সম্প্রতি ‘ইসলামী স্লোগান দেয়ায় নবীকে জেলে দিতে বললেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে কোনো সমাবেশে জনতাকে “নবী প্রেমীদের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন। নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার” শীর্ষক স্লোগান দিতে শোনা যায়। এরপর, বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসকে বলতে শোনা যায়, “এই কার কথা বলতেছো? নামটা পরিষ্কার করে বলতো। কার কথা বলতেছো? ওই ব্যাটা, কার কথা কইতাছস তুই? ফাজিল কোথাকার! নবীরে ধইরা জেলে দিয়া আয় কমুনে শালার ব্যাটারা। ফাজিলগুলা কোথাকার।”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ইসলাম ধর্মের নবীকে নিয়ে উক্ত মন্তব্য করেননি বরং, নবী উল্লাহ নবী নামের এক বিএনপি নেতাকে নিয়ে কর্মীরা ‘নবী ভাই, নবী ভাই’ স্লোগান দেওয়ায় তিনি এমন মন্তব্য করেছেন৷
মূলত, ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বক্তব্য দেওয়ার সময় উপস্থিত জনতা বিএনপি’র স্থানীয় নেতা নবী উল্লাহ নবীকে নিয়ে স্লোগান দিতে থাকলে স্লোগান থামাতে বলেন মির্জা আব্বাস। তবুও স্লোগান না থামায় তিনি মেজাজ হারিয়ে বলেন, ‘এই কার কথা বলতেছো? নামটা পরিষ্কার করে বলতো। কার কথা বলতেছো? ওই ব্যাটা, কার কথা কইতাছস তুই? ফাজিল কোথাকার! নবীরে ধইরা জেলে দিয়া আয় কমুনে শালার ব্যাটারা। ফাজিলগুলা কোথাকার।’
এই ঘটনার ভিডিও থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘নবী ভাই নবী ভাই’ শীর্ষক স্লোগানের অংশ বাদ দিয়ে “নবী প্রেমীদের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন, নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার” শীর্ষক স্লোগান যুক্ত করে দাবি করা হচ্ছে যে বিএনপির সমাবেশে ইসলামী স্লোগান দেয়ায় মির্জা আব্বাস ইসলাম ধর্মের নবীকে জেলে দিতে বলেছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই ভিডিও ব্যবহার করে একইরকম দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হলে সেসময় রিউমর স্ক্যানার টিম দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
অন্তত আজ (২২ মার্চ) ভোর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, “গভির রাতে স্বরাস্ট্র উপদেষ্টার বারিধারা বাড়িতে বৈষম্য নামের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ তার দলবল নিয়ে গোপন বৈঠক করছেন, এই মূহুর্তে…”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসায় হাসনাত আবদুল্লাহ যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি গতকাল (২১ মার্চ) রাতের নয় বরং, প্রায় ১ মাস পূর্বে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসায় হাসনাত আবদুল্লাহর যাওয়ার ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
প্রচারিত ভিডিওটির বিবরণীতে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা পোস্ট’ এর নাম উল্লেখ করতে শোনা যায়। উক্ত সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল পর্যবেক্ষণ করে গেল রাতে এমন কোনো ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ঢাকা পোস্টের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে প্রচারিত একটি ফেসবুক লাইভ সম্প্রচার ভিডিও পাওয়া যায়। “হঠাৎ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসায় হাসনাত আব্দুল্লাহ, বারিধারা থেকে সরাসরি…” শীর্ষক ক্যাপশনের উক্ত লাইভ ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি মূলত ঢাকা পোস্টের প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি থেকেই নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, এও নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি গতরাতের (২১ মার্চ) নয় বরং পুরোনো।
পরবর্তীতে এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ইত্তেফাকের ওয়েবসাইটে “গভীর রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসার সামনে হাসনাত আব্দুল্লাহ” শীর্ষক শিরোনামে গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের স্থিরচিত্রের সংযুক্তিও পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “শেষ রাতে হঠাৎ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বারিধারা ডিওএইচএসের বাসায় আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাকে উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে দেখা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জরুরি সংবাদ সম্মেলনের পরপরই সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ গাড়িতে চড়ে তার বাসভবনের সামনে উপস্থিত হন হাসনাত আব্দুল্লাহ। এ সময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তবে এ সময় ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে রাজি হননি। একপর্যায়ে কয়েকজন সাংবাদিক লাইভে আছেন বুঝতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে সরে যান হাসনাত। তাকে উপদেষ্টার বাসভবনের ফটকের সামনে দেখা গেলেও তিনি বাসার ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি।
এর আগে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাত ৩টার পর সংবাদ সম্মেলন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। দেশে ধর্ষণ, ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরদের দায়ী করেন তিনি।…”
এছাড়াও, এ বিষয়ে একই ঘটনার স্থিরচিত্রসহ গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলা নিউজের ইউটিউব চ্যানেল ও ঢাকা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একইরকম তথ্য জানা যায়।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গতরাতে (২১ মার্চ) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসায় হাসনাত আবদুল্লাহ যাওয়ার বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসায় হাসনাত আবদুল্লাহ যাওয়ার দৃশ্যকে গতরাতে (২১ মার্চ) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসায় হাসনাত আবদুল্লাহ যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এর নেভাতিম বিমান ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে, ‘ইসরাইলের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করেছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি পুরোনো। যার সাথে সাম্প্রতিক হুথি বিদ্রোহীদের ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামলার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে ইরান কর্তৃক ইসরায়েলের তেল আবিবের একটি শপিং মলের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটির কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে বিবিসি নিউজ এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর ‘Missile strikes near Tel Aviv shopping mall’ শীর্ষক শিরোনমে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির বর্ণনায় বলা হয়, তেহরান নিশ্চিত করেছে যে তারা ইসরায়েলের দিকে “ডজনখানেক” ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং ইসরায়েল প্রতিশোধ নিলে অতিরিক্ত হামলার সতর্কতা দিয়েছে। ভিডিওটিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের তেল আবিবের আয়ালন মলের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্য দেখানো হয়েছে।
অর্থাৎ, এই ভিডিওর সাথে হুতি বিদ্রোহীদের সম্প্রতি ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এই ভিডিওটি হামাস, হিজবুল্লাহ এবং ইরানের সিনিয়র কমান্ডারদের হত্যার জবাবে ২০২৪ সালের অক্টোবরে ইরান কর্তৃক ইসরায়েলে হামলার সময়ের ভিডিও।
সুতরাং, ২০২৪ সালে ইরান কর্তৃক ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভিডিওটিকে সম্প্রতি ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিতে হামলার দৃশ্য হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ‘Cantonment situation’ ক্যাপশনে একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে সেনাবাহিনী সদস্যের পোশাক পরা এক ব্যক্তির পায়ের নিচে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবি দেখা যাচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনী সদস্যের পোশাক পরা ব্যক্তির পায়ের নিচে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আলোচিত ছবিটি আসল নয়। বরং, এটি গত জুলাইয়ের রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যানের ঘটনার একটি ছবির সম্পাদিত সংস্করণ। মূল ছবিতে পায়ের নিচে একটি কালো ব্যাজ ছিল।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে, প্রবাসী সাংবাদিক জুলকার নাইন সায়েরের ফেসবুক প্রোফাইলে গত বছরের ৩০ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি পোস্টে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। মূল ছবিতে দেখা যায়, ড. ইউনূসের ছবি নয়, বরং একটি কালো ব্যাজ দেখা যায়। এই পার্থক্য ছাড়া ছবি দ্বয়ের অন্যান্য বিষয়বস্তুর হুবহু মিল দেখা যায়।
Comparison: Rumor Scanner.
এছাড়া, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের ফেসবুক পেজ থেকেও গত বছরের ৩০ জুলাই একই ছবিটি প্রকাশ করা হয়।
জুলকার নাইন সায়েরের ফেসবুক প্রোফাইলে গত বছরের ৩০ জুলাই ও ১ আগস্ট এমন আরও কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়, যেখানে অন্যান্য বাহিনীর পোশাক পরা ব্যক্তিদেরও কালো ব্যাজ মাড়াতে দেখা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়,ল কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে গত বছরের ৩০ জুলাই দেশে শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন সরকার। তবে সরকার ঘোষিত এই রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা ‘চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি অনলাইনে প্রচার’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। তাদের সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করে ‘লাল রঙ’ দেন। আলোচিত ছবিটিও সেই শোক দিবস প্রত্যাখ্যানের ঘটনার।
সুতরাং, সেনাবাহিনীর পোশাক পরা এক ব্যক্তির পায়ের নিচে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আলোচিত ছবিটি সম্পাদিত।
সম্প্রতি, ক্যান্টনমেন্ট থেকে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের পরিকল্পনা চলছে, এমন অভিযোগ তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। দাবিটি মূল ধারার গণমাধ্যম আরটিভির আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাপ্রধান সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় এবং আরটিভিও উক্ত দাবিতে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আরটিভির ফটোকার্ডের ডিজাইন নকল করে এই ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে আরটিভির লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ২১ মার্চ, ২০২৫ শনিবার উল্লেখ করা হয়েছে।
এর সূত্রে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, আরটিভির ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়াও, লক্ষ্য করা যায় যে, আরটিভির ফটোকার্ডগুলোতে সাধারণত তারিখের পাশে বার উল্লেখ থাকে না৷ তবে আলোচিত ফটোকার্ডটিতে বারও উল্লেখ রয়েছে।
Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, আরটিভি এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।
পাশাপাশি, আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্য অন্য কোনো গণমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে দাবিটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে ফেসবুকে Khalid Rahman নামের একটি অ্যাকাউন্টে গত ২১ মার্চ দুপুর তিনটার পর এ সংক্রান্ত সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি করা হয়। পেশায় ডিজাইনা এই ব্যক্তি জেনারেল ওয়াকারের মৃত্যুর ভুয়া এই ফটোকার্ডটি নিজের অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি একাধিক গ্রুপেও পোস্ট করেন। দেখুন এখানে এবং এখানে।
তাছাড়া, এই ফটোকার্ড প্রকাশের ঘন্টা চারেক পর সেনাপ্রধানের একই ছবি দিয়ে আরটিভির আরেকটি নকল ফটোকার্ডও পোস্ট করেন তিনি। ভুয়া এই ফটোকার্ডে লেখা ছিল, সেনা প্রধান ওয়াকারুজ্জামান এর মৃত্যুর পর পোস্টমর্টেম করতে গিয়ে ১৬ ভরি স্বর্ণ মিললো ওয়াকারুজ্জামান এর পেট থেকে।
Collage: Rumor Scanner
সুতরাং, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের মৃত্যু দাবিতে আরটিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।
সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে ‘ইসরায়েলকে ১০০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া ব্যক্তিটি এখন কথিত মুসলমানদের ইমাম! আমরা খুব সহজে কাউকে অলি আবার জালেম ও বানাই, নির্বোধ আমরা…..!’ শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে৷
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতের ঘটনায় আলোচিত দাবিটি প্রচার হতে শুরু করে ইন্টারনেটে যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুনরায় প্রচার করা হচ্ছে। তবে বানোয়াট সূত্র ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে বিষয়টি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে এবং ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিষয়টিকে মিথ্যা বলে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ১৩ অক্টোবর অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ইনসাইডার এর একটি প্রতিবেদন এবং ‘দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ’ নামে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণের প্রতিবেদনের মাধ্যমে উক্ত দাবিটি প্রচার হয়ে আসছে।
