সদরপুরে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামায়াত-শিবির কর্মী নয়

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “এই সেই জামাত শিবির রাজাকার কুলা*ঙ্গার সদরপুর থানার হাট কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের চার বছরের শিশুকে ধর্ষ*নকারী। পালিয়ে যায় পরে নগরকান্দা থানার গজারিয়া এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে।”

প্রচারিত উক্ত ভিডিওটিতে কোনো একজন ব্যক্তিকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য প্রদর্শিত হয়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরিদপুরের সদরপুর থানার হাট কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের চার বছরের শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামায়াত-শিবির কর্মী নয় বরং অভিযুক্ত ব্যক্তি ঐ এলাকার একটি মসজিদের ইমাম। তার সাথে জামায়াত-শিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে “হাট কৃষ্ণপুর নিউজ” নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৩১ জানুয়ারিতে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে একই ঘটনার ভিডিও বলে প্রতীয়মান হয়।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটি সম্পর্কে পোস্টটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, “ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা হাট কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৪ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মসজিদের ইমাম আব্দুল আহাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে হাট কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন রামচন্দ্রপুর গ্রামের মসজিদের বারান্দায় এই ঘটনা ঘটে। শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইমাম আব্দুল আহাদ শিশুটিকে বাদাম খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে মসজিদের বারান্দায় নিয়ে যান এবং সেখানে তাকে ধর্ষণ করেন। শিশুটির চিৎকার শুনে তার মা এসে তাকে উদ্ধার করেন।

আব্দুল আহাদ (৪২) ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার মাঝিয়ালী পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত সারাফত আলীর ছেলে। সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোতালেব হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শিশুটিকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে। অভিযুক্ত ঈমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে”।

উক্ত পোস্টে অভিযুক্ত ইমামের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। এরই সূত্র ধরে এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ইনকিলাবের ওয়েবসাইটে “সদরপুরে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত সেই ইমাম গ্রেপ্তার” শীর্ষক শিরোনামে গত ৩১ জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ইমামের একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয় যার সাথে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ব্যক্তির সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি মূলত উক্ত ঘটনারই।

Comparison : Rumor Scanner

উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “ফরিদপুরের সদরপুরে ৪ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত মসজিদের ইমাম আব্দুল আহাদকে (৪২)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধর্ষণের পরপরই সে সুযোগ বুঝে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) মধ্য রাতে জেলা সদরের কোতোয়ালী থানার গজারিয়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্ত ইমাম ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার বানীহালা ইউনিয়নের মাঝিয়ালী গ্রামের মৃত শরাফত আলীর পুত্র। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, একই দিন দুপুরে উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের একটি মসজিদের বারান্দায় ওই শিশুকে ধর্ষণ করে মসজিদের ইমাম। শিশুটির পরিবার জানিয়েছে, ইমাম আব্দুল আহাদ শিশুটিকে বাদাম খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে মসজিদের বারান্দায় নিয়ে যান এবং সেখানে তাকে ধর্ষণ করেন। শিশুটির চিৎকার শুনে তার মা এসে তাকে উদ্ধার করেন।

এ প্রসঙ্গে সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোতালেব হোসেন জানান, শিশুটিকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। ধর্ষণ করার পর অভিযুক্ত ইমাম পালিয়েছিলেন। ইমামকে মধ্যরাতে জেলা সদরের কোতোয়ালী থানাধীন গজারিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনী পক্রিয়া শেষে শীঘ্রই তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।”

এ বিষয়ে মূলধারার সংবাদমাধ্যম সমকালবাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। তবে কোথাও তার সাথে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোতালেব হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি একটি মসজিদের ইমাম৷ জামায়াত বা শিবিরের সাথে তার কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ফরিদপুরের সদরপুর থানার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের চার বছরের শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামায়াত-শিবির কর্মী শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img