Home Blog Page 108

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিকাশের পক্ষ থেকে সবাইকে ৪৫,০০০ টাকা ঈদ সালামি দেওয়ার তথ্যটি গুজব

0

চলছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই জ্যোতির্বিদ্যা গ্রুপের তথ্যমতে এবার আরব আমিরাতে ৩১ মার্চ পালিত হতে পারে ঈদুল ফিতর। সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পর বাংলাদেশে ঈদ উদযাপিত হয়ে থাকে। সে হিসেবে এবার বাংলাদেশে ১ এপ্রিলে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, “আসন্ন ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে বিকাশ দিচ্ছে সকল বিকাশ গ্রাহকদের ঈদ সালামী বোনাস! এই বিশেষ দিনকে উদযাপন করার জন্য বিকাশ দিচ্ছে সকল বিকাশ গ্রাহককে ৪৫,০০০ টাকা ঈদ সালামী বোনাস বোনাস!” এবং “ঈদ উপলক্ষে আপনি বোনাস পেয়েছেন ৪৫০০০ টাকা” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সবাইকে ৪৫,০০০ টাকা ঈদ সালামি দেওয়ার কোনো ঘোষণা বিকাশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি বরং, ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে ঈদ সালামির বোনাসের এই প্রলোভন দেখানো হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টগুলোতে থাকা ওয়েবসাইট লিংকে প্রবেশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করলে উপরে বিকাশের লোগো এবং “৪৫,০০০ টাকা ঈদ সালামী বোনাস” শীর্ষক একটি লেখা পাওয়া যায়। এরপর বলা হয়, “আসন্ন ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে বিকাশ দিচ্ছে সকল বিকাশ গ্রাহকদের ঈদ সালামী বোনাস! এই বিশেষ দিনকে উদযাপন করার জন্য বিকাশ দিচ্ছে সকল বিকাশ গ্রাহককে ৪৫,০০০ টাকা ঈদ সালামী বোনাস বোনাস!” এছাড়া, সর্বশেষ বোনাস পাওয়া ব্যক্তি দাবিতে কয়েকজনের নাম, বিকাশ নাম্বারের প্রথম কয়েকটি ডিজিট, প্রাপ্ত বোনাসের পরিমাণ ও সময় উল্লেখ করা হয়।

Screenshot: Scamming website

এরপর অফারের বিস্তারিত অংশে বলা হয়, “আপনার যদি ১টি সক্রিয় বিকাশ একাউন্ট থাকে তাহলে আপনি ৪৫,০০০ টাকা ঈদ সালামী বোনাস পাবেন। অফারটি ঈদ উপলক্ষে ৩১ মার্চ ২০২৫, ২৩:৫৯:৫৯ পর্যন্ত চলবে। ১টি বিকাশে সর্বোচ্চ ১বার বোনাস পাওয়া যাবে। ৪৫,০০০ টাকা ঈদ সালামী বোনাস পেতে আপনাকে নিচের ফরমটি পূরণ করতে হবে। ফর্ম পূরণ করার সাথে সাথে আপনার বিকাশে টাকা চলে যাবে।”

Screenshot: Scamming website

আরেকটু নিচে স্ক্রল করলেই টাকা পাওয়ার জন্য একটি ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে বলা হয়। ফর্মটিতে নিজের নাম, জেলা, জাতীয় পরিচয়পত্র আছে কি না, বিকাশ সার্ভিস কেমন লাগে, বয়স এসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়।

Screenshot : Scamming website

রিউমর স্ক্যানার টিমের একজন অনুসন্ধানকারী নিরাপত্তাজনিত কারণে ভুল তথ্য দিয়ে উক্ত ফর্ম পূরণ করে জমা দিলে এটি আরেকটি নতুন পেজে নিয়ে যায়। উক্ত পেজটিতে বলা হয়, “অভিনন্দন প্রিয় গ্রাহক! আপনি টাকা বোনাস পেয়েছেন। আপনি যে বিকাশে বোনাসের টাকা নিতে চান, নিচে সেই বিকাশ নম্বর এবং অন্যান্য তথ্য দিন।” এরপর মোবাইল নম্বর এবং পিন চাওয়া হয়৷ এ পর্যায়ে নিজের বিকাশ নাম্বার, তবে ভুল পিন দিলে এটি নতুন আরেকটি পেজে নিয়ে যায়।