এসব প্রতিবেদনে খবরটির বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো সূত্র উল্লেখ না করে দাবি করা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র দপ্তর একটি বিবৃতি দিয়েছে যেখানে ইসরায়েলের ওপর হামাসের আক্রমণের পর যে সমস্ত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান তাদেরকে সহায়তা দিয়েছে তাদের প্রতি ইসরায়েল সরকার কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। এই সহায়তা দানকারীদের তালিকায় গ্রামীণ আমেরিকা রয়েছে। আরও বলেছে, গ্রামীণ আমেরিকার কো-চেয়ার হলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রিউমর স্ক্যানার দীর্ঘ অনুসন্ধানে জেনেছে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সে সময়ে প্রকাশিত কোনো বিবৃতিতে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। উক্ত দাবি সম্বলিত কোনো বিবৃতি প্রকাশিত হয়নি বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করা হয়েছে। তাছাড়া, ইসরায়েলের গণমাধ্যম এবং ফ্যাক্টচেকারও এমন কোনো সহায়তার বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন। একই সাথে, ইউনূস সেন্টারও বিষয়টি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একাধিকবার একই দাবি বানোয়াট তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে সেসময় ফ্যাক্টচেক ও কুইক ফ্যাক্ট প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দিয়ে গাজায় গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ইসরায়েল হামলা শুরু করে। হামলা শুরুর পর থেকে তিন দিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, ২০০ শিশুসহ ৫০৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৯০৯ জন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “১৯:৩:২০২৫ | ভারত থেকে এসে শেখ হাসিনা ইসরাইল সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ জানালেন ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ালেন আছে বাংলাদেশ এবং বিশ্ববাসীকে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালেন”।
উল্লেখ্য যে, প্রচারিত উক্ত ভিডিওটিতে শেখ হাসিনাকে বলতে দেখা যায়, আমরা সবসময় গণহত্যার বিপক্ষে। গাজায় যা হচ্ছে তা গণহত্যা এবং আমরা এটি সমর্থন করি না। এছাড়াও শেখ হাসিনাকে ইসরায়েলের আক্রমণের প্রতিবাদ করতে ও ফিলিস্তিনি জনগণের নিজেদের ভূমি ও দেশ পাওয়ার বিষয়ে সমর্থন জানানোসহ আরো কিছু বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায়।
অর্থাৎ, দাবি করা হচ্ছে প্রচারিত শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারের উক্ত ভিডিওটি গত ১৯ মার্চের বা সাম্প্রতিক সময়ের।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজায় ইসরায়েলের হামলা ইস্যুতে শেখ হাসিনার প্রতিবাদ জানানোর এই প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, ২০২৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে জার্মানির মিউনিখে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে দেওয়া শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারের ভিডিও সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ‘আনাদোলু ইংরেজি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে “What’s happening in Gaza is genocide: Bangladeshi premier” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে আনাদোলুর ওয়েবসাইটে একই শিরোনামে উক্ত একইদিনে (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের [সাবেক] প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে গাজায় যা ঘটছে তা গণহত্যা, এবং তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে ফিলিস্তিনি জনগণের বেঁচে থাকার এবং তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র থাকার অধিকার রয়েছে। শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) আনাদোলুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সব সময় গণহত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। গাজায় যা ঘটছে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি মনে করি এটি একটি গণহত্যা। তাই আমরা কখনোই এটি সমর্থন করি না।”
তিনি আরও বলেন, “গাজার জনগণের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। তাই আমাদের তাদের সাহায্য করা উচিত এবং এই আগ্রাসন ও যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত।” তিনি জার্মানির মিউনিখ শহরে অনুষ্ঠিত ৬০তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অবরুদ্ধ গাজার মানুষের জন্য সহায়তা পাঠিয়েছে উল্লেখ করে হাসিনা বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান, “ভোগান্তির শিকার ফিলিস্তিনের শিশু, নারী ও জনগণের পাশে দাঁড়ানো উচিত।”
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে পরিকল্পিত ইসরায়েলি অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা কখনোই এ ধরনের হামলাকে সমর্থন করিনি।” [বাংলাদেশের সাবেক] প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “ফিলিস্তিনি জনগণের নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের অধিকার থাকা উচিত, এটি স্পষ্ট।” তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, জাতিসংঘের দ্বিরাষ্ট্র নীতির প্রস্তাব বাস্তবায়িত করা উচিত।” (অনূদিত)
এছাড়াও, এ বিষয়ে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটেও ২০২৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে “আনাদোলুকে সাক্ষাৎকার| গাজায় যা ঘটছে, তা গণহত্যা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকেও একইরকম তথ্য জানা যায়। জানা যায়, তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে জার্মানিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এরূপ কথা বলেছিলেন। শেখ হাসিনা তখন রাষ্ট্রীয় সফরে জার্মানিতে ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে হামাসের আক্রমণের পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ব্যাপক হামলা চালালে হামলার ফলে সেসময় (ফেব্রুয়ারি ২০২৪) পর্যন্ত কমপক্ষে ২৮,৬৬৩ জন নিহত হন এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছিল। মূলত এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা এরূপ মন্তব্য করেছিলেন।
সুতরাং, গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ২০২৪ সালে দেওয়া শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারকে সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ইসরায়েলের হামলা ইস্যুতে শেখ হাসিনার বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি-এর নেতাকর্মীদের মধ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাকুপির ঘটনায় জামায়াতের একজন নেতা খুন হয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রচারিত এমন দাবির একটি পোস্ট এখানে (আর্কাইভ) এবং ফেসবুকে প্রচারিত এমন দাবির একটি পোস্ট এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি-র নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় জামায়াত নেতা নিহত হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ মিয়ার হত্যার ২০২৪ সালের জুন মাসের ভিডিওকে (সিসিটিভি ফুটেজ) ভুয়া দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটির সঙ্গে উক্ত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়াও, পোস্টটি থেকে জানা যায় এটি নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও।
Video Comparison by Rumor Scanner
পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২৯ জুন আ.লীগ নেতা হত্যার ভিডিও ভাইরাল শীর্ষক শিরোনামে উক্ত ঘটনায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
Screenshot: Jugantor
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ফতুল্লার কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক এবং আলীপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি সুরুজ মিয়ার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার। যেটি সেসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
মামলার সূত্রে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, “এলাকায় চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য স্থানীয় সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন ওরফে হিরা ও সালাউদ্দিন সালুসহ তাদের বাহিনীর লোকজনকে সুুরুজ মিয়া অনুরোধ করেন। যার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে হিরা ও সালু বাহিনীর লোকজন সুরুজ মিয়ার বড় ছেলে রাজু ও জনি ওপর হামলা করে। এসময় তাদের উদ্ধার করতে গেলে সুরুজ মিয়ার ওপরও তারা হামলা চালায়। পরবর্তীতে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুরুজ মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।”
সুতরাং, নারায়গঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা হত্যার পুরোনো ভিডিওকে জামায়াত-বিএনপির সংঘর্ষে জামায়াত নেতা নিহত হওয়ার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি দেশ টিভিতে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনের ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “এই হিন্দু মহিলার নাবালিকা মেয়েকে বন্দুকের মুখে উগ্রপন্থী মুসলিমরা স্কুল যাওয়ার পথে অপহরণ করেছে! প্রশাসন ও পুলিশ নীরব! অদ্ভুতভাবে, যখনই ইসরাইল এই উগ্রপন্থীদের ধ্বংস করে, তখন সবাই মানবতা দেখতে পায়!” (অনূদিত)
উল্লেখ্য যে, প্রচারিত ভিডিওটিতে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের ঐশী মন্ডল নামে এক মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণের দাবি করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে উল্লিখিত পিরোজপুরের নাজিরপুরের শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নের ঐশী মন্ডলকে অপহরণের ঘটনায় উগ্রবাদী মুসলিম বা সাম্প্রদায়িকতা জড়িত থাকার বিষয়টি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, প্রেমঘটিত কারণে ঐশীর হিন্দু প্রেমিক ঐশীকে তুলে নিয়েছে এবং সে পরবর্তীতে শাখা সিঁদুর পরিয়ে ঐশীর সাথে ছবিও পোস্ট করেছে।
এ বিষয়ে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ঘটনাটি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নের৷ উক্ত এলাকার লিটন মন্ডলের মেয়ে ঐশী মন্ডলকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের বাড়ির কাজের ছেলে সুজিত শিকারীর ছেলে নয়ন শিকারী। গত ২ মার্চ ঐশী স্কুলে যাওয়ার পথে নয়ন কয়েকজন বখাটে ছেলেদের সাথে নিয়ে ঐশীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং শাঁখা-সিঁদুর পরিয়ে একটি ছবি ভাইরাল করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে, উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনটিতে অভিযুক্ত কেউ মুসলিম বলে উল্লেখ করা হয়নি।
Comparison : Rumor Scanner
পরবর্তী অনুসন্ধানে দেশ টেলিভিশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত মূল ভিডিওটি পাওয়া যায়। গত ১৭ মার্চে “কাজের ছেলের ফাঁদে পা দিলো ঐশী…” শীর্ষক ক্যাপশনে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়। তবে, উক্ত মূল প্রতিবেদনেও অভিযুক্তদের মুসলিম বলা হয়নি।
উক্ত সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে ‘সকালের খবর২৪’ নামক একটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে গত ১৬ মার্চে “স্কুল ছাত্রী অপহরণ করে বিয়ের অভিযোগে যুবকের বিরুদ্ধে মামলা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে একটি ছেলের সাথে শাঁখা-সিদুর হাতে একটি মেয়ের ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “পিরোজপুর সদর উপজেলার শিকদার মল্লিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ঐশী মন্ডল (১৫) স্কুলে যাওয়ার পথে জোরপূর্বক অপহরণ করে বিয়ের অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে।…গত ২ মার্চ (রবিবার) সকাল ১০ টায় পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের চৌগাছা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মেয়ের বাবা ৪ জনকে আসামী করে একটি অপহরন মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলো, নয়ন শিকারী, সুজিত শিকারী, চয়ন শিকারী, অজিত শিকারীসহ অজ্ঞাত ৩জন। মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নয়ন শিকারী দীর্ঘদিন ধরে ঐশীর বাড়ীতে দিনমজুর হিসেবে কৃষি কাজ করত। এক পর্যায়ে ঐশী ও নয়নের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। গত ২ মার্চ ঐশী স্কুলে যাওয়ার পথে নয়ন কয়েকজন বখাটে ছেলেদের সাথে নিয়ে ঐশীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং শাঁখা-সিঁদুর পরিয়ে একটি ছবি ভাইরাল করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মেয়ের মা কবিতা মন্ডল জানান, আমার মেয়ে প্রতিদিন যেভাবে স্কুলে যায়, সেদিন ২ তারিখও একইভাবে স্কুলে গেছে। স্কুল থেকে নিখোঁজ আমার মেয়ে। আমি প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকি আমার মেয়ে কখন ফিরবে।…”
এছাড়াও, একইরকম তথ্য ‘ঢাকা ক্যানভাস’ নামক একটি অনলাইন পোর্টালের ওয়েবসাইটে গত ১৬ মার্চে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়। অভিযুক্তদের নাম দেখে বুঝা যায় যে, অভিযুক্তরা মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম নাজিরপুর থানার ওসি মো. মাহামুদ আল ফরিদ ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করে। তিনি জানান, মুসলিমরা অপহরণ করেছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। এরূপ ভুয়া তথ্য প্রচার দুঃখজনক। প্রকৃতপক্ষে, অভিযুক্তরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং প্রেমঘটিত বিষয় রয়েছে। মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক তাই অপহরণ মামলা করা হয়েছে। তবে, মেয়েকে উদ্ধার করার পর মেয়ের স্টেটমেন্ট শোনার পর মেয়ের বয়স সাপেক্ষে অপহরণ কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। অভিযুক্ত ও মেয়ে সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এখানে হিন্দু-মুসলিম কীভাবে আসলো জানা নেই।
সুতরাং, পিরোজপুরের নাজিরপুরের শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নের ঐশী মন্ডলকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রেমিকের তুলে নেওয়ার ঘটনাকে উগ্রবাদী মুসলিমরা তুলে নিয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ ও ‘ইসলামি খেলাফত’ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন। তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একে ‘বিভ্রান্তিকর’ এবং ‘বাংলাদেশের সুনাম ও ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর’ উল্লেখ করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই প্রতিবাদের জবাবে তুলসি গ্যাবার্ড পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দাবিতে ‘Tulsi For President’ নামের নীল ব্যাজযুক্ত ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে করা একটি পোস্টের স্ক্রিনশট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এসব পোস্টের মাধ্যমে মূলত দাবি করা হচ্ছে, উক্ত এক্স অ্যাকাউন্টটি তুলসি গ্যাবার্ডের এবং তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিবাদের পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিবাদের পাল্টা জবাবে এক্স-এ কোনো পোস্ট করেননি। বরং, তার নাম ব্যবহার করে তৈরি একটি ফ্যান অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট ব্যবহার করে এই দাবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে তুলসি গ্যাবার্ডের কথিত এক্স পোস্ট খুঁজে বের করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ২০ মার্চ ওই অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টটি করা হয়। তবে অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এটি তুলসি গ্যাবার্ডের আসল অ্যাকাউন্ট নয়। অ্যাকাউন্টটির পরিচিতি (About) বিভাগে লেখা রয়েছে: “Super fan of #Tulsi, Supporting Tulsi’s political campaign.” অর্থাৎ, এটি তুলসি গ্যাবার্ডের একজন ভক্তের পরিচালিত অ্যাকাউন্ট। ফলে অ্যাকাউন্টটি সরাসরি গ্যাবার্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন নয় বলে প্রতীয়মান হয়।
Collage: Rumor Scanner
এক্স-এর হেল্প সেন্টার থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এক্স-এ ব্যবহারকারীরা প্যারোডি, ধারাভাষ্য বা ফ্যান অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন, তবে এর জন্য নির্ধারিত কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় যাতে এসব অ্যাকাউন্ট বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে। এক্স-এর নিয়ম অনুযায়ী, এ ধরনের অ্যাকাউন্টের নাম ও বায়োতে “প্যারোডি,” “ফেক,” “ফ্যান” ইত্যাদি শব্দ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে বোঝা যায় যে এগুলো মূল ব্যক্তি বা ব্র্যান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।
তুলসি গ্যাবার্ড ছাড়াও এক্স প্ল্যাটফর্মে বহু পরিচিত ব্যক্তিত্বের নামে ফ্যান বা প্যারোডি অ্যাকাউন্ট দেখা যায়। এর মধ্যে ইলন মাস্ক, ভ্লাদিমির পুতিনসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির নামেও অ্যাকাউন্ট চালু রয়েছে, যেগুলো অনেক সময় নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে ভেরিফায়েড হতে দেখা যায়। উল্লেখ্য, ২০২১ সালে এক্স তাদের পেইড সাবস্ক্রিপশন মডেল চালু করে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা মাসিক ফি প্রদান করে নীল ব্যাজযুক্ত ভেরিফিকেশন অর্জন করতে পারেন।
অর্থাৎ, আলোচিত এক্স পোস্টটির সঙ্গে তুলসি গ্যাবার্ডের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। তার নাম ব্যবহার করে তৈরি একটি ফ্যান অ্যাকাউন্ট।
এছাড়া, তুলসি গ্যাবার্ডের মূল এক্স অ্যাকাউন্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিবাদ নিয়ে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য বা পোস্ট করেননি।
তুলসি গ্যাবার্ড যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একজন কর্মকর্তা। তার অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে নামের পাশে রয়েছে গ্রে ব্যাজ। এক্স-এর নিয়ম অনুযায়ী, এই ব্যাজ মূলত বিভিন্ন দেশের সরকার, সরকারি কর্মকর্তা বা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও তাদের প্রতিনিধিদের অ্যাকাউন্টে প্রদর্শিত হয়। অন্যদিকে, সাধারণ ব্যবহারকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মাসিক অর্থের বিনিময়ে সাবস্ক্রিপশন নিলে তাদের অ্যাকাউন্টে নীল ব্যাজ দেওয়া হয়। আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট ‘Verified Organizations’-এর আওতায় যাচাই করা হলে তারা পায় সোনালি ব্যাজ।
অর্থাৎ, ‘Tulsi For President’ নামের এক্স অ্যাকাউন্টটি মাসিক অর্থের বিনিময়ে সাবস্ক্রিপশন নিয়ে ভেরিফায়েড হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাইক আরোহীর হাতে সাদা পতাকায় কালেমা খচিত যে ভিডিওটি ‘Tulsi For President’ নামের এক্স অ্যাকাউন্টের পোস্টে যুক্ত করা হয়েছে, সেটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাম্প্রতিক সময়ে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের মিছিল বা শোডাউনের দৃশ্য দাবিতে সাম্প্রতিক এক্সে ভাইরাল হয়েছিল। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়; বরং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে, গত ৬ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিযবুত তাহ্রীরের একটি মিছিলের দৃশ্য।
সুতরাং, বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ ও ‘ইসলামি খেলাফত’ প্রসঙ্গে মন্তব্যের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিবাদের জবাবে তুলসি গ্যাবার্ড এক্স পোস্ট করেছেন দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।