গত ১২ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি আবাসিক হল এবং কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে পোড়া কোরআন শরিফ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় ফরিদ নামের একজন সমন্বয়ক ও ছাত্র শিবিরের নেতাকে আটক করা হয়েছে দাবিতে প্রথম আলোর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। ফটোকার্ডটিতে দাবি করা হয়, উক্ত ব্যক্তি হিন্দু- মুসলিম দাঙ্গা সৃষ্টির জন্যে এই কাজটি করেন।

ফেসবুক প্রচারিত এমন ফটোকার্ড দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাবিতে কোরআন শরিফ পোড়ানোর ঘটনায় আটককৃত ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় এখনও জানা যায়নি। এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রথম আলোও কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে প্রথম আলোর লোগো এবং এটি প্রকাশের দিন হিসেবে ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রথম আলোর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত ওইদিন প্রচারিত এমন কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে প্রথম আলো-র ওয়েবসাইটে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় এক শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এতে আটককৃত ব্যক্তির ছবি প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, রাবিতে কোরআন শরিফ পোড়ানোর ঘটনায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের নিজ বাড়ি থেকে মো. ফেরদৌস রহমান নামের এক শিক্ষার্থীকে আটক করে রাজশাহী মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। পুলিশের উপকমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফেরদৌস ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে তার কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পরবর্তী অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে ৪ ফেব্রুয়ারি একই ঘটনায় প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ব্যক্তির সাথে উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত আটককৃত ব্যক্তির ছবির মিল রয়েছে।

এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, উক্ত শিক্ষার্থীর পুরো নাম ফেরদৌস রহমান ফরিদ। কোরআনে আগুন দিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে পালিয়ে যান এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, ঢাকা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে থাকেন।
পাশাপাশি আরও জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও অন্যান্য স্থানের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে উক্ত শিক্ষার্থীর কোরআন শরিফ পোড়ানোর ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তবে উক্ত প্রতিবেদনেও তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ‘সে গত ১২ জানুয়ারি কুরআন পোড়ায় রাবিতে কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় সমন্বয়ক ও শিবিরনেতা ফরিদ আটক, চেয়েছিলেন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধাতে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রথম আলোর নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo Website: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় এক শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার
- Ajker Patrika Website: কোরআন পোড়ানোর মামলায় রাবি শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার