পিরোজপুরের নাজিরপুরের ঐশী মন্ডলকে মুসলিমরা অপহরণ করেছে শীর্ষক দাবিটি ভুয়া

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি দেশ টিভিতে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনের ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “এই হিন্দু মহিলার নাবালিকা মেয়েকে বন্দুকের মুখে উগ্রপন্থী মুসলিমরা স্কুল যাওয়ার পথে অপহরণ করেছে! প্রশাসন ও পুলিশ নীরব! অদ্ভুতভাবে, যখনই ইসরাইল এই উগ্রপন্থীদের ধ্বংস করে, তখন সবাই মানবতা দেখতে পায়!” (অনূদিত)

উল্লেখ্য যে, প্রচারিত ভিডিওটিতে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের ঐশী মন্ডল নামে এক মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণের দাবি করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে উল্লিখিত পিরোজপুরের নাজিরপুরের শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নের ঐশী মন্ডলকে অপহরণের ঘটনায় উগ্রবাদী মুসলিম বা সাম্প্রদায়িকতা জড়িত থাকার বিষয়টি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, প্রেমঘটিত কারণে ঐশীর হিন্দু প্রেমিক ঐশীকে তুলে নিয়েছে এবং সে পরবর্তীতে শাখা সিঁদুর পরিয়ে ঐশীর সাথে ছবিও পোস্ট করেছে।

এ বিষয়ে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ঘটনাটি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নের৷ উক্ত এলাকার লিটন মন্ডলের মেয়ে ঐশী মন্ডলকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের বাড়ির কাজের ছেলে সুজিত শিকারীর ছেলে নয়ন শিকারী। গত ২ মার্চ ঐশী স্কুলে যাওয়ার পথে নয়ন কয়েকজন বখাটে ছেলেদের সাথে নিয়ে ঐশীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং শাঁখা-সিঁদুর পরিয়ে একটি ছবি ভাইরাল করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে, উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনটিতে অভিযুক্ত কেউ মুসলিম বলে উল্লেখ করা হয়নি।

Comparison : Rumor Scanner

পরবর্তী অনুসন্ধানে দেশ টেলিভিশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত মূল ভিডিওটি পাওয়া যায়। গত ১৭ মার্চে “কাজের ছেলের ফাঁদে পা দিলো ঐশী…” শীর্ষক ক্যাপশনে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়। তবে, উক্ত মূল প্রতিবেদনেও অভিযুক্তদের মুসলিম বলা হয়নি।

উক্ত সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে ‘সকালের খবর২৪’ নামক একটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে গত ১৬ মার্চে “স্কুল ছাত্রী অপহরণ করে বিয়ের অভিযোগে যুবকের বিরুদ্ধে মামলা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে একটি ছেলের সাথে শাঁখা-সিদুর হাতে একটি মেয়ের ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে।

উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “পিরোজপুর সদর উপজেলার শিকদার মল্লিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ঐশী মন্ডল (১৫) স্কুলে যাওয়ার পথে জোরপূর্বক অপহরণ করে বিয়ের অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে।…গত ২ মার্চ (রবিবার) সকাল ১০ টায় পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের চৌগাছা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মেয়ের বাবা ৪ জনকে আসামী করে একটি অপহরন মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলো, নয়ন শিকারী, সুজিত শিকারী, চয়ন শিকারী, অজিত শিকারীসহ অজ্ঞাত ৩জন। মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নয়ন শিকারী দীর্ঘদিন ধরে ঐশীর বাড়ীতে দিনমজুর হিসেবে কৃষি কাজ করত। এক পর্যায়ে ঐশী ও নয়নের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। গত ২ মার্চ ঐশী স্কুলে যাওয়ার পথে নয়ন কয়েকজন বখাটে ছেলেদের সাথে নিয়ে ঐশীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং শাঁখা-সিঁদুর পরিয়ে একটি ছবি ভাইরাল করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মেয়ের মা কবিতা মন্ডল জানান, আমার মেয়ে প্রতিদিন যেভাবে স্কুলে যায়, সেদিন ২ তারিখও একইভাবে স্কুলে গেছে। স্কুল থেকে নিখোঁজ আমার মেয়ে। আমি প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকি আমার মেয়ে কখন ফিরবে।…”

এছাড়াও, একইরকম তথ্য ‘ঢাকা ক্যানভাস’ নামক একটি অনলাইন পোর্টালের ওয়েবসাইটে গত ১৬ মার্চে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়। অভিযুক্তদের নাম দেখে বুঝা যায় যে, অভিযুক্তরা মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম নাজিরপুর থানার ওসি মো. মাহামুদ আল ফরিদ ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করে। তিনি জানান, মুসলিমরা অপহরণ করেছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। এরূপ ভুয়া তথ্য প্রচার দুঃখজনক। প্রকৃতপক্ষে, অভিযুক্তরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং প্রেমঘটিত বিষয় রয়েছে। মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক তাই অপহরণ মামলা করা হয়েছে। তবে, মেয়েকে উদ্ধার করার পর মেয়ের স্টেটমেন্ট শোনার পর মেয়ের বয়স সাপেক্ষে অপহরণ কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। অভিযুক্ত ও মেয়ে সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এখানে হিন্দু-মুসলিম কীভাবে আসলো জানা নেই।

সুতরাং, পিরোজপুরের নাজিরপুরের শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নের ঐশী মন্ডলকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রেমিকের তুলে নেওয়ার ঘটনাকে উগ্রবাদী মুসলিমরা তুলে নিয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img