গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা করেছে শীর্ষক শেখ হাসিনার পুরোনো মন্তব্য সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার

প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দিয়ে গাজায় গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ইসরায়েল হামলা শুরু করে। হামলা শুরুর পর থেকে তিন দিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, ২০০ শিশুসহ ৫০৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৯০৯ জন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “১৯:৩:২০২৫ | ভারত থেকে এসে শেখ হাসিনা ইসরাইল সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ জানালেন ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ালেন আছে বাংলাদেশ এবং বিশ্ববাসীকে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালেন”।

উল্লেখ্য যে, প্রচারিত উক্ত ভিডিওটিতে শেখ হাসিনাকে বলতে দেখা যায়, আমরা সবসময় গণহত্যার বিপক্ষে। গাজায় যা হচ্ছে তা গণহত্যা এবং আমরা এটি সমর্থন করি না। এছাড়াও শেখ হাসিনাকে ইসরায়েলের আক্রমণের প্রতিবাদ করতে ও ফিলিস্তিনি জনগণের নিজেদের ভূমি ও দেশ পাওয়ার বিষয়ে সমর্থন জানানোসহ আরো কিছু বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায়। 

অর্থাৎ, দাবি করা হচ্ছে প্রচারিত শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারের উক্ত ভিডিওটি গত ১৯ মার্চের বা সাম্প্রতিক সময়ের।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজায় ইসরায়েলের হামলা ইস্যুতে শেখ হাসিনার প্রতিবাদ জানানোর এই প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, ২০২৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে জার্মানির মিউনিখে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে দেওয়া শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারের ভিডিও সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ‘আনাদোলু ইংরেজি’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে “What’s happening in Gaza is genocide: Bangladeshi premier” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।

Comparison : Rumor Scanner

উক্ত সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে আনাদোলুর ওয়েবসাইটে একই শিরোনামে উক্ত একইদিনে (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের [সাবেক] প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে গাজায় যা ঘটছে তা গণহত্যা, এবং তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে ফিলিস্তিনি জনগণের বেঁচে থাকার এবং তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র থাকার অধিকার রয়েছে। শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) আনাদোলুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সব সময় গণহত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। গাজায় যা ঘটছে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি মনে করি এটি একটি গণহত্যা। তাই আমরা কখনোই এটি সমর্থন করি না।”

তিনি আরও বলেন, “গাজার জনগণের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। তাই আমাদের তাদের সাহায্য করা উচিত এবং এই আগ্রাসন ও যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত।” তিনি জার্মানির মিউনিখ শহরে অনুষ্ঠিত ৬০তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অবরুদ্ধ গাজার মানুষের জন্য সহায়তা পাঠিয়েছে উল্লেখ করে হাসিনা বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান, “ভোগান্তির শিকার ফিলিস্তিনের শিশু, নারী ও জনগণের পাশে দাঁড়ানো উচিত।”

দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে পরিকল্পিত ইসরায়েলি অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা কখনোই এ ধরনের হামলাকে সমর্থন করিনি।” [বাংলাদেশের সাবেক] প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “ফিলিস্তিনি জনগণের নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের অধিকার থাকা উচিত, এটি স্পষ্ট।” তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, জাতিসংঘের দ্বিরাষ্ট্র নীতির প্রস্তাব বাস্তবায়িত করা উচিত।” (অনূদিত)

এছাড়াও, এ বিষয়ে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটেও ২০২৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে “আনাদোলুকে সাক্ষাৎকার| গাজায় যা ঘটছে, তা গণহত্যা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকেও একইরকম তথ্য জানা যায়। জানা যায়, তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে জার্মানিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এরূপ কথা বলেছিলেন। শেখ হাসিনা তখন রাষ্ট্রীয় সফরে জার্মানিতে ছিলেন।

উল্লেখ্য যে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে হামাসের আক্রমণের পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ব্যাপক হামলা চালালে হামলার ফলে সেসময় (ফেব্রুয়ারি ২০২৪) পর্যন্ত কমপক্ষে ২৮,৬৬৩ জন নিহত হন এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছিল। মূলত এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা এরূপ মন্তব্য করেছিলেন।

সুতরাং, গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ২০২৪ সালে দেওয়া শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারকে সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ইসরায়েলের হামলা ইস্যুতে শেখ হাসিনার বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img