মামলায় বিএনপি নেতা আমিন গ্রেপ্তার’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ রাতে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে রাজধানীর নিউ পল্টন এরিয়া থেকে আমিনুল ইসলাম আমিনকে গ্রেপ্তার করে লালবাগ থানায় সোপর্দ করে।
বাংলা ট্রিবিউনের ‘গোরস্থানে চাঁদাবাজি করায় বিএনপি নেতা বহিষ্কার’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজি ও দখলদারত্বের অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের লালবাগ থানাধীন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি আমিনুল ইসলাম আমিনকে দলের সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু এবং সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের নির্দেশক্রমে এ সিদ্ধান্ত হয়।
সুতরাং, আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজি, শিবিরের ৫ নেতা আটক শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
গত ১২ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি আবাসিক হল এবং কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে পোড়া কোরআন শরিফ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় ফরিদ নামের একজন সমন্বয়ক ও ছাত্র শিবিরের নেতাকে আটক করা হয়েছে দাবিতে প্রথম আলোর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। ফটোকার্ডটিতে দাবি করা হয়, উক্ত ব্যক্তি হিন্দু- মুসলিম দাঙ্গা সৃষ্টির জন্যে এই কাজটি করেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাবিতে কোরআন শরিফ পোড়ানোর ঘটনায় আটককৃত ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় এখনও জানা যায়নি। এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রথম আলোও কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে প্রথম আলোর লোগো এবং এটি প্রকাশের দিন হিসেবে ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রথম আলোর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত ওইদিন প্রচারিত এমন কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এতে আটককৃত ব্যক্তির ছবি প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, রাবিতে কোরআন শরিফ পোড়ানোর ঘটনায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের নিজ বাড়ি থেকে মো. ফেরদৌস রহমান নামের এক শিক্ষার্থীকে আটক করে রাজশাহী মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। পুলিশের উপকমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফেরদৌস ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে তার কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পরবর্তী অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে ৪ ফেব্রুয়ারি একই ঘটনায় প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ব্যক্তির সাথে উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত আটককৃত ব্যক্তির ছবির মিল রয়েছে।
Image Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, উক্ত শিক্ষার্থীর পুরো নাম ফেরদৌস রহমান ফরিদ। কোরআনে আগুন দিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে পালিয়ে যান এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, ঢাকা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে থাকেন।
পাশাপাশি আরও জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও অন্যান্য স্থানের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে উক্ত শিক্ষার্থীর কোরআন শরিফ পোড়ানোর ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তবে উক্ত প্রতিবেদনেও তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ‘সে গত ১২ জানুয়ারি কুরআন পোড়ায় রাবিতে কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় সমন্বয়ক ও শিবিরনেতা ফরিদ আটক, চেয়েছিলেন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধাতে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রথম আলোর নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।
পহেলা ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া অমর একুশে বইমেলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ঘৃণা স্তম্ভ’র ছবি যুক্ত করে ডাস্টবিন স্থাপন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এ নিয়ে ইন্টারনেটে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংযুক্ত সেই ডাস্টবিনে কুকুরের প্রস্রাবরত একটি ছবি ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হচ্ছে৷