Screenshot : Bkash payment page, redirected from Scamming website

উক্ত নতুন পেজটিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করে রিউমর স্ক্যানার টিম। নতুন পেজের ইন্টারফেসটি হুবহু বিকাশে পেমেন্ট করার ইন্টারফেসের মতো। তাছাড়া, দাবি অনুসারে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানকারীর ৪৫,০০০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও নতুন ইন্টারফেসটি হচ্ছে কাউকে টাকা পেমেন্ট করার ইন্টারফেস। অধিকন্তু, এখানে পেমেন্ট গেটওয়ের জায়গায় বিকাশ কর্তৃপক্ষের কোনো কিছুর বদলে ‘YASIR ARAFAT Mobile Recharge shop” নামটি দেখা যায়৷ এছাড়াও, পূর্ববর্তী ফর্মে উল্লিখিত নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্ট নাম্বার থেকেই পেমেন্ট হতে যাচ্ছে বলে দেখা যায়। এরপর নাম্বার কনফার্ম করলে ওটিপি আসে এবং ওটিপি চাওয়া হয়। কিন্তু, নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানকারী এর পরবর্তী ধাপ সম্পন্ন করেন নি। 

পরবর্তী অনুসন্ধানে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সবাইকে ৪৫,০০০ টাকা ঈদ সালামি দেওয়ার কোনো ঘোষণা বিকাশ দিয়েছে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করতে প্রাসঙ্গিক কী-ওয়ার্ড সার্চ করলে বিকাশের ওয়েবসাইট, বিকাশের ফেসবুক পেজ বা বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সবাইকে ৪৫,০০০ টাকা ঈদ সালামি দিচ্ছে বিকাশ শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

‘২য় বিয়ে না করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদনের ছবিটি সম্পাদিত

0

সম্প্রতি, ‘২য় বিয়ে না করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে।

সম্প্রতি উক্ত পেপার কাটিং ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘২য় বিয়ে না করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ছবিটি সত্য নয় বরং, ‘বিয়ে না করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে’ শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে প্রতিবেদনটির শিরোনামের শুরুতে ‘২য়’ লেখাটি যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

মূলত, প্রাথমিক পর্যায়ের গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার সাথে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বৈবাহিক অবস্থারও প্রভাব রয়েছে কিনা সেটি জানতে চীনের আনহুই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত হাসপাতালের একদল গবেষক একটি গবেষণা করেন। উক্ত গবেষণার বরাত দিয়ে ২০২২ সালে একাধিক দেশীয় গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, একটি গণমাধ্যমের প্রিন্ট সংস্করণে ‘২য় বিয়ে না করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘২য় বিয়ে না করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে’ শীর্ষক শিরোনামে কোনো সংবাদ প্রকাশ করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ‘বিয়ে না করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে’ শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা সম্পাদনার মাধ্যমে প্রতিবেদনটির শিরোনামের শুরুতে ‘২য়’ লেখাটি যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং,‘২য় বিয়ে না করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সম্পাদিত।

উল্লেখ্য, গেল বছর বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানের পর ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার। 

২০১৩ সালে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র হামলার ঘটনার ভিডিওকে গাজায় ইজরায়েলের হামলার দৃশ্য দাবিতে প্রচার

প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দিয়ে গাজায় গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ইসরায়েল হামলা শুরু করে। হামলা শুরুর পর থেকে তিন দিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, ২০০ শিশুসহ ৫০৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৯০৯ জন। এরই প্রেক্ষিতে ‘সুবাসিত ফুল, তুমি তো জান্নাতি! এই নির্মম পৃথিবী তোমার পায়ের ধূলিতেও স্থান পাওয়ার যোগ্য নয়.!’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গাজায় ইসরায়েলি হামলার ঘটনার নয় বরং, এটি ২০১৩ সালে সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলায় নিহতের ঘটনার ভিডিও।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘أرشيف الثورة السورية’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট “তাই আমরা ভুলি না.. সিরিয়ার সরকার কর্তৃক পূর্ব ও পশ্চিম ঘৌতায় রাসায়নিক অস্ত্র হামলা চালানোর পর দামেস্কের গ্রামাঞ্চলে এই দিনে নিহত কিছু শহীদের  ছবি এগুলো।” ( অনুদিত)  শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবুহু মিল রয়েছে। 

Comparison : Rumor Scanner

পোস্টটির ক্যাপশন ও হ্যাশট্যাগ বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২১ (এপ্রিল) সিরিয়ার ঘৌতায় রাসায়নিক অস্ত্র হামলায় অসংখ্য নিরীহ মানুষ নিহত হয় যার মধ্যে বেশিরভাগ ই শিশু ছিল। উক্ত পেজটি মূলত সিরিয়ার হামলার ঘটনাগুলোকে আর্কাইভ হিসেবে সংরক্ষণ করার জন্য ই আলোচিত পেজে বিভিন্ন ছবি, ভিডিও প্রকাশ করে থাকে। এর ই ধারাবাহিকতায় তারা সিরিয়ার ওই নৃশংস হামলার স্মরণে আলোচিত ভিডিওটি প্রকাশ করে।

উক্ত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ‘Report of the United Nations Mission to Investigate Allegations of the Use of Chemical Weapons in the Syrian Arab Republic on the alleged use of chemical weapons in the Ghouta area of Damascus on 21 August 2013 : note / by the Secretary-General’ শীর্ষক শিরোনামে জাতিসংঘের একটি তদন্ত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট সিরিয়ার দামেস্কর উপকণ্ঠ ঘৌটায় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক হামলায় সারিন গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে। 

সেসময় উক্ত ঘটনা নিয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ (,) করে। 

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি ২০১৩ সালে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র হামলার ঘটনার। 

সুতরাং, ২০১৩ সালে সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলায় নিহতের ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ইসরায়েলি হামলার ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র 

অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার দায়ে স্যাংশনের মুখোমুখি হওয়া সংক্রান্ত দাবিতে সংবাদ দেয়নি যমুনা টিভি, সম্পাদিত ফটোকার্ড প্রচার 

0

সম্প্রতি, “ইউনুস সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যর্থতার দায়ে সরকার স্যাংশনের মুখোমুখি হতে হবে।” শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “ইউনুস সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যর্থতার দায়ে সরকার স্যাংশনের মুখোমুখি হতে হবে।” শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভি কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে যমুনা টিভির একটি ফটোকার্ডের শিরোনাম সম্পাদনা করে ভুয়া এই ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে যমুনা টিভির লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ২০ মার্চ, ২০২৫ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর সূত্রে যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, গত ২০ মার্চ গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

তবে উক্ত ফটোকার্ডটিতে থাকা শিরোনামটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। 

অর্থাৎ, আলোচিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত। 

যমুনার মূল ফটোকার্ড সম্বলিত এ সংক্রান্ত পোস্টের কমেন্টে দেওয়া লিংকে প্রবেশ করে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানালো যুক্তরাষ্ট্র শিরোনামে একটি সংবাদ পাওয়া যায়। গত ২০ মার্চের এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুসহ সকল নাগরিকদের নিরাপত্তায় অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (১৯ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সময় এক প্রশ্নের জবাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানান মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস। এতে বলা হয়, ওই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার নিন্দা জানান পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘুসহ সবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেটিকে স্বাগত জানান।

পরবর্তীতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ১৯ মার্চের সংবাদ সম্মেলনের মূল ট্রান্সক্রিপ্ট যাচাই করেও একই তথ্য জানা যায়। তবে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশকে স্যাংশন দেওয়া সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য বা আলোচনার তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, ‘ইউনুস সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যর্থতার দায়ে সরকার স্যাংশনের মুখোমুখি হতে হবে।’ শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত। 

তথ্যসূত্র 

কাবা শরীফের কোনো ইমাম রমজানের শেষ দশ দিনের বিশেষ আমল সংক্রান্ত এই পরামর্শগুলো দেননি