একই দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংযুক্ত ডাস্টবিনে প্রস্রাবরত কুকুরের ছবিটি আসল নয় বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় শেখ হাসিনার ছবি যুক্ত ডাস্টবিনে প্রস্রাবরত কুকুরের ছবি যুক্ত করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে৷
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Andrew Dandrew নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি ‘Why do dogs pee on car tires?’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির থাম্বনেইলে ব্যবহৃত প্রস্রাবরত কুকুরের ছবির সাথে আলোচিত দাবির ছবিতে থাকা প্রস্রাবরত কুকুরের হুবহু মিল রয়েছে।
মায়ের ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুর থেকে ১১ বছরের এক কিশোরী নিখোঁজ হয়েছেন। গত রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে কৃষি মার্কেট এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন আরাবি ইসলাম সুবা নামের ওই কিশোরী। এসময় তার পরনে ছিল কালো প্যান্ট ও গোলাপি রঙের টি-শার্ট। এরই প্রেক্ষিতে অন্তত গতকাল (৩ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাত থেকে বস্তাবন্দি এক কিশোরী উদ্ধারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, “আরাবি ইসলাম সুবা নামের একটি মেয়ে মোহাম্মদপুর প্রিন্স বাজার (কৃষি মার্কেট সংলগ্ন) তিন রাস্তার মোড় থেকে হারিয়ে গিয়েছিলো-। মেয়েটি আরাবী ইসলাম সুবা কিনা জানা নাই!। হাওড়ের ব্রিজের নিচে একটি মেয়েকে বস্তাবন্দী অবস্হায় পাওয়া গেছে-। @ভিডিও টি কালেক্ট করা।”
উক্ত ভিডিওর সংযুক্তিসহ কিছু পোস্টে এছাড়াও দাবি করা হয়, “আজ বিকালে বিয়ানীবাজার হাওরের মাঝে বস্তাবন্দী একটি মেয়েকে পাওয়া গেছে, এই মেয়েটারও পরনেও কালো প্যান্ট গোলাপি রঙের টি শার্ট ।”
অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে বস্তাবন্দি কিশোরী উদ্ধারের প্রচারিত ভিডিওটি আরাবি ইসলাম সুবা হারিয়ে যাওয়ার পরবর্তী সময়ে বা গতকাল (৩ ফেব্রুয়ারি) ধারণকৃত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি আরাবি ইসলাম সুবা হারিয়ে যাওয়ার পরবর্তী সময়ে বা গতকাল (৩ ফেব্রুয়ারি) ধারণকৃত নয় বরং, ২০২২ সালের ধারণকৃত ভিন্ন একটি ঘটনার দৃশ্যকে আরাবি ইসলাম সুবা হারিয়ে যাওয়ার পরবর্তী সময়ে ধারণকৃত বলে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘জার্নালআই২৪’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২১ জুলাইয়ে “ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন ব্রিজের নিচ থেকে জীবিত বস্তাবন্দি কিশোরী উদ্ধার” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি আরাবি ইসলাম সুবা হারিয়ে যাওয়ার পরবর্তী সময়ের নয় বরং, ২০২২ সালের। উক্ত ইউটিউব ভিডিওটির বর্ণনা অংশে ভিডিওটি সম্পর্কে বলা হয়, “ঠাকুরগাঁওয়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় মাহফুজা খাতুন (১৪) নামের এক মাদরাসা শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার (২০২২ সালের ২১ জুলাই) সকাল পৌরশহরের টাঙন নদী থেকে বস্তা বন্দি অবস্থায় কিশোরীকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন স্থানীয়রা। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ওই কিশোরী। উদ্ধারকৃত মাহফুজা খাতুন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের ক্বারী মোস্তফা কামালের মেয়ে। মাহফুজা খাতুন ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের খাতুনে জান্নাত কামরুন্নেছা কাওমি মহিলা মাদরাসায় কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করতেন।…”
এরই প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম চ্যানেল২৪, ইত্তেফাক, আজকের পত্রিকা, ঢাকা মেইলসহ আরো একাধিক গণমাধ্যমে এ বিষয়ে ২০২২ সালে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও শহরের টাঙ্গন ব্রিজের নিচে বস্তার ভেতর থেকে বৃহস্পতিবার (২০২২ সালের ২১ জুলাই) সকালে এক জীবিত কিশোরীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়রা। ভুক্তভোগী ওই কিশোরী একটা মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী। ব্রিজের নিচে থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধারকৃত ঐ কিশোরীর নাম মাহফুজা খাতুন ও তার বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বিজয়পুর গ্রামে।
সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, আজ ০৪ ফেব্রুয়ারি কিশোরী সুবাকে নওগাঁ থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রেমঘটিত কারণে সুবা সেখানে গিয়েছে।
সুতরাং, আরাবি ইসলাম সুবা হারিয়ে যাওয়ার পরবর্তী সময়ের দৃশ্য দাবিতে ২০২২ সালে ধারণকৃত একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।