0

সৌদি আরবের মক্কার কাবা শরীফের ইমামের ফর্মুলা বা পরামর্শ দাবিতে কিছু তথ্য গেল বেশ কয়েক বছর ধরে ইন্টারনেটে বিদ্যমান। 

দাবি করা হচ্ছে, কাবা শরীফের ইমাম রমজানের শেষ দশকের প্রতিদিন তিনটি বিশেষ আমল করার কথা বলেছেন।

১. প্রতিদিন এক দিরহাম (এক টাকা) দান করুন, যদি দিনটি লাইলাতুল ক্বদরের মাঝে পড়ে, তবে আপনি ৮৪ বছর বা ১০০০ মাস পর্যন্ত প্রতিদিন এক টাকা দান করার সাওয়াব পাবেন।

২. প্রতিদিন দুই রাকা’আত নফল সালাত আদায় করুন, যদি দিনটি লাইলাতুল ক্বদরের মাঝে পড়ে, তবে আপনি ৮৪ বছর পর্যন্ত প্রতিদিন দুই রাকা’আত নফল সালাত আদায় করার সাওয়াব পাবেন।

৩. প্রতিদিন তিনবার সূরা ইখলাস পাঠ করুন, যদি দিনটি লাইলাতুল ক্বদরের মাঝে পড়ে, তবে আপনি ৮৪ বছর পর্যন্ত প্রতিদিন এক খতম ক্বুর’আন পাঠের সাওয়াব পাবেন।

চলতি বছর (২০২৫) উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে ইনস্টাগ্রামের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কাবা শরীফের কোনো ইমামই রমজানের শেষ দশকের প্রতিদিন তিনটি বিশেষ আমল করা সংক্রান্ত কোনো পরামর্শ দেননি। নির্ভরযোগ্য সূত্র এবং হারামাইন শরীফের অফিশিয়াল সূত্রের বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার।

মূলত, রমজানের শেষ দশদিনের জন্য কাবা শরীফের ইমামের ফর্মুলা বা পরামর্শ দাবিতে কিছু তথ্য গেল বেশ কয়েক বছর ধরে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে। দাবি করা হচ্ছে, কাবা শরীফের রমজানের শেষ দশ দিনের প্রতিদিন তিনটি বিশেষ আমল করার কথা বলেছেন। বছর বছর ইমামের নাম বদলে দিয়ে একই দাবি প্রচার হতে দেখা যায়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কাবার কোনো ইমামই এ সংক্রান্ত কোনো পরামর্শ দেননি। নির্ভরযোগ্য সূত্র এবং হারামাইন শরীফের অফিশিয়াল সূত্রের বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, রমজানের শেষ দশ দিনের প্রতিদিন তিনটি বিশেষ আমল বিষয়ে কাবা শরীফের ইমামের মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

উল্লেখ্য, গেল বছর বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানের পর ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার। 

পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু মন্দিরে হামলার নয়, ভিডিওটি বাংলাদেশের দিনাজপুরে মাজারে হামলার 

সম্প্রতি ‘দেখুন হিন্দুরা, বাংলার হিন্দু মন্দিরে কি হচ্ছে এবং ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখুন.’ (অনূদিত) শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে প্রচার করা হয়েছে ৷ 

উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গে মন্দির ভাঙার কোনো ঘটনার  নয়, বরং এটি বাংলাদেশের দিনাজপুরে মাজার ভাঙ্গার ভিডিও।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘II News TV’ নামক ফেসবুক পেজে ২০২৫ সালের ০১ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির ০১ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৩০ সেকেন্ড দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া গেছে৷

Comparison: Rumor Scanner.

ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ‘দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থানার অন্তর্গত কলোনি গ্রামে ভন্ড রহিম বাবার মাজার এলাকার তৌহিদী জনতা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। যেখানে অসামাজিক কাজ, বাবার নামে পশু জবাই, কুরআন অবমাননা,ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সহ নানান অপকর্ম দীর্ঘদিন যাবত করে আসতেছিল।’ 

পরবর্তীতে, উক্ত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কী-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘ঘোড়াঘাটে ওরস আয়োজনের প্রস্তুতির মধ্যে মাজারে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় তিন দিনব্যাপী ওরস আয়োজনের প্রস্তুতির মধ্যে একটি মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) বিকেলে সীরাতে মুস্তাকিম পরিষদ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এলাকায় লাঠিমিছিল কর্মসূচির পর এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

‘রহিম শাহ বাবা ভান্ডারী মাজার’ নামের এ মাজারটি উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের বিরাহীমপুর গুচ্ছগ্রামে অবস্থিত। (…) শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে সীরাতে মুস্তাকিম পরিষদের ব্যানারে কয়েক হাজার ‘তৌহিদি জনতা’ লাঠি হাতে মিছিল বের করেন। ওই মিছিল থেকে মাজারে ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় মাজারের বিভিন্ন আসবাব, ঘরের টিন ও দেয়ালের ইট খুলে ফেলে হয়। সেখানে বিক্ষুব্ধ লোকজন বিভিন্ন স্লোগান দেন। তৌহিদি জনতা আগুন দিয়ে মাজারের চারপাশ ঘিরে অবস্থান নেওয়ায় সেখানে সেনাবাহিনী ও থানা-পুলিশ যেতে পারেনি।

একই বিষয়ে সেসময় দেশের মূলধারার একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনে (,) প্রকাশিত হয়।

সুতরাং, বাংলাদেশের মাজার ভাঙ্গার ভিডিওকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মন্দির ভাঙ্গার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

নির্বাচনে জামায়াতকে ভোট দেয়া প্রসঙ্গে দলটির সেক্রেটারি জেনারেলের নামে বাংলা ভিশনের নকল ফটোকার্ড প্রচার

0

সম্প্রতি, “মানুষ আমাদের ভোট দেয় না নির্বাচন দিয়ে কি করবো: গোলাম পরোয়ার” শীর্ষক শিরোনামে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম বাংলা ভিশনের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে  (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “মানুষ আমাদের ভোট দেয় না নির্বাচন দিয়ে কি করবো: গোলাম পরোয়ার” শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে বাংলা ভিশন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে বাংলা ভিশনের একটি ফটোকার্ড নকল করে এই ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে বাংলা ভিশনের লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ২০ মার্চ, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলা ভিশনের লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবিসম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, বাংলা ভিশনের ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে গত ২০ মার্চ গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে “নির্বাচনের জন্য সরকারকে সময় বেঁধে দেয়নি জামায়াত: গোলাম পরওয়ার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনাম ব্যতীত বাকি অংশের সাথে উক্ত ফটোকার্ডের হুবহু মিল রয়েছে। 

Photocard Comparison By Rumor Scanner

অর্থাৎ, বাংলা ভিশনের এই ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

পাশাপাশি, আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্য অন্য কোনো গণমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, “মানুষ আমাদের ভোট দেয় না নির্বাচন দিয়ে কি করবো: গোলাম পরোয়ার” শীর্ষক শিরোনামে বাংলা ভিশনের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, ২০২০ সালের 

0

সম্প্রতি, ‘প্রেমে রাজি না হওয়ায় ছুরিকাঘাতে স্কুলছাত্রীকে হত্যা। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সাভারে সড়কের পাশে পরিত্যক্ত জায়গায় জনসম্মুখে বখাটে হাতে প্রাণ হারাতে হলো নীলা রায় নামে এক স্কুল ছাত্রীকে। নিহতের বাবা নারায়ন রায় বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করলেও এখন উধাও বখাটে মিজানুর রহমান।’ শীর্ষক একটি তথ্য এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচার করা হচ্ছে। 

এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাভারে প্রেমে রাজি না হওয়ায় ছুরিকাঘাতে নীলা রায় নামের  এক স্কুলছাত্রীকে হত্যার ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, ২০২০ সালের ঘটনাকে কোনো সময় উল্লেখ না করেই প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, নিহত স্কুলছাত্রীর নাম নীলা রায় ও বাবার নাম নারায়ণ রায় এবং অভিযুক্তের নাম মিজানুর রহমান উল্লেখ রয়েছে। উক্ত সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনো ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়নি। 

তবে জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর “প্রেমের প্রস্তাবে না, সাভারে ভাইয়ের কাছ থেকে বোনকে ছিনিয়ে হত্যা”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সাভারে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার জেরে নিলা রায় (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। নিহত নিলা মানিকগঞ্জ জেলার বালিরটেক এলাকার নারায়ন রায়ের মেয়ে। সে তার পরিবার নিয়ে পৌর এলাকার কাজী মোকমা পাড়ার একটি বাড়িতে ভাড়ায় থেকে স্থানীয় অ্যাসেড স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ালেখা করতো। অভিযুক্ত যুবকের নাম মিজানুর রহমান চৌধুরী (২৫)।

একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে দৈনিক ইত্তেফাক এবং সমকালও

অর্থাৎ, সাভারে প্রেমে রাজি না হওয়ায় নারায়ণ রায়ের মেয়ে নীলা রায়কে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনাটি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের। 

সুতরাং, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাভারে প্রেমে রাজি না হওয়ায় স্কুলছাত্রী নীলা রায়কে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র 

হাসনাতের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাননি খালেদ মুহিউদ্দীন, ভুয়া ফেসবুক পেজের পোস্ট ভাইরাল

গত ২০ মার্চ রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে দাবি করেন, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। বিষয়টিকে তিনি ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে ‘নতুন একটি ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেন।

এ প্রসঙ্গে আলোচিত সংবাদ উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দন হাসনাতের পাশে ছাত্র-জনতাকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন: ইনকিলাব, সময়ের আলো, জনকণ্ঠ, যায়যায়দিন, বিডি২৪লাইভ, ঢাকা প্রকাশ (ফেসবুক), বিডি২৪রিপোর্ট (ফেসবুক), শেয়ারনিউজ২৪

এছাড়া, আমাদেরসময়.কমও একই দাবিতে সংবাদ প্রচার করে, তবে পরে তা অপসারণ করে নেওয়া হয়।

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ ইস্যুতে খালেদ মুহিউদ্দীন ছাত্র-জনতাকে হাসনাতের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত খবরটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, একটি ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এ সংক্রান্ত পোস্ট ছড়ানো হলে কতিপয় কিছু গণমাধ্যম সেটিকে খালেদ মুহিউদ্দীনের মন্তব্য হিসেবে প্রকাশ করে। পরবর্তীতে, ওই পেজ থেকে জানানো হয় যে এটি শুধুমাত্র একটি ফ্যান পেজ। একই সঙ্গে, খালেদ মুহিউদ্দীনও নিশ্চিত করেন যে তার নামে পরিচালিত ওই পেজটি ভুয়া।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, খালেদ মুহিউদ্দীন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ছাত্র-জনতাকে হাসনাতের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে তার মূল ফেসবুক প্রোফাইলে এমন কোনো পোস্টের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বরং, আজ ২২ মার্চ তিনি নিজের মূল ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন, ওই প্রোফাইলই তার একমাত্র ফেসবুক প্রোফাইল। ওই পোস্টে তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামে আরও একটি ফেসবুক পেজের লিংকও যুক্ত করা হয়। তিনি জানান, ‘সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দিন’ নামের পেজটি তার নয় এবং সেখানে প্রকাশিত কোনো মতামতও তার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তিনি এ বিষয়ে ইতোমধ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলেও ওই পোস্টে জানান।

খালেদ মুহিউদ্দীনের ওই পোস্টের সূত্র ধরে ‘সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দিন’ নামের একটি ফেসবুক পেজের সন্ধান পাওয়া যায়। গতকাল ২১ মার্চ, ওই পেজে প্রকাশিত একটি পোস্টে হাসনাতের পাশে ছাত্র-জনতাকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। সেখানে লেখা হয়, “হাসনাত আব্দুল্লাহ যে সাহসটা দেখালো, যে প্রলোভন অগ্রাহ্য করলো, সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। তাঁর পাশে ছাত্র-জনতাকে দাঁড়াতে হবে।”

পেজটির ট্রান্সপ্যারেন্সি সেকশন অনুযায়ী, এটি খোলা হয়েছে গত বছরের জানুয়ারিতে, এবং সৌদি আরব থেকে একজন অ্যাডমিন এটি পরিচালনা করছেন। পেজটির বায়োতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, ‘It’s a Khaled Muhiuddin fan page। এই পেইজের কোনো মন্তব্য খালেদ মুহিউদ্দীন স্যারের নিজস্ব মন্তব্য নয়।’

Collage: Rumor Scanner. 

এছাড়া, আজ ২২ মার্চ, আলোচিত সংবাদের বিষয়ে পেজটিতে প্রকাশিত আরেকটি পোস্টে লেখা হয়, ‘The Daily Inqilab, আপনাদের আবার এ কেমন সাংবাদিকতা? কোনো কিছু যাচাই-বাছাই না করেই নিউজ করে দিলেন? নিউজের উক্ত মন্তব্যটি খালেদ মুহিউদ্দিন স্যারের নিজস্ব মন্তব্য নয়। পেজের বায়োতেই দেওয়া আছে এটি একটি ফ্যান পেজ। এই পেজের সাথে Khaled Muhiuddin স্যারের ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। অনুগ্রহ করে আপনারা ফেসবুক এবং ওয়েবসাইট থেকে ফেক নিউজটি ডিলিট করে দিন।’

সুতরাং, খালেদ মুহিউদ্দন হাসনাতের পাশে ছাত্র-জনতাকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ইরানের ইসরায়েলে হামলার ভিডিও দাবিতে আলজেরিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার পুরোনো ভিডিও প্রচার

র্দীঘ ১৫ মাস ধরে চলা সংঘাতের পর গত ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়। তবে গত ১৮ মার্চ সেই যুদ্ধবিরতির চুক্তিকে উপেক্ষা করে আচমাকা গাজায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। যাতে প্রায় ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, ইরান ইসরায়েলে হামলা করেছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলে ইরানের হামলা চালানোর তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালে আলজেরিয়ার একটি ক্লাবের ১০৩ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সেলিব্রেশনের ভিডিও এবং একই বছরে ইন্দোনেশিয়ার একটি মার্কেটে আগুন লাগার ভিডিও  সম্পাদনার মাধ্যমে জোড়া লাগিয়ে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই ১

আলোচিত ভিডিওর প্রথম অংশে দেখতে পাওয়া ফুটেজটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Abd Ellah Arabdji নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটির ৩ সেকেন্ড সময় থেকে কত সেকেন্ড পর্যন্ত তা উল্লেখ আলোচিত ভিডিওটির শুরুর ফুটেজের মিল রয়েছে। তবে আলোচিত ভিডিওটি উক্ত ভিডিওকে মিরর করার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনামে ইংরেজিতে ভাষান্তরের মাধ্যমে জানা যায়, ভিডিওটি আলজেরিয়ান ফুটবল দল Mouloudia Club d’Alger এর সমর্থকদের দলটির ১০৩ বছর পূর্তি উদযাপনের ভিডিও। 

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আলজেরিয়ান গণমাধ্যম AL24news – قناة الجزائر الدولية এর ইউটিউব চ্যানেলেও একই ঘটনায় প্রকাশিত আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতেও আলোচিত ভিডিওটির মত শহরব্যাপী আতশবাজি ফাটিয়ে উদযাপন করতে দেখা যায়।  

ভিডিও যাচাই ২

আলোচিত ভিডিওটির দ্বিতীয় ফুটেজটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ান গণমাধ্যম Kabar Kutim এর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর সাথে আলোচিত ভিডিওটির দ্বিতীয় ফুটেজটির মিল রয়েছে। তবে লক্ষ্য করা যায়, উক্ত ভিডিওটিকে মিররের মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটির শিরোনামে বলা হয়, এটি গত বছরের ২২ আগস্টে বেনুয়া বারু গ্রামের সাংকুলিরং মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ভিডিও। 

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আরেক ইন্দোনেশিয়ান গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উক্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব কালিমান্তান প্রদেশের বোর্নিও দ্বীপের সাংকুলিরং বাজারের। 

উল্লেখ্য, গত ১৮ মার্চ ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এর নেভাতিম বিমান ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। 

অর্থাৎ, আলজেরিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে ইসরায়েলে ইরানের হামলার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